শিবভক্ত পরমশৈব শ্রীকৃষ্ণ আধুনিক সনাতনী সমাজের আদর্শ
আজ জন্মাষ্টমী। সনাতনী সমাজে শ্রীকৃষ্ণ পূজিত হন ভগবান, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, প্রেমিক ও ধর্মরক্ষক রূপে। শ্রীকৃষ্ণ কোন ধর্ম রক্ষা করেছিলেন তা কি আজকের সনাতনীরা জানেন ? তারা শুধুই জেনেছেন শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম স্থাপন করেছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো আধুনিক সমাজে বিশেষ করে হিন্দু পুরুষেরা শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত জীবন,আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তিপূর্ণ ছবি শেয়ার করে, কিন্তু জীবনে নারী আসক্তি, মদ্যপান সহ বিভিন্ন নেশা,অসংযম ইত্যাদি এইসবের মধ্যেই ডুবে রয়েছে।
অন্যদিকে যদি আমরা মহাভারত ও পুরাণ শাস্ত্র খুলে দেখি, সেখানে আমরা দেখতে পাই, পালকর্তা হরির অষ্টম অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে ছিলেন শ্রেষ্ঠ মহাশিবভক্ত শৈব। তিনি প্রতিদিন ভস্ম ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করতেন, তিনি নিজ মুখে বলেছেন তিনি রুদ্রসূক্ত শতরুদ্রিয় পাঠপূর্বক শিব আরাধনা করতেন,
✅ মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৩৮ অধ্যায়/৪ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজমুখে এই কথা বলেছিলেন —
“ আমি প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান করে সংযত ও কৃতাঞ্জলি হয়ে শুক্ল যজুর্বেদের ১৬ অধ্যায়ে বর্ণিত পরমেশ্বর শিবের শতরুদ্রীয় সূক্ত পাঠ করি ॥”
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর মহাদেবকে প্রণাম করতেন এবং অর্জুনসহ অন্যান্য ভক্তদের শিবের পূজা করার নির্দেশ দিতেন, যা মহাভারতের বনপর্বে বিস্তারিত আছে।
তিনি পরম শৈবাচার্য শ্রী উপমন্যু মহর্ষির কাছে ৮দিন ৮রাত ধরে শিবের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে অবগত হয়ে শিবমন্ত্রে শৈব পাশুপত পরম্পরায় শৈবদীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে শিব সাধনা করে শিবলাভ করেছিলেন — এটি মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৩-১৪ অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা রয়েছে।
তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে ?
আজকের যুবসমাজ যদি সত্যিই শ্রীকৃষ্ণকে অনুসরণ করতে চায়, তবে কি তারা কেবল প্রেমিক কৃষ্ণকে মানবে ?
নাকি তাঁকে সেই রূপেও মান্য করবে যেরূপে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন ধর্মের রক্ষক, জগতের মঙ্গদের জন্য নিজের বলিদানকারী, সর্বোপরি প্রকৃত শৈব ?
