সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের অন্তর্গত “তৃতীয় সমুল্লাস” -এর খণ্ডন — মিথ্যার্থ প্রকাশ



সত্যার্থ প্রকাশ ষষ্ট সমুল্লাস খণ্ডন — মিথ্যার্থ প্রকাশ 


আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের খণ্ডন —

সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন এক ও অদ্বিতীয় গুরুপরম্পরা হল - মহাপাশুপত শৈব পরম্পরা, সেই মহাপাশুপতের ধারা শৈব অবধূত পরম্পরার বর্তমান মহামান্য আচার্য শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী স্বয়ং লিখিত আকারে তৃতীয় সমুল্লাসের খণ্ডন উপস্থাপন করলেন। 

 International Shiva Shakti Gyan Tirtha — ISSGT শৈব সংগঠনের পক্ষ থেকে সমগ্র বাংলাতে এই সর্ব প্রথমবার প্রকাশ করা হল “সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের খণ্ডন” সমন্বিত — মিথ্যার্থ প্রকাশ

অথ মিথ্যার্থ প্রকাশ — সত্যার্থ প্রকাশের অন্তর্গত তৃতীয় সমুল্লাস ও তার খণ্ডন 

 ॥ ॐ গণেশায় নমঃ । ॐ শ্রীগুরুভ্যো নমঃ । ॐ নমঃ শিবায় ॥

সত্যার্থ প্রকাশের অন্তর্গত তৃতীয় সমুল্লাসের খণ্ডন




🟪 (১) দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রথম দাবী (১) 🟪

॥ অধ্যয়নাধ্যাপন প্রকরণ 

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৬ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন,

"কন্যানং সম্প্রদানং চ কুমারাণাং চ রক্ষণম্‌ ।। মনুঃ ৭ । ১৫২ ।

ইহার অভিপ্রায় এই যে, এই বিষয়ে রাষ্টীয় ও জাতীয় নিয়ম থাকা উচিৎ। পঞ্চম অথবা অষ্টম বৎসরের পর কেহ নিজ পুত্র কন্যাদিগকে গৃহে রাখিতে পারিবে না পাঠশালায় অবশ্যই প্রেরণ করিতে হইবে অন্যথা সে দন্ডিত হইবে। বালকের প্রথম যজ্ঞোপবীত গৃহে, দ্বিতীয় পাঠশালায় বা আচার্য্য কুলে হইবে। মাতা, পিতা বা অধ্যাপক তাঁহাদের বালক-বালিকা বা বিদ্যার্থীদের অর্থ সহিত গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ দিবেন।

❌ দয়ানন্দের প্রথম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

বাহরে! ধূর্ত দয়ানন্দ মহাশয় ভালোই বোকা বানালেন সাদা মাটা অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন আর্য‌সমাজীদের, কৃপা করে বলুন এতবড় অভিপ্রায় কিভাবে সিদ্ধ হবে? 

এই শ্লোকের তাৎপর্য তো একদম এরকম নয়, এই শ্লোক রাজধর্ম প্রসঙ্গের অর্থ প্রকাশ করছে, দেখুন কি বলেছে - 

মধ্যংদিনেঽর্ধরাত্রে বা বিশ্রান্তো বিগতক্লমঃ ।

চিন্তযেদ্ধর্মকামার্থন্‌ সার্ধং তৈরেক এব বা ।। ১ ।।

পরস্পরবিরুদ্ধানাং তেষাং চ সমুপার্জনম্‌ ।

কন্যানাং সংপ্রদানং চ কুমারাণাং চ রক্ষণং ।। ২ ।।

 (তথ্যসূত্র — মনুস্মৃতি /৭/১৫১,১৫২) 

অর্থঃ - রাজার কর্তব্য হল, তিনি মানসিক ক্লান্তি হতে বিরত হয়ে, দিবসের মধ্যভাগে অথবা অর্ধরাত্রিতে একান্তে অথবা মন্ত্রীদের সহিত ধর্ম, অর্থ তথা কাম সম্বন্ধ বিষয়ে চিন্তন করবে, যদি মন্ত্রিরা ধর্ম অর্থ ও কাম আদি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে তবে সেই বিরোধ দূর করে উপার্জনের উপায় ও নিজের কুলের কন্যাদের বিবাহ এবং রাজকুমারদের সুরক্ষার সম্বন্ধিত বিষয়ে বিচার করা। 

এই শ্লোকে আপনার বক্তব্যের সাথে কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য নেই এখান থেকে বোঝা যায় যে আপনি কত বড় ধূর্ত। আর এক বিচিত্র কথা আপনি বলেছেন যে একবার গৃহে উপনয়ন হবে আর একবার পাঠশালায় উপনয়ন অনুষ্ঠিত হবে এই শিক্ষা আপনার কোন বেদ অনুসার হবে ? তার কোন প্রমাণ তো দিলেন না যদিও বা কোনো প্রমাণ না থাকে তবে না হয় উল্টোপাল্টা সংস্কৃত লিখে সেটাকেই শ্লোক বলে চালিয়ে দিতেন আপনার অল্প বুদ্ধিধারী দয়ানন্দী চলারা সেটাকে লক্ষণ রেখা বলে মেনে নিত। তাই না ?


🟪 (২) দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বিতীয় দাবী (২) 🟪

॥ সাবিত্রী প্রকরণ ॥ 

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৬ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন,

ও৩ম্ ভূভুর্বঃ স্বঃ। তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি।

ধিযো যো না প্রচোদযাৎ ।। যজু ৩৬। ৩

এই মন্ত্রে প্রথম যে "ও৩ম্‌" আছে, তাহার অর্থ আমি প্রথম সমুল্লাসে লিখিত হইয়াছে, সে স্থলে জানিয়া লইবে। এক্ষণে তিন মহাব্যাহৃতির অর্থ সংক্ষেপে লিখিত হইতেছে। "ভুরিতি বৈ প্রাণঃ, য়ঃ প্রাণয়তি চরাঽচরং জগৎ স ভুঃ স্বয়ম্ভূরীশ্বরঃ" যিনি সমগ্র জগতের জীবনাধার, প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় এবং স্বয়ম্ভূ উহা প্রাণবাচক বলিয়া 'ভূঃ' পরমেশ্বরের নাম। 'ভূবরিত্যপানঃ', - য়ঃ সর্বংদুঃখম্পানয়তি সোঽপানঃ' । যিনি সর্বদুঃখ রহিত, যাহার সংসর্গে জীব সর্বদুঃখ বিমুক্ত হয়, অতএব পরমেশ্বরের নাম 'ভুবঃ' । 'স্বরিতি ব্যান' - য়ো বিবিধং জগদ্‌ ব্যানয়তি ব্যাপ্নোতি স ব্যানঃ । যিনি সর্বদুঃখ রহিত, যাহার জীব সর্বদুঃখ বিমুক্ত হয়, অতএব পরমেশ্বর নাম 'ভুবঃ' । 'স্বরিতি ব্যান' - ইয়ো বিবিধং জগদ্‌ ব্যানয়তি ব্যাপ্নোতি স ব্যানঃ' । যিনি নানাবিধ জগতে ব্যাপক হইয়া সকলকে ধারণ করেন, এই কারণে সেই পরমেশ্বরের নাম 'স্বঃ' । এই তিনটি বচনই তৈত্তিরীক আরণ্যকে (সবিতুঃ) য়ঃ সুনোত্যু ৎপাদয়তি সর্বং জগৎ স সবিতা তস্য যিনি সমস্ত জগতের উৎপাদক এবং সর্বৈশ্বর্য্যদাতা (দেবস্য) 'য়ো দীব্যতি দীব্যতে বা স দেবঃ - যিনি সর্ব সুখদাতা এবং সকলে যাহার প্রাপ্তি কামনা করে, সেই পরমাত্মা যাহা (বরেণ্যম্‌) 'বর্ত্তুমর্হম্‌ - স্বীকার করিবার যোগ্য, অতিশয় শ্রেষ্ঠ (ভর্গঃ)' শুদ্ধ স্বরূপম্‌' শুদ্ধস্বরূপ, এবং পবিত্রতা স্মপাদনকারী চেতন ব্রহ্মস্বরূপ (তৎ) সেই পরমাত্মা স্বরূপকে আমরা (ধীমহি) 'ধরেমহি' ধারণ করি। কেন প্রয়োজন? (য়ঃ) 'জগদীশ্বরঃ' - যিনি সবিতা এবং দেব পরমাত্মা  (নঃ) 'অস্মাকম্‌' আমাদের (ধিয়ঃ) 'বুদ্ধীঃ' বুদ্ধি সমূহকে (প্রচোদয়াৎ) 'প্রেরয়েৎ প্রেরণা দান করেন, অর্থাৎ কু কর্ম হইতে মুক্ত করিয়া সুকর্মে প্রবৃত্ত করেন ।


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বিতীয় দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

এখানে আপনি ও৩ম্ এর দ্বারা ॐ-কারের কাল্পনিক অর্থ উদ্ভব করেছেন তার খণ্ডন প্রথম সমুল্লাস খণ্ডন নামক অধ্যায়ে উপস্থাপন করে দিয়েছি, জিজ্ঞাসু ব্যক্তিরা সেখান থেকে পড়ে নিন। 


আপনি মহাব্যহৃতির অর্থের অনর্থ করেছেন, এবং তা তৈত্তিরীয় আরণ্যকের নামে কল্পনা করেছেন, এখানে আপনার দ্বারা রচিত মহাব্যহৃতির কাল্পনিক অর্থের খণ্ডন সংক্ষেপে  লিখছি দেখুনঃ-

ভূভুর্বঃ সুবরিতি বা এতাস্তিস্রো ব্যাহৃতযঃ ।

তাসামু হ স্মৈত্তাং চতুর্থীম্‌ । মাহাচমস্যঃ প্রবেদযতে ।

মহ ইতি। তত্‌ ব্রহ্মা। স আত্মা। অভগান্যন্যা দেবতাঃ ।

ভূরিতি বা অযং লোকঃ । ভুব ইত্যন্তরিক্ষম্‌ । সুবরিত্‌সসৌ লোকঃ ।।

 (তৈত্তিরীয় আরণ্যকঃ, শিক্ষা বল্লী, পঞ্চম অনুবাক)


অর্থ - ভূঃ ভুবঃ স্বঃ এই তিন ব্যাহৃতি আছে, কোথাও স্বঃ এইরকম ব্যাহৃতির আকারে ব্যবহার হয়েছে, আবার কোথাও সুবঃ এই আকারে হয়, অর্থের ভেদ নেই কারণ প্রতিশাখ্য যা বেদের ব্যাকরণ, তাতে স্বঃ এর স্থানে সুবঃ এবং স্বর্গের স্থানে সুবর্গ এরকম শব্দ প্রয়োগ হয়। এই তিন ব্যাহৃতির মধ্যে এই চতুর্থ ব্যাহৃতি মহঃ (মহলোক) আছে এর মহাচামসের পুত্র যে মহাচমস্য ঋষি ছিলেন সর্বপ্রথম উনি জানেন ও দেখেন সেই (মহঃ) ব্রহ্ম এবং সেই উক্ত তিন ব্যাহৃতির আত্মা এবং সব দেবতা তার অঙ্গ এখন এদের তুল্যতার কথা বলছি, যেরকম ব্রহ্ম হলেন মহৎ এবং ব্যাহৃতি মহর্‌ এর দ্বারা এদের একতা বজায় আছে এবং সেই মহরই আত্মা (ব্রহ্মস্বরূপ) কারণ সেই মহর ব্যপ্তিরূপে কর্মের সঙ্গে যে আত্মা আছে ও অন্য যে ব্যাহৃতি রূপ লোক দেব, বেদ ও প্রাণ আছে, তারা যার দ্বারা মহর্‌ ব্রহ্ম এর আগে বাক্যের কথন দ্বারা ব্যাহৃতিরূপ ব্রহ্মের দেব লোক আদি সব অবয়ব রূপ এবং যার দ্বারা সে সূর্য ব্রহ্মা ও অন্য রূপে ব্যপ্ত হয়েছেন, এতে আর অন্য যেসব দেবতা রয়েছেন তারা সবাই অঙ্গ (ব্রহ্মের পাদ আদিক অবয়ব) স্বরূপ এবং মহাব্যাহৃতি অঙ্গী, ভাব এই রূপ কি মহাব্যাহৃতি রূপই অঙ্গী। হিরণ্যগর্ভ তার ভূঃ ব্যাহৃতিকে পাদ, ভূবঃ ব্যাহৃতিকে বাহু, এবং স্বর ব্যাহৃতিকে শির রূপে ধ্যান করে, এরকম উপাসনা বিধি বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ভূরাদি প্রজাপতি অঙ্গকে যে যে রূপে চিন্তন করেন সেইরূপে নিরূপন করেন। পৃথিবীলোক প্রজাপতির পাদ স্বরূপ, ভূঃ ব্যাহৃতি এবং অন্তরিক্ষলোক প্রজাপতির বাহুরূপ, ভূবঃ ব্যাহৃত, এবং স্বর্গলোক প্রজাপতির শিররূপ, স্বঃ ব্যাহৃত, এবং যে প্রকাশমান আদিত্য যে প্রজাপতির মধ্য ভাগ রূপ মহাব্যাহৃতি।

ভাব এইরকম যে পৃথিবী লোকে প্রজাপতির পাদ দৃষ্টিরত অন্তরীক্ষে প্রজাপতির বাহু দৃষ্টিরত এবং স্বর্গলোকে প্রজাপতি মস্তক দৃষ্টি রতন আদিত্যের প্রজাপতির দেহের মধ্যাংশ দৃষ্টিরত, এবং মধ্যভাগ হতে অঙ্গের বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, এই কারণে আদিত্য হতে সমস্ত লোকের বৃদ্ধি হয়, এই উপকার অগ্নি আদিতে প্রজাপতির অঙ্গ দৃষ্টি প্রদান করে, এই রূপ জানবে।

মহ ইত্যাদিত্যঃ । আদিত্যেন বাব সর্বে লোক মহীযন্তে

ভূরিতি বা অগ্নিঃ । ভুব ইতি বাযুঃ । সুবরিত্যাদিত্যঃ ।

মহ ইতি চন্দ্রমঃ চন্দ্রমা বাব সর্বাণি জ্যোতিষি মহীযন্তে । ভূরিতি বা ঋচঃ ।

ভুব ইতি সামানি । সুবরিতি যজূষি ।।

  (তৈত্তিরীয় আরণ্যকঃ শিক্ষা বল্লী, পঞ্চম অনুবাক)

 অর্থঃ- ভূঃ এটা প্রসিদ্ধ অগ্নি ভূবঃ বায়ু ও স্বঃ সূর্য, এবং মহঃ চদ্রমা, কারণ চন্দ্রমা সমস্ত জ্যোতিকে মহিমান্বিত করে, ভূঃ ইহা প্রসিদ্ধ ঋচা (ঋগবেদ), ভুবঃ সামবেদ এবং স্বঃ যজুর্বেদ ।

মহ ইতি ব্রহ্ম । ব্রহ্মাণা বাব সর্বে বেদা মহীযন্তে ।

ভূরিতি বৈ প্রাণঃ । ভুব ইত্যপানঃ । সুবরিতি ব্যানঃ ।

মহ ইত্যন্নম্‌ । অন্নেন বাব সর্বে পারণ মহীযন্তে ।

তা বা এতাশ্চতশ্চতুর্ধ । চতাস্রশ্চতস্রো ব্যাহৃতযঃ ।

তা যো বেদ । স বেদ ব্রহ্মা । সর্বেঽস্মৈ দেবা বলিমাবহন্তি ।।

 (তৈত্তিরীয় আরণ্যকঃ শিক্ষা বল্লী, পঞ্চম অনুবাক)

অর্থঃ- মহঃ এই ব্রহ্ম (ॐকার), কারণ ওকার হতে সব বেদ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়,ভূঃ প্রাণ ভুবঃ অপান, স্বঃ ব্যান, এবং মহঃ একে অন্ন বলে, অন্ন দ্বারা প্রাণের বৃদ্ধি হয় যা এই  ব্যাহৃতি উপাচার চার প্রকারের হয়, প্রত্যেক প্রকার আবার চার ভাগে বিভক্ত, এইভাবে ষোল ব্যাহৃতি হয়, এই প্রকারাণুসারে ষোলকলাযুক্ত পুরুষের ধ্যানের বর্ণনা যজুর্বেদের ৩২ নং অধ্যায়ের ৫ নং শ্লোকে এইরূপ দেওয়া আছেঃ-

যস্মাজ জাতং ন পুরা কিং চনৈব য আবভূব ভুবনানি বিশ্বা ।

প্রজাপতিঃ প্রজযা সম্‌ ররাণস্ত্রীণ জ্যোতীম্‌ষি সচতে স ষোডশী ।।

 [যজুর্বেদ অধ্যায় ৩২ মন্ত্র ৫]

অর্থঃ- যে প্রজাপতি একাই সমস্ত ভুবনে ব্যপ্ত, তার পূর্বে কোন কিছুই উৎপন্ন হয়নি। পূজা দের সহিত বসবাসকারী প্রজাপতি ষোড়শ কলাযুক্ত, তিন জ্যোতি (অগ্নি, বিদ্যুৎ, সূর্য) কে ধারণকারী। ষোড়শ কলা গুলি কি কি তা সংক্ষেপে বর্ণনা করছিঃ- ব্যহৃতি হতে, পৃথ্বীকলা, অগ্নিকলা ঋগ্বেদ কলা প্রাণ কলা এই চতুস কলা প্রজাপতির পাদ এবং অন্তরীক্ষ কলা, বায়ু কলা, সামবেদ কলা, অপান কলা এইরকম চতুষ্কলা প্রজাপতির বাহু, স্বর্গলোক কলা,  আদিত্য কলা, যজুর্বেদবেদ কলা ব্যান কলা, এই চতুষ্কলা প্রজাপতি মস্তক, আদিত্যকলা চন্দ্রকলা ॐ-কারকলা অন্ন কলা এইসব প্রজাপতির আত্মশব্দ প্রতিপাধ মধ্যভাগ, এরকম ষোড়শ কলাযুক্ত পুরুষকে হৃদয়ে ধ্যান করলে যে ফল প্রাপ্ত হয় সে কথনকারী এই ব্যাহৃতিকে পূর্ব প্রকারে যে জানবে সে ব্রহ্মকে জানতে সক্ষম। এবং এই ষোড়শ কলাযুক্ত প্রজাপতি উপাসনার প্রকরণে (ভূরিতি বৈ প্রাণঃ ভুবরিত্য পানঃ স্বরিতি ব্যানঃ) এই অংশ নিয়ে প্রাণ, অপাণ ও ব্যানকে পরমেশ্বরপরতা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।

 এবার বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা নিজ বুদ্ধি প্রয়োগ করে বিচার করুন যে কত বড় ধৃষ্টতা স্বামী দয়ানন্দ করেছেন। সগুণোপসনার ফলকে বিলুপ্ত করার জন্য এই লীলা রচনা করেছেন তিনি, এবং এটা কোন প্রকরণের বাক্য তা উল্লেখ করেননি, 

স্বামী ধূর্তানন্দ ॐকার ও ব্যাহৃতির অর্থের যে অনর্থ রচনা করেছেন এখান থেকে তা সহজেই অনুমান করা সম্ভবপর এবং অন্য মন্ত্রের প্রকার অনর্থক করেছেন তাও স্পষ্ট হয়ে যায়।

এখন গায়েত্রী মন্ত্রের অর্থ লিখছি দেখুন প্রাচীন গ্রন্থে এর কিরূপ ব্যাখ্যা করা রয়েছেঃ-

তৎ সবিতুর্বরিণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি) ''তৎসবিতুর্বরেণ্যমিত্যসৌ বা আদিত্যঃ সবিতাস বা এবং প্রবরণায আত্মকামেনেত্যাহুর্বহ্মবাদিনোঽথ ভর্গো দেবস্য ধীমহীতি সবিতা বৈ তেঽবস্থিতা যোওস্য ভর্গঃ কং সঞ্জিতযামীত্যাহুর্ব্রহ্মবোদিনঃ," এই যে প্রত্যক্ষ আদিত্য আছে এই সবিতা (অর্থাৎ উৎপন্নকারক) আত্মকাম করে প্রবনীয় হন, অর্থাৎ যে আত্মরিক্ত পদার্থের কামনা রহিত, থাকে এই সবিতাই একতা বুদ্ধি করে প্রার্থনীয় হয়, ভাব এইরূপ যে পিণ্ডসার, ব্রহ্মাণ্ডসার, আদিত্যের একতা করে উভয় উপাধি হতে উপলক্ষিত তত্ত্বকে আমিরূপে চিন্তন কর, এইরূপ বেদবিদ পুরুষ বলেন, এখন দ্বিতীয় পদের ব্যাখ্যা পড়ছে দেব শব্দ বোধ্য সবিতা। সেইকারণে যা সবিতার ভার্গাখ্য রূপ তার চিন্তন কর।

(ধিযো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।।) "অথ ধিযো যো নঃ প্রচোদযাদিতি বুদ্ধ যো বৈ ধিযস্তা যোস্মাকং প্রচোদযাদিত্যাহুর্ব্রহ্মবোদিনঃ" অন্ত করণের প্রবৃত্তি গুলো যে পরমাত্মা প্রেরণা প্রদান করে সেই আদিত্যের 'ভর্গ' ভাগের আমরা ধ্যান করি, কারণ এই সন্মুখে উপস্থিত থেকে  'ভর্গ' সেটা বুদ্ধিকে প্রাপ্ত হতে থাকে।


প্রশ্নঃ-  আমরা কার চিন্তায় করি ?

