১০৮ উপনিষদের নাম ও তাদের বেদোক্ত শাখার পরিচয়

 


॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥


ভূমিকা -

 বর্তমান সময়ে দেখা যায় কেউ দাবী করছে যে, উপনিষদের সংখ্যা নাকি দশটি, কেউ বলছে যে  উপনিষদের সংখ্যা নাকি এগারো টি, কেউ বলছে  উপনিষদের সংখ্যা নাকি নয়টা, কেউ বলছে যে  উপনিষদের সংখ্যা নাকি বারোটি । আবার কেউ বলছে এই কয়েকটি উপনিষদ গুলি প্রধান উপনিষদ, এই গুলিই অসম্প্রদায়িক উপনিষদ, তাই এই গুলিই মান্য উপনিষদ। আর যত উপনিষদ আছে সেগুলি নাকি অপ্রধান উপনিষদ, সাম্প্রদায়িক উপনিষদ। উপনিষদ সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম মতামত রয়েছে, সেই সকল ব্যক্তিগত মতামত গুলি কতটা গ্রহণযোগ্য টা এই  প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে।


 শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী বলেন,

প্রধান উপনিষদ, অপ্রধান উপনিষদ, সাম্প্রদায়িক উপনিষদ, অসম্প্রদায়িক উপনিষদ বা মুখ্য উপনিষদ, গৌণ উপনিষদ বলে বেদে এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। বরং শুক্ল যজুর্বে‌দের অন্তর্গত মুক্তিকা উপনিষদের মধ্যে ভগবান রামচন্দ্র এক শত আঁট (১০৮) টি উপনিষদের উল্লেখ করে বলেছেন যে, এই উপনিষদ গুলি পাঠ করলে মুক্তি লাভ হয়।