একজন মহান শৈব -র পক্ষেই সম্ভব এমন মহানকার্য করা সম্ভবপর, অন্যদের পক্ষে নয়। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে ধর্ম রক্ষার্থে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এই পবিত্র জন্মাষ্টমীতে, তা মূলত শৈবধর্ম রক্ষার্থেই।
🔥 🔥 🔥কেশবঃ পাশুপত পরম্পরাস্য দীক্ষিত নারায়নস্য ।
অষ্টমাবতারস্তি য়ঃ ইহলোকে দুষ্টশক্তিয়ঃ নাশয়তি ॥
শৈবধর্মস্য স্থাপনাং কৃত্বা ধর্মস্য পুনরুত্থানং কৃত্বা ।
শিবভক্তস্য শৈবজ্ঞানপ্রদস্য চ
শ্রীকৃষ্ণস্যচরণকমলয়োঃ প্রণমামী ॥
🔥 🔥 🔥
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ আজ শৈবধর্ম সম্পর্কেই জানেন না।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে কতো বড় শিবভক্ত মহাভারতই তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ। সেখানে বারবার পালনহার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজমুখে বারংবার পরমেশ্বর শিবের মহিমা বর্ণনা করেছেন।
"স এব রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ।
সর্ব্বরূপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যো আর্চ্চয়ত প্রভূম্ ॥ ৬২
(মহাভারত/দ্রোণ পর্ব/অধ্যায় ১৬৯)
অর্থ — যিনি জগদীশ্বর শিবকে সর্ব্বময় (সকল রূপে শিবই আছে এই ভেবে) পরমেশ্বর জেনে তার প্রতীক শিবলিঙ্গে পূজা করতেন, তিনি রুদ্রের অংশ থেকে জন্মেছেন এবং শিবভক্ত সেই নারায়ণই হলেন এই শ্রীকৃষ্ণ।
কৃষ্ণ উবাচঃ মূর্ধ্বা নিপত্য প্রণতস্তেজঃ সন্নিচযে ততঃ। পরমং হর্ষমাগত্য ভগবন্তমথাব্রুদ্রবম ৷৷ ১ ৷৷
(মহাভারত/অনুশাসনপর্ব/অধ্যায় ১৪)
অর্থ - শ্রীকৃষ্ণ বললেন, তারপর আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ভূতলে আমার মস্তক তেজোময় পরমেশ্বর মহাদেবের নিকট নিপাতিত করে প্রণাম করলাম।।
দেখুন শ্রীকৃষ্ণের শিবভক্তি। তিনি যে পরমেশ্বর শিবের কাছে নিজের সর্বস্ব সমর্পণ করে দিয়েছিলেন এটাই তার সবথেকে বড়ো প্রমাণ।
এছাড়াও যখন অর্জুন বাণাসুর যুদ্ধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন —
মহাদেবঃ শরণং মে প্রপন্নস্য মহাত্মনঃ ।
তেনাহং দানবান্ সর্বান্ জিতবানস্মি ভারত ॥
(মহাভারত/দ্রোণপর্ব/২০১ অধ্যায়/৫৮-৬০ শ্লোক)
অর্থ – “হে ভারত (অর্জুন), আমি মহাদেবের শরণ গ্রহণ করেছিলাম। তাঁর করুণাতেই আমি সব দানবকে জয় করেছি।”
এখান থেকে বোঝা যায় শ্রীকৃষ্ণের দৈবশক্তি মহাদেবের প্রদান করা কৃপাজাত।
এবার দেখুন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ কতো সুন্দর কথা বলছেন —
মহাদেব মহাদেব মহাদেবেতি বাদিনঃ।
পশ্চাদ্যামি চ সন্ত্রস্তো নামশ্রবণলোভতঃ ॥ ৮৯
(ব্রহ্মবৈর্বত্তপুরাণ/শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড/অধ্যায় ৭৫)
অর্থ — শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাধা ! যাঁরা নিরন্তর মহাদেব, মহাদেব এই নাম উচ্চারণ করেন, আমি ঐ নাম শ্রবণলোভে তাঁদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হই।
