পরমশৈব জগৎগুরু রেণুকাচার্যের আবির্ভাব কাহিনী

 জগৎগুরু রেণুকাচার্যের আবির্ভাব কাহিনী।


জগৎগুরু রেণুকাচার্য হলেন প্রাচীন শৈব পরম্পরা বীরশৈব পরম্পরার প্রতিষ্ঠাতা। 

বীরশৈব পরম্পরার প্রতিষ্ঠাতা হলেন - রেণুকাচার্য, দারুকাচার্য, ঘটকর্ণাচার্য, ধেনুকর্ণাচার্য ও বিশ্বকর্ণাচার্য। যাদের একত্রে পঞ্চাচার্য বলা হয়। এনারা প্রত্যেকেই এক একজন শিবগণ।


একবার ভগবান শিব কৈলাশ পর্বতে বিরাজ করছিলেন। ভগবতী উমা ও তাঁর পরিবারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দেবী সরস্বতী, অন্যান্য দেব পুত্রী, নন্দী প্রভৃতি প্রমথগন তাঁর সেবা করছিলেন। এছাড়াও ব্রহ্মা, ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতা, বশিষ্ঠ এবং অন্যান্য ঋষিগণ, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টম বাসু, একাদশ রুদ্র, রাক্ষস, দানব আদি তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ভগবান শিবও তাদের সকল কে আনন্দময় দৃষ্টি তে দেখছিলেন। 

এই সময় পরমেশ্বর শিব তার প্রিয় গণ রেণুক কে প্রসাদ হিসেবে একটি পান দেওয়ার জন্য ডাকলেন। শিবের ডাক শুনে রেণুক একটু অভিমানি হয়ে ওঠেন এবং সেখানে থাকা আর এক শিবগণ দারুক কে অতিক্রম করে শিবের কাছে যাওয়ার সাহস করলেন। এই দুষ্ট আচরণ দেখে ভগবান শিব রেণুককে বললেন- হে দুর্বুদ্ধে ! শিব ভক্তদের উলঙ্ঘন করা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের কারণ হয়। এতে মানুষের আয়ু, লক্ষ্মী বংশ ও খ্যাতি বিনষ্ট হয়।

প্রাচীনকালে যমরাজ আমার ভক্ত মার্কণ্ডেয়কে অমান্য করে আমার পায়ের আঘাতে ধ্বংস হয়েছিলেন।

আমার ভক্ত দধীচির সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে জনার্দন (বিষ্ণু) তার চক্র ও ধনুক ভেঙ্গে পরাজিত হয়েছিলেন।

প্রজাপতি দক্ষ যজ্ঞ সভায় আমার ভক্ত গণেশ্বর দের অপমান করে ছাগলের মুখ প্রাপ্ত করেছিলেন।

এইভাবে সর্বদা আমার ভক্তদের উল্লঙ্ঘনকারি রা ধংস হয়েছে। অতএব আমার ভক্তদের কখনও উল্লঙ্ঘন করা উচিত নয়। হে রেণুক তুমি বিনা কারণে আমার পরম ভক্ত দারুক কে অতিক্রম করেছো, তাই তুমি এবার পৃথিবী তে মানুষ জন্ম নেবে। পরমেশ্বর ভগবান শিবের এই কথা শুনে রেণুক ভয়ভীত হয়ে পরমেশ্বরের পায়ে পড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি প্রার্থনা করছিলেন যাতে তাকে মানবগর্ভে জন্ম না নিতে হয়। 

রেণুকের প্রার্থনায় ভগবান শিব খুশি হয়ে তাকে আশ্বস্থ করে বললেন - তোমাকে কোনো মানব গর্ভে জন্ম নিতে হবে না।