উত্তরঃ- 'সবিতুর্দেবস্যযত ভর্গাখ্যং বরেণ্যং তত্‌ ধীমহি তত্‌ কিম যোঽস্মাকং ধিযোঽন্তকরণবৃত্তীঃ প্রচোদযাত্‌ । সবিতা দেবের 'ভর্গ 'বরেণ্য' বুদ্ধিকে ধী বলা হয়, যে আমাদের বুদ্ধিকে প্রেরিত করে, - সন্মার্গে চালনা করে, আমরা তার চিন্তন করি এরকম বেদবিদ পুরুষ বলেন, এখন 'ভর্গ' শব্দের কথন বলছি -

অথ ভর্গা ইতি যো হ বা অমুষ্মিন্নাদিত্যে নিহিতস্তারকোঽক্ষিণি বৈষ ভর্গ ইতি রুদ্রো ব্রহ্মবাদিনোঽথ ভ ইতি ভাসযতীমান্‌ লোকান্‌ র ইতি রঞ্জযতীমানি ভূতানি গ ইতি গচ্ছন্ত্যস্মিন্না গচ্ছন্ত্যস্মাদিমাঃ প্রজাস্তস্মাদ্ভ - রগ - ত্বাদ্ভর্গঃ শাশ্বত্‌ সূযমানাত্‌ সূর্যঃ সবনাত্‌ সবিতাঽদানাত্‌ আদিত্যাঃ পবনাত্‌পবনোঽথাপোপ্যাযনা দিত্যেবং হ্যাহ

এই ভর্গ সেই যে আদিত্য মন্ডলে স্থিত চক্ষুর অভ্যন্তরে  তিনি 'ভর্গ' রূপে বিরাজমান থাকেন যে আদিত্য মন্ডলে স্থিত, চক্ষুর অভ্যন্তরে তিনি 'ভর্গ' রূপে বিরাজমান থাকেন, কান্তির জন্য মানুষ গতি প্রাপ্ত হয়, এইজন্য 'ভর্গ (ভর্জযতীতিবাত্রয ভর্গঃ) যে সর্ব জগতের সঙ্ঘারক তাকে 'ভর্গ' (মাসযতীমান লোকানিতিভঃ) নিজ মন্ডলের অন্তর্গত প্রকাশক সমগ্র জগতকে প্রকাশ প্রদানকারী এই কারণে তাকে 'ভর্গ' বলা হয় (রংজযতীমানি ভূতানি ইতিরঃ) আপন আনন্দরূপে সর্বপ্রাণীবর্গকে আনন্দিত করে এই কারণে 'ভর্গ' বলা হয়, (গচ্ছন্ত্যস্মিন বা আগচ্ছন্য স্মাত্‌ সর্বা ইমাঃ প্রজাপ্রজা ইতিগঃ) এবং সুষুপ্তি অবস্থা অথবা মহাপ্রলয় কালে সর্বপ্রজা, পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়, এবং পুনরায় উৎপন্ন হয় এই কারণে 'ভর্গ' বলা হয় (শশ্বত্‌ সূযমানাত্‌ সূর্য্যঃ) নিরন্তর উদয় ও অস্ত হয়ে প্রাতঃ কালাদি সৃষ্টি করার জন্য তিনি সূর্য এবং সর্বপ্রাণীবর্গ কে বৃষ্টি অন্য বীর্যাদি দ্বারা উৎপত্তি কর্তা হওয়ার দরুন সবিতা। (আদানাত্‌ আদিত্যঃ) পৃথিবীর রস তথা সর্ব প্রাণী আয়ু গ্রহণকারী বলে আদিত্য। (পবনাত্‌ পাবনোপ্যেষএব) স্বর্গ পবিত্র কারি পবন রূপী বায়ু ও পরমেশ্বরের আরেক নাম আবার অপ নামে জলও পরমেশ্বরেরই স্বরূপ। এই রূপ ব্রহ্মবাদী বলে থাকে এই প্রকার গায়ত্রী মন্ত্রের দ্বিপদ হতে দেবতত্ত্ব নিশ্চিত হয়, অর্থাৎ সূর্য বায়ু জল উপলক্ষিত দেবতা রূপ পরমাত্মামাকেই বোধন করে এবং সমগ্র জগত উৎপত্তি পালন সংহার কর্তব্য বোধন তথা জগৎলয়ধার ও জগৎ উৎপাদন কারণ রূপে 'ভর্গ' নামে বিখ্যাত।

এই কারণে জড় প্রকৃতি জগতের উৎপাদন কারণ ধূর্ত দয়ানন্দের এই যুক্তি ‘গায়ত্রী মন্ত্র অর্থাৎ ব্রহ্ম বিদ্যা’র ই বিরুদ্ধ আচরণ করে। সেই জন্য তাকে মিথ্যা বলে গণ্য করতে হবে।

এই প্রকার বেদ উপনিষদ আদি হতে গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ বর্ণনা করা হলো এখন এটা বিচার্য বিষয় হলো যে দয়ানন্দ  নিজের সত্যার্থ প্রকাশের অন্তিম (স্বমন্তব্যামন্তব্যপ্রকাশঃ) প্রকরণে লিখেছেন যে

"১১২৭ বেদের শাখা যা কিনা বেদের ব্যাখ্যানরূপ ব্রহ্মাদি মহর্ষির সংকলিত গ্রন্থ ," এই কারণে গায়ত্রী যা চতুর্বেদের প্রধান, তার অর্থ কোন এক ব্যাখ্যানের রীতি অনুসারে দয়ানন্দের লেখা উচিত ছিল। এবং এখানে পর্যালোচনার বিষয় হলো দয়ানন্দ যে ১১২৭ শাখা কথা উল্লেখ করেছেন তা নির্ভেজাল মিথ্যা কারণ মহর্ষি পতঞ্জলির শৈবাচার্য‌ দ্বারা রচিত মহাভাষ্যের লেখা অনুসারে ১১৩১ শাখা আছে, এখন বিচার্য বিষয় হলো যে এই মন্ত্রের ব্যাখ্যানে দয়ানন্দের একটি ব্যাখ্যাও গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থের সঙ্গে সাদৃশ্য মেলে না। তাহলে আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতীর বানানো এই কল্পিত মনগড়া অর্থ কে মানবে ?

উত্তর : গাঁজা সেবনকারী দয়ানন্দের অনুসারী আর্য‌ সমাজী ছাড়া আর কোনো প্রকৃত সনাতনীরা এই নকল অর্থ মানবে না ।


🟪 (৩) দয়ানন্দ সরস্বতীর তৃতীয় দাবী (৩) 🟪 

॥ আচমন প্রকরণ ॥


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৮ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন,

যে পরিমাণ জল কন্ঠের নীচে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে;- অধিক বা ন্যূন নহে, সেই পরিমাণ জল করতলে লইয়া উহার মূলে ও মধ্যস্থলে ওষ্ঠ লাগাইয়া 'আচমন' করিবে। তাহাতে কন্ঠস্থ কফ এবং পিত্তের কিঞ্চিৎ নিবৃত্তি হয়। তাহার পর 'মার্জন' করিতে অর্থাৎ মধ্যমা ও অনামিকা অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা নেত্রাদি অঙ্গে জল ছিটাইবে। তাহাতে আলস্য দূর হয়।


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর তৃতীয় দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

বাহরে স্বামী মূর্খানন্দ! আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আচমন কফ ও পিত্তের শান্তির জন্য করা হয়। এখন এইসব মূর্খানন্দী আর্যসমাজীদের প্রশ্ন করা হোক, যদি 'আচমন' কফ ও পিত্তের নিবৃত্তির জন্য করা হয়, তবে কি সমস্ত লোক সন্ধ্যা বেলায় কফ ও পিত্ত গ্রসিত থাকে, এবং সবার কি সর্বদা আলস্য ও নিদ্রা চেপে ধরে থাকে ?
আচমনের সময় তো আলস্য বা নিদ্রা কোনটাই থাকে না ।
তাছাড়া যদি আচমন কফ ও পিত্তের নিবৃত্তির জন্য করা হয় তবে হাতে জল নিয়ে গায়ত্রী মন্ত্র ও ব্রহ্মতীর্থ হতে আচমন করার আবশ্যকতা কি? 

আর কফ ও পিত্ত কি প্রতিজ্ঞাপত্র লিখেছে যে রোজ সন্ধ্যার সময় সংস্কারকর্তার বা সন্ধ্যাকারী ব্যক্তির কন্ঠে কফের উদ্রেক হবে ?
 যদি মার্জনের প্রয়োজন আলস্য দূর করার জন্য হয়, তবে অন্য কোন উপায় করুন , যেমন — চা কফি পান করেন অনেকেই, এর চেয়েও আরো ভালো হয় যদি অ্যামোনিয়ার শিশির গন্ধ শুকে নেওয়া যায়, এতে মূর্চ্ছিত ব্যক্তিও উঠে খাঁড়া হয়ে পড়বে 😁😆🤣 আলস্য তো দূরের কথা ।

 সন্ধ্যাকার্য তো প্রাতঃকালীন স্নানের পরেই করা হয়, এটা বোঝা খুব মুশকিল যে ওহে দয়ানন্দ সরস্বতী মহাশয় আপনি মানুষের সন্তান না রাক্ষস কুম্ভকর্ণের সন্তান যে আপনাকে সর্ব সময় নিদ্রা ও আলস্য ঘিরে থাকে ?
এখন আপনি বলুন স্নান করার পরেও যদি আপনার নিদ্রা না যায় তবে মার্জন করে কি লাভ?
 রাতে নিশচয়‌ই কুকর্ম করতেন তাই হয়তো সকালে নিদ্রা পূর্ণ না হ‌ওয়ায় বারবার ঘুম পেয়ে যায় আপনার । যাই হোক এসব উদ্ভট কথার কারণে স্বামী মূর্খানন্দের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
আচমন করার দ্বারা শরীরের অভ্যন্তরের শুদ্ধি হয়, তার প্রমাণ  আপনাদের সন্মুখে উন্মোচিত করা হলো ঃ-

ব্রাহ্মেণ বিপ্রস্তীর্থণ নিত্যকালমুপস্পৃশেত্‌ ।
কাযত্রৈদশিকাভ্যাং বা ন পিত্র্যেণ কদা চন ।। ১।।
অঙ্গুষ্ঠমূলস্য তলে ব্রাহ্মং তীর্থং প্রচক্ষতে ।
কাযমঙ্গুলিমূলেঽগ্রে দেবং পিত্র্যং তযোবধঃ ।। ২।।
ত্রিরাচামেদপঃ পূর্বং দ্বিঃ প্রমৃজ্যাত্ততো মুখম্‌ ।
খানি চৈব স্পৃশেদদ্ভিরাত্মানং শির এব চ ।। ৩।।
অনুষ্ণাভিরফেনাভিরদ্ভিস্তীর্থেন ধর্মবিত্‌ ।
শৌচেপ্সুঃ সর্বদাচামেদেকান্তে প্রাগুদঙ্মুখঃ ।। ৪।।
হ্রদ্গাভিঃ পূযতে বিপ্র কন্ঠগাভিস্তু ভূমিপঃ ।
বৈশ্যোঽদ্ভিঃ প্রাশিতাভিস্তু শূদ্রঃ স্পৃষ্টাভিরন্ততঃ ।। ৫।।
 [মনুস্মৃতিঃ অধ্যায় ২ শ্লোক ৪৮-৬২]
 
অর্থ — ব্রাহ্মণ সর্বদা ব্রহ্মতীর্থ বা প্রজাপতি তীর্থ অথবা দেবতীর্থ হতে আচমন করবে তাদের কখনোই পিতৃতীর্থ হতে আচমন করা উচিত নয় ।।১।।
(এর পরের শ্লোকে বলা হয়েছে) 
যে তীর্থ হাতের কোথায় অবস্থিত। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মূলে ব্রহ্ম তীর্থ, কনিষ্ঠ আঙ্গুলির মূলে প্রজাপতি তীর্থ ও সেই আঙ্গুলের অগ্রে দেব তীর্থ এবং অঙ্গুষ্ঠা ও তর্জনীর মধ্যে পিতৃ তীর্থ অবস্থান করে।
সর্বপ্রথম তিনবার জল দ্বারা আচমন করে, এরপর দুবার মুখ ধৌত করে তারপর জ্ঞানেন্দ্রিয়, মস্তক ও হৃদয়ে জল স্পর্শ করবে ।।৩।।
পবিত্রতায় ইচ্ছুক ধর্মাত্মা ব্যাক্তি শীতল ও ফেনা রহিত (শুদ্ধ) জল দ্বারা ব্রহ্ম আদি তীর্থ দ্বারা একান্তে পূর্ব বা উত্তর অভিমুখে উপবেশন করে আচমন করবে। ।।৪।।
আচমনের সময় জল যখন ব্রাহ্মণের হৃদয় পর্যন্ত প্রবেশ করে, তখন সে পবিত্র হয় কন্ঠে জল প্রবেশ করলে ক্ষত্রিয় তথা মুখে জল স্পর্শ করলে শূদ্র পবিত্র হয় ।।৫।।

এখন স্বামী ধূর্তানন্দ কি বলবেন ? মনুর এই শ্লোক আপনার কল্পিত অর্থের সমূলে বিনাশ করেছে।
 
এরপর আপনি পরিক্রমার কথা বলেছেন - আপনি নিজে বলুন পরিক্রমা কিসের জন্য করা হয় আপনার জন্য না আপনার সত্যার্থ প্রকাশের জন্য। কারণ, পরমাত্মা কে তো আপনি নিরাকার মানেন, তাহলে তার জন্য পরিক্রমা করার কি দরকার ? 
এবং জল দ্বারা কফের নিবৃতির অর্থ আপনি (মনুস্মৃতি ২/১০৪) এই শ্লোকে জলের পাশে বসে গায়ত্রী জপের কথা লিখেছেন, কিন্তু আপনার সেসব চ্যালা আর্যসমাজীরা আলস্য ও কফ গ্রসিত হয়ে থাকে তবে আপনার কথানুসারে কোট পায়জামা পরিধান করে কোঠী বা বাংলো তে জপ করবে, জলের কাছে নয়, কারণ জলের কাছে বসে গায়ত্রী জপ করলে করলে আর্য সমাজীদের আরো আলস্যতা ও কফ গ্রাস করবে 😂😆 ।
দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনি যে বললেন, আচমন করা হয় কফ, ও পিত্তের শান্তির জন্য - তা এই কথার প্রমাণ কোথায় আছে ? আপনি তো একটি প্রমাণ উল্লেখ করেননি । অবশ্য কাল্পনিক কথার প্রমাণ শাস্ত্র থেকে দেবেন কি করে, আর্য‌সমাজী রা তো আপনার বলা কাল্পনিক কথাকেও বেদ বানী বলে বিশ্বাস করে। যারা নিজেরাই কাল্পনিক মতবাদের অনুসারী তারা সনাতন সমাজ কে নতুন করে বেদের শিক্ষা দেবার স্বপ্ন দেখে, কাক যদি ময়ূর পুচ্ছ লাগিয়ে ভাবে যে কাক ময়ূর হয়ে গেছে তাহলে কি কাক সত্যি সত্যিই ময়ূর হয়ে যায় ? 
পাঠক বৃন্দ আপনারা বিচার করুন।


🟪 (৪) দয়ানন্দ সরস্বতীর চতুর্থ দাবী (৪) 🟪

॥ সন্ধ্যা বিধি প্রকরণ ॥


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৭ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন,

সন্ধ্যা ও অগ্নিহোত্র সায়ং প্রাতঃ দুই বেলায় করিবে। দুই বেলা দিন রাত্রির সন্ধি বেলা, অন্য কোন সময় নহে ।

 দয়ানন্দ সরস্বতীর চতুর্থ দাবীর খণ্ডন (ISSGT)  —

স্বামীজি আপনি তো বললেন দুই কাল ব্যতীত অন্য সময় ঈশ্বরের নাম স্মরণ করা যাবে না, কিন্তু তপস্বীরা তো বছরের পর বছর পর্যন্ত নিরন্তর পরমাত্মার ধ্যান করতে থাকেন। এখানে শুধুমাত্র দুই কালে ঈশ্বরের অর্চনা-বন্দনা করতে হবে বলা কখনোই উচিত নয়, পরমেশ্বরের নাম জপ সর্বদা শ্রেয় কারক।
 
শুধুমাত্র প্রভাত ও সায়ংকালের দুইবার মাত্র সন্ধ্যা উপাসনা নয় বরং ত্রিকাল সন্ধ্যা করা কোন প্রকারে হানিকারক নয় বরং লাভ দায়ক। এর প্রমাণ হলো - যেখানে তৈত্তিরীয় আরণ্যকে প্রভাতের সময়ে করা সন্ধ্যা উপাসনার ক্ষেত্রে আচমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ হয়েছে, সেখানেই মধ্যাহ্ন কালে সন্ধ্যার আচমন উল্লেখ রয়েছে । দেখুন 👇 
ॐ আপঃ পুনন্তু পৃথিবীং পৃথিবী পূতা পুনাতু মাম্ ।
পুনন্তু ব্রহ্মণস্পতির্ব্রহ্মপূতা পুনাতু মাম্  ॥
যদুচ্ছিষ্টমভোজ্যং চ যদ্বা দুশ্চরিতং মম ।
সর্বং পুনন্তু মামাপোঽসতাং চ প্রতিগ্রহং স্বাহা ॥
(তৈত্তিরীয় আরণ্যক/অনুবাক ২৩)