শ্রীকৃষ্ণের শিব প্রেমের এর থেকে বড়ো নিদর্শন আর কিছু হতে পারে না। যে ব্যক্তি শুধুমাত্র মহাদেবের নাম উচ্চারণ করে তার পিছনেই শ্রীকৃষ্ণ ধাবমান হয় শিব নাম শোনার লোভে। আমরা কল্পনাও করতে পারবোনা শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে কি পরিমাণ শিবের ভক্তি রয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন সকালে স্নান শেষে শরীরে ভস্ম মাখতেন। যজুর্বেদের শতরুদ্রিয় সূক্ত পাঠ করে পরমেশ্বর শিবকে আহ্বান করে নিত্য প্রভাতী সন্ধ্যা উপাসনা করতেন।
দ্বারকাতে তার গৃহমন্দিরে পরমেশ্বর শিবের লিঙ্গ স্থাপিত ছিল, তিনি নিত্য শিবলিঙ্গ আরাধনা করতেন, একথা কূর্মপুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি স্বয়ং ভক্তদেরও শিবপূজা করার পরামর্শ দিতেন।
🕉️ দ্বারকায় নিজ গৃহের শিবমন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য শিবারাধনা —
প্রবিশ্য দেবভবনং মার্কণ্ডেয়েন চৈব হি।
পূজয়ামাস লিঙ্গস্থং ভূতেশং ভূতিভূষণম্ ॥৪৮
[কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/২৬ অধ্যায়/৪৮ শ্লোক]
অর্থ — মার্কণ্ডেয়ের সহিত নিজ দেবভবনে প্রবেশ করে ভূতিভূষন ভূতেশ শিবলিঙ্গের পূজা করলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ।
কিন্তু আজকের আমাদের সনাতন সমাজ শ্রীকৃষ্ণের সেই মহান চরিত্র কে মনে রাখেনি।
শ্রীকৃষ্ণ, যার শিবময় বাঁশির সুরে দিক-বিদিক ভরে ওঠে, যাঁর চরণস্পর্শে বৃন্দাবনের প্রতিটি ধূলিকণা পবিত্র হয়ে ওঠে তিনি নিজেই ছিলেন মহাদেব শিবের অটল ভক্ত।
প্রতিদিন ভোরে তিনি গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করতেন, সমগ্র দেহে ভস্ম মেখে নীলকণ্ঠ মহেশ্বরকে প্রণাম জানাতেন। পবিত্র রুদ্রাক্ষ শরীরে ধারণ করতেন, তাঁর কণ্ঠে বেজে উঠতো রুদ্রসূক্ত —
"নমঃ শম্ভবায় চ ময়োবভায় চ।"
এবং তাঁর নয়নে ভরে উঠত ভক্তির অশ্রু।
কৃষ্ণ নিজেই স্বীকার করেছেন
“শিবই আমার গুরু, শিবই সকল শক্তির উৎস।”
যেখানে যেখানে বিপদ এসেছে, ধর্ম ধ্বজাধারী শ্রীকৃষ্ণ সর্বাগ্রে পরমেশ্বর শিবকে স্মরণ করেছেন, তাঁর আশীর্বাদ চেয়েছেন, আর ভক্তবৎসল শিবও অনন্ত করুণায় সেই ভক্তের স্নেহরক্ষক হয়েছেন।
শ্রীকৃষ্ণের শিবভক্তি আমাদের শেখায়,
ভক্তি মানে অহংকার ভস্মীভূত করা, ভক্তি মানে ভস্মধারণ করে স্মরণ করা সবই ক্ষণস্থায়ী, কেবল শিবতত্ত্বই চিরন্তন।
অতএব, শ্রীকৃষ্ণের মতো যদি আমরা সত্যিকারের ভক্ত হতে চাই, তবে আমাদেরও শিবনাম জপ করতে হবে, হৃদয়ে শিবকে ধারণ করতে হবে। তখনই আমরা শ্রীকৃষ্ণের মতো আনন্দময়, প্রেমময় ও শুদ্ধ ভক্তিতে জীবন গড়তে পারবো। আর শিবভক্তির সেই পথেই লুকিয়ে আছে আমাদের মুক্তির আলো।
তাই আজ পরমপবিত্র জন্মাষ্টমীতে আমাদের শপথ নিতে হবে, আমরা কেবল গোপীপ্রেমী কৃষ্ণের ছবি পোস্ট করবো না; আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো শিবভক্ত শৈব হবো, পরমশৈব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতোই আমরা শৈব সনাতন আদর্শ ।