১০৮ উপনিষদের নাম


গুরুপদিষ্টমার্গেণ ধ্যাযন্মদ্গুণমব্যযম্ ।

সাযুজ্যং দ্বিজঃ সম্যগ্ভজেদ্ভ্রমরকীটবৎ ॥২৪॥

সৈব সাযুজ্যমুক্তিঃ স্যাদ্ভহ্মানন্দকরী শিবা

চতুর্ভিধা তু যা মুক্তির্মদুপাসনযা ভবেৎ ॥২৫॥

ইয়ং কৈবল্যমুক্তিস্তু কেনোপাযেন সিদ্ধ্যতি ।

মাণ্ডুক্যমেকমেবালং মুমুক্ষুণাং বিমুক্তযে ॥২৬॥

তথাপ্যসিদ্ধং চেজ্ঞানং দশোপনিষদং পঠ ।

জ্ঞানং লব্ধ্বা চিরাদেব মামকং ধাম যাস্যসি ॥২৭॥

তথাপি দৃঢ়তা ন চেদ্বিদ্ জ্ঞানস্যাঞ্জনাসুত ।

দ্বাত্রিংশাখ্যোপনিষদং সমভ্যস্য নিবর্তয ॥২৮॥

বিদেহমুক্তাবিচ্ছা চেদষ্টোত্তরশতং পঠ ।

তাসাং ক্রম সশান্তিং চ শ্রুণু বক্ষ্যামি তত্ত্বতঃ ॥২৯॥

ঈশকেনকঠপ্রশ্নমুণ্ডমাণ্ডুক্যতিত্তিরিঃ ।

ঐতরেং চ ছান্দোগ্যং বৃহদারণ্যকং তথা ॥৩০॥

ব্রহ্মকৈবল্যজাবালশ্বেতাশ্বো হংস আরূণিঃ ।

গর্ভোং নারায়ণো হংসো বিন্দুর্নাদশিরঃ শিখা ॥৩১॥

মৈত্রায়ণী কৌষীতকী বৃহজ্জাবালতাপনী ।

কালাগ্নিরুদ্রমৈত্রেয়ী সুবালক্ষুরিমন্ত্রিকা ॥৩২॥

সর্বসারং নিরালম্বং রহস্যং বজ্রসূচিকম্ ।

তেজোনাদধ্যানবিদ্যাযোগতত্ত্বাত্মবোধকম্ ॥৩৩॥

পরিব্রাট্ ত্রিশিখী সীতা চুড়া নির্বাণমণ্ডলম্ ।

দক্ষিণা শরভং স্কন্দং মহানারায়ণাহ্বয়ম ॥৩৪॥

রহস্যং রামতপনং বাসুদেবং চ মুদ্গলম্ ।

শাণ্ডিল্যং পৈঙ্গলং ভিক্ষুমহচ্ছারীরকং শিখা ॥৩৫॥

তুরীয়াতীতসংন্যাসপিব্রাজাক্ষমালিকা 

অব্যক্তৈকাক্ষরং পূর্ণা সূর্যাক্ষ্যধ্যাত্মকুণ্ডিকা ॥৩৬॥

সাবিত্র্যাত্মা পাশুপতং পরং ব্রহ্মাবধূতকম্ ।

ত্রিপুরাতপনং দেবীত্রিপুরা কঠভাবনা ।

হৃদয়ং কুণ্ডলী ভস্ম রুদ্রাক্ষগণদর্শনম্ ॥৩৭॥

তারসারমহাবাক্য পঞ্চব্রহ্মাগ্নিহোত্রকম্ ।

গোপালতপনং কৃষ্ণং যাজ্ঞবল্ক্যং বরাহকম্ ॥৩৮॥

শাঠ্যায়নী হয়গ্ৰীবং দত্তাত্রেয়ং চ গারুড়ম্ ।

কলিজাবালিসৌভাগ্যরহস্য‌ঋচমুক্তিকা ॥৩৯॥

এবমষ্টোত্তররাতং ভাবনাত্রয়নাশনম্ ।

জ্ঞানবৈরাগ্যদং পুংসাং বাসনাত্রয়নাশনম্ ॥৪০॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/১ম মণ্ডল/২৪-৪০ নং মন্ত্র)

অর্থ — একমাত্র মাণ্ডুক্য উপনিষদই মুক্তিকামীদের মুক্তি দিতে সক্ষম। তাতেও যদি জ্ঞানের পরিপক্কতা না আসে তবে দশটি উপনিষদ পাঠ করুন। তা থেকে জ্ঞান লাভ করে, আপনি শীঘ্রই আমাকে (নিজেকে) আত্মরূপ মঙ্গলময় শিব হিসেবে জেনে অদ্বৈত ধাম অর্থাৎ তেজা রূপে লাভ করবেন। অঞ্জনীকুমার ! তাতেও যদি জ্ঞানের দৃঢ়তা না আসে, তবে বত্রিশটি উপনিষদের যথাযথ অনুশীলন করে সংসার থেকে অবসর নিন। যদি বিদেহমুক্ত শরীর ত্যাগ করে মুক্তি পেতে চান তাহলে একশো আটটি (১০৮ টি) উপনিষদ পাঠ করুন। আমি আপনাকে সেই উপনিষদের নাম, ক্রম এবং শান্তি পাঠ বলব ; শুনুন —  