অর্থ : হে জল পৃথিবীকে পবিত্র করো বা আমার পার্থিব শরীরকে পবিত্র করো, এই পৃথিবী জলের দ্বারা পবিত্র হয়ে নিজের গুণসমূহের দ্বারা আমাকে পবিত্র করো, এই জল জ্ঞানের পতি বা বেদ ধারণ করবার কারণে পতি, আত্মাকে পবিত্র করো, সবাইকে পবিত্রকারী ব্রহ্ম আমাকে পবিত্র করুন, আমি যে অনুচিত নিন্দিত ভোজন করেছি, আমি যে অসৎ কর্ম করেছি, অর্থাৎ যার ধান্য গ্রহণযোগ্য নয় আমি তার অন্ন গ্রহণ করেছি। এই সবকিছু থেকে জল আপনি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হিসেবে আমাকে পবিত্র করে বিশেষ বিবরণ আমাদের ত্রিকাল সন্ধাতে দেখুন ॥

যখন রাজা যুধিষ্ঠিরের কাছে দুর্বাসা মুনি মধ্যাহ্ন কালে ভোজন যাচনা করেছিলেন তখন যুধিষ্ঠির তা স্বীকার করেছিলেন, তখন তা শুনে দুর্বাসা মুনি মধ্যাহ্নকালের সন্ধ্যা করতে গিয়েছিলেন। যথা —
তে চাবতীর্ণা সলিলে কৃতবন্তোঘমর্ষণম্ ॥

মহাভারত বনপর্ব অধ্যায় ২৬৩ শ্লোক ২৮ -এ নদীতে গিয়ে জলে অবতীর্ণ হয়ে অঘমর্ষণ জপ করতে থাকলেন । 

গায়ত্রী নাম পূর্বাহ্ণৈ সাবিত্রী মধ্যমে দিনে
সরস্বতী চ সায়াহ্ণৈ সৈব সন্ধ্যা ত্রিষু স্থিতা ॥ ব্যাস
সন্ধ্যা ত্রয়ং তু কর্তব্যং দ্বিজেনাত্মবিদা সদা ।
ত্রিকাল সন্ধ্যা কণাত্তৎ সর্বং চ বিনশ্যতি ॥ যাজ্ঞবল্ক্য 

ব্যাসজী বলেন, প্রভাতের সন্ধ্যা গায়ত্রী, মধ্যাহ্নের সাবিত্রী ও সায়ং সন্ধ্যাতে সরস্বতী বলে পরিচিত। 
যাজ্ঞবল্কের বচন হল ব্রাহ্মণের তিন কালে সন্ধ্যা করা উচিত তথা ত্রি কাল সন্ধ্যা তে সমস্ত পাপ দূর হয় ।

সন্ধ্যা উপাসনা বিষয়ে শাস্ত্রের বিধান আসলে কেমন রয়েছে - সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞান দয়ানন্দ সরস্বতী জীর ছিল না, তারপরেও তার এই মূর্খতা কে নিয়ে গর্ব কি করে বেড়ায় আর্য‌ সমাজীরা ? 
লাজলজ্জা হীন হলেই এমন করা সম্ভব। 



🟪 (৫) দয়ানন্দ সরস্বতীর পঞ্চম দাবী (৫) 🟪

॥ স্বাহা শব্দ প্রকরণ ॥


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন,

'স্বাহা' শব্দের অর্থ এই যে আত্মাতে যে রূপ জ্ঞানের উদয় হয়, জিহ্বা দ্বারা সেই রূপেই বলিবে বিপরীত বলিবে না।


 দয়ানন্দ সরস্বতীর পঞ্চম দাবীর খণ্ডন (ISSGT)  —

ধন্য! স্বামীজি, আপনার বুদ্ধি এবং আপনার দু টাকার জ্ঞান, মিথ্যা ভাষণ করা আপনার রক্তে অন্তর্নিহিত হয়ে রয়েছে। দয়া করে আপনি বলুন এই স্বাহা শব্দের অর্থ আপনি কোন নিঘন্টু এবং নিরুক্ত হতে নিয়েছেন,
এবং ওপরে আপনি যে লিখেছেন 'প্রাণয স্বাহা' এখন আপনার মতানুসারে এর অর্থ হল প্রাণ অর্থাৎ পরমেশ্বরের অর্থ যেমন জ্ঞান আত্মা হতে প্রকাশিত হবে তেমনি জিভ দ্বারা বাচিত হবে এটা কোন কথা হল এর দ্বারা হবনের কোন কলা সিদ্ধ হবে আপনার দ্বারা বলা স্বাহা-র কল্পিত অর্থ না এর আগে কেউ বলেছে না কেউ শুনেছে। শুনুন স্বাহা হল অব্যয, যার অর্থ হল হবি ত্যাগ করা যে দেবতার উদ্দেশ্যে অগ্নিতে হবে প্রদান করা হয় তাতে স্বাহা শব্দ প্রয়োগ করা হয়, যেমন 'প্রাণয স্বাহা' অর্থাৎ প্রাণের হবি দেওয়া, কিছু বুঝতে পারলেন মূর্খানন্দ জী ??
 আপনি না জানেন নিঘন্টু না জানের নিরুক্ত, শুধুমাত্র  নতুন নতুন অর্থের কল্পনা করে কি সিদ্ধ করতে চাইছেন ? 
সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে অসনাতনী বানাবেন ?



🟪 (৬) দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবী (৬) 🟪

॥ হোমের উদ্দেশ্য প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

প্রশ্নঃ- হোম করিলে কি উপকার হয়?

উত্তরঃ- সকলেই জানে যে দুর্গন্ধময় বায়ু ও জল হইতে রোগ জন্মে, রোগ হইতে প্রাণীদিগের দুঃখ হয়। সুগন্ধিত বায়ু ও জল দ্বারা আরোগ্য এবং রোগনাশ হওয়ায় সুখ লাভ হয়।

প্রশ্নঃ- চন্দনাদি ঘর্ষণ করিয়া কাহারও দেহে লেপন করিলে অথবা ঘৃতাদি ভক্ষণ করিতে দিলে বহু উপকার হয়। সেই ঘৃত অগ্নিতে বৃথা নিক্ষেপ করিয়া নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কার্য্য নহে।

উত্তরঃ- পদার্থবিদ্যা বিষয়ে তোমার জ্ঞান থাকলে এরূপ কথা কখনও বলিতে না, কারণ কোনও দ্রব্যের কদাপি অভাব হয় না। দেখ, যে স্থানে হোম হয়, সেই স্থান হইতে দুরস্থ ব্যক্তি নাসিকা দ্বারা সুগন্ধ গ্রহণ করে এইরূপে দুর্গন্ধও হোক গ্রহণ করিয়া থাকে। ইহা দ্বারাই বুঝিয়া লও যে, অগ্নিতে অর্পিত পদার্থ সূক্ষাকারে বিস্তৃত হইয়া বায়ুর সহিত দূর দেশে বিস্তৃত হইয়া দুর্গন্ধ নাশ করে।

প্রশ্নঃ- যদি এইরূপই হয়, তবে কেসর, কস্তুরী, সুগন্ধ পুষ্প এবং আতর প্রভৃতি গৃহে রাখিলে বায়ু সুগন্ধময় হইয়া সুখকর হইবে।

উত্তরঃ- সুগন্ধিত দ্রব্যাদির এরূপ সমর্থ্য নাই যে, গৃহের বায়ুকে সে বাহির করিয়া বিশুদ্ধ বায়ু প্রবেশ করাইবে। কারণ ইহাতে ভেদক শক্তি নাই, কিন্তু ঐ বায়ু এবং দুর্গন্ধময় পদার্থকে ছিন্নভিন্ন এবং হালকা করিয়া বাহির করিবার তথা পবিত্র বায়ু প্রবেশ করাইবার সামর্থ্য অগ্নিরই আছে।

প্রশ্নঃ- তবে মন্ত্রপাঠ করিয়া হোম করিবার প্রয়োজন কী?

উত্তরঃ- মন্ত্র সমূহে যাহা ব্যাখ্যাত আছে উহা দ্বারা হোমানুষ্ঠানের উপকারিতা জানা যায়। আবৃত্তির দ্বারা মন্ত্রগুলো কন্ঠস্থ থাকে। এবং বেদের পঠন ও রক্ষিত হয়।

প্রশ্নঃ- হোম না করিলে কি পাপ হয়?

উত্তরঃ- অবশ্যই হয়। কেননা, মানুষ্যের শরীর হইতে যে পরিমাণ দুর্গন্ধ উৎপন্ন হইয়া জলবায়ুকে দূষণ করে এবং রোগোৎপত্তির কারণ হইয়া প্রাণীদের পক্ষে দুঃখকর হয়, সেই মানুষ্যের সেই পরিমাণ পাপও হইয়া থাকে। এই জন্য সেই পাপ নিবারণার্থ সেই পরিমাণ অথবা তদপেক্ষা অধিক সুগন্ধ বায়ু এবং জলের মধ্যে ছড়াইয়া দেওয়া আবশ্যক। পানাহারের দ্বারা কেবল ব্যক্তি বিশেষের সুখ হইয়া থাকে। কিন্তু একজন লোক যে পরিমাণ ঘৃত এবং সুগন্ধ পদার্থাদি ভোজন করে, সেই পরিমাণ দ্রব্যের হোম দ্বারা লক্ষ লক্ষ লোকের উপকার হইয়া থাকে। কিন্তু যদি মনুষ্য উত্তম ঘৃতাদি উত্তম বস্তু ভোজন না করে তাহা হইলে তাহাদের শারীরিক ও আত্মিক বল বৃদ্ধি হইতে পারে না। অতএব উত্তম ভজ্য এবং পানীয় গ্রহণ করানও আবশ্যক। কিন্তু তদপেক্ষা অধিক পরিমাণে হোম করা উচিত। অতএব হোম করা আবশ্যক।

প্রশ্নঃ- প্রত্যেক ব্যক্তি কত আহুতি দেবে এবং প্রত্যেক আহতির পরিমাণ কত হওয়া উচিত?

উত্তরঃ- প্রত্যেক ব্যক্তি ষোলটি টি করিয়া আহুতি দেবে এবং প্রত্যেক আহতির পরিমাণ নূন্যকল্পে ছয় মাষা ঘৃতাদি হওয়া উচিত। আর যদি অধিক করা হয়, তবে অতি উত্তম এই জন্য আর্য্যবর শিরোমণি মহাশয়, ঋষি, মহর্ষি, রাজা, মহারাজারা অনেক হোম করিতেন ও করাইতেন।

বিশ্বানি দেব সবির্তদুরিতানি পরাসুব । ইয়দ্‌ ভদ্রত্নন্ন আ সুব । (যজু ১০ । ৩)
এই মন্ত্রটি এবং পূর্বোক্ত গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা আহুতি প্রদান করিবে।

অগ্নিহোত্রের জন্য কোন ধাতু অথবা মৃত্তিকা নির্মিত বেদী(যজ্ঞকুণ্ড) এইরূপে প্রস্তুত করিবেঃ- বিধির উপরিভাগ দ্বাদশ অথবা ষোড়শ অঙ্গুলি (চতুষ্কোণ) , থাকিবে অর্থাৎ উপরিভাগ যে পরিমাণ প্রশস্ত হইবে, নিম্ন ভাগ তাহার এক চতুর্থাংশ হইবে। উহাতে চন্দন, পলাশ অথবা আম্র প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ কাষ্ঠ খন্ড সমূহ সেই বেদীর পরিমাণে ছোট বড় করিয়া রাখিবে তন্মধ্যে অগ্নি স্থাপন করিয়া পুনরায় উহাতে সুবিধা অর্থাৎ পূর্বোক্ত ইন্ধন রাখিয়া দিবে।


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

বাহ! রে স্বামী ধূর্তানন্দ!  আপনাদের নিয়োগী চেলারা বলেন যে আপনি হাজারো গ্রন্থের অধ্যায়ন করে তথাকথিত গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ তো রচনা করেছেন,  কিন্তু আপনি হাজারো গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছেন - এটা শুধু ফাঁকা আওয়াজ মাত্র, আপনার বেদজ্ঞতা এখানে সিদ্ধ হয়ে যায়, যে হবন করতে করতে মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘৃত দ্বারা আহুতি দেওয়ার ফল কি? এই বিষয়ে বেদাদি গ্রন্থ হতে একটা প্রমাণ দেখাতে পারলেন না। 

 অন্তত একটা প্রমাণ তো দেখা পারতেন, এমনকি আপনার অগ্নিহোত্র বিধিও  বেদ বিরুদ্ধ। যতদূর পদার্থবিদ্যার কথা, তা আপনার পদার্থবিদ্যার দৌড় অষ্টম ও নবম সমুল্লাসে দেখা গেছে, যেখানে আপনি সূর্য, চন্দ্র তারা আদি মানুষের প্রজা এবং আকাশের নীল রং জলের কারণে হয় লিখেছেন তার খণ্ডন সেখানেই করা হবে। আপাতত আপনার পদার্থবিদ্যার খণ্ডন করছি। আপনি যে অগ্নিহোত্রের প্রয়োজন জলবায়ুর শুদ্ধির জন্য বলেছেন, তা আপনারই কল্পিত সিদ্ধান্ত শাস্ত্র এবং যুক্তি উভয়ের বিরুদ্ধে মত পোষণ করে, যদি ঘৃতদ্বারা আহতি প্রদান করলেই শুদ্ধ হয়ে যেত, তবে কেন মাত্র ষোলটি আহুতি প্রদানের কথা বলা হলো ? 
এর থেকে ভালো এই নয় যে কোন নিয়োগী সমাজীরা ঘি এর গোদামে(Godown-এ) আগুন লাগিয়ে দিলেই হত যখন এরকম হাজার কোটি সংখ্যক গোদাম একত্রে দাহ করা হবে তখন জলবায়ু অনেক দ্রুত শুদ্ধ হবে এবং তাতে জন মানুষের কল্যান হবে। এখন পদার্থবিদ্যার মহাজ্ঞানী আপনি শুনুন জলবায়ু শুদ্ধ স্বয়ং হতে থাকবে।

 সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্র-নদীর জলে জোয়ার ভাটা হয়, জল হতে বাষ্প উৎপন্ন হয়, তার থেকে মেঘ সৃষ্টি হয়, মেঘ হতে বৃষ্টি হয়, আবার বনে স্বয়ং প্রসফুটিত সুগন্ধিত পুষ্প, ঔষধি আদির উৎপত্তি হয়, বায়ুর প্রসারণ ক্ষমতা সুগন্ধিত পুস্পের পরমাণু বায়ুতে সংমিশ্রিত করে, ঋতু পরিবর্তন হয়, এইসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, এইসব এত বৃহৎ স্তরে হয় যে আপনার সিদ্ধান্ত ধোপেও টিকবে না।

এখন দেখবো, গায়ত্রী মন্ত্রের সাথে স্বাহা বলে হোম করা নিয়ে মুর্খানন্দ কি বলছে।
 গায়ত্রী মন্ত্রের কি অর্থ ? কি লাভ ? তা আগেই খণ্ডন করা হয়েছে। 

এখন ভণ্ড দয়ানন্দ সরস্বতীর মতানুসারে হোমের সময় মন্ত্রের উচ্চারণ নাকি মন্ত্র কন্ঠস্থ করার জন্য। ঘৃতের আহুতি জলবায়ু শুদ্ধ করার জন্য, আবার গায়েত্রী মন্ত্রের সাথে স্বাহা শব্দ জুড়ে দেওয়া, তাও আবার স্বাহা শব্দের কল্পিত অর্থ ব্যবহার করা, আপনার হোমের তো কোনো যথার্থ অর্থ রইল না সুতরাং অহেতুক ঘিয়ের অপচয় করা ছাড়া আর কিছুই করেন না, প্রথমে স্বামীজি ঝুটি বাঁধলেন তারপর জপ করলেন, তারপর ফুক মারলেন, এমনকি দয়ানন্দের অনুসারী আর্যসমাজীরা মৃত ব্যক্তির অন্তিম সংস্কারেও গায়ত্রী মন্ত্রের প্রয়োগ করে ।

 দেখুন পাঠক বৃন্দ এক গায়ত্রী মন্ত্রের  দ্বারা দয়ানন্দ সরস্বতী কত লাভ করে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে যখন আরও বিদ্যার উৎপত্তি হবে তখন তিনি এর সাথে ইঞ্জিন লাগিয়ে দয়ানন্দ জী রেল চালাবেন, পাখনা লাগিয়ে জাহাজ উড়াবেন ।
যদি বায়ু শুদ্ধ করা ই হোমযজ্ঞের - এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে কেন শুধুমাত্র প্রাতঃ ও সায়ং কালে  সন্ধ্যার নিয়ম,  যখন খুশি আগুনে ঘি প্রজ্বলিত করা যায়,  আপনাদের তো স্নান করার‌ও কোন আবশ্যকতা নেই,  যখন ইচ্ছে করবে যজ্ঞে ঘি ঢেলে দিলেই হবে,  আবার সত্যার্থ প্রকাশ এর ২৮ তম পৃষ্ঠায়  আপনি লিখেছেন যে, "এইরূপ একটি প্রোক্ষণী পাত্র, এইরূপ প্রণীতা পাত্র,  এবং  এই প্রকারের আর  একটি আজস্থালী  অর্থাৎ ঘৃত রাখিবার পাত্র এবং এইরূপ চমসা-  স্বর্ণ, রৌপ্য অথবা কাষ্ঠ নির্মিতও  হইতে পারে। প্রণীতা ও প্রোক্ষণীতে  জল থাকিবে এবং এইভাবে আজ্যস্থলীতে  অর্থাৎ ঘৃত পাত্রে ঘৃত  রাখিয়া উহাকে  তপ্ত করিয়া লইবে।  জল রাখিবার জন্য প্রণীতা এবং প্রোক্ষণী  এই জন্য যে,  ইহা দ্বারা হস্ত প্রক্ষালনের  জল লইবার সুবিধা হয়।"

এইসব তো আপনি অযথাই লিখেছেন, কারণ আপনার মতানুসারে মন্ত্র উচ্চারণ করলে মন্ত্র কন্ঠস্থ হয়, তবে বৃথা হোম করে পরিশ্রম করে সময় ব্যয় না করে মন্ত্র কন্ঠস্থ করা যেতে পারে, আবার শুধুমাত্র হোম করে মন্ত্র গুলো কন্ঠস্থ করার কোন যৌত্তিকতা নেই, তার উপর স্বাহা যুক্ত করার কোন আবশ্যকতা নেই।

সব থেকে হাস্যকর হল, দয়ানন্দ সরস্বতী জী বলছেন, দুর্গন্ধ হল পাপ। মন্ত্র পাঠ করলে কি হয় ?   মন্ত্র পাঠ করলে মন্ত্র মুখস্ত থাকে। মন্ত্র মুখস্ত কেন করবো ? মন্ত্র পাঠ করলে মন্ত্রের উপকারীতা জানা যায়, উপকারিতা তা কি ? বাতাস থেকে দুর্গন্ধ দূর হয় ।  তাই মন্ত্র আবৃত্তি করলে বেদ মন্ত্র মুখস্ত থাকে। মুখস্ত কেন করবো ? পাঠ করবার জন্য। পাঠ করলে কি হয় ? মন্ত্র মুখস্ত থাকে 😂
দুর্গন্ধ বাতাস দূর করবার জন্য নাকি বেদের মন্ত্র পাঠ করে এত ঘটা করে হোমযজ্ঞ করা হয়। আর্যসমাজীরা আবার আমাদের প্রতিমাপূজক বলে হাসে, পৌরাণিক বলে হাসে। অথচ, এরা নিজেদের এইসব পাগলামির কাণ্ডকারখানার বিষয় যেন চোখেই দেখতে পায় না, এদের মস্তিস্ক তখন বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। অথচ, দয়ানন্দের দেওয়া এইসব কাল্পনিক গল্প কে আর বেদবিরুদ্ধ অশাস্ত্রীয় গাঁজাখুরি গল্প বলে মনে হয় না। 


 শুনুন! স্বামী ধূর্তানন্দজী হবনের দ্বারা কেবল মাত্র জলবায়ুর শুদ্ধি ও মন্ত্র উচ্চারণের দ্বারা তা করার সিদ্ধান্ত একদম ভুল কথা। কারণ, হবনে (হোম-যজ্ঞে) ঘৃত দ্বারা আহুতি প্রদান করা ও মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা সুখ, ধৈর্য্য, ধান্য, রক্ষা, সামর্থ্য প্রাপ্তি এবং পাপ নষ্ট হয়  তার সাথে স্বর্গ প্রাপ্তি হয়, দেখুন আপনাকে বেদ হতে প্রমাণ দেখাচ্ছিঃ -

প্রথমে ঘৃত দ্বারা হবন করার ফলের বর্ণনা  করা হচ্ছেঃ-

বিতিহোত্রং ত্বা কবে দ্‌যুমন্তম্‌ সম্‌ ইধীমহি। অগ্রে বৃহন্তম্‌ অধ্বরে ।।৪।।

ঘৃতাচ্য্‌ অসি গুহূর্‌ নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ঘৃতাচ্য্‌ অস্য উপভৃন্‌  নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ঘৃতাচ্য্‌ অসি ধ্রুবা নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ধ্রুবা ঽ অসদন্ন ধতস্য যোনৌ তা বিষ্ণো পাহি । পাহি যজ্ঞং । পাহি যজ্ঞপাতিম্‌ ।

পাহি মা যজ্ঞন্যম্‌ ।। ৬ ।।

  [শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ২, মন্ত্র ৪,৬]

অর্থ — ভূত-ভবিষ্যতের জ্ঞাতা ক্রান্তাদর্শী অগ্নিদেব! ঐশ্বর্য প্রাপ্তির কামনা কারী তেজস্বী, মহান, যাজক যজ্ঞে আপনাকে সমিধা দ্বারা প্রজ্বলিত করছি ।।৪।।

হে জুহু! আপনি আপনার প্রিয় ঘৃত দ্বারা পূর্ণ হয়ে এই যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত হোন, হে উপভৃত! আপনি ঘৃত দ্বারা যুক্ত হয়ে আপনার পিয় যজ্ঞস্থলে স্থাপিত হোন, হে ধ্রুবা ! আপনি আপনার প্রিয় ঘৃত দ্বারা সিঞ্চিত হয়ে যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত হোন, হে যজ্ঞ-স্থলে প্রতিষ্ঠিত বিষ্ণুদেব! আপনি যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত সমস্ত সাধন, উপকরণ, যজ্ঞকর্তা এবং আমাদের রক্ষা করুন ।।৬।।

সমিধাগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্‌ বোধযতাতিথিম্‌ ।

আস্মিন্‌ হব্যা জুহোতন ।। ১।।

সুসমিদ্ধায শোচিষে ঘৃতং তীব্রং জুহোতন ।

অগ্রযে জাতবেদসে ।।২।।

তং ত্বা সমিদ্ভির্‌ অঙ্গিরো ঘৃতেন বর্ধযামসি ।

বৃহচ্ছোচা যবিষচ্য ।। ৩।।

উপ তাগ্রে হবিষ্মতীর্‌ ঘৃতাচীর্‌ যন্তু হর্যত ।

জুষস্ব সমিধো মম ।। ৪।।

 [শুক্ল-যর্জুবেদ/অধ্যায় ৩, মন্ত্র ১-৪]

অর্থ — হে ঋত্বিজ! আপনি ঘৃতসিক্ত সমিধা দ্বারা (যজ্ঞ) অগ্নিকে প্রজ্বলিত করে, ঘৃতের আহুতি প্রদান করে সব কিছু আত্মসাৎকারী অগ্নিদেবকে প্রদীপ্ত করো এবং অনেক প্রকারের দ্রব্য পদার্থ দ্বারা যজ্ঞ করতে করতে উনাকে প্রদীপ্ত যুক্ত কর ।। ১।।

হে ঋত্বিজ! সুপ্রজ্বলিত জাজ্বল্যমান, সর্বত্র (জাতবেদ) দোদীপ্যমান যজ্ঞাগ্নিতে শুদ্ধ ঘৃত দ্বারা আহূতি প্রদান কর ।। ২।।

হে প্রদীপ্ত অগ্নিদেব! আমার আপনাকে ঘৃত (এবং তাতে সিক্ত) সমিধা দ্বারা উদ্দীপ্ত করছি, হে নিত্যরূপা (তেজস্বী) অগ্নিদেব! (ঘৃত আহূতি প্রাপ্ত হওয়ার পর) আপনি উচ্চ শিখাগ্নির মাধ্যমে প্রকাশ যুক্ত হোন ।।৩।।

হে অগ্নিদেব! আপনাকে হবি-দ্রব্য এবং ঘৃত সিক্ত সমিধার প্রাপ্তি নিরন্তর হোক, হে দীপ্তিমান অগ্নিদেব! আপনি আমাদের দ্বারা সমর্পিত সমিধা গুলো স্বীকার  করুন ।। ৪।।

ঘৃতং মিমিক্ষে ঘৃতম্‌ অস্য যোনির্‌ ঘৃতে শ্রিতো ঘৃতম্‌ ব্‌ অস্য ধাম্‌ ।

অনুষ্বধম, আ বহ মাদযস্ব স্বাহাকৃতং বৃষভ বক্ষি হব্যম্‌ ।।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭/মন্ত্র ৮৮]

অর্থ - এই ঘৃত এই অগ্নির উৎপত্তির শান, ঘৃত উওনাকে তীক্ষ্নতা প্রদান করে, অগ্নি এই ঘৃতের আশ্রিত হয়ে, অতএব আমি এই অগ্নির মুখে ঘৃত সিঞ্চনের ইচ্ছা প্রকট করি, হে অধ্বরযে! হবি সংস্কারের পর অগ্নি আহবান করো, এবং যখন তিনি তৃপ্ত হবে তখন তাতে হব্যের দ্রব্যাদি দেবতাদের নিকট পৌছানোর জন্য নিবেদন করো।

অভি প্রবন্ত সমনেব যোষাঃ কল্যাণ্যঃ স্মযামানা সো ঽ অগ্নিম্‌ ।

ঘৃতস্য ধারাঃ সমিধো নসন্ত তো জষাণো হর্যতি জাতবেদঃ ।। 

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭, মন্ত্র ৯৬]

অর্থ — ঘৃতের ধারা অগ্নিতে ঢেলে, সমিধা ব্যাপ্ত করে, অগ্নিতে সুসংগত করে, ওই জাতবেদা অগ্নিতেই সেই ঘৃতের ধারাকে প্রাপ্ত করতে বারংবার ইচ্ছা প্রকাশ করে ।

অভ্য অর্ষত সুষ্টুতিং গব্যম্‌ আজিম্‌ অস্মাসু ভদ্রা দ্রবিণানি ধও ।

ইমং যজ্ঞং নযত দেবতা নো ঘৃতস্য ধারা মধুমত্‌ পবন্তে ।। 

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭, মন্ত্র ৯৮]

অর্থ — হে দেব! আপনি শ্রেষ্ঠ স্তুতি ও ঘৃত যুক্ত এই যজ্ঞে আসুন, এই মধুময় ঘৃতের ধারা বর্ষণ হচ্ছে, এই আহূতিকে স্বর্গ লোকে প্রাপ্ত করান, এবং আমাদের সর্ব প্রকার ধন- ঐশ্বর্য প্রদান করুন।


এবার দেখুন, মন্ত্র পড়ে হোম করার ফলঃ-

বিশ্বেঽঅদ্য মরুতো বিশ্বঽঊতী বিশ্বে ভবন্ত্ব ্‌ অগ্রযঃ সমিদ্ধাঃ ।

বিশ্বে নো দেবাঽঅবসা গমন্তু বিশ্বম্‌ অস্তু দ্রবিণং বাজো ঽ অস্মে ।।

 [শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৮, মন্ত্র ৩১]

অর্থ — আমাদের এই যজ্ঞতে আজ সমস্ত মরূদ্রণ আপনারা আসুন, সমস্ত গণদেবতা ও রূদ্রদেব এবং আদিত্য আপনারাও আসুন, বিশ্বদেবতাও আমাদের হবি গ্রহণ করার জন্য আসুন,  সমস্ত অগ্নি প্রদীপ্ত হোক, এবং আমাদের ঐশ্বর্য ও অন্নের প্রাপ্ত হোক।

আযুর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং প্রাণো যজ্ঞেন কল্পতাং চক্ষর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ শ্রোত্রং যজ্ঞেন কল্পতাং বাগ্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং মনো যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ আত্মা যজ্ঞেন কল্পতাং ব্রহ্মা যজ্ঞেন কল্পতাং জ্যোতির্‌ যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ স্বর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং পৃষ্ঠং যজ্ঞেন কল্পতাং যজ্ঞো যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ । স্তোমশ্‌ চ যজুশ্‌ চ ঽ ঋক্‌ চ সাম চ বৃহচ্‌ চ রথন্তরং চ । স্বর্‌ দেবা ঽ  অগন্মামৃতা ঽ অভূম্ প্রজাপ্তেঃ প্রজা ঽ অভূম বেট্‌ স্বাহা ।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৮; মন্ত্র ২৯]

অর্থ — এই যজ্ঞের ফল দ্বারা আয়তে বৃদ্ধি হয়, যজ্ঞের প্রসাদ দ্বারা আমাদের প্রাণ হতে রোগ দূরীভূত হয়, এই যজ্ঞের প্রভাবে আমাদের চক্ষু জ্যোতিময় হয়ে উঠুক, কান ও বাণী উৎকর্ষতা প্রাপ্ত হোক, যজ্ঞের প্রভাবে আমাদের মন সুস্থ হোক যজ্ঞের ফলস্বরূপ আমাদের মন আনন্দিত হোক যজ্ঞের কৃপায় আমাদের প্রাপ্ত হোক যজ্ঞের প্রভাবে পরম জ্যোতিময় ঈশ্বরের প্রাপ্তি হোক যজ্ঞের কারণে আমাদের সর্বপ্রাপ্তি হোক যজ্ঞের প্রভাবে আমরা মহা যজ্ঞ করতে পারি, স্তোম্‌ , যজুঃ ঋক্‌ সাম, বৃহত সাম এবং স্থন্তর সাম ও যজ্ঞের প্রভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক, এই যজ্ঞের প্রভাবে আমরা দেবত্ব লাভ করে স্বর্গ প্রাপ্তি করি, আমরা প্রজাপতি পরমাত্মার প্রজা রূপে সুখ ভোগ করি এই অভিলাষ নিয়ে আহুতি প্রদান করা হচ্ছে সমস্ত দেবতাগণ ইহা গ্রহণ করুন।


বাজশ্‌ চ মে প্রসবশ্‌ চ মে প্রযতিশ্‌ চ মে প্রসিতিশ্‌ চ মে ধীতিশ্‌ চ মে ক্রতুশ্‌ চ মে স্বরশ্‌ চ মে শ্লোকশ্‌ চ মে শ্রবশ্‌ চ মে শ্রুতিশ্‌ চ মে জ্যোতিশ্‌ চ মে স্বশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১।।

প্রানশ্‌ চ মে ঽপানশ্‌ চ মে ব্যানশ্‌ চ মে ঽসুশ্‌ চ মে চিত্তং চ মে ঽআধীতং চ মে বাক্‌ চ মে মনশ্‌ চ মে চক্ষুশ্‌ চ মে শ্রোত্রং চ মে দক্ষশ্‌ চ মে বলং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।২।।

ওজস্‌ চ মে সহশ্‌ চ ম ঽ আত্মা চ মে অনূশ্‌ চ মে শর্ম চ মে বর্ম চ মে ঽঙ্গানি চ মে ঽস্থীনি চ মে পরূম ষি চ মে শরীরাণি চ ম ঽ আযুশ্‌ চ মে জরা চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৩।।

জৈষ্ঠ্যং চ মে ঽ আধিপত্যং চ মে মনুয়শ্‌ চ মে ভামশ্‌ চ মে ঽমশ্‌ চ মে ঽম্ভশ্‌ চ মে মহিমা চ মে বরিমা চ মে প্রথিমা চ মে বর্ষিমা চ মে দ্রাঘিমা চ মে বৃদ্ধং চ মে বৃদ্ধিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৪।।

সত্যং চ মে শ্রদ্ধা চ মে জগচ্‌ চ মে ধনং চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্‌ চ মে ক্রীডা চ মে মোদশ্‌ চ মে জাতাং চ মে জনিষ্যমাণং চ মে সূক্তং চ মে সুকৃতং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৫।।

ঋতং চ মে ঽমৃতং চ মে ঽযক্ষমং চ মে ঽনামযচ্‌ চ মে জীবাতুশ্‌ চ মে দীর্ঘাযুত্বং চ মে ঽনামিত্রং চ মে ঽভযং চ মে সুখং চ মে শযনং চ মে সূষাশ্‌ চ মে সুদিনং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৬।।

যন্তা চ মে ধর্তা চ মে ক্ষেমশ্‌ চ মে ধৃতিশ্‌ চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্‌ চ মে সংবিচ্‌ চ মে জ্ঞাত্রং চ মে সূশ্‌ চ মে প্রসূশ্‌ চ মে সীরং চ মে লযশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৭।।

শং চ মে মযশ্‌ চ মে প্রিযং চ মে ঽনুকামশং চ মে কামশ্‌ চ মে সৌমনসশ্‌ চ মে ভগশ্‌ চ মে দ্রবিণং চ মে ভদ্রং চ মে শ্রেযশ্‌ চ মে বসীযশ্‌ চ মে সশশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৮।।

ঊর্ক চ মে সূনৃতা চ মে পযশ্‌ চ মে রসশ্‌ চ মে ঘৃতং চ মে মধু চ মে সগ্ধিশ্‌ চ মে সপিতিশ্‌ চ মে কৃষিশ্‌ চ মে বৃষ্টিশ্‌ চ মে জৈত্রং চ মে ঽ ঔদ্ভিদ্যং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ৯।।

রযিশ্‌ চ মে রাযশ্‌ চ মে পৃষ্টং চ মে পুষ্টিশ্‌ চ মে বিভু চ মে প্রভু চ মে পূর্ণং চ মে পূর্বতরং চ মে কুযবং চ মে ঽক্ষিতং চ মে ঽন্নং চ মে ঽক্ষুচ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১০।।

বিত্তং চ মে বেদ্যং চ মে ভূতং চ মে ভবিষ্যচ্‌ চ মে সুগং চ মে সুপথ্যং চ মে ঽ ঋদ্ধং চ ম ঽ ঋদ্ধিশ্‌ চ মে ক্লৃপ্তং চ মে ক্লৃপ্তিশ্‌ চ মে মতিশ্‌ চ মে সুমতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১১।।

ব্রীহযশ্‌ চ মে যবাশ্‌ চ মে মাষাশ্‌ চ মে তিলাশ্‌ চ মে মুদ্রাশ্‌ চ মে খল্বাশ্‌ চ মে প্রিযঙ্গবশ চ মে ঽণবশ্‌ চ মে শ্যামাকাশ্‌ চ মে নীবারাশ্‌ চ মে গোধূমাশ্‌ চ মে মসূরাশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১২।।

অশ্মা চ মে মৃত্তিকা চ মে গিরযশ্‌ চ মে পর্বতাশ্‌ চ মে সিকতাশ্‌ চ মে বনস্পতযশ্‌ চ মে হিরণ্যং চ মে যশ্‌ চ মে শ্যামং চ মে লোহং চ মে সীসং চ মে ত্রপু চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৩।।

অগ্নিশ্‌ চ মে ঽ আপশ্‌ চ মে বীরুধশ্‌ চ ম ঽ ওষধযশ্‌ চ মে কৃষ্টপচ্যাশ্‌ চ মে ঽ কৃষ্টপচ্যাশ্‌ চ মে গ্রাম্যাশ্‌ চ মে পশব ঽ আরণ্যাশ্‌ চ মে বিত্তং চ মে বিত্তিশ্‌ চ মে ভূতং চ মে ভূতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৪।।

বসু চমে বসতিশ্‌ চ মে কর্ম চ মে শক্তিশ্‌ চ মে ঽর্থশ্‌ চ ম ঽ ক্রমশ্‌ চ ম ঽ ইত্যা চ মে গতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৫।।

অর্থ — এই যজ্ঞ হতে আমাদের জন্য অন্য-সম্পদা, ঐশ্বর্য, পুরুষার্থ পরায়ণতা, প্রবন্ধ ক্ষমতা, কর্তব্য শক্তি, স্বর, শ্রবণ ক্ষমতা, তেজস্বীতা এবং আত্মশক্তি প্রাপ্ত হোক ।।১।।

আমাদের এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ প্রাণ, অপান, ব্যান, মানস, সঙ্কল্প, ব্রহ্ম, জ্ঞা্‌ বাণী-সামর্থ্য, মন, চক্ষু, শ্রোত্র,  জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং বলের প্রাপ্তি হোক ।।২।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের ওজ,  বল,  আত্মজ্ঞান, শরীর পুষ্টি, কল্যা্‌ কবচ, অঙ্গের দৃঢ়তা, অস্থি আদির  দৃঢ়তা, অঙ্গুলি আদির  দৃঢ়তা, আরোগ্য, প্রবৃদ্ধতা,  এবং আয়ুর প্রাপ্তি হোক ।।৩।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের শ্রেষ্ঠতা স্বামিত্ব, বাহ্যকোপ,  আন্তরিক কোপ, অপার মেধা, মধুর জল, বল, মহিমা, বলিষ্ঠতা, দীর্ঘ জীবন, বংশ পরম্পরা, ঐশ্বর্য এবং বিদ্যাদিগুণ উৎকৃষ্টতার  প্রাপ্তি হোক ।।৪।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের সত্য শ্রদ্ধা স্থাবর, জঙ্গম যুক্ত জগৎ, মহতা ক্রীড়া, মোদ,  আপত্যাদি, ঋচাত্রং এবং ঋচাওং দ্বারা শুভ ভবিষ্যতের  প্রাপ্তি হোক ।।৫।।

 আমাদের যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফল স্বরূপ স্বর্গ প্রাপ্তি, রোগাভাব, ব্যাধির অভাব, ঔষধি শত্রুর অভাব,  অভয়, আনন্দ, সুখ, শৌর্য,  শ্রেষ্ঠ প্রভাত এবং যোগ্য দান আদি কর্ম দ্বারা কল্যাণকারী দিবস দেবতাদের প্রাপ্ত হোক ।।৬।।

 এই যজ্ঞের ফল আমাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, প্রজা-পালন-সামর্থ্য, ধন-রক্ষা-সামর্থ্য,  ধৈর্য্য,  সমস্অত কিছুর অনুকূলতা, শাস্ত্র-জ্ঞান, বিজ্ঞান বল, অপত্যাদির  সামর্থ্য, কৃষি আদির জন্য উপযুক্ত সাধন, অনাবৃষ্টির অভাব, ধন ধান্যাদি প্রাপ্তি ।।৭।।

 আমাদেরই ইহলকের সুখ প্রাপ্ত হোক, পরলোকের সুখ প্রাপ্ত হোক, প্রসন্নতা প্রদানকারী পদার্থ আমাদের অনুকূল হোক, আমরা ইন্দ্রিয় সম্বন্ধী সমস্ত সুখ ভোগ করি, আমাদের মন সুস্থ থাকুক আমরা সৌভাগ্যশালী হয়ে ধন প্রাপ্ত করি, আমাদের শ্রেষ্ঠ নিবাস যুক্ত ঘর ও যশ যজ্ঞের ফল স্বরূপ প্রাপ্ত হোক ।।৮।।

  যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের অন্ন, জ্ঞানময় বাণী, দুগ্ধ, রস যুক্ত খাদ্য, ঘৃত, মধু আদি প্রাপ্ত  হোক আমরা নিজেদের স্ত্রীর সহিত মিলিত হয়ে ভোজন করতে পারি বৃষ্টি আমাদের জন্য ধান্য উৎপন্ন করুক,  তথা আমাদের কৃষি সুবিকাশিত ও অনুকুল হোক আমাদের বৃক্ষের বটতরু সুপ্রকাশিত  হোক এবং আমরা বিজয়ের নিমিত্তে উপযুক্ত শক্তি সম্পন্ন হয়ে শত্রু জয়ী হতে পারি  ।।৯।।

যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের সম্পদা, আমাদের ঐশ্বর্য এই প্রকার পুষ্ট হোক, শরীর আদির সব প্রকারের পুষ্টিপ্রাপ্ত করুক আমাদের ব্যাপকতা, প্রভুতা, পূর্ণতা, এবং ধনধান্যে প্রাচুর্যতা, পর্যাপ্ত বৃদ্ধির হোক আমাদের ধান্য ক্ষয় রোহিত অন্ন পুষ্টিকরক অন্ন এবং আমাদের ক্ষুধাতে ো অভিবৃদ্ধহোক ।।১০।।

যজ্ঞাদি বিশেষ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের ধন-ধান্য নিরন্তর অভিবৃদ্ধি হোক পূর্বসঞ্চিত ধন ও ভাবী প্রাপ্ত ধনে বৃদ্ধি হোক, ধন প্রাপ্তির কর্ম সুগম হোক, পথ অবরোধ মুক্ত হো্‌ যজ্ঞীয় সৎকর্ম সমৃদ্ধ হোক আমাদের এই কর্ম শ্রেষ্ঠ দ্রব্য এবং সৎ সমর্থ বর্ধনকারী হোক এই যজ্ঞীয় সৎ পরিনাম আমাদের মতিকে উচ্চতা প্রদান কারী সবার জন্য হিতকারী হোক ।।১১।।

যজ্ঞাদি কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের জন্য ব্রিহি ধান্য, জৌ, উরদ, তিল, মগ, ছোলা, কাঙ্গনী, চাল, গম এবং মসুর, আদি ধান্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক ।।১২।।

যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের পাষাণ, উত্তম মাটি, ছোট বড় পর্বত, বালি, বনস্পতি, স্বর্ণ, লোহা, তাম্র, আদি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক ।।১৩।।

যজ্ঞের ফলস্বরূপ দেবতাগণ আমাদের জন্য অগ্নি, আকাশীয় জল অনুকূল করুক, গুল্ম, তৃণ, বনস্পতি ঔষধি পূর্ণরূপে বিকশিত হোক এই যজ্ঞ গ্রাম ও জঙ্গলী পশুদের পুষ্ট করুক পূর্ব প্রাপ্ত ভাবী ধন, পুত্রাদি সুখ ও ঐশ্বর্য আদিতে অধিবৃদ্ধি হোক ।।১৪।।

যজ্ঞের ফল স্বরূপ দেবতা গণ আমাদের গবাদি ধন গৃহ সম্পত্তি বিবিধ কর্ম ও যজ্ঞাদি বল প্রাপ্তব্য ধন, ইচ্ছিত পদার্থ প্রাপ্তি করাক, আমাদের সমস্ত কামনা দেবতাদের কৃপায় পূর্ণ হোক।।১৫।।


আরো শুনুনঃ-

অযং নো অগ্নির্‌ বরিবস্‌ কৃণোত্ব ্‌ অযং মৃধঃ পুর ঽত্রতু প্রভিন্দন্‌ ।

অযং বাজান্‌ জযতু বাজসাতাব্‌ অযম্‌ শন্ত্রূন্‌ জযতু জর্হৃষাণঃ স্বাহা ।।

  (শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ৫/মন্ত্র ৩৭)

অর্থ — এই অগ্নি আমাদের শ্রেষ্ঠ ধন প্রদান করুক, এই অগ্নি শত্রুদের বিনাশ করে আমাদের সন্মুখে প্রকট হোক, এই অগ্নি অন্নের কামনাকারী যজমান, শত্রুদের হতে প্রাপ্ত ধন প্রদান করে বিজয়ী হোক, এই অগ্নি শত্রুদের পরাজিত করে প্রসন্ন হোক, অথা আমাদের দ্বারা সমর্পিত আহূতি গ্রহন করুক ।।

সীদ হোতঃ স্ব ঽ উ লোকে চিকিত্বান্‌ সাদযা যজ্ঞম্‌ সুকৃতস্য যোনৌ ।

দেবাবীর্‌ দেবান হবিষা যজাস্য অগ্নে বৃহদ্‌ যজমানে বযো ধাঃ ।। ৩৫।।

সম্‌ সীদস্ব মহাম্‌ ঽ অসি শোচস্ব দেববীতমঃ।

বিধূমম্‌ ঽ অগ্নে অরুষং মিযেধ্য সৃজ প্রশস্ত দর্শতম্‌ ।।৩৭।।

 (শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১১/মন্ত্র ৩৭)

অর্থ — হে দেবতাদের আহবাঙ্কারী অগ্নিদেব, সর্ব কর্মের জ্ঞাতা, আপনি নিজের প্রতিষ্ঠিত স্থানকে সুশোভিত করুন, এবং শ্রেষ্ঠ কর্মরূপী যজ্ঞকে সম্পন্ন করুন, দেবতাদের তৃপ্তকারী অগ্নি! আপনি যাজকদের দ্বারা প্রদত্ত আহূতি দ্বারা দেবতাদের আনন্দ প্রদান করুন ।। ৩৫।।

যজ্ঞীয় গুণ যুক্ত প্রশংসনীয় অগ্নে! আপনি দেবতাদের স্নেহপাত্র এবং মহান গুণের প্রেরক, আপনি উপযুক্ত স্থানে আসন গ্রহন করুন, এবং প্রজ্বলিত হয়ে ঘৃতের আহূতি দ্বারা  দর্শন-যোগ্য এবং তেজস্বী হয়ে সঘন ধূম্র বিসর্জিত করুন ।। ৩৭।।


এইপ্রকার সামবেদ আদিতে ও অগ্নিকে দেবতাদের দূত বলে উলেখ করা হয়েছে এবং ঘৃতাদি শ্রেষ্ঠ পদার্থ দ্বারা আহূতি প্রদানের উওল্লেখ করা হয়েছে, কারণ ঘৃত দেবতাদের প্রিয় যার প্রমাণ পূর্বে এ দেয়া হয়েছে এখন ভগবদ্গীতা ও মনুস্মৃতি হতে হবনের লাভের কথা উদ্ধৃতি করা হল -

ত্রৈবিদ্যামাং সোমপাঃ পূতপাপাযজ্ঞৈরিষ্ট্বা স্বররগতিং প্রার্থযন্তে । 

তে পুন্যমাসাদ্য সুরেদ্রলোকমশ্নন্তি দিব্যান্দিবি দেবভোগান্‌ ।।

(শ্রীমদ্ভগবদগীতা -৯/২০)

অর্থ — তিন বেদ (ঋক, যজু, সাম)  এ বিধান প্রদত্ত সকাম কর্মকারী সোমরস পানকারী, পাপরহিত পুরুষ দ্বারা আমাকে পূজা করে স্বর্গের প্রাপ্তি কামনা করে, সেই পুরুষ নিজে পুণ্যের ফলস্বরূপ স্বর্গলোক প্রাপ্ত করে স্বর্গে দিব্য দেবতাদের ভাগ্যকে ভোগ করে ।।


স্বাধ্যযেন ব্রতৈর্হোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যষা সুতৈঃ ।

মহাজৈশ্চ যজৈশ্চ ব্রাম্মীয ক্রিযতে তনু ঃ ।।

[মনুস্মৃতি অ০২, শ্লোক ২৮]

অর্থ — সমস্ত উত্তম বিদ্যার পঠন-পাঠন দ্বারা ব্রত পালনকারী হবন আদি সম্পন্ন করার মাধ্যমে শরীর ব্রহ্ম প্রাপ্তির যোগ্য হয়ে ওঠে ।।


স্বাধ্যযে নিত্যযুক্তঃ স্যাদ্দৈবৈ চৈবেহ কর্মাণি ।

দৈবকর্মণি যুক্তো হি বিভর্তীদং চরাচরম্‌ ।।৩৫।।

অগ্নৌ প্রাস্তাহুতিঃ সম্যগাদিত্যমুপতিষ্ঠতি ।

আদিত্যাজ্জযতে বৃষ্টির্বৃষ্টেরন্নং ততঃ প্রজাঃ ।। ৩৬।।

[মনুস্মৃতি অ০৩, শ্লোক ৩৫-৩৬]

অর্থ — নিত্য যজ্ঞ-হবন আদি কর্মকান্ডের দ্বারা জগতের সমস্ত জড়-চেতন এর পালন তথা বিকাশ হয়, কারণ যজমান দারা অগ্নিতে আহূতি সুরয়্‌ পর্যন্ত পৌছায়, সূর্য ও বর্ষার কারণ বর্ষার দ্বারা ওই ক্ষেতে অন্ন উৎপন্ন হয় এবং সে অন্ন দ্বারা প্রজা পালন হয় ।। ৩৫-৩৬।।


পূর্বাং সংধ্যাং জপংস্তিষ্ঠন্নৈশমেনো ব্যপোহতি ।

পশ্চিমাং তু সমাসীনো মলং হন্তি দিবাকৃতম্‌ ।।

[মনুস্মৃতি অ০২, শ্লোক ১০২]

অর্থ — প্রাতঃকালের সন্ধ্যার দ্বারা রাত্রির এবং সায়ংকালের সন্ধ্যার দ্বারা দিনের পাপ নষ্ট হয়, এই প্রকার দুসময়ে সন্ধ্যা কৃত্যাদি দ্বারা সমস্ত প্রকার পাপ নষ্ট হয়, এই প্রকার হবন দ্বারাও পাপ নষ্ট হয়। কারণ বেদ মন্ত্র পাপ ক্ষয় কারক, এবং যার বিধি আছে সেই মন্ত্র হবনের সময় উচ্চারণ করা হয় ।।


দয়ানন্দ সরস্বতী জীর অনুসারী আর্য‌সমাজীরা আজ খুব হবন (হোম-যজ্ঞ) করছেন, নিজেদের সনাতন ধর্মের প্র‌চারক হিসেবে দেখাবার জন্য ঘন ঘন হবন (হোম-যজ্ঞ) করছেন কাঠ পুড়িয়ে, কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল - তাদের হোম-যজ্ঞের উদ্দেশ্য দেবতার প্রতি নয়, শুধুমাত্র আর্য‌সমাজী নিজেদের দেহের থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ দূর করবার জন্য এত সেজেগুজে, গায়ে উত্তরীয় জড়িয়ে, একটা কড়াইতে বা বালতির ন্যায় পাত্রের মধ্যে হোম করছে, আবার এর জন্য ফুল ছিঁড়ে তা দিয়ে সাজিয়ে ফুলের অপচয় করে এরা - শুধুমাত্র কি না আর্য‌সমাজী নিজেদের দেহের থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ বাতাস দূর করবার জন্য। হায় রে মুর্খ‌ সমাজ, আর এদের এই সব কাণ্ডকারখানায় অজ্ঞ ব্যক্তিরা যোগ দেয়, যারা আর্য‌ সমাজের বিষয়ে কিছুই জানে না তারা মনে করে যে - আহা ! সনাতন ধর্মের বিরাট প্রচার হচ্ছে। কিন্তু আসলেই তো হচ্ছে সার্কাস , যেখানে দয়ানন্দ সরস্বতী জী হল তার উদ্যোক্তা ও তার অনুসারী আর্য‌সমাজী রা হল সেই সার্কা‌সের জোঁকার মাত্র। 


🟪 (৭) দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবী (৭) 🟪

॥ বেদে শূদ্রের অধিকার প্রকরণ ॥


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

শূদ্রমপিকুলগুণসম্পন্নং মন্ত্রবজ্জমনুপনীতমধ্যাপয়েদিত্যেকে৷' 

অর্থঃ– ব্রাহ্মণ তিন বর্ণের অর্থাৎ—ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য; ক্ষত্রিয়, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং বৈশ্য কেবল মাত্র বৈশ্যের যজ্ঞোপবীত দিয়া অধ্যাপনা করিতে পারে। শূদ্র কূলীন ও শুভ লক্ষণযুক্ত হইলে তাহাকে মন্ত্রসংহিতা ব্যতীত সকল শাস্ত্র পড়াইবে। অনেক আচার্য্যের মত এই যে, শূদ্র বিদ্যা শিক্ষা করিবে কিন্তু তাহার উপনয়ন হইবে না।

এক‌ইভাবে 

দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা 

সত্যার্থ প্রকাশ দ্বিতীয় সমুল্লাস, ২০ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ  লিখেছেন - শূদ্রাদি বর্ণের সন্তানদিগকে উপনয়ন না দিয়া বিদ্যাভ্যাসের জন্য গুরুকুলে প্রেরণ করিবেন। 


দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা

  সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সমুল্লাস, ৫১ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী জী  লিখেছেন,

যাহাকে পড়াইলেও কিছুই শিখিতে পারে না, সে নির্ব্বোধ এবং মূর্খ হওয়ায় তাহাকে শূদ্র’ বলা হয় ।


 দয়ানন্দ সরস্বতীর সপ্তম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

এই স্থানে স্বামীজি এটি স্বীকার করেই নিয়েছেন যে শূদ্রদের যজ্ঞোপবীত দেওয়া উচিত নয়, দয়ানন্দ সরস্বতীর মতানুসারে ‘মন্ত্রসংহিতাএকমাত্র বেদ, কিন্তু ব্রাহ্মণ/আরণ্যক/উপনিষদ বেদ নয়। তাহলে দয়ানন্দ সরস্বতী জী  যখন শূদ্রদের মন্ত্রসংহিতা বাদ দিয়ে অন্য সব শাস্ত্র পাঠ করাতে বলেছেন, তাহলে এখানে পরোক্ষভাবে দয়ানন্দ জী শূদ্রদের বেদ অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গেল । 

এবার দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনি আপনার স্ববিরোধী কাণ্ড দেখুন । আপনি সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ৫০ পৃষ্ঠাতে বলেছেন, ঈশ্বর বেদবানী নারী শূদ্র সকলের জন্য দিয়েছেন। 

আবার আপনিই ২৯ পৃষ্ঠাতে ও দ্বিতীয় সমুল্লাসের ২০ পৃষ্ঠা তে শূদ্রদের মন্ত্রসংহিতা বাদ দিয়ে অন্য সব পাঠ করাতে বলেছেন। তাহলে ভাবুন আপনি কতবড় নেশাগ্রস্থ অসুস্থ ব্যক্তি। এক এক স্থানে এক এক রকমের বিধান দিয়েছেন। অথচ, বর্তমানের আর্যসমাজীরা বলে বেড়াচ্ছে, দয়ানন্দ সরস্বরতী শুদ্রদেরও বেদ পাঠের অধিকারের স্বপক্ষে কথা বলেছেন। তাছাড়া, দয়ানন্দ সরস্বতী শুদ্রদের কূলীন হবার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, অর্থাৎ তিনি শুদ্র কূল  উচ্চারণ করে জাতপাত স্বীকার করেই নিয়েছেন ।


এছাড়াও আর্যসমাজীরা বলে বেড়ায়, দয়ানন্দ নাকি শূদ্র বলতে - যারা সেবা করে তাদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু, দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা   সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সমুল্লাস, ৫১ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী জী  লিখেছেন,  যাহাকে পড়াইলেও কিছুই শিখিতে পারে না, সে নির্ব্বোধ এবং মূর্খ হওয়ায় তাহাকে শূদ্র’ বলা হয় - এই লেখা থেকে শুদ্র বলতে দয়ানন্দ সরস্বতী মূর্খ/নির্বোধ ব্যক্তি কেই চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ দয়ানন্দের গুণগান গেয়ে বেড়াতে থাকা আর্যসমাজীরা যা প্রচার করছে - বাস্তবে তাদের মান্যতা সম্পূর্ণ বিপরীত।


এখন আর্যসমাজীরা বলবে, আরে এটা তো মহর্ষি দয়ানন্দ সুশ্রুতের সূত্রস্থানের বচন কে উল্লেখ করে - এমন বিধান দিয়েছেন। 

আমরা শৈব সনাতনীরাও তো সেটাই বলছ, দয়ানন্দ সরস্বতী তো এটাকেই প্রামাণ্য মেনেছেন, তিনি তো ধূর্তের ন্যায় আগেও বহু স্মৃতি শাস্ত্র কে অমান্য করেছেন, তাহলে তিনি যদি এতই শুদ্র সহ সবাইকেই বেদের অধিকার দিয়ে থাকতেন, তবে সুশ্রুতের সূত্রস্থানের বচন কে উল্লেখ করে - এমন বিধান কেন দিতে গেলেন ? 