তিনি সর্বদাই শিবনাম জপে মগ্ন থেকে জগতের মঙ্গল করে গিয়েছেন । তিনি মহাভারতে উদ্দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, শিবই তার গুরু । তিনি পুরাণে দেখিয়েছেন, পরমেশ্বর শিবের আশীর্বাদ ছাড়া তিনিও সচল নন।
এমনকি পরমেশ্বর শিব এতটাই ভক্তবৎসল যে, তিনি শ্রীহরির ভক্তিতে এতটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে, তিনি ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুকে আমন্ত্রণ করে শিবলোকে ডেকে এনে গোপেশ পদে অভিষেক করিয়ে গোলোক প্রদান করেছিলেন, যাতে পরমেশ্বর শিবের প্রিয় গোমাতাদের দায়িত্ব পালনের নিয়ম গ্রহণের মধ্যে দিয়ে পরমেশ্বর সদশিবের কাছেই শ্রীহরি থাকতে পারেন। শ্রীহরিও একটি অংশাবতার হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপে সেই গোলকেই রইলেন, যাতে প্রভু শিবের সমীপে থাকবার অবসরপ্রাপ্ত হওয়া যায়।
এই হল ভক্ত-ভগবানের প্রেম 🥺
প্রভু শিব শ্রীহরি কৃষ্ণ কে নিজের শিবলোকে রেখে ঈশ্বরপদ প্রদান করলেন, ফলে শ্রীকৃষ্ণ জগতে মহাদেবের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে আরম্ভ করেছে। একথা মহাভারতের,
রুদ্রভক্ত্যা তু কৃষ্ণেন জগদ্ব্যাপ্তং মহাত্মনা।
তং প্রসাদ্য তদা দেবং বদর্য্যাং কিল ভারত ॥ ১০॥ অর্থাৎ প্রিয়তরত্বঞ্চ সর্বলোকেষু বৈ তদা ।
প্রাপ্তবানেব রাজেন্দ্র সুবর্ণাক্ষাত্মহেশ্বরাং ॥ ১১ ॥
[মহাভারত/অনুশাসনপর্ব/অধ্যায়১৩/১০-১১ শ্লোক]
অর্থ — মহাত্মা কৃষ্ণ তখন বদরিকাশ্রমে আপন ভক্তির গুণে সেই রুদ্রদেবকে প্রসন্ন করে জগৎ ব্যাপ্ত হতে পেরেছিলেন ॥১০
এই কৃষ্ণ অগ্নিনেত্র মহাদেবের অনুগ্রহেই তখন সেই সময় থেকে জগতে মহাদেবের চেয়েও প্রিয়তর হয়ে উঠেছেন ॥১১
✅ বেদের নীলরুদ্র সূক্ত মন্ত্রে সরাসরি উল্লেখিত হয়েছে যে পরমেশ্বর শিবই শ্রীকৃষ্ণের রূপ ধারণ করেছিলেন —
রুদ্র জলাষভেষজ নীলশিখণ্ড কর্মকৃৎ ।
প্রাশং প্রতিপ্রাশো জহ্যরসান্কৃণ্বোষধে ॥
[অথর্ববেদ/২/২৭/৬]
অর্থ — হে রুদ্র, তোমার স্মরণে জলও ঔষধরূপে পরিণত হয়, হে কপর্দযুক্ত (জটাধারী) ঈশ্বর তুমিই ময়ূরপুচ্ছমুকুটধারী নীলবর্ণের কৃষ্ণরূপ ধারণকারী নিত্যতরুণ, তুমিই উপাসকদের দুষ্কর্ম-ছেদনকারী, তুমি আমার প্রতিবাদী(শত্রু)দের পরাজিত করো, তাদের কণ্ঠ শুষ্ক করে দাও।
আরো দেখুন 👇
অপশ্যং ত্বাবরোহন্তং নীলগ্রীবং বিলোহিতম্।
উত ত্বা গোপা অদৃশন্নত ত্বোদহার্যঃ ॥ ১
উত ত্বা বিশ্বা ভূতানি তস্মৈ দৃষ্টায় তে নমঃ।
নমো অস্ত্র নীলশিখণ্ডায় সহস্রাক্ষায় বাজিনে ॥ ২
[তথ্যসূত্র - নীলরুদ্র উপনিষদ (রুদ্রশাখা)/২য় খণ্ড/২য় মন্ত্র]
অর্থ – হে রক্তবর্ণ (নেত্রযুক্ত) নীলকন্ঠ শিব! আমি ধরণীতে অবতরিত হতে থাকা আপনার স্বরূপ দর্শন করেছি, আপনার সেই স্বরূপ কে হয় গোপেরা দর্শন করেছে অথবা জল ভরতে থাকা গোপিনীরা দেখেছে অথবা বিশ্বের সমস্ত প্রাণী দেখেছে। আপনাকে দেখতে থাকা আপনার সেই শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ কে আমি নমস্কার করি। হে ময়ূরপুচ্ছমুকুটধারী ভগবন! আপনার প্রতি আমাদের নমস্কার। হে রুদ্রদেব! মহান শক্তিশালী ইন্দ্ররূপও আপনি স্বয়ং। আপনি আপনার প্রিয় ভক্তজনেদের সামনে অসংখ্য নেত্র দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজের বিরাট রূপে প্রকট হয়ে থাকেন ॥ ১-২ ৷৷