(১) ঈশ, 

(২) কেন, 

(৩) কঠ, 

(৪) প্রশ্ন, 

(৫) মুণ্ডক, 

(৬) মাণ্ডুক্য, 

(৭) তৈত্তিরীয়, 

(৮) ঐতরেয়, 

(৯) ছান্দোগ্য, 

(১০) বৃহদারণ্যক, 

(১১) ব্রহ্ম, 

(১২) কৈবল্য, 

(১৩) জাবাল, 

(১৪) শ্বেতাশ্বতর, 

(১৫) হংস, 

(১৬) আরুণিক, 

(১৭) গর্ভ, 

(১৮) নারায়ণ, 

(১৯) পরমহংস, 

(২০) অমৃতবিন্দু, 

(২১) অমৃতনাদ, 

(২২) অথর্বশিরস্, 

(২৩) অথর্বশিখা, 

(২৪) মৈত্রায়ণী, 

(২৫) কৌষীতকি ব্রাহ্মণ, 

(২৬) বৃহজ্জাবাল, 

(২৭) নৃসিংহতাপনীয়, 

(২৮) কালাগ্নিরুদ্র (নীলরুদ্র শাখা সহ), 

(২৯) মৈত্রেয়ী, 

(৩০) সুবাল, 

(৩১) ক্ষুরিকা, 

(৩২) মন্ত্রিকা, 

(৩৩) সর্বসার, 

(৩৪)  নিরালম্ব, 

(৩৫) শুকরহস্য, 

(৩৬) বজ্রসূচিকা, 

(৩৭) তেজোবিন্দু , 

(৩৮) নাদবিন্দু , 

(৩৯) ধ্যানবিন্দু , 

(৪০) ব্রহ্মবিদ্যা, 

(৪১) যোগতত্ত্ব , 

(৪২) আত্মপ্রবোধ, 

(৪৩) নারদপরিব্রাজক, 

(৪৪) ত্রিশিখিব্রাহ্মণ, 

(৪৫) সীতা, 

(৪৬) যোগচূড়ামণি, 

(৪৭) নির্বাণ, 

(৪৮) মণ্ডলব্রাহ্মণ, 

(৪৯) দক্ষিণামূর্তি, 

(৫০) শরভ, 

(৫১) স্কন্দ, 

(৫২) মহানারায়ণ, 

(৫৩) অদ্বয়তারক, 

(৫৪) রামরহস্য, 

(৫৫)রামতাপনীয়, 

(৫৬) বাসুদেব, 

(৫৭) মুদ্গল, 

(৫৮) শাণ্ডিল্য, 

(৫৯) পৈঙ্গল, 

(৬০) ভিক্ষুক, 

(৬১) মহৎ, 

(৬২) শারীরক, 

(৬৩) যোগশিখা, 

(৬৪) তুরীয়াতীত, 

(৬৫) সন্ন্যাস, 

(৬৬) পরমহংসপরিব্রাজক, 

(৬৭) অক্ষমালা, 

(৬৮) অব্যক্ত, 

(৬৯) একাক্ষর, 

(৭০) অন্নপূর্ণা, 

(৭১) সূর্য, 

(৭২) অক্ষি, 

(৭৩) অধ্যাত্ম, 

(৭৪) কুণ্ডিকা, 

(৭৫) সাবিত্রী, 

(৭৬) আত্মা, 

(৭৭) পাশুপত, 

(৭৮) পরব্রহ্ম, 

(৭৯) অবধূত, 

(৮০) ত্রিপুরাতাপনীয়, 

(৮১) দেবী, 

(৮২) ত্রিপুরা, 

(৮৩) কঠরুদ্র, 

(৮৪) ভাবনা, 

(৮৫) রুদ্রহৃদয়, 

(৮৬) যোগকুণ্ডলী, 

(৮৭) ভস্মজাবাল, 

(৮৮) রুদ্রাক্ষজাবাল, 

(৮৯) গণপতি, 

(৯০) জাবালদর্শন, 

(৯১) তারসার, 

(৯২) মহাবাক্য, 

(৯৩) পঞ্চব্রহ্ম, 

(৯৪) প্রাণাগ্ৰিহোত্র, 

(৯৫) গোপালতাপনীয়, 

(৯৬) কৃষ্ণ, 

(৯৭) যাজ্ঞবাল্ক্য, 

(৯৮) বরাহ, 

(৯৯) শাট্যায়নীয়, 

(১০০) হয়গ্ৰীব, 

(১০১) দত্তাত্রেয়, 

(১০২) গরুড়, 

(১০৩) কলিসন্তরণ, 

(১০৪) জাবালি, 

(১০৫) সৌভাগ্যলক্ষী, 

(১০৬) সরস্বতীরহস্য, 

(১০৭) বহ্বৃচ 

এবং 

(১০৮) মুক্তিকোপনিষদ্ ॥২৪-৪০॥

________________________________________________

🌑ব্যাখ্যা - 

ভগবান রামচন্দ্র হনুমান জীকে মুক্তি প্রদান করতে সক্ষম এমন বচন উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র একটি মাণ্ডুক্য উপনিষদ‌ই জীবকে মুক্তি দিতে সক্ষম। কারণ মাণ্ডুক্য উপনিষদে সরাসরি ব্রহ্মজ্ঞানে নিজ আত্মাতে একমাত্র যে অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিব‌ই বোধিত হয়, সেই শিবকেই আত্মা বলে জেনে আত্ম উপলব্ধি করাই জীবনের উদ্দেশ্য হ‌ওয়া উচিত - এমন শ্রুতিবচন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাণ্ডুক্য উপনিষদের ৭নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, শান্তং শিবমদ্বৈতং চতুর্থং মন্যন্তে স আত্মা স বিজ্ঞেয়ঃ ॥ - অর্থাৎ, সর্বত্র স্থিত (শান্ত) একমাত্র অদ্বিতীয় শিব‌ই চতুর্থপাদরূপী সমাধীতে তুরীয় অবস্থায় স্থিত, যাকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি নিজ আত্মা বলে জেনে থাকেন, এই আত্মস্বরূপকেই উপলব্ধি করবার চেষ্টা করা উচিত। 