বহু স্মৃতি শাস্ত্র কে তিনি নিজের মতের বিপক্ষে যাওয়ার জন্য অমান্য করেছেন, তাহলে সুশ্রুতের সূত্রস্থানের বচন শুদ্রদের বেদ থেকে অধিকার না দেবার কারণে দয়ানন্দ সরস্বতীর তো অবশ্যই সুশ্রুতের সূত্রস্থানের বচন কে প্রামাণিক বলে মান্যরা ইত কার্য‌ ছিল না। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং সুশ্রুতের সূত্রস্থানের বচন কে প্রামাণিক বলে স্বীকার করবার কারণে - দয়ানন্দ সরস্বতী জাতিভেদের কারণেই শূদ্র দের  বঞ্চিত করেছেন বেদ অধ্যয়নের অধিকার থেকে তা স্পষ্ট। আর তারই সাথে দয়ানন্দের অনুসারী আর্যসমাজীদের ফাঁকা কলশীর মতো শব্দ করতে থাকা থেকে প্রমাণিত হল - এই দুনিয়াতে যত মূর্খ আছে সবাইকে এক জায়গায় করলে আর্যসমাজীদের দেখে মনে হবে আর্য‌সমাজীরা হল - সেই সকল মূর্খ দের সর্দার ।


🟪 (৮) দয়ানন্দ সরস্বতীর অষ্টম দাবী (৮) 🟪


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ৩০ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

ষট্‌ত্রিংশদাব্দিকং চর্য্যং গুরৌ ত্রৈবৈদিকং ব্রতম্‌ ।

তদধিকং পাদিকং বা গ্রহণান্তিকমেব বা ।।

                      [মনুস্মৃতি ৩।১]

অর্থঃ- অষ্টম বর্ষের পর ৩৬ বৎসর পর্যন্ত (ব্রহ্মচর্য্য) অর্থাৎ সাঙ্গোপাঙ্গ এক একটি বেদের অধ্যয়নে দ্বাদশ-দ্বাদশ বৎসর করিয়া ৩৬ বৎসর, উহার সহিত আট যোগ দিয়া ৪৪ বৎসর; অথবা ১৮ বৎসর কাল ব্রহ্মচর্য্য, ইহার সহিত পূর্বের আট বৎসর যোগ করিয়া ২৬ বৎসর; অথবা নয় বৎসর অথবা যতকাল পর্যন্ত বিদ্যা সম্পূর্ণ আয়ত্ত না হয়, ততকাল ব্রহ্মচর্য্য পালন করিবে।


 দয়ানন্দ সরস্বতীর অষ্টম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

যদি মূর্খানন্দ দ্বারা রচিত ভাবার্থ যদি কোন বিদ্বান ব্যক্তির বোধগম্য হয় তবে অবশ্যই তা ব্যাখ্যা করুন। কারণ স্বামী মূর্খানন্দ দ্বারা রচিত এই কল্পিত অর্থ বুদ্ধিমান ব্যক্তির বোধগম্য নয়। স্বামীজি এখানে স্বয়ং কল্পনা করে তার অসত্য অর্থ প্রস্তুত করেছেন, প্রথমত কেউ উনাকে বা দয়ানন্দী চেলাদের প্রশ্ন করুন যে এত বৃহৎ অভিপ্রায় কোন অক্ষরে সিদ্ধ হয় এবং যে আট ছত্রিশ ও চুয়াল্লিশ এই যে অর্থ লিখেছেন এই অর্থ কিভাবে সিদ্ধ হয়, না আবারো ভাঙ্গের নেশায় উল্টো-পাল্টা যা মুখে এসেছে তাই উদগীরণ করে গেছেন, স্বামী মূর্খানন্দ যে এই অর্থের অনর্থ করেছেন তার প্রমাণ নিম্নে প্রদান করা হলোঃ-


ষট্‌ত্রিংশোদাব্দিকং চর্য্য গুরৌ ত্রৈবৈদিকং ব্রতম্‌ ।

তদর্ধিকং পাদিকং বা গ্রহণান্তিকমেব বা ।।

অর্থ — (গুরৌ) গুরুকুলে ব্রহ্মচারীকে (ষট্‌ত্রিশদাদ্বিকং) ৩৬ বর্ষ পর্যন্ত নিবাস করে, (ত্রৈবৈদিকং ব্রতম্‌) তিন বেদ (ঋক, সাম, যজু) এর পূর্ণ অধ্যায়ন, (চর্য্যং) করা উচিৎ। ছত্রিশ বর্ষ অবধি সম্ভব না হলে (তদ্‌ অর্ধিকং) তার অর্ধেক অর্থাৎ ১৮ বর্ষ পর্যন্ত, বা যদি তাও সম্ভব না হয়, (পাদিকং) তার অর্ধেক অর্থাৎ ৯ বর্ষ পর্যন্ত, বা অথবা যত সময় (গ্রহণ অন্তিকম্‌) বেদে নিপুনতা প্রাপ্ত হওয়া সম্ভবপর না হয়, ততদিন গুরুকুলে থাকা উচিৎ।।

এই শ্লোকের সাথে আপনার রচিত কল্পিত অর্থের কি কিঞ্চিৎ ভাগ সাদৃশ্য নেই, এর দ্বারা আপনার বুদ্ধির কতদূর তা সহজেই বোঝা যায় আসলে আপনার কোন প্রকার বুদ্ধি ছিল না। থাকলে আপনি এইভাবে সমাজীদের বোকা বানাতেন না।

ধন্য আপনার এরকম দু পয়সার ভাষ্যের, ধন্য আপনি এবং আপনার মিথ্যা ভাষ্য সমর্থনকারী মন্দ বুদ্ধি ও গোবর ভরা মস্তিষ্কধারী আর্য‌সমাজীদের।


🟪 (৯) দয়ানন্দ সরস্বতীর সপ্তম দাবী (৯) 🟪

॥ সৃষ্টিক্রম প্রকরণ ॥


সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সমুল্লাস পৃষ্ঠা ৩৭

যাহা যাহা সৃষ্টিক্রমের অনুকূল, সেই সবই সত্য, এবং যাহা সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ সেই সবই অসত্য। যথা- যদি কেহ বলে যে, মাতা পিতার সংযোগ ব্যতীত সন্তান জন্মিয়াছে, এরূপ উক্তি সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ বলিয়া সর্বথা অসত্য।


 দয়ানন্দ সরস্বতীর নবম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —  

কেন স্বামীজী আপনিও মহম্মদের ন্যায় পাঠার উপরে বসে(যার দুধ ঘী সেবন করে দয়ানন্দের যজুর্বেদ ভাষ্য ২১/৪৩ তে আপনি (বকরা) পাঠার দুধ, ঘী সেবনের কথা উল্লেখ করেছেন) সৃষ্টিকর্তা‌কে দর্শন করে এসেছেন নাকি ? যে আপনাকে ঈশ্বর সমগ্র সৃষ্টিক্রমের উপদেশ প্রদান করেছেন, যার দ্বারা আপনার বিভ্রান্ত ধারণা হয়ে গেছে,।

ঈশ্বরের সৃষ্টির বিষয়ে বেদে কি এরকম কিছু লেখা আছে ? 

দেখা যাকঃ-

এতাবান্‌ অস্য মহিমাতো জ্যাযাশ্চঁ পুরুষঃ ।

পাদোঽস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদ্‌ অস্যামৃতং দিবি ।।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ৩১/মন্ত্র ৩]

 এই ত্রিকালাত্মক বিশ্ব ওই ঈশ্বরের মহিমা স্বরূপ, কিন্তু ওনার মহত্তা তার থেকেও অধিক এই সম্পূর্ণ বিশ্ব জীব সহিত যা কিছু তা তাহার মহিমার এক ভাগ মাত্র, এবং তিনভাগে প্রকাশমান মোক্ষস্বরূপ ঈশ্বর স্বয়ং। 

এবং শ্রীমদভগবত গীতায় ও এইপ্রকার লেখা রয়েছে, (বুদ্ধেঃ পরতস্তু সঃ) যে পরমেশ্বর বুদ্ধির অতীত, তার কার্যপূর্ণতা  কেই বা জানতে সক্ষম? 

কিন্তু স্বামীজী সশরীরে সৃষ্টির ক্রম আদি সমস্ত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, এখন আপনারা নিজেরাই বিচার করুন একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের সৃষ্টি ক্রমকে কিভাবে পূর্ণ জানতে পারা সম্ভবপর ? 

বিশেষ করে দয়ানন্দের ন্যায় মন্দ বুদ্ধির ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের সৃষ্টি ক্রম জানতে সক্ষম হয় তবে ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতায় সার্থকতা কোথায় ? সর্বজ্ঞ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞাতা তো তাহলে দয়ানন্দ হয়ে গেল, এখন ঈশ্বরের উচিৎ দয়ানন্দকে এড়িয়ে চলা। কারণ দয়ানন্দ ঈশ্বরের সৃষ্টি কর্ম কি? ঈশ্বরের গুণ কর্ম স্বভাব কি রকম? ঈশ্বর কি কি করতে সক্ষম? কি কি করতে অক্ষম? তাহার মীমাংসা কি? সমস্ত কিছু তার পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন, মনে হয় ঈশ্বর দয়ানন্দকে না দয়ানন্দ ঈশ্বরকে উৎপন্ন করেছেন, ধন্য ধূর্তানন্দ আপনার বুদ্ধি যে ঈশ্বরের সীমাকে বন্ধন করে দিয়েছেন, এখন দেখুন দয়ানন্দের কল্পিত সিদ্ধান্তের খণ্ডন -

তস্মাদ্‌ অশ্বা ঽ অজাযন্ত যে কে চোভযাদতঃ ।

গাবো হ জজ্ঞিরে তস্মাত্‌ তস্মাজ্‌ জাতা ঽ অজাবযঃ ।।

[যজুর্বেদ অধ্যায় ৩১, মন্ত্র ৮]

অর্থ — ওই পরমেশ্বর হতে অশ্ব এবং যা কিছু পশু উপর ও নিচে দাঁত যুক্ত উৎপন্ন হয়েছে তার থেকে গরু ষাড় ভেড়া ছাগল আদি উৎপন্ন হয়েছে। 


 এখন স্বামীজি বলুন আপনি তো উৎপত্তির কারণ হেতু স্ত্রী ও পুরুষের সঙ্গম দ্বারা সম্ভব তা মানেন, তাহলে ঘোড়া, ষাড়, ভেড়া ছাগল আদি কিভাবে উৎপন্ন হয়েছে ? 

আরো শুনুন আপনি বলেছেন যে ওই পরমাত্মা হতে অগ্নি, বায়ু এবং আদিত্য উৎপন্ন হয়েছে তাহলে এখন আপনি যখন বলছেন স্ত্রী পুরুষের সঙ্গমের দ্বারা একমাত্র উৎপত্তি সম্ভবপর তাহলে আপনি নিরাকার ঈশ্বরকে স্ত্রী রূপে সৃজন করে তার দ্বারা সমস্ত সৃষ্টি উৎপন্ন করেছেন কারণ আপনি উপরে লিখেছেন, 'যা যা ঈশ্বরের গুন, কর্ম, স্বভাব এবং বেদের অনুকূল তা সব সব সত্য এবং যা কিছু তার বিরুদ্ধ তাহা অসত্য,' 

আবার নীচে লিখেছেন, 'যদি কেউ বলে বিনা মাতা পিতার সংযোগ দ্বারা সন্তান উৎপন্ন হয়েছে, এরকম কথন (ঈশ্বরের গুন, কর্ম, স্বভাবের বিরুদ্ধ), সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ, তা সর্বথা অসত্য।

অর্থাৎ আপনি বিশ্বাস করেন যে স্ত্রী পুরুষের সমাগমের দ্বারাই উৎপন্ন ঈশ্বরের গুণ, কর্ম, এবং স্বভাবের অনুকূল এইজন্য সত্য, অর্থাৎ আপনি ঈশ্বরকে স্ত্রী বানিয়ে অগ্নি, বায়ু, আদিত্য এবং হাজারো হাজারো মনুষ্য উৎপন্ন করেছেন যা আপনি আপনার আটতম সমুল্লাসে উল্লেখ করছেন- 

চলুন এটাও না হয় কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিলাম, কিন্তু এই যে ঘোড়া, ষাড়, গরু, ভেড়া, ছাগল আদি পশুর উৎপত্তি কিভাবে সম্ভবপর হল তা বোধগম্য নয়, যদি এইসমস্ত পশু আদি নিরাকার পরমাত্মা হতে উৎপন্ন হয়েছে তবে তাদের গুণ, কর্ম, স্বভাব, ঈশ্বরের গুণ, কর্ম, স্বভাব হতে ভিন্ন হওয়ার কারণে অসত্য, সেই ঈশ্বরের স্ত্রী কোথা থেকে এলো, এর দ্বারা আপনার এই কল্পিত সৃষ্টি ক্রম সমস্ত ভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দুঃখ আপনার এরকম বুদ্ধিতে, দেখুন সেই ঈশ্বর সমস্ত কিছু করতে সক্ষম, কিন্তু কেউ তাকে জনতে সক্ষম নয়, কারণ (পরাস্য শক্তি র্বিবিধ ব শ্রূযতে-শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ) তাহার পরাশক্তি অনেক প্রকারের রূপে এবং সৃষ্টি ক্রম তো অনেক দূরের কথা, আপনার নিজেরই খবর নেই, যদি খবর থাকতো, তবে কোথাও কিছু কোথাও অন্য কিছুর বিরোধীতা করে সত্যনাশ প্রকাশ করতেন না এবং আপনার প্রথম সত্যার্থ প্রকাশ যা অশুদ্ধ ছিল তার স্থানে নতুন পুস্তক রচনা করার দরকার কেন পড়ল আপনি সৃষ্টিকর্মে‌র অজুহাতে যে নাটক রচনা করেছেন তা বিদ্বান ব্যক্তিরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। যা মনে এসেছে তাই লিখে দিয়েছেন, অন্তত কিছু যুক্তিপূর্ণ তথ্য প্রমাণ পরিবেশন করতেন যার খণ্ডন আপনার মুখে ছুড়ে মারা যেত এই বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা আপনার অষ্টম সমুল্লাসে করা হবে এবং তার খণ্ডনও করা হবে। 


🟪 (১০) দয়ানন্দ সরস্বতীর নবম দাবী (১০) 🟪

ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি প্রকরণ

সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সমুল্লাস পৃষ্ঠা ৩৮

সম্ভবতি যস্মিন্‌ স সম্ভবঃ ।' যদি কেহ বলে মাতাপিতা ব্যতীত সন্তানোৎপত্তি হইয়াছে, কেহ মৃতকে পুনর্জীবিত করিয়াছে, পর্বত উত্তোলন করিয়াছে, সমুদ্রে প্রস্তর ভাসাইয়াছে, চন্দ্রকে খণ্ড খণ্ড করিয়াছে, পরমেশ্বরের অবতার হইয়াছে, মনুষ্যের শিঙ্‌ দেখিয়াছে এই এবং বন্ধ্যার পুত্র ও কন্যার বিবাহ দিয়াছে ইত্যাদি সব অসম্ভব। কেননা এই সমস্ত কথা সৃষ্টিক্রম বিরুদ্ধ। যে কথা সৃষ্টিক্রমের অনুকূল হয় তাহাই সম্ভব।

 দয়ানন্দ সরস্বতীর দশম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

স্বামীজী আপনি জন্মগত ধূর্ত এটা সবাই জানে কিন্তু অন্ধ ও মন্দ বুদ্ধিযুক্ত সেটা তো জানা ছিল না, আপনার মন, আপনার বুদ্ধি, এবং যা আপনার বুদ্ধির অনুকূল তাহাই সত্য এবং যা আপনার বুদ্ধির প্রতিকূল তাহা সৃষ্টির ক্রমেরও প্রতিকূল রূপে প্রতিপাদিত, আপনি বেদানুকূল ও সৃষ্টির ক্রমানুসারের বাখান কেন করেন? স্পষ্ট কেন বলেন না, আপনার বুদ্ধির অনুকূল হওয়া উচিৎ, আপনি এই কথা গুলো বিশ্বাস করেন না তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, আপনার ওই কথা গুলোর প্রমাণ ওই গ্রন্থ থেকে বের করে আপয়ানার মুখে ছুড়ে মারছি,

মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের ৬৯তম অধ্যায় খুলে দেখুন পরীক্ষিত মৃত উৎপন্ন হয়েছিল, শ্রীকৃষ্ণ তাকে পুনর্জীবিত করেন, শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত অঙ্গুলিতে উত্তোলন করেছিল, শ্রীহনুমান লক্ষণের জন্য মৃতসঞ্জীবন বুটিযুক্ত সম্পূর্ণ পাহাড় তুলে এনেছিল, নিশ্চয় আপনার মাথায় গোবর ভরা কারণ সমুদ্রে রাম সেতু আজও বিদ্যমান চোখ থাকলে দেখে নিন লঙ্কা কাণ্ডে‌ লেখা আছে (আপ্তোপদেশঃ শব্দ) শব্দ প্রমাণ তো আপনি মেনে নিয়েছেন আর বাল্মিকী পূর্ণ আপ্ত ছিলেন তিনি নল নীলের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

এবং আপনি নিজের সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাশের পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪৩ এ স্বয়ং লিখেছেন যে, 

রামচন্দ্র সীতাকে লইয়া হনুমান প্রভৃতির সহিত আকাশ পথে বিমানে বসিয়া লঙ্কা হইতে অযোধ্যায় ফিরিবার কালে সীতাকে বলিয়াছেন:-

অত্র পূর্বং মহাদেবঃ প্রসাদমকরোদ্বিভূঃ।

সেতুবন্ধ ইতি বিখ্যাতম্।। 

[বাল্মিকী রামায়ণ/যুদ্ধ কাণ্ড/সর্গ ১২৫/শ্লোকঃ ২০]

অর্থ — "অয়ি সীতে! তোমার বিয়োগে ব্যাকুল হইয়া ভ্রমণকালে আমি এই স্থানেই চাতুর্মাস্য উদযাপন কালে পরমেশ্বরের উপাসনা ও ধ্যান করিয়াছিলাম। যিনি সর্বত্র বিভু (ব্যাপক) যিনি দেবাদিদেব
মহাদেব পরমাত্মা, তাঁহারই কৃপায় আমরা এ-স্থানে সকল সামগ্রী প্রাপ্ত হইয়াছিলাম। দেখ!
আমরা এই সেতুবদ্ধ করিয়া লঙ্কায় আসিয়া রাবণকে বধ করি এবং তোমাকে লইয়া আসিয়াছি।"
এখন বলুন স্বামী ধূর্তানন্দ, আপনি নিজেই আপনার সত্যার্থ প্রকাশের ১১তম সমুল্লাসে স্বয়ং স্বীকার করেছেন, আবার এখানে সৃষ্টি ক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিপাদিত করেছেন। ইহা আপনার দ্বিচারিতা নয় তো আর কি ? এখন বলুন পাথর সমুদ্রে ভাসছিল না আপনার সত্যনাশ প্রকাশ ভাসছিল? 

আর সম্ভব কাকে বলে যা কিছু ঘটিত হয় তাকে সম্ভব বলে সামর্থ্যবান পুরুষ এবং তাহাই অসামর্থ্যবান পুরুষের জন্য অসম্ভব বলে প্রতিপাদিত হয় এবং ঈশ্বর অবতার গ্রহণ করেন কিনা তার প্রমাণ শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় যোগী শ্রীকৃষ্ণ পরমব্রহ্ম শিবের সহিত যোগযুক্ত হয়ে বলছেন - 

অজোঽপি সন্নব্যযাত্মা ভূতানীমশ্বরোঽপি সন্‌ ।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায সম্ভবাম্যাত্মমাযযা ।।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্‌ ।।
পরিত্রাণায সাধূনাং বিনাশয়ায চ দুষ্কৃতাম্‌ ।।
ধর্মসংস্থাপনার্থায সম্ভবামি যুগে যুগে ।।  

[শ্রীমদ্ভগবত গীতা অ০৪, শ্লোক ৬-৮]

ভাবার্থঃ- আমি(শিব) অজন্মা ও অবিনাশী স্বরূপ এবং সমস্ত প্রাণীদের ঈশ্বর এবং নিজে প্রকৃতির অধীন হয়েও নিজে যোগ মায়ায় প্রকট হয়ে থাকি ।।৬।।
হে ভারত! যখন যখন ধর্মের হানি ও অধর্ম বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে তখন তখন আমি আপন রূপে সংরচনা করে অর্থাৎ সাকার রূপে সর্বজনের সম্মুখে প্রকট হয় ।।৭।।
সাধু পুরুষদের উদ্ধার করার জন্য পাপকর্মে লিপ্তদের বিনাশ করার জন্য ধর্মের প্রতিস্থাপনার হেতু যুগে যুগে প্রকট হবো ।।৮।।


অবক্ত্যং ব্যাক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধযঃ ।
পরং ভাবজানন্তো মমাব্যযমনুত্তমম্‌ ।।

 [শ্রীমদ্ভগবত গীতা/অধ্যায়  ৭/শ্লোক ২৪]

ভাবার্থঃ- বুদ্ধিহীন পুরুষ আমার অনুপম অবিনাশী পরম (শিব) ভাবকে না জানতে পেরে, মন -ইন্দ্রিয়ের উর্দ্ধে সচ্চিদানন্দঘন পরমাত্মাকে (দেহের রূপ ও নাম সমন্বিত) মনুষ্যের ন্যায় জন্মযুক্ত (জড়দেহের) ব্যক্তি মনে করে।


অবজানন্তি মাং মুঢা মানুষীং তনুমাশ্রিতম্‌ ।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্‌ ।। 

[শ্রীমদ্ভগবত গীতা/অধ্যায় ৯/শ্লোক ১১]

ভাবার্থঃ- আমার পরম ভাব (গীতা অধ্যায় ৩শ্লোক ২৪ দেখুন) কে না জেনে মূঢ় লোক মনুষ্যের শরীর ধারণকারী সম্পূর্ণ ভূতের মহেশ্বর আমাকে তুচ্ছ মনে করে অর্থাৎ আপন যোগমায়ার দ্বারা সংসারকে উদ্ধারের হেতু বিচরণকারী আমাকে পরমেশ্বর  সাধারণ মনুষ্য রূপে (কৃষ্ণ বলে) গণ্য করে ।।১১।।

তৈত্তিরীয় আরণ্যকেও পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে "ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং"

এখন বলুন স্বামী ধূর্তানন্দ আপনার কি অভিমত ?
 