🔥 পরমেশ্বর শিব নিজের শৈবমার্গে জীবকে আনবার জন্য নিজেই এই বিষ্ণুরূপে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে অবতার নিয়ে নিজেরই শিবভক্তির আদর্শ ধারণ করে জগতকে শিবজ্ঞানময় ভগবদ্গীতার মাধ্যমে তথা নিজের সমগ্র জীবনের সকল দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে শৈবধর্মের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানীভক্ত - এই সত্য সম্পর্কে অবগত হতে পারেননি। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণরূপে প্রভু শিবই সকলকে শৈব সনাতন ধর্মের মার্গ দেখিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু মানুষেরা ঐ পরমেশ্বরের বাহ্যিক লীলা দেখে তা ই একমাত্র সত্য ভেবে বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন, কিন্তু শিবলীলা বুঝতে পারেনি এই সমাজের মানুষ।
তাই ভগবদ্গীতায় শিবস্তরের ভাবনায় যোগযুক্ত থেকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন —
যো মামজমনাদিঞ্চ বেত্তি লোকমহেশ্বরম্।
অসংমূঢ়ঃ মর্ত্ত্যেষু সর্ব্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ৩
[ভগবদ্গীতা/অধ্যায় ১০/৩ নং শ্লোক]
অর্থ — যাঁরা আমাকে (কৃষ্ণের বাহ্যিক দেহের থেকে মুক্ত আত্মাকে) অজ, অনাদি এবং সর্বলোকের মহেশ্বর (শিব) বলে জানেন , মানুষের মধ্যে তাঁরাই জ্ঞানী এবং সমস্ত পাপ হতে তাঁরা মুক্ত হন।
__________________________________________
বেদ গীতা পুরাণ সকল শাস্ত্রই সেই শিবতত্ত্বের দিকেই জীবকে নির্দেশ দিয়েছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণও সেই পথই প্রশস্ত করে দিয়েছেন।
অতএব, আজকের এই কলিযুগের সময়ে একমাত্র শিবভক্তি ও শৈবাচারই আমাদের উদ্ধার করতে পারবে। সত্যের পথ নির্ণয় করা বড়ই কঠিন, যারা চিনতে পেরেছেন তারা উদ্ধার পেয়ে গিয়েছেন।
তাই সমস্ত সনাতনীদের একমাত্র চিরন্তন মুক্তির পথ, সত্যের পথ, শান্তির পথ, শিবের সনাতন শৈবধর্মের পথে আসবার অনুরোধ করছি এই পরমপবিত্র জন্মাষ্টমীর শুভকালে 🕉️
এই প্রবন্ধটি নিজের আপনজন দের সাথে শেয়ার করে সকলকে শিবভক্তির পথে আহ্বান করুন।
দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ।
জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয় ।
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🕉️🚩🔱🚩
হর হর মহাদেব 🕉️🚩
✍️ লেখনীতে — ©️ শ্রী শৈলনাথ শৈব জী
⚜️ সম্পাদনায় — শ্রীগুরু নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
কপিরাইট ও প্রচারে —
International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
#ISSGT #শৈবধর্ম #জন্মাষ্টমী #শ্রীকৃষ্ণ #সনাতনধর্ম #Janmashtami2025 #janmashtamispecial #janmastami
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন