দেবী গায়ত্রী মাতা কে ? গায়ত্রীর প্রকৃত স্বরূপ কি এবং এই গায়ত্রীর মন্ত্র দ্বারা কোন দেবতা লাভ হয়ে থাকে ?

 



🕉️ দেবী গায়ত্রী মাতা কে ? গায়ত্রীর প্রকৃত স্বরূপ কি এবং এই গায়ত্রীর মন্ত্র দ্বারা কোন দেবতা লাভ হয়ে থাকে ?



ভূমিকা —

 গায়ত্রী মন্ত্র স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ — এমনই একটি প্রচলন সমাজে প্রায় স্থাপন হয়ে গিয়েছে। গায়ত্রী মন্ত্রে কোনো নির্দিষ্ট দেবতার একচ্ছত্র অধিকার নেই -  এমন ধারনাই পোষণ করেন আজকালকারের তথাকথিত বহু পণ্ডিত, কেউ কেউ মনে করেন এই গায়ত্রী মন্ত্র জপের দারা ব্রহ্ম লাভ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আমরা শৈবরা বলি, এই গায়ত্রী মন্ত্র মূলত পরমেশ্বর শিবের ওই বাচক, এই গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা পরমেশ্বর শিব কেই লাভ হয়। অন্য আর কাউকে নয়। পরমেশ্বর শিবোই সকল দেবতার রূপ ধারণকারী ব্রহ্ম, তাই প্রভুর শিবকেই লাভ করার মাধ্যমে সকল দেবতা লাভ হয়ে যায়।
কিন্তু একথায় তাদের কাছে নাকি শৈবদের এই দাবীর ফলে সনাতন ধর্মের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও ভেদাভেদ চলে আসে, ঠিক ঐ হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই বলে বিশ্বাস করতে থাকা  ওই ভালোমন্দের মিশ্রণে তৈরী  অন্ধ একতাবাদী স্যেকুলারদের মতো।

বর্তমান কালের মানুষ এতটাই অন্ধ ভক্ত হয়ে গিয়েছে যে, অতিভক্তির পাল্লায় পড়ে মানুষ প্রকৃত জ্ঞান সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক নন।
শাস্ত্রে যা বলা হয়েছে সেই বিষয়ে আমরা উপস্থাপন করছি, এখানে শৈবদের কোন সাম্প্রদায়িকতা বা নিজস্ব মনগড়া দাবী নেই, শাস্ত্র যা বলছে সেটি এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যারা সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের বাণী না মানতে পারে তারা ধর্মবিরোধী পাষণ্ড বলেই গণ্য।

চলুন সর্ব প্রথম দেখে নেওয়া যাক,


(1️⃣) গায়ত্রী দেবী কে ? তার প্রকৃত স্বরূপ কি ?

🟢 উত্তর —

শিবমহাপুরাণে বলা হয়েছে,

ইয়ং ভগবতী সাক্ষাৎ শঙ্করার্দ্ধশরীরিণী।
পঞ্চবক্ত্রা দশভুজা ত্রিপঞ্চনয়নোজ্জ্বলা ॥ ৫২
নবরত্নকিরীটোদ্যচ্চন্দ্রলেখাবতংসিনী।
শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশা দশায়ুধধরা শুভা ॥ ৫৩
হারকেয়ূরকটককিঙ্কিণীনূপুরাদিভিঃ।
ভূষিতাবয়বা দিব্যবসনা রত্নভূষণা ॥ ৫৪
বিষ্ণুনা বিধিনা দেবঋষিগন্ধর্বদানবৈঃ ।
মানবৈশ্চ সদা সেব্যা সর্বাত্মব্যাপিনী শিবা ॥ ৫৫
সদাশিবস্য দেবস্য ধর্মপত্নী মনোহরা ।
জগদম্বা ত্রিজননী ত্রিগুণা নির্গুণাপ্যজা ॥ ৫৬
ইত্যেবং সংবিচার্যাথ গায়ত্রীং প্রজপেৎসুধীঃ ।
আদিদেবীং চ ত্রিপদাং ব্রাহ্মণত্বাদিদামজাম্ ॥ ৫৭
যো হ্যন্যথা জপেৎ পাপো গায়ত্রীং শিবরূপিণীম্ ।
স পচ্যতে মহাঘোরে নরকে কল্পসংখ্যয়া ॥ ৫৮
সা ব্যাহৃতিভ্যঃ সংজাতা তাস্বেব বিলয়ং গতা ।
তাশ্চ প্রণবসম্ভূতা প্রণবে বিলয়ং গতাঃ ॥ ৫৯
প্রণবঃ সর্ববেদাদিঃ প্রণবঃ শিববাচকঃ ।
মন্ত্রাধিরাজারাজশ্চ মহাবীজং মনুঃ পরঃ ॥ ৬০
শিবো বা প্রণবো হ্যেষ প্রণবো বা শিবঃ স্মৃতঃ ।
বাচ্যবাচকয়োর্ভেদো নাত্যন্তং বিদ্যতে যতঃ ॥ ৬১
এনমেব মহামন্ত্রং জীবানাং চ তনুত্যজাম্ ।
কাশ্যাং সংশ্রাব্য মরণে দত্তে মুক্তিং পরাং শিবঃ ॥ ৬২
তস্মাদেকাক্ষরং দেবং শিবং পরমকারণম্।
উপাসতে যতিশ্রেষ্ঠা হৃদয়াম্ভোজমধ্যগম্ ॥ ৬৩
মুমুক্ষবোঽপরে ধীরা বিরক্তা লৌকিকা নারাঃ ।
বিষয়ান্মনসা জ্ঞাত্বোপাসতে পরমং শিবম্ ॥ ৬৪

[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/কৈলাস সংহিতা/১৩ অধ্যায়/ শ্লোক]

🌷 অর্থ — (এইভাবে গায়ত্রীর ধ্যান করবে, যেভাবে গায়ত্রীর স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে) ভগবতী গায়ত্রী সাক্ষাৎ ভগবান শংকরের অর্ধদেহে বাসকারিণী। এঁর পাঁচ মুখ এবং দশটি হস্ত, পনেরোটি চক্ষু দ্বারা তিনি প্রকাশিত হন। নতুন রত্নময় কিরীটে চমকিত চন্দ্ররেখা তাঁর মস্তক অলংকৃত করে। তাঁর অঙ্গকান্তি শুদ্ধ স্ফটিক মণির মতো উজ্জ্বল। এই সুলক্ষণা দেবী তাঁর দশ হাতে দশপ্রকার অস্ত্রধারণ করেন। হার, কেয়ূর (বাজুবন্দ), বালা, চেতন, নূপুর ইত্যাদি দ্বারা তাঁর দেহ অলংকৃত। তিনি দিব্যবস্ত্র পরিধান করে আছেন। তাঁর সকল অলংকারই রত্ননির্মিত ॥ ৫২-৫৪

বিষ্ণু, ব্রহ্মা, দেবতা, ঋষি, গন্ধর্বরাজ এবং মানুষও সর্বদা এঁর সেবা করেন। এই সর্বব্যাপিনী শিবা সদাশিবদেবের মনোহারিণী ধর্মপত্নী, সম্পূর্ণ জগতের মাতা, ত্রিলোকের জননী, ত্রিগুণময়ী, নির্গুণা এবং জন্মরহিতা ॥ ৫৫-৫৬

এই প্রকারের গায়ত্রীর স্বরূপ চিন্তা করে জ্ঞানী (বুদ্ধিমান) ব্যক্তির উচিত গায়ত্রী মন্ত্রের জপ করা; কারণ, গায়ত্রী হলেন আদিদেবী, ত্রিপদা (তিনস্তর বিশিষ্ট), তিনি ব্রাহ্মণত্ব ইত্যাদি প্রদানকারী এবং অজন্মা (শিবের শক্তি)। কিন্তু যে পাপী ব্যক্তি শাস্ত্রবিধিকে উলঙ্ঘন করে শিবরূপিণী গায়ত্রী মন্ত্রের জপ করে, সে দীর্ঘকাল কল্পকাল ধরে নরকে গিয়ে কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করে ॥ ৫৭-৫৮

  ব্যাহৃতিসমূহ থেকেই গায়ত্রী উৎপন্ন হয়ে তাতেই লীন হয়ে যান। প্রণব (ॐ) থেকে বাহৃতি প্রকটিত হয়ে প্রণবেই লয় প্রাপ্ত হন ॥ ৫৯

প্রণব‌ই সম্পূর্ণ বেদের আদি, এটি শিবের বাচক, মন্ত্রসমূহের রাজাধিরাজ, মহাবীজস্বরূপ এবং শ্রেষ্ঠ মন্ত্র ॥ ৬০

শিব প্রণব এবং প্রণবকে শিব বলা হয়। কারণ, উচ্চারিত নাম (বাচক) ও যার নাম উচ্চারিত হয় (বাচ্য) - এই দুটির মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনও ভেদ নেই ॥ ৬১

কাশীতে জীবের মৃত্যুর সময়, শিব নিজে এই (প্রণব) মন্ত্র শোনান প্রাণত্যাগে রত জীবকে এবং এর দ্বারা তিনি তাদের মুক্তি প্রদান করেন। এই কারণেই, এই একাক্ষরবিশিষ্ট, দিব্য, মঙ্গলময় ও পরম কারণরূপী এই মন্ত্রকে — যতিশ্রেষ্ঠ(মহান সন্ন্যাসী) যোগীদের নিজের হৃদয়পদ্মের মধ্যে উপাসনা করে থাকেন ॥ ৬২-৬৩

এছাড়াও, অন্যান্য মুক্তিকামী (মুমুক্ষু), ধৈর্যশীল, বৈরাগ্য-সম্পন্ন ও সাধারণ সংসারী ব্যক্তিগণ‌ও এই বিষয়গুলিকে ভালভাবে জেনে, পরম শিবের‌ই উপাসনা প্রণব (ॐ-কার) -এর মাধ্যমে করে থাকেন ॥ ৬৪

🔷 বিশ্লেষণ : লক্ষ্য করুন, এখানে গায়ত্রী দেবীকে সদাশিবের পত্নী “শিবা” বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্রহ্ম হলেন শিব, আর ব্রহ্মের ব্রহ্মবিদ্যাকে শক্তি বলা হয়, তাই শিবের পরাশক্তি দেবী দুর্গাকে “শিবা” বলা হয়।

পরমেশ্বর সদাশিব হলেন ত্রিদেব (ব্রহ্মা,বিষ্ণু ও রুদ্র) -এর উৎপত্তিকর্তা, পাঁচ মুখ ও দশহাত সম্পন্ন, তিনি শিবলোকে স্থিত।

গায়ত্রী দেবী হলেন সেই পরমেশ্বর শঙ্করের দেহের অর্ধশরীর - এই বচনের দ্বারা সরাসরি দেবী শিবা কে নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে,

আবার এদিকে  পঞ্চমুখসম্পন্ন শিবের ন্যায় গায়ত্রী দেবীকেও পাঁচমুখবিশিষ্টা বলা হয়েছে, একথা কৃষ্ণ- যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যেকের ১০ম প্রপাঠকের ৩৫তম অনুবাকেশ্বেতবর্ণা সাংখ্যায়নসগোত্রা গায়ত্রী চতুর্বিংশত্যক্ষরা ত্রিপদা ষটকুক্ষিঃ পঞ্চশীর্ষোপনয়নে বিনিয়োগঃ ॥” উল্লেখ আছে , এর‌ই সাথে মহানারায়ণ উপনিষদের ৩৫ অনুবাকে উল্লেখ আছে।

দেবী গায়ত্রীকে শিবরূপিণী বলা হয়েছে, অর্থাৎ শিবের‌ই রূপ হলেন গায়ত্রী। এই গায়ত্রী দেবীকে ব্রহ্মবিদ্যা অর্থাৎ শিবের বিদ্যা বলা হয়েছে। এই দেবীর গায়ত্রী মন্ত্র জপ করে শিবকে লাভের বিদ্যা অর্জন করে তবেই শিবলাভ সম্ভব হয়, তাই ব্রহ্মবিদ্যা আদিশক্তি শিবার এই গায়ত্রী মন্ত্রের জপ করা হয়, যা সমগ্র বেদের তথা সনাতন ধর্মের সকল শাস্ত্রের আদেশ বলে সর্বজন বিদিত।

এমনকি এই গায়ত্রীর সেবা স্বয়ং বিষ্ণু, ব্রহ্মা, ঋষি, মুনি আদি সকলেই করেন। অর্থাৎ সকলেই শিবকৃপা লাভের জন্য গায়ত্রী দেবীর সেবা করেন।

অর্থাৎ, গায়ত্রী দেবী হলেন — শিবপত্নী ‘শিবা’। আমরা শৈবরা তাকে দুর্গা, মহাকালী, ত্রিপুরাসুন্দরী বলে থাকি।

এই গায়ত্রী মাতা দুর্গার গায়ত্রী মন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছে ব্যহৃতি তথা প্রণব থেকে, প্রণব বলতে ॐ-কার কে বলে। এই ॐ কার শিবের‌ই অর্থ কে নির্দেশ করে, এটি শিবের‌ই বীজমন্ত্র।

______________________________________________

গায়ত্রী মন্ত্র 


ॐ ভূ র্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ ॥

[তথ্যসূত্র : ঋগবেদ/শাকল শাখা/৩য় মণ্ডল/৬২ সূক্ত/১০ নং মন্ত্র, শুক্ল-যজুর্বেদ/৩য় অধ্যায়/৩৫ নং মন্ত্র,শুক্ল-যজুর্বেদ/৩০ অধ্যায়/২নং মন্ত্র, সামবেদ উত্তরার্চ্চিক/৬/৩/১০নং মন্ত্র]

________________________________________________


এবার প্রশ্ন হল,


2️⃣ এই বেদের গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা কে ?

🟢 উত্তর —

গায়ত্রী রহস্য উপনিষদের ২নং মন্ত্রে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে — রুদ্র‌ই  সেই দেবতা, যিনি মূলত পরমপুরুষ সদাশিব । দেখুন 👇

ॐ ভূরিতি ভুবো লোকঃ । ভুব ইত্যন্তরিক্ষলোকঃ । স্বরিতি স্বর্গলোকঃ । মহ ইতি মহর্লোকঃ । জন ইতি জনোলোকঃ ।তপ ইতি তপোলোকঃ । সত্যমিতি সত্যলোকঃ । তদিতি তদসৌ তেজোময়ং তেজোঽগ্নির্দেবতা । সবিতুরিতি সবিতা সাবিত্রমাদিত্যো বৈ । বরেণ্যমিত্যত্র প্রজাপতিঃ । ভর্গ ইত্যাপো বৈ ভর্গঃ । দেবস্য ইতীন্দ্রো দেবো দ্যোতত ইতি স ইন্দ্রস্তস্মাৎ সর্বপুরুষো নাম রুদ্রঃ । ধিমহীত্যন্তরাত্মা । ধিয় ইত্যন্তরাত্মা পরঃ । য ইতি সদাশিবপুরুষঃ । নো ইত্যস্মাকং স্বধর্মে । প্রচোদয়াদিতি প্রচোদিতকাম ইমান্ লোকান্ প্রত্যাশ্রয়তে যঃ পরো ধর্ম ইত্যেষা গায়ত্রী ॥ ২

[তথ্যসূত্র — গায়ত্রীরহস্য উপনিষদ/২নং মন্ত্র]