যে গ্রন্থকে নিজেও পুস্তকে প্রমাণ স্বরূপ লিখেছেন তাকেও শেষ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত করছেন। কত বড় স্ববিরোধী ব্যক্তি আপনি !!


🟪 (১১) দয়ানন্দ সরস্বতীর একাদশ দাবী (১১) 🟪

॥ পঠনপাঠন বিধি প্রকরণ 


সত্যার্থ প্রকাশ তৃতীয় সমুল্লাস পৃষ্ঠা ৪৮


আর্য গ্রন্থ পাঠ করা কীরূপ- উহা যেন একটি বার ডুব দিয়াই মূল্যবান মণি-মুক্তা লাভ করা।

ব্যাকরণ পাঠ করিয়া ছয় বা আট মাসে যাস্কমুনি কৃত 'নিঘন্টু' ও 'নিরুক্ত' অর্থ সহিত পড়িবে ও পড়াইবে
 তাহার পর পিঙ্গলাচার্যকৃত 'ছন্দো গ্রন্থ' সাহায্যে বৈদিক ও লৌকিক ছন্দের পরিজ্ঞান, আধুনিক নবীন রচনা এবং শ্লোক রচনার প্রণালীও যথোচিত ভাবে শিখিবে। 

অতঃপর মনুস্মৃতি, বাল্মীকি রামায়ণ এবং মহাভারতের উদ্যোগ পর্বান্তর্গত বিদুরনীতি প্রভৃতি উৎকৃষ্ট প্রকরণগুলি পাঠ করিবে ।

কিন্তু বেদান্তসূত্র অধ্যয়নের পূর্বে ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মণ্ডুক, মাণ্ডুক্য, ঐতরেয়, তৈত্তিরেয়, ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক-এই দশ উপনিষদ্‌ অধ্যয়ন করিবে। ছয় শাস্ত্রের সূত্র সমূহের ভাষ্য ও বৃত্তিসহ সূত্র দুই বৎসরের মধ্যে পড়াইবে এবং পড়িবে।

ঋষিপ্রণীত গ্রন্থ এই জন্য পাঠ করিবে যেহেতু তাঁহারা পরম বিদ্বান, সর্ব শাস্ত্রবিদ এবং ধর্মাত্মা ছিলেন। আর যাঁহারা অনূষি অর্থাৎ অল্পশাস্ত্র পড়িয়াছেন ও যাঁহাদের আত্মা পক্ষপাতদুষ্ট তাহাদের রচিত গ্রন্থও সেইরূপ হইবে।

পূর্ব মীমাংসার ব্যাস মুনিকৃত ব্যাখ্যা, বৈশেষিকের গৌতম মুনিকৃত প্রশস্তপাদ ভাষ্য, ন্যায় সূত্রের বাৎসায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, পতঞ্জলি মুনিকৃত সূত্রের ব্যাস মুনিকৃত ভাষ্য, কপিল মুনিকৃত সাংখ্য সূত্রের ভাগুরিমুনিকৃত ভাষ্য, ব্যাস মুনিকৃত বেদান্ত সূত্রের বাৎস্যায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, অথবা বৌধায়ন মুনিকৃত ভাষ্যবৃত্তি সহিত পড়িবে ও পড়াইবে। এই সকল সূত্রকে কল্প এবং অঙ্গের মধ্যেও গণনা করিবে। যেরূপ ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব-এই চারি বেদ ঈশ্বরকৃত, তদ্রূপ ঐতরেয় শতপথ, সাম এবং গোপথ-এই চারি ব্রাহ্মণ; শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ নিঘন্টু, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ-এই ছয়টি বেদাঙ্গ। মীমাংসাদি ছয় শাস্ত্র বেদের উপাঙ্গ। আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং অর্থবেদ এই চারিটি বেদের উপবেদ। এইগুলি ঋষি মুনিকৃত গ্রন্থ, এ সকলের মধ্যেও যেগুলি বেদ বিরুদ্ধ প্রতীত হইবে সেগুলিকে পরিত্যাগ করিবে। কারণ, বেদ ঈশ্বরকৃত বলিয়া অভ্রান্ত ও স্বতঃপ্রমাণ অর্থাৎ বেদের প্রমাণ বেদ হইতেই হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণ প্রভৃতি সমস্ত গ্রন্থ পরতঃ প্রমাণ বেদাধীন।

 দয়ানন্দ সরস্বতীর একাদশ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) — বাহরে! স্বামী জী বড়ই ধূর্ততার সাথে এই লেখাটা লিখেছেন যা পড়ে সমাজীদের মাথায় গোবর ভরে গেছে এবার আপনি আপনার লেখা সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন ঋষিপ্রণীত গ্রন্থ এই জন্য পাঠ করিবে যেহেতু তাঁহারা পরম বিদ্বান, সর্ব শাস্ত্রবিদ এবং ধর্মাত্মা ছিলেন। কিন্তু ঋষি প্রণীত গ্রন্থ সম্বন্ধে আপনি লিখেছেন, যে কথা বেদানকুল হবে সেটা গ্রহণযোগ্য, এরকম অবস্থায় সেই ঋষিদের পূর্ণ বিজ্ঞতা আর কোথায় রইল ?

 এবং তারা ধর্মাত্মা কিভাবে হলেন, যদি তারা বেদ বিরুদ্ধ কথাই বলেন, আপনি তো পূর্ণ ঋষিদেরও বাদ দিলেন না তাদেরও অপমান করলেন, আপনার এই নির্বুদ্ধিতার জন্য বেশি ঋষি মনুর একটি শ্লোক উপহার স্বরূপ দিলামঃ- 

যোঽবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রযাদ্দবিজঃ ।

স সাধুভির্ভিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ ।।

(মনুস্মৃতি অধ্যায় ২, শ্লোক ১১)

অর্থ — যে বেদ এবং আপ্ত পুরুষের শাস্ত্রকে অপমান করে সেই বেদ নিন্দুক নাস্তিককে জাতি, সমাজ ও দেশ হতে বহিষ্কার করা উচিত। 


এখন বলুন আপনি এই সমস্ত বিদ্বানের শাস্ত্রের ধর্ম তোমাদের রচিত গ্রন্থ বেদ বিরুদ্ধ বলে প্রচার করছেন। এবার বলুন আপনার কি হাল করা উচিত, আপনার যখন বেদানকুল প্রমাণ দরকার তবে কেন এসব গ্রন্থের পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সত্যিই তো আপনার এইসব করার উদ্দেশ্য একটাই, বেদ তো একটা বাহানা মাত্র আপনি নিজের বুদ্ধির অনুকুল বক্তব্যই মানেন আপ্ত পুরুষের গ্রন্থতে যদি বেদ বিরুদ্ধতা থাকে তবে আপনার রচিত সত্যনাশ প্রকাশ কোথাকার বেদানুকূল। আপনার পুস্তকের ব্যবহৃত অপশব্দ কিভাবে বেদানকুল হয়, এখন আপনি বলুন আপনার এই পুস্তক যা স্বার্থপরতা নাস্তিকতা নিন্দা অপশব্দ প্রয়োগকারী ভাষা যা বেদ বিরুদ্ধ অর্থে পরিপূর্ণ তা বহিষ্কারের যোগ্য নয় কি ? 

আপনার এই পঠন ও পাঠন শিক্ষা কোথাকার বেদানকুল, সন্ন্যাসী হয়েও জুতো পড়া, হুক্কা সেবন, চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করা, ধন সঞ্চয় করা, মাংস ভক্ষণকারীদের হাতে ভোজন করা স্ত্রীদের অপশব্দ প্রয়োগ করা এগুলো কি বেদনুকূল ? 

আর স্বামী ধূর্তানন্দ আপনি বলুন যখন আপনি বেদের ভাষ্য করতে বসেছেন, তখন বেদের ভাষ্যের অর্থ সিদ্ধ হয় ব্রাহ্মণ নিঘন্টু এবং উপনিষদ দ্বারা সিদ্ধ শব্দের অর্থ নিঘন্টুতে এই প্রকার লেখা আছে শতপথে এই প্রকার লেখা আছে, এই কারণে এর অর্থ এরকম, কিন্তু নিঘন্টু, ব্রাহ্মণ শাস্ত্র ছাড়া আপনি বেদের অর্থ সিদ্ধ করতে পারবেন না তাহলে নিঘন্টু, ব্রাহ্মণে সিদ্ধ শব্দ আপনি কিভাবে খণ্ডন করবেন।

কারণ, মন্ত্রের বর্ণে এরকম লেখা নেই যে এর অর্থ এই প্রকার হবে, এর বর্ণনা নিঘন্টু ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থতে নির্দেশিত করা আছে এবং মন্ত্রের প্রয়োগ বিধি ও সেইসব গ্রন্থতে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং এইসব গ্রন্থে বেদ বিরুদ্ধতার অংশ মাত্র নেই, এই কারণে (মন্ত্র ব্রাহ্মণযোঃ বেদনামধেযম্‌) মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুই মিলে এর নাম হয় বেদ, আপনার মতো ধূর্ত এটির মধ্যে বিরুদ্ধতা খুঁজে পায় এই সমস্ত গ্রন্থ হতে আপনার বেদের অর্থ করার মধ্যে বেদানুকূলতা কোথায় আছে ? এবং কোনো গ্রন্থে যদি আপনি এমন কিছু  খুজে পেয়ে যান যা আপনার বুদ্ধির প্রতিকূল তৎক্ষণ আপনি তা বেদ বিরুদ্ধ বলে ত্যাগ করবেন,  যেরকম আপনি সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন 'বিষসম্পপৃক্তান্নবৎত্যাজ্যা  যে রূপ অত্যুত্তম অন্ন বিষ-মিশ্রিত হইওলে তাহা ত্যাজ্য সেইরূপ এই সকল গ্রন্থও ত্যাজ্য ।

আবার লিখেছেন 'অসত্যমিশ্রং সত্যং দূরতস্ত্যাজ্যমিতি' অসত্য মিশ্রিত গ্রন্থকে  বিষ মিশ্রিত অন্নের ন্যায় পরিত্যাগ করা কর্তব্য।

বেদ অর্থাৎ বেদে যাহা যাহা গ্রহণ ও বর্জন করিতে ও পরিত্যাগ করিতে শিক্ষা দিয়েছে সেগুলি যথাযথ পালন করা ও বর্জনীয় কে বর্জন করা উচিত বলিয়া মানি। যেহেতু বেদ আমাদের মান্য সেই হেতু আমাদের মত বেদ।

যদি এরকম হাল হয় তবে আপনার কথা অনুসারে ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থের মধ্যেও অসত্য রয়েছে তাই এগুলো বিষ তুল্য, এই কারণে এগুলো কেউ ত্যাগ করা উচিত। এবার এ বিষয়ে আপনার কি মত ? 

এখানেই তো আপনার দ্বিচারিতা সিদ্ধ হয় এগুলি আপনার মন্দ বুদ্ধির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আপনি যদি এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোকে অসত্য বেদ বিরুদ্ধে বলে প্রমাণ করেন তাহলে আপনি কেন এই গ্রন্থ হতে প্রমাণ দিতে লজ্জা বোধ করেন না, আপনি আপনার লেখা বক্তব্য খুব সহজে ভুলে যান যে আপনিই বলেছিলেন, বিষযুক্ত অমৃত ও বিষতুল্য, 

এখন আপনি আপনার সত্যার্থ প্রকাশের ভাষ্য ভূমিকা ও বেদ ভষ্যে এই গ্রন্থের প্রয়োগ করেছেন তাহলে আপনার কথা অনুসারে আপনার সত্যার্থ প্রকাশও অসত্য মিশ্রিত হওয়ার জন্য পরিত্যক্ত করা উচিত। অর্থাৎ অসত্য মিশ্রিত গ্রন্থ ত্যাগের শুভারম্ভ আপনার গ্রন্থ দিয়েই করা যায় আর যারা দয়ানন্দের এই অসত্য ভাষনকে সত্য বলে প্রতিপন্ন করতে চান তাদের গলায় মিথ্যা জড়িয়ে যাবে।

--------------------------------------------------------------------------------------------

🟪 (১১) দয়ানন্দ সরস্বতীর একাদশ তম দাবী (১১) 🟪

 পুরাণ ইতিহাস প্রকরণ 


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ৪৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

ব্রাহ্মণানীতিহাসান পুরাণানি কল্পান গাথা নারাশাংসীরিতি॥

ইহা গৃহ্যসূত্রাদির বচন। যাহা ঐতরেয়, শতপথ প্রভৃতি ব্রাহ্মণ গ্রন্থে লিখিত হইয়াছে উহাদের ইতিহাস, পুরাণ, গাথা, নারাশংসী এই পাঁচটি নাম। শ্রীমদ্ভাগবতাদির নাম পুরাণ নহে


 দয়ানন্দ সরস্বতীর একাদশ তম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) — 

স্বামীজি পুরাণ শাস্ত্রকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

 আপনি যেন প্রতিজ্ঞা করে বসেছেন, যখনই মুখ খুলবেন,তখনই সত্যই বলবেন ! ছলনা বা ধূর্ততারও তো একটা সীমা থাকা উচিত ! আপনি সব সীমানা পেরিয়ে গিয়েছেন।

এখন তো আপনি পুরাণগুলোকেও অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন !  কিন্তু সেটাও আপনার পক্ষে সম্ভব হলো না। কারণ, শাস্ত্র দয়ানন্দ সরস্বতীর মতবাদ  ছিন্নভিন্ন করে রেখে দিয়েছে।

“পুরাণ” শব্দটি কিন্তু ঐতরেয়, শতপথাদি ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলির নির্দেশক নয় । প্রমাণ দেখুন -

মধ্বাহুতয়ো হ বা এতা দেবানাম্‌ যদানুশাসনানি বিদ্যা।
বাকোবাক্যমিতিহাসপুরাণং গাথা নারাশংস্যঃ স য এবং বিদ্বাননুশাসনানি বিদ্যা বাকোবাক্যমিতিহাসপুরাণং গাথা নারাশংসীরিত্যহরহঃ স্বাধ্যায়মধীতে 
মধ্বাহুতিভিরেব তদ্দেবাংস্তর্পয়তি ত এনং তৃপ্তাস্তর্পযন্তি যোগক্ষেমেণ প্ৰাণেন রে ॥

(শতপথ ব্রাহ্মণ/১১/৫/৬/৮)

অর্থ — শাস্ত্র দেবতাদের মধ্যে একপ্রকার আহুতি স্বরূপ। দেববিদ্যা, ব্রহ্মবিদ্যা প্রভৃতি সমস্ত বিদ্যা, প্রশ্নোত্তররূপ গ্রন্থ, ইতিহাস, পুরাণ, গাথা এবং নারাশংস — এই সমস্তই শাস্ত্র। যে ব্যক্তি প্রতিদিন এগুলোর স্বাধ্যায় (অধ্যয়ন) করে, সে যেন দেবতাদের উদ্দেশ্যে আহুতি প্রদান করে।


স যথার্দ্রৈধাগ্রেরভ্যাহিতস্য পৃথক্ ধূমা বিনিশ্চরন্তেবং বা অরেঽস্য মহতো ভূতস্য নিশ্বসিতমেতদ্যযদ্ ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ, সামবেদঽথর্বাঙ্গিরস ইতিহাসঃ পুরাণং বিদ্যা উপনিষদঃ শ্লোকাঃ সূত্রাণ্যনুব্যাখ্যানানি ব্যাখ্যানান্যস্যৈবৈতানি সর্বাণি নিশ্বসিতানি ॥

(শতপথ ব্রাহ্মণ/১৪/৫/৪/১০)

অর্থ — যেভাবে চারপাশ থেকে সিক্ত (ভেজা) জ্বালানিতে আগুন জ্বলে ধোঁয়া উৎপন্ন করে, তেমনি হে মৈত্রেয়ী! ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, উপনিষদ, সূত্র, শ্লোক, ব্যাখ্যা, অনুব্যাখ্যা, ইষ্ট (যজ্ঞ), হুত (যজ্ঞকর্ম), পায়িত, এইলোক, পরলোক এবং সমস্ত প্রাণী—এগুলো সবই সেই মহান্‌ সত্তার নিঃশ্বাসই।


দেখুন, এখানে ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি নাম আলাদা আলাদাভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। আরও কিছু উদাহরণও আপনাকে দেখানো যায় —

ঋগ্বেদং ভাগবোধ্যেমি যজুর্বেদং সামবেদমাথর্বণং চতুর্থং ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং বেদং পিত্র্যং দৈবং নিধিং বাকোবাক্যমেকায়নং দেববিদ্যাং ব্রহ্মবিদ্যাং ভূতবিদ্যাং ক্ষত্রবিদ্যাং নক্ষত্রবিদ্যাং সর্পদেবজনবিদ্যামেতদ্ভগবোঽধ্যেমি ॥

[ছান্দোগ্য উপনিষদ/৭ম অধ্যায়/১ম খণ্ড/২য় মন্ত্র]

অর্থ — নারদ বললেন, হে ভগবান! আমি ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ নামক চার বেদ সম্পর্কে জানি, ইতিহাস ও পুরাণ - যা পঞ্চম বেদ হিসেবে গণ্য হয়, তাও জানি। শ্রাদ্ধকল্প, গণিত, উৎপাদবিদ্যা, নিধি শাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, নিরুক্ত, ব্রহ্মসংক্রান্ত উপনিষদবিদ্যা, ভূততন্ত্র, ধনুর্বেদ, জ্যোতিষ, সাপ দেবজাতি বিদ্যা (গরুড় মন্ত্র), দেবজাতি বিদ্যা গন্ধর্ব‌ যথা নৃত্য, গীত ও বাদ্য — এসব সবই আমি জানি।