মুক্তিকা উপনিষদের ২য় অধ্যায়ের ৫৬ নং মন্ত্রে ভগবান রামচন্দ্র বলেছেন, আমার (রামরূপী দেহের) মধ্যে পরমার্থি‌ক দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ‌ পরমব্রহ্ম শিব রয়েছেন -

ঊর্ধ্বপূর্ণমধঃপূর্ণং মধ্যপূর্ণং শিবাত্মকম্ 

সাক্ষাদ্বিধিমুখো হ্যেষ সমাধিঃ পারমার্থিকঃ ॥৫৬॥

সুতরাং, ভগবান রামচন্দ্র বলেছেন, শুধুমাত্র একটি মাণ্ডুক্য উপনিষদ‌ই জীবকে মুক্তি দিতে সক্ষম। কারণ মাণ্ডুক্য উপনিষদে সরাসরি ব্রহ্মজ্ঞানে নিজ আত্মাতে একমাত্র যে অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিব‌ই বোধিত হয়। যা উপলব্ধি করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে।

কিন্তু যারা  মাণ্ডুক্য উপনিষদ‌ পাঠ করেও বুঝতে পারবে না, তাদের জন্য আরও দশটি উপনিষদ পাঠ করতে বলেছেন ভগবান রামচন্দ্র, কিন্তু এইখানে কথা দশটি উপনিষদ বলতে নির্দিষ্ট করে নাম উল্লেখ করেননি, তাই কেউ যদি দশটি উপনিষদ বলতে নিজের ইচ্ছে মতো নির্দিষ্ট কয়েকটি উপনিষদ কে অসাম্প্রদায়িক নিরপেক্ষ প্রধান মুখ্য উপনিষদ বলে মান্য করে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।  কারণ, এইধরণের কোন নির্দেশ এইখানে নেই। তাই ভিত্তিহীন দাবীর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

যাদের এই দশটি উপনিষদ পাঠ করেও আত্ম-শিবতত্ত্ব বোধগম্য হয়না, তাদের জন্য বত্রিশ টি উপনিষদ পাঠ করবার কথা বলা হয়েছে, এইখানেও বত্রিশ টি উপনিষদ বলতে নির্দিষ্ট করে নাম উল্লেখ করা হয়নি। এরপরেও যাদের এই বত্রিশ টি উপনিষদ পাঠ করেও আত্ম-শিবতত্ত্ব বোধগম্য হয়না, তার একশত আঁট (১০৮) টি উপনিষদ পাঠ করবার কথা বলা হয়েছে, এইখানে একশত আঁট (১০৮) টি উপনিষদের নির্দিষ্ট করে নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যা পাঠ করলে মুক্তি যাচনাকারী ব্যক্তি অবশ্যই আত্ম-শিবতত্ত্ব ঠিক ভাবে জেনে উপলব্দি করে মুক্তি লাভ করে যান। 

এই একশত আঁট (১০৮) টি উপনিষদ হল বেদ। এই ১০৮ টি উপনিষদই প্রধাত ও মূখ্য উপনিষদ। যারা এই শাস্ত্রীয় বচন কে স্বীকার করেন না তার কাছে এই বচন অস্বীকার করবার জন্য কোনো বেদবচনের প্রমাণ নেই, বরং বেদবচনের দ্বারা ১০৮ টি উপনিষদই প্রামাণিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। যারা সব জেনেও এই শাস্ত্রীয় বচন কে স্বীকার করেন না তারা প্রকৃতপক্ষে বেদবিরোধী, অধার্মিক, পাপী ও অসত্যের পথিক। 


১০৮ উপনিষদের শাখার পরিচয় 


অথ হৈনং শ্রীরামচন্দ্রং মারুতিঃ পপ্রচ্ছ

ঋগ্ববেদাদিবিভাগেন পৃথক্ শান্তিমনুব্রূহীতি ।

স হোবাচ শ্রীরামঃ ।

ঐতরেয়কৌষীতকীনাদবিন্দ্বাত্মপ্রবোধনির্বাণ-

মুদ্গালাক্ষমালিকাত্রিপুরাসৌভাগ্যবহ্বৃচা

নামৃগ্বেদতানাং দশসংখ্যাকানামুপনিষদাং

বাঙ্মে মনসীতি শান্তিঃ ॥১॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/২য় মণ্ডল/১ নং মন্ত্র)