অর্থ — ॐ ভূঃ -এটি ভূলোকের বাচক, ভুবঃ - অন্তরিক্ষ বাচক, স্বঃ-স্বর্গলোকের বাচক, মহঃ-মহর্লোকের বাচক, জনঃ-জনোলোকের বাচক, তপঃ - তপোলোক, সত্যম্ - সত্যলোকের বাচক, তৎ - তেধস্রূপ অগ্নির, সবিতুঃ - সূর্য বাচক, বরেণ্যং - প্রজাপতির, ভর্গ -আপঃ জলের, দেবস্য - যিনি তেজস্বী দেব ইন্দ্র নামের পরম ঐশ্বর্যের দ্যোতক সেই সর্বপুরুষের নাম ‘রুদ্র বলে প্রখ্যাত, ধীমহী - এটি অন্তরাত্মার, ধিয়ঃ - সেই দ্বিতীয় স্বরূপ পরব্রহ্ম, যঃ - এটি সেই পরব্রহ্মপুরুষ দেব সদাশিবের বাচক, নঃ - যা নিজ স্বরূপধর্মের এইভাবে যথাযথভাবে প্রকৃত স্বরূপ বোধ করায়। প্রচোদয়াৎ - এটি সেই প্রেরণার বাচক, যে ধর্ম সকলকে সেই পরমেশ্বরের চেতনায় পরম আশ্রয় দেয় - এই সেই গায়ত্রী ॥ ২


🔸গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ — ॐকারস্বরূপ পরমেশ্বর ভূলোকের বাচক,অন্তরিক্ষ বাচক, স্বর্গলোকের বাচক, সবিতৃদেব আমাদের বুদ্ধি সৎকর্ম অনুষ্ঠানে প্রেরণ করেন, সবিতৃদেব বরণীয় সমস্ত পাপ বিনাশক সেই জ্যোতিকে আমরা ধ্যান করি।


🔶 গায়ত্রী রহস্য উপনিষদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী গায়ত্রী মন্ত্রের ভাবার্থ — 

ॐকারস্বরূপ পরমেশ্বর ভূলোকের বাচক,অন্তরিক্ষ বাচক, স্বর্গলোকের বাচক, মহর্লোকের বাচক, জনোলোকের বাচক, তপোলোক, সত্যলোকের বাচক, তেধস্রূপ অগ্নির, সূর্যের, প্রজাপতির, জলের, যিনি তেজস্বী দেব ইন্দ্র নামের পরম ঐশ্বর্যের দ্যোতক সেই সর্বপুরুষের নাম ‘রুদ্র’ বলে প্রখ্যাত, এটি অন্তরাত্মার, সেই দ্বিতীয় স্বরূপ পরব্রহ্ম, এটি সেই পরব্রহ্মপুরুষ দেব সদাশিবের বাচক, যা নিজ স্বরূপধর্মের এইভাবে যথাযথভাবে প্রকৃত স্বরূপ বোধ করায়।  এটি সেই প্রেরণার বাচক, যে ধর্ম সকলকে সেই পরমেশ্বরের চেতনায় পরম আশ্রয় দেয়  ॥ 

______________________________________________

________________________________________________


(3️⃣) বেদ অনুসারে গায়ত্রী দেবী ও গায়ত্রী মন্ত্র প্রকৃত পক্ষে কার স্বরূপ ?


🟢 উত্তর —  বেদের সংহিতা ভাগে বলা হয়েছে যে, গায়ত্রী দেবী ও তার পরমেশ্বর শিবের‌ই স্বরূপ —

প্রয়তঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।
ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ২০
যো বৈ বেদাদিষু
গায়ত্রী সর্বব্যাপীমহেশ্বরাৎ ।
তদ্বিরুক্তং তথাদ্বৈশ্যং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥ ২১

[তথ্যসূত্র - ঋগ্বেদ সংহিতা/আশ্বলায়ণশাখা/১৭১/১০ এবং ঋগ্বেদ সংহিতা/খিলানি/চতুর্থ অধ্যায়/১১ নং খিলা]

অর্থ — যিনি নিত্য, প্রণব, পরম, পুরুষোত্তম, সাক্ষাৎ ॐ কার এবং পরমাত্মা, যিনি সাক্ষাৎ সমগ্র বেদের গায়ত্রীস্বরূপ, যিনি সর্বব্যাপী মহেশ্বর বলে উক্ত হয়েছেন, সেই অদ্বিতীয় শিবের প্রতি মন সংকল্পিত হোক ॥ ২০-২১
______________________________________________