শ্রীশৈলের উত্তরাঞ্চলে ত্রিলিং দেশে ( বর্তমানের তেলেঙ্গানা ) সোমেশ্বর নামে আমার একটি শিব লিঙ্গ রয়েছে। সেই শিবলিঙ্গ থেকে তুমি সরাসরি আবির্ভূত হবে এবং পৃথিবীতে বেদ অনুসারে বীরশৈব সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করবে। এই বলে ভগবান তাঁর অন্তঃকক্ষে চলে গেলেন এবং রেণুক এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলেন। #ISSGT 


সোমেশ্বর মহাদেব থেকে রেণুকাচার্য যখন আবির্ভূত হন, তখন তেলেঙ্গানা দেশের সমস্ত মানুষ এত তেজস্বী পুরুষ কে শিবলিঙ্গ থেকে প্রকট হতে দেখে খুবই বিস্মিত হয়ে গেলেন।

রেণুকাচার্যের সমস্ত শরীর ভস্মে আচ্ছাদিত ছিলো। তিনি রুদ্রাক্ষমালায় বিভূষিত ছিলেন, তাঁর মস্তকে একটি লিঙ্গ ধারণ করা ছিলো, জটামুকুটের সাথে যুক্ত তার মস্তক ত্রিপুণ্ড্র দ্বারা চিহ্নিত ছিল।

তিনি সবুজ বস্ত্র পরিধান করেছিলেন, তার এক হাতে একটি দণ্ড ও অন্য হাতে কমণ্ডুলি ধারণ করা ছিলো। 

তিনি পরিপূর্ণ শিবাদ্বৈত জ্ঞানের অধিকারী ও সদা পরমানন্দ ভাব তথা জগৎের সমস্ত বাসনা থেকে মুক্ত ছিলেন। 

তার দর্শন মাত্রই জীবের সমস্ত পাপ নাশ হয়ে যায়। 


এইভাবে জগৎগুরু রেণুকাচার্য শিবের সদ্যজাত মুখ থেকে প্রকট হয়ে জগৎে বীরশৈব পরম্পরা স্থাপিত করেন।


শুভ রেণুকাচার্য আবির্ভাব তিথি 🙏

ফাল্গুন মাসের শুক্ল ত্রয়োদশী তিথির শুভ মুহূর্তে জগৎগুরু রেণুকাচার্য শৈবাচার্য জী জীবেদের উদ্ধারের নিমিত্তে ত্রিলিঙ্গদেশের কুল্যপাক নামের এঅটি গ্রামে সিদ্ধেশ্বর স্বয়ম্ভু লিঙ্গ হইতে প্রকট হন।


শাস্ত্র প্রমাণ —

শ্রীমদ্রেবণসিদ্ধস্য কুল্যপাকপুরোত্তমে ।  সোমেশ্বরলিঙ্গাজ্জননমাবাসঃ কদলীপুরে ॥ ৮

[স্বয়ম্ভু আগম/উত্তর ভাগ/৯ম পটল]

অর্থ — কুল্যপাক নামে প্রসিদ্ধ নগরীতে রেবণসিদ্ধ (কলিযুগে এই নামে প্রকটিত হন) সোমেশ্বর নামক শিবলিঙ্গ হইতে জন্মগ্রহণ করেন এবং কদলীপুরে (মতান্তরে রম্ভাপুরে) অবস্থান করেন।


বিশেষ ঘটনা —

তিনি অগস্ত্য মুনি জী কে মহাপাশুপত দীক্ষা প্রদান করে পঞ্চবীডি সূত্র প্রদান করেন। এই জন্য পাশুপত তন্ত্রে তাকে ব্রহ্মাদি সকল দেবতা এবং মুনিঋষিদের গণনায়ক বলা হয়েছে।



✍️ -  শৈলনাথ শৈব ( ISSGT ) 

কপিরাইট ও প্রচারে - INTERNATIONAL SHIVA SHAKTI GYAN TIRTHA 


বন্দে সদাশিবম্ জগৎগুরুম্ 🙏

বন্দে শৈবগুরু পরম্পরা 🙏

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩

হর হর মহাদেব 🚩

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