অর্থ — এরপরে শ্রী হনুমানজী শ্রীরামচন্দ্রজীকে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রভু! অনুগ্রহ করে ঋগ্বেদগুলির অনুসারে উপনিষদগুলিকে পৃথক অংশে ভাগ করুন এবং শান্তির জন্য মন্ত্রগুলি বলুন।

শ্রীরামচন্দ্রজী বললেন — 

(১) ঐতরেয়‌ 

(২) কৌষীতকিব্রাহ্মণ 

(৩) নাদবিন্দু 

(৪) আত্মপ্রবোধ 

(৫) নির্বাণ 

(৬) মুদ্গল 

(৭) অক্ষমালিকা 

(৮) ত্রিপুরা 

(৯) সৌভাগ্যলক্ষ্মী 

এবং 

(১০) বহ্বৃচ — এই দশটি (১০) উপনিষদ হলো ঋগ্ববেদীয় এবং তাদের সকলই শান্তিমন্ত্র হলো 'বাঙ্ মে মনসি' ইত্যাদি ॥ ১ ॥


🔖শান্তিমন্ত্রের সম্পূর্ণ রূপ ঃ

ॐ বাঙ্‌ মে মনসি প্রতিষ্ঠিতা, মনো মে বাচি প্রতিষ্ঠিতম্‌, আবিরাবির্ম এধি। বেদস্য ম আণীস্থঃ, শ্রুতং মে মা প্রহাসীঃ, অনেন অধীতেন অহোরাত্রান সন্দধামি। ঋতং বদিষ্যামি, সত্যং বদিষ্যামি, তন্মামবতু, তদ্বক্তারমবতু, অবতু মাম্‌, অবতু বক্তারম্‌, অবতু বক্তারমঃ॥
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

----------------------------------------------

ঈশাবাস্যবৃহদারণ্যজাবালহংসপরমহংসসুবাল-

মন্ত্রিকানিরালম্বত্রিশিখীব্রাহ্মণমণ্ডলব্রাহ্মণাদ্বয়তারক-

পৈঙ্গলভিক্ষুতুরীয়াতীতাধ্যাত্মতারসারয়াজ্ঞবল্ক্য-

শাট্যায়নীমুক্তিকানাং শুক্লযজুর্বেদগতানামেকোনবিংশতি-

সংখ্যাকানামুপনিষদাং পূর্ণমদ ইতি শান্তিঃ ॥২॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/২য় মণ্ডল/২ নং মন্ত্র)

অর্থ  

(১) ঈশাবাস্য 

(২) বৃহদারণ্যক 

(৩) জাবাল 

(৪) হংস 

(৫) পরমহংস 

(৬) সুবাল 

(৭) মন্ত্রিকা 

(৮) নিরালম্ব 

(৯) ত্রিশিখিব্রাহ্মণ 

(১০) মণ্ডলব্রাহ্মণ 

(১১) অদ্বয়তারক 

(১২) পৈঙ্গল 

(১৩) ভিক্ষুক 

(১৪) তুরীয়াতীত 

(১৫) অধ্যাত্ম 

(১৬) তারসার 

(১৭) যাজ্ঞবল্ক্য 

(১৮) শাট্যায়নী 

এবং

(১৯)মুক্তিকা     —  এইগুলি শুক্লযজুর্বেদের ঊনিশটি (১৯) উপনিষদ। তাদের শান্তিমন্ত্র হলো 'পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্' ইত্যাদি ॥ ২ ॥


🔖শান্তিমন্ত্রের সম্পূর্ণ রূপ ঃ

 পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে 
 শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ 

(তথ্যসূত্র - শুক্ল যজুর্বেদ/বৃহদারণ্যক উপনিষদ/৫ম অধ্যায়/১ম ব্রাহ্মণ/১ম মন্ত্র)