♦️ সিদ্ধান্ত ♦️


 শাস্ত্র বচন সর্বদাই সর্বাগ্রে গ্রহণীয়। সুতরাং, ঘুরেফিরে সেই গায়ত্রী মন্ত্র, গায়ত্রী দেবী শিবা (ব্রহ্মবিদ্যা দ্বারা) ও ॐ-কার বীজ মন্ত্রের দ্বারা শিবলাভ‌ই হল একমাত্র উদ্দেশ্য - এটিই প্রমাণিত হচ্ছে, এটি শাস্ত্রের বচনের ভিত্তিতে প্রমাণিত। বিষ্ণু বা অন্য দেবদেবী কেউই প্রধান উদদনয়, স্বয়ং প্রভু শিব‌ই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা, ঐ গায়ত্রী মন্ত্রের দেবী গায়ত্রী দেবী হলেন স্বয়ং শিবপত্নী মা পার্বতী দুর্গা শিবা।

এখন যদি কোনো মূ র্খ জেদী ব্যক্তি এই পরম সত্য কে মেনে নিতে না পারে, এই সত্যকে অস্বীকার করে, তবে তার চেয়ে বড় পাপী ও দুর্ভাগ্য আর অন্য কারোরই নেই।

শাস্ত্রের বচনে সকল কিছুর দ্বারা অন্তিম গতি হিসেবে যে একমাত্র অম্বিকাপতি শিব‌ই লাভ হন, আর অন্য কেউ না - তা বারংবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বর্তমানের সমাজ এই পরমসত্য সম্পর্কে অবগত নয়, আজ‌ও গায়ত্রী মন্ত্রকে স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ প্রমাণ করবার অছিলায় তার অপব্যাখ্যা করে, গায়ত্রী মন্ত্রকে শিববিহীন হিসেবে প্রচার করে গায়ত্রী মন্ত্রের অপলক্ষ্য বানিয়ে সমাজের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ধর্মের ধ্বজাধারী অধর্মী পাষণ্ডরা।

গায়ত্রী মন্ত্রকে শিবের নয় বলে প্রচার করা হচ্ছে, গায়ত্রী মন্ত্রকে সকল দেবতার থেকে স্বতন্ত্র নিরপেক্ষ দেখানোর অপপ্রয়াস চলছে, যা কিনা পাপকর্ম। আর এই কারণেই আজ আমাদের সনাতন ধর্মের বেহাল অবস্থা হয়েছে।
ধর্যের পোষাক পরিধান করে অধর্মী ব্যক্তি ও সম্প্রদায় গুলি বলে বেড়ায়, গায়ত্রী মন্ত্র জপের দ্বারা ব্রহ্ম লাভ হয়, ঐ ব্রহ্মটি শুধু একমাত্র শিব নয়। অর্থাৎ গায়ত্রী মন্ত্র শিবের নিজস্ব মন্ত্র নয় বলেই দাবী করে বর্তমানের এই পাষণ্ডগণ। কিন্তু এটি কলিযুগের মানুষের সাথে প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ শাস্ত্র সরাসরি গায়ত্রী দ্বারা শিবের কাছে পৌঁছে যাবার কথা স্বীকার করেছেন, সেই গায়ত্রীর সেবা করেন ব্রহ্মা বিষ্ণু তথা সকলে। সুতরাং পরমেশ্বর শিব‌ই সেই ব্রহ্ম। বিষ্ণু-ব্রহ্মা বা অন্য কেউ‌ই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা নন।
তাই আসুন আমরা সকলে সত্য সনাতনকে তুলে ধরি। প্রকৃত সত্যের মাধ্যমেই ধর্ম স্থাপন সম্ভব, কাল্পনিক ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে মনগড়া মতপথ বানিয়ে সেই পথে ধর্মকর্ম করা সম্ভব নয়, এতে ধর্ম স্থাপন সম্ভব‌ নয়।

আমাদের শাস্ত্রে যেভাবে বিধান ও ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই আমাদের চলতে হবে।

______________________________________________

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩

🔥 সত্য উন্মোচনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী

© কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