---------------------------------------------------------

কঠবল্লীতৈত্তিরীয়কব্রহ্মকৈবল্যশ্বেতাশ্বতরগর্ভ-

নারায়ণামৃতবিন্দ্বমৃতনাদকালাগ্নিরুদ্রক্ষুরিকা-

সর্বসারশুকরহস্যতেজোবিন্দুধ্যানবিন্দুব্রহ্মবিদ্যা-

যোগতত্ত্বদক্ষিণামূর্তিস্কন্দশারীরকযোগশিখৈকাক্ষর-

অক্ষ্যবধূতকঠরুদ্রহৃদয়যোগকুণ্ডলিনীপঞ্চব্রহ্ম-

প্রাণাগ্নিহোত্রবরাহকলিসন্তরণসরস্বতীরহস্যানাং

কৃষ্ণযজুর্বেদগতানাং দ্বাত্রিংশত্সংখ্যাকানমুপনিষদাং

সহ নাববত্বিতি শান্তিঃ ॥৩॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/২য় মণ্ডল/৩ নং মন্ত্র)

অর্থ  

(১) কঠবল্লী 

(২) তৈত্তিরীয় 

(৩) ব্রহ্ম 

(৪) কৈবল্য 

(৫) শ্বেতাশ্বতর 

(৬) গর্ভ 

(৭) নারায়ণ 

(৮) অমৃতবিন্দু 

(৯) অমৃতনাদ 

(১০) কালাগ্নি রুদ্র (রুদ্রশাখার রুদ্র, নীলরুদ্র সহ)

(১১) ক্ষুরিকা 

(১২) সর্বসার 

(১৩) শুকরহস্য 

(১৪) তেজোবিন্দু 

(১৫) ধ্যানবিন্দু 

(১৬) ব্রহ্মবিদ্যা 

(১৭) যোগতত্ত্ব 

(১৮) দক্ষিণামূর্তি 

(১৯) স্কন্দ 

(২০) শারীরক 

(২১) যোগশিখা 

(২২) একাক্ষর 

(২৩) অক্ষি 

(২৪) অবধূত 

(২৫) কঠরুদ্র (রুদ্রশাখার অন্তর্গত উপনিষদ)

(২৬)রুদ্রহৃদয় (রুদ্রশাখার অন্তর্গত উপনিষদ)

(২৭) যোগকুণ্ডলী 

(২৮) পঞ্চব্রহ্ম 

(২৯) প্রাণাগ্নিহোত্র 

(৩০) বরাহ 

(৩১) কলিসন্তরণ* (শৈব উপনিষদ)

এবং 

(৩২)সরস্বতীরহস্য       — এইগুলি হলো কৃষ্ণযজুর্বেদের বত্রিশটি (৩২) উপনিষদ। তাদের শান্তিমন্ত্র হলো 'সহ নাববতু সহ নৌ ভুনক্তু' ইত্যাদি ॥ ৩ ॥


🔖শান্তিমন্ত্রের সম্পূর্ণ রূপ ঃ

 সহ নাববতু, সহ নৌ ভুনক্তু, সহ বীর্যং করবাবহৈ।
তেজস্বি নাবধীতমস্তু মা বিদ্বিষাবহৈ 

 শান্তিঃ, শান্তিঃ শান্তিঃ 

(কৃষ্ণ যজুর্বেদ/তৈত্তিরীয় উপনিষদ/২য় খণ্ড/১ম অধ্যায়)


[‘*’ - বিশেষ দ্রষ্টব্য : ১০৮ উপনিষদে উল্লেখিত কলিসন্তরণ নামক উপনিষদ বলতে শিব মাহাত্ম্য সম্পর্কিত উপনিষদ কে বোঝায়। বর্তমানে কলিরসন্তরণ নামক একটি বিষ্ণু মাহাত্ম্য সমন্বিত অবার্চিন উপনিষদ দেখতে পাওয়া যায়, যা অপেক্ষাকৃত নবীন, (আনুমানিক প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে এটি রচিত হয়েছিল গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভাবপন্থীদের দ্বারা)। তাদের দ্বারা এক‌ই ধরণের নাম রাখবার কারণে প্রকৃত কলিরসন্তরণ উপনিষদের স্থানে অবার্চিন নবীন কলিরসন্তরণ স্থান নেয় মাত্র। প্রকৃত কলিরসন্তরণ উপনিষদে ‘সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্’ , ‘বিশ্বেশ্বরায় মহাদেবায় ত্র্যম্বকায় ত্রিপুরান্তকায়’, ‘শিবলিঙ্গায় নমঃ’ ইত্যাদি মন্ত্র উপস্থিত।]

-------------------------------------------------------------

কেনছান্দোগ্যারুণিমৈত্রায়ণিমৈত্রেয়ীবজ্রসূচিকাযোগচূড়ামণি-

বাসুদেবমহত্সংন্যাসাব্যক্তকুণ্ডিকাসাবিত্রীরুদ্রাক্ষজাবালদর্শন-

জাবালীনাং সামবেদগতানাং ষোড়শসংখ্যাকানা-

মুপনিষদানামাপ্যায়ন্ত্বিতি শান্তিঃ ॥৪॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/২য় মণ্ডল/৪ নং মন্ত্র)

অর্থ  

(১) কেন 

(২) ছান্দগ্য 

(৩) আরুণিক 

(৪) মৈত্রায়ণী 

(৫) মৈত্রেয়ী 

(৬) বজ্রসূচিকা 

(৭) যোগচূড়ামণি 

(৮) বাসুদেব 

(৯) মহৎ*

(১০) সন্যাস 

(১১) অব্যক্ত 

(১২) কুণ্ডিকা 

(১৩) সাবিত্রী 

(১৪) রুদ্রাক্ষজাবাল 

(১৫) জাবালদর্শন 

এবং 

(১৬) জাবালি — এইগুলি হলো সামবেদের ষোলটি (১৬) উপনিষদ। তাদের শান্তিমন্ত্র হলো 'আপ্যায়ন্তু মমাঙ্গানি' ইত্যাদি ॥ ৪ ॥


🔖শান্তিমন্ত্রের সম্পূর্ণ রূপ ঃ

ॐ আপ্যায়ন্তু মমাঙ্গানি বাক্-প্রাণশ্চক্ষুঃ

শোত্রমথবলমিন্দ্রিয়ানি চ সর্বাণি।

সর্বং ব্রহ্মৌপনিষদং। মা অহং ব্রহ্ম

নিরাকুর্যাং, মা মা নিরাকরোৎ অনিরাকরণম্ অস্তু অনিরাকরণং মে অস্তু

তদাত্মনি নিরতে য উপনিষৎসু ধর্মাস্তে

ময়ি সন্তু তে ময়ি সন্তু।

ॐ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।


[‘*’ - বিশেষ দ্রষ্টব্য : ১০৮ উপনিষদে উল্লেখিত সামবেদের অন্তর্গত ‘মহৎ’ নামক উপনিষদটিকে অনেকে ‘মহঃ/মহোপনিষদ’ বোঝায়, মহঃ বা মহোপনিষদ নামে ১০৮ উপনিষদের মধ্যে কোনো উপনিষদ নেই। মহোপনিষদ একটি অবার্চিন উপনিষদ, তাই মহৎ উপনিষদকে মহোপনিষদ বলে ভেবে বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ মহৎ উপনিষদ আর অবার্চিন মহঃ বা মহোপনিষদ হল একে অপরের থেকে পরস্পর ভিন্ন ভিন্ন।]

------------------------------------------------------

প্রশ্নমুণ্ডকমাণ্ডুক্যাথর্বশিরোথর্বশিখাবৃহজ্জাবাল-

নৃসিংহতাপনীনারদপরিব্রাজকসীতাশরভমহানারায়ণ-

রামরহস্যরামতাপনীশাণ্ডিল্যপরমহংসপরিব্রাজক-

অন্নপূর্ণাসূর্যাত্মপাশুপতপরব্রহ্মত্রিপুরাতপনদেবীভাবনা- ভস্মজাবালগণপতিমহাবাক্যগোপালতপনকৃষ্ণহয়গ্ৰীব-

দত্তাত্রেয়গারুড়ানামথর্ববেদগতানামেকত্রিংশত্সংখ্যাকানা-

মুপনিষদাং ভদ্রং কণোংভিরিতি শান্তিঃ॥৫॥

(তথ্যসূত্র - শুক্ল-যজুর্বেদ/মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/২য় মণ্ডল/৫ নং মন্ত্র)

অর্থ  

 (১) প্রশ্ন 

(২) মুণ্ডক 

(৩) মাণ্ডুক্য 

(৪) অথর্বশির (অথর্বশিরস্ / অথর্বশির্‌ষ)

(৫) অথর্বশিখা 

(৬) বৃহজ্জাবাল 

(৭) নৃসিংহতাপনীয় 

(৮) নারদপরিব্রাজক 

(৯) সীতা 

(১০) শরভ 

(১১) মহানারায়ণ* 

(১২) রামরহস্য 

(১৩) রামতাপনীয় 

(১৪) শাণ্ডিল্য 

(১৫) পরমহংসপরিব্রাজক 

(১৬) অন্নপূর্ণা 

(১৭) সূর্য 

(১৮) আত্মা 

(১৯) পাশুপত 

(২০) পরব্রহ্ম 

(২১) ত্রিপুরাতাপনীয় 

(২২) দেবী 

(২৩) ভাবনা 

(২৪) ভস্মজাবাল 

(২৫) গণপতি 

(২৬) মহাবাক্য 

(২৭) গোপালতাপনীয় 

(২৮) কৃষ্ণ 

(২৯) হয়গ্ৰীব 

(৩০) দত্তাত্রেয় 

এবং

(৩১)গরুড়          — এইগুলি হলো অথর্ববেদের একত্রিশ (৩১) টি উপনিষদ। তাদের শান্তিমন্ত্র হলো 'ভদ্রং কণোংভিঃ শৃণুযামন' ইত্যাদি ॥ ৫ ॥


🔖শান্তিমন্ত্রের সম্পূর্ণ রূপ ঃ

ॐ ভদ্রং কর্ণেভিঃ শৃণুয়াম দেবাঃ ভদ্রং পশ্যেমাক্ষভির্য জত্রাঃ
স্থিরৈরঅঙ্গৈস্তুষ্টু‌বাংসস্তনূহভির্ব্য‌শেম দেবহিতং যদায়ুঃ

 শান্তিঃ, শান্তিঃ শান্তিঃ 
(ঋগ্বেদ/শাকল শাখা/১ম মণ্ডল/৮৯ সূক্ত/৮)
[‘*’ - বিশেষ দ্রষ্টব্য : ১০৮ উপনিষদে উল্লেখিত অথর্ববেদের অন্তর্গত মহানারায়ণ নামক উপনিষদ বলতে মহানারায়ণ উপনিষদকেই বোঝায়, বর্তমানে দ্বিপাদবিভূতি মহানারায়ণ নামক একটি  অবার্চিন উপনিষদ দেখতে পাওয়া যায়, যা মূল অথর্ববেদীয় মহানারায়ণ উপনিষদ নয়।]

---------------------------------------------------------------

🌑 ব্যাখ্যা - ১০৮ উপনিষদ হল বিভিন্ন বেদের বিভিন্ন শাখার অন্তর্গত, তাই ১০৮ উপনিষদ কে অবশ্যই  বেদের বচন বলে মান্য করা উচিত। 

________________________________________________

এই প্রবন্ধটি এখানে সমাপ্ত হল ।


নন্দী মহারাজের জয়

পরমেশ্বর শিবের জয়


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

  1. আপনি কি বলতে পারবেন কালিসন্তরণ উপনিষদের শৈব সংস্করণটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং কোন প্রমাণের ভিত্তিতে বলছেন যে এটি বৈষ্ণব সংস্করণের তুলনায় বেশি প্রাচীন বা প্রামাণিক? ১৫শ বা ১৬শ শতাব্দীর আগেই কি কোনো আচার্য এই সংস্করণ থেকে শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন এরকম নির্ভরযোগ্য উদাহরণ আছে কি?

    যদি সত্যিই থাকে তবে সেই সূত্র বা পাণ্ডুলিপির আসল ছবি দেখতে চাই কারণ সঠিক প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের দাবিকে সহজে বিশ্বাস করা যায় না। আজকের দিনে এমনকি AI-ও এলোমেলো সংস্কৃত শ্লোক তৈরি করে যেকোনো শাস্ত্রের নামে চালিয়ে দিতে পারে | আর সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই ধরনের জাল, এআই-নির্মিত শ্লোক ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। আমি কেবল সত্যতা যাচাই করতে চাই তাই আশা করি আমার প্রশ্নটিকে ভুলভাবে না নিয়ে এটিকে সামান্য অনুসন্ধানী কৌতূহল হিসেবে নেবেন।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