অরেঽস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বাসিতম্‌ এতদ্যৎ ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোঽথর্বাঙ্গিরস  ইতিহাসঃ পুরাণং বিদ্যা উপনিষদঃ শ্লোকাঃ সূত্রাণ্যনুব্যাখ্যানানি ব্যাখ্যানানিষ্ঠ‌ হুতমাশিতং  পায়িতময়ং লোকঃ পরশ্চলোকঃ সর্বা‌ণি চ ভূতান্যস্যৈবৈতানি সর্বা‌ণি নিশ্বসিতানি 

 [বৃহদারণ্যক উপনিষদ/৭ম অধ্যায়/১ম খণ্ড/২য় মন্ত্র]

অর্থ — সেই পরব্রহ্মের নিঃশ্বাস থেকেই ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, উপনিষদ, সূত্র, শ্লোক, ব্যাখ্যান, অনুব্যাখ্যান, ইষ্ট (যজ্ঞ), হুত (যজ্ঞকৃত অর্ঘ্য), পায়িত (অর্পণকৃত আহার), এইলোক, পরলোক এবং সমস্ত ভৌতিক সত্ত্বার উদ্ভব হয়েছে॥


যত্র স্কম্ভঃ প্রজনয়ন্‌ পুরাণং ব্যবর্তয়ৎ ।
একং তদঙ্গং স্কম্ভস্য পুরাণমনুসংবিদুঃ ॥

(অথর্ববেদ/১০/৭/২৬)

অর্থ  —  স্কম্ভ থেকে যে পুরাণ উৎপন্ন হয়েছে, সেই পুরাণকেই স্কম্ভের অঙ্গ বলা হয়েছে।

[পুরাণ যদি ব্রাহ্মণ গ্রন্থই হতো, তাহলে সেটি ঈশ্বর থেকে প্রকট হচ্ছে বলে বেদে কেন বলা হয়েছে ? কেননা, দয়ানন্দ তো ব্রাহ্মণ কে ঈশ্বরের বাণী বলে মানতে অস্বীকার করেছেন, দয়ানন্দের কথা অনুযায়ী - ব্রাহ্মণ গ্রন্থ নাকি মনুষ্য রচিত, তাহলে  মনুষ্য রচিত ব্রাহ্মণ যদি পুরাণ হয়ে থাকে তাহলে এই পুরাণ আবার ঈশ্বর থেকে কীভাবে প্রকট হল ?- অর্থাৎ, দয়ানন্দের এই মতবাদ কল্পিত বলে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় এইখানেই] 

তমিতিহাসশ্চ পুরাণং চ গাথাশ্চ নারাশংসীশ্চানুব্যচলন্‌ ॥ ১১॥

ইতিহাসস্য চ বৈ স পুরাণস্য চ গাথানাং চ নারাশংসিনাং চ প্রিয়ং ধাম ভবতি য এবং বেদ॥

(অথর্ববেদ/১৫/৬/১১-১২)

অর্থ  —  ইতিহাস, পুরাণ, গাথা ও নারাশংসী — এরা সকলেই জ্ঞানের প্রিয় আশ্রয়স্থল। এক ব্রাত্যবিদ্বান ব্যক্তি ইতিহাস, পুরাণ, গাথা ও নারাশংসীর মাধ্যমে বেদের বিস্তার ও ব্যাখ্যা করে জ্ঞানের উন্নতির পথে অগ্রসর হয়।

[এই বেদ মন্ত্র দ্বারা বর্তমানে অনেক আর্য সমাজী  নিজেদের কথার জালে ধরা পড়ে গিয়ে, কথা ঘুরিয়ে নিজেদের মতবাদ টিকিয়ে রাখবার জন্য এরা বলে বেড়ায় যে, পুরাণ বলতে বেদের মধ্যে থাকা পুরাতন বৃত্তান্তের মন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হল অথর্ববেদের এই মন্ত্রের মধ্যেই বলা হয়েছে ইতিহাস পুরাণ দ্বারা বেদকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে।  অর্থাৎ বেদের মন্ত্রকেই বেদ বলা হচ্ছে এবং সেই মন্ত্রকেই ব্যাখ্যা করবার জন্য বেদমন্ত্র থেকে স্বতন্ত্র আলাদাভাবে ইতিহাস পুরাণের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে, সুতরাং এই মন্ত্রের মধ্যে থেকে ইতিহাসক শব্দটিকে এড়িয়ে গিয়ে মাঝখান থেকে পুরাণ শব্দটিকে তুলে তার দ্বারা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে বেদ-মন্ত্র পুরাণ শব্দে বাচিত হয়েছে বলে দাবি করাটা এক রকমের পাষণ্ডের কাজ। কারণ, এইখানে ইতিহাস শব্দ টি বেদ মন্ত্র থেকে নিজেকে স্বতন্ত্র করছে, আর তার সাথে পুরাণ শব্দটিও ইতিহাস শব্দের সাথে একই অর্থকে বহন করছে,  তাই অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইতিহাস শব্দটাকে এড়িয়ে গিয়ে যে পুরান শব্দ ইতিহাসের পরবর্তীতে রয়েছে সেই পুরাণ শব্দ দ্বারা বেদের পুরাতন সৃষ্টি বিষয়ক মন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে এমন দাবি করা শুধুই মূর্খতার কাজ]


ঋচঃ সামানি ছন্দাংসি পুরাণং যজুষা সহ ।
উচ্ছিষ্টাজ্জজ্ঞিরে সর্বে দিবি দেবা দিবিশ্রিতঃ ॥

(অথর্ববেদ/১১/৯/২৪)

অর্থ  — যজ্ঞের উচ্ছিষ্ট দ্বারা ঈশ্বর থেকে যজুর্বেদের সহিত ঋক্, সাম, ছন্দ এবং পুরাণ এবং দ্যুলোক ও স্বর্গে অবস্থানকারী সকল দেবতা প্রকটিত হয়।

অর্থাৎ, পুরাণসমূহের আবির্ভাব ঋক্‌, সাম, যজু ও ছন্দের সঙ্গে একই সময়ে হয়েছিল।


👉পুরাণ এবং ব্রাহ্মণ দুই আলাদা শাস্ত্র—

এবমিমে সর্বে বেদা নির্মিতাঃ সকল্পাঃ সরহস্যাঃ সব্রাহ্মণাঃ সোপনিষৎকাঃ সেতিহাসাঃ সাম্বাখ্যানাঃ সপুরাণাঃ সম্বরাঃ সসংস্কারাঃ সনিরুক্তাঃ সানুশাসনাঃ সানুমার্জনাঃ সবাকোবাক্যাঃ।।

[অথর্ববেদ/গোপথব্রাহ্মণ/পূর্বভাগ/২য় প্রপাঠক/১০]

অর্থ  — সমস্ত বেদগ্রন্থ, কল্পগ্রন্থ, রহস্যগ্রন্থ, ব্রাহ্মণগ্রন্থ, উপনিষদরাজি, ইতিহাস, ব্যাখ্যানগ্রন্থ, পুরাণ, স্বর, সংস্কার, নিরুক্ত, অনুশাসন, সংশোধনী, আলোচনা শাস্ত্র- (সবই) যজ্ঞে প্রযুক্ত হলে নিজস্ব সত্তা ছিন্ন হয়।


এখন আপনি কি বলবেন, দোগলা স্বামী  দয়ানন্দ জী, যদি ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোর নামই পুরাণ হত, তাহলে গোপথ ব্রাহ্মণ-এ কেন এমনভাবে পৃথকভাবে কল্প, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, ইতিহাস এবং পুরাণ উল্লেখ করা হয়েছে? এর মধ্যেও ব্রাহ্মণ ছাড়াও ইতিহাস ও পুরাণ পরিচিত হয়। কারণ সেতিহাসাঃ, সপুরাণাঃ — এভাবে পৃথকভাবে বলার অর্থ তাদের মধ্যে পার্থক্য বোঝায়। যখন ইতিহাসসহ এবং পুরাণসহ দুটি শব্দ আলাদাভাবে বলা হয়, তখন নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে এগুলো পৃথক। এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি ব্রাহ্মণ ছাড়া আলাদা কোনো গ্রন্থ।


এখন প্রশ্ন হলো, 

পুরাণ কাকে বলে এবং তা অধ্যয়ন বা শ্রবণ থেকে কী সুবিধা বা লাভ হয় ?  -


স্বাধ্যায়ং শ্রাবয়েৎ পিত্রে ধর্মশাস্ত্রাণি চৈব হি।

আখ্যানমিতিহাসংশ্চ পুরাণান্য খিলানি চ ॥

(মনুসংহিতা/তৃতীয় অধ্যায়/২৩২ নং শ্লোক)

অর্থ  — পিতৃকার্যে (ব্রাহ্মণদের) বেদ, ধর্মশাস্ত্র, আখ্যান, ইতিহাস, পুরাণ ও খিল (শিবসংকল্পাদি) শোনাবে।


⛊ বাল্মিকি রামায়ণে বর্ণিত পুরাণ বৃত্তান্তে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির প্রভাব ও স্বর্গলোকে থাকা ইন্দ্রের বিষয়ে বর্ণনা কথন দ্বারা পুরাণের ব্রাহ্মণগ্রন্থ থেকে স্বতন্ত্রতা ও দয়ানন্দের মতখণ্ডনের চমৎকার প্রমাণ দেখুন — 

এতচ্ছুত্বা রহঃ সূতো রাজানমিদমব্রবীৎ ।

শ্রূযতাং তৎ পুরাবৃত্তং পুরাণে চ ময়া শ্রুতম্॥ ১ ॥

[বাল্মিকি রামায়ন/বাল কাণ্ড‌/৯ম সর্গ/১ম শ্লোক]

অর্থ  — সুমন্ত্র দশরথ রাজাকে নির্জনে বললেন, “মহারাজ! এক প্রাচীন ইতিহাস শুনুন, যার বর্ণনা আমি পুরাণেও শুনেছি।”


এরপর সেই মন্ত্রী পুরাণে বর্ণিত মহাতপস্বী ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির প্রভাব সম্পর্কে বললেন, যা তিনি পূর্বে পুরাণে শুনেছিলেন। তারপর সেই মুনিকে অশ্বমেধ যজ্ঞে আমন্ত্রণ করবার জন্য বললেন,যাতে যাতে অশ্বমেধ যজ্ঞ সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে এবং সেই মুনির প্রভাবে পুত্র লাভের আশা পূর্ণ হয়।

[খেয়াল করুন, বাল্মিকি রামায়ণে রাজা দশরথ হোম যজ্ঞ করছেন, পুত্র প্রাপ্তির জন্য, অথচ দয়ানন্দ বলেছিল - হোম যজ্ঞ নাকি বাতাসের দুর্গন্ধ দূর করবার জন্য করা হয়। ভাবুন - দয়ানন্দের মতবাদের সাথে কোন শাস্ত্রের মিল হয় না, সর্বদাই সাংঘর্ষি‌ক। আর এই যজ্ঞ করতে গিয়ে  পুরাতন এমন এক পুরাণ শাস্ত্রের বৃত্তান্তকে তোলা হয়েছে যেখানে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। যার সাথে ইন্দ্রের দেবচলোক বিষয়ক বৃত্তান্ত রয়েছে। অর্থাৎ পুরাণ শাস্ত্র বলতে কখনোই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কে বোঝায় না কারণ ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কোথাও এই ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির বিষয়ের কাহিনী বলা নেই, যেখানে দয়ানন্দ নিজে বলেছে পরলোক স্বর্গলোক বলে কিছু হয় না,কোন সাকার দেবতা নেই। 

অথচ বাল্মিকী রামায়ণের এই কথন থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে দেব লোকে থাকা ইন্দ্রদেবও এই ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির কাহিনী পুরাণ শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে, আর যেহেতু বাল্মিকী রামায়ণের এই কথন সর্বদাই প্রামাণিক তথা মান্য ; তাই রাজা দশরথের মন্ত্রীর বলা বচন অনুসারে, পুরাণে বর্ণিত কাহিনী মিথ্যা নয়।  অর্থাৎ  দয়ানন্দ সরস্বতীর সকল বচন যে মিথ্যা এবং পরলোক বলে যে কিছু আছে তা প্রমাণিত হচ্ছে দশরথের মন্ত্রীর মুখনিঃসৃত বচন দ্বারা।  আর উপরোক্ত প্রমাণ দ্বারা স্পষ্ট ভাবে জানা গেল ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কখনোই পুরাণ শাস্ত্র নয়।]



পুরাণন্যায়মীমাংসা ধর্মশাস্ত্রাঙ্গমিশ্রিতাঃ ।
বেদাঃ স্থানানি বিদ্যানাং ধর্মস্য চ চতুর্দশ ॥ ৩

(যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি/১ম অধ্যায়/৩ নং মন্ত্র)

অর্থ  — পুরাণ, ন্যায়, মীমাংসা, ধর্মশাস্ত্র এবং ছয় অঙ্গসহ বেদ — এই চৌদ্দটি বিদ্যা ধর্মের অধিষ্ঠানস্থান (অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তি ও আশ্রয়)।


এই একইভাবে শতপথ ব্রাহ্মণ (১৪/৩/৩/১৩)-এ পুরাণবাঙ্‌গময়-কে সরাসরি বেদ বলা হয়েছে।
তদ্রূপ, ছান্দোগ্য উপনিষদ (৭/১/২,৪)-এও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে — পুরাণই বেদের পঞ্চম অংশ বা পঞ্চম বেদ


বৃহদারণ্যক উপনিষদ এবং মহাভারতে বলা হয়েছে —
ইতিহাস পুরাণাভ্যাং বেদার্থমুপবর্হয়েৎ,
অর্থাৎ বেদের অর্থ বা তত্ত্বের বিস্তার পুরাণের মাধ্যমে করা উচিত
এ থেকেই স্পষ্ট হয় যে বৈদিক যুগে পুরাণ ও ইতিহাসকে সমান মর্যাদায় স্থান দেওয়া হয়েছে।


দয়ানন্দ সরস্বতী  এবার নিজের জুক্তিতেই নিজে ফেঁসেছেন, কারণ - 

সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

এস্থলে সংক্ষেপে রাজধর্ম বর্ণিত হইল। বিশেষ করিয়া বেদ, মনুস্মৃতির সপ্তম, অষ্টম ও নবম অধ্যায়, শুক্রনীতি তথা বিদুরপ্রজাগণ, এবং মহাভারতে শান্তি পর্বের অন্তর্গত রাজধর্ম ও আপদ্ধর্ম প্রভৃতি পাঠ করিয়া পূর্ণ রাজনীতি আয়ত্ত করিবেন


অর্থাৎ, শুক্রনীতি প্রামাণিক বলে মেনেছেন দয়ানন্দ সরস্বতী, তাই আর্যসমাজীরাও শুক্রনীতির বচন মানতে বাধ্য। এর সাথে  মহাভারতকেও মানতে বাধ্য আর্যসমাজীরা।

চলুন, এবার দেখুন, পৌরাণিক ব্যক্তির লক্ষণ বলতে গিয়ে শুক্রনীতি বলছেন যে, পৌরাণিক ব্যক্তি পুরাণের সর্গ আদি পাঁচ লক্ষণ জানবেন, তবেই তিনি পৌরাণিক বলে গণ্য হবেন। প্রমাণ 👇 

সাহিত্যশাস্ত্রনিপুণঃ সঙ্গীতজ্ঞশ্চ সুস্বরঃ ।

সর্গাদিপঞ্চকজ্ঞাতা স বৈ পৌরাণিকঃ স্মৃতঃ ॥ ১৭৯ 

[শুক্রনীতি/অধ্যায় ২]

অর্থ - যিনি 'কাব্যশাস্ত্রে সুনিপুণ, সঙ্গীতবেত্তা, মধুর স্বরশালী, এবং সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর, ও বংশানুচরিত, পুরাণের এই পাঁচ প্রকার লক্ষণ জ্ঞাতশীল হয়েন তাহার নাম পুরাণ পাঠক পৌরাণিক ॥ ১৭৯


এবার প্রশ্ন হল পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ কি কি ? 

শুক্রনীতি পুরাণের পাঁচটি লক্ষণের প্রথম লক্ষণ ‘সর্গ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সর্গ শব্দের অর্থ - সৃষ্টি। সুতরাং, সায়ণাচার্য তৈত্তিরীয় আরণ্যকের উক্ত মন্ত্রে উপস্থিত থাকা পুরাণ শব্দের ভাষ্যে ‘সৃষ্ট্যাদিপ্রতিপদকানি পুরাণানি’ অর্থাৎ সৃষ্টি ইত্যাদি প্রতিপাদিত হ‌ওয়া লক্ষণ সমন্বিত শাস্ত্রকেই পুরাণ বলা বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। 

এখন ব্রাহ্মণ গ্রন্থ যদি পুরাণ হয়ে থাকতো তবে শুক্রনীতি অনুসারে পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কোথায় আছে ?

পুরাণে পাঁচটি লক্ষণ ব্রাহ্মণের কোথাও নেই, বরং বর্তমানে পরিচিত ১৮টি পুরাণেই তা রয়েছে। যা বায়ুপুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রথমেই উল্লেখ করেছি, বায়ুপুরাণকে শিবপুরাণের বায়বীয় সংহিতার সমার্থক বলে। তাই এটি শিবমহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতাতেও রয়েছে । দেখুন 👇 
সর্গশ্চ প্রতিসর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরাণি চ ।
বংশানুচরিতং চৈবং পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্ ॥ ৪১
[শিব মহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/পূর্বখণ্ড/১ অধ্যায়/৪১ শ্লোক]
অর্থ — সৃষ্টি, সৃষ্টির প্রলয়, বংশ মন্বন্তর তথা বংশানুচরিত - এই পাঁচটি হল লক্ষণ হল পুরাণের।

আর্যসমাজীগণ শুক্রনীতির বচন মান্য করতে বাধ্য‌। আর এই কারণে শুক্রনীতির বচনের উপরে ভিত্তি করেই ব্রাহ্মণ যে পুরাণ নয় তা প্রমাণিত হয়।


 এবার দেখে নিন পুরান শাস্ত্র বলতে ১৮ টি পুরান কি বোঝায়,
এ কথা বলছে স্বয়ং মহাভারত -

অষ্টাদশ পুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশঃ ।
বেদাঃ সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকতঃ স্থিতম্ ॥৪৫॥
শ্রূয়তাং সিংহনাদোঽয় মৃষেস্তস্য মহাত্মনঃ ।
অষ্টাদশ পুরাণানাং কর্ত্তুর্বেদমহোদধেঃ ॥৪৬॥

[মহাভারত/স্বর্গারোহণপর্ব/অধ্যায় ৫/৪৫-৪৬]

নীলকন্ঠ টীকা - ভারতকৌমুদী—

অষ্টাদশপুরাণানি ব্রাহ্ম- পাদ্মাদীনি, ধৰ্ম্মশাস্ত্রাণি মম্বাদীনি অঙ্গৈঃ শিক্ষা - কল্পাদিভিঃ সহেতি সাঙ্গাঃ, বেদা ঋগাদযশ্চত্বারঃ। এতৎ সর্ব্বম্ একত্র তুলাদণ্ডলম্বিত একস্মিন্ পাত্রে এতদ্ ভারতঞ্চ, একত একত্র তদ্ দ্বিতীয়পাত্রে স্থিতম্ । তত্র মহাভারতমেবাধিক জাতমিত্যশয়ঃ ॥৪৫
শ্রূয়তাং। অষ্টাদশপুরাণানাং কর্ত্তু প্রণেতুঃ, বেদানাং মহোদধেঃ সর্ব্ববেদ নিধে-রিত্যর্থঃ। মহাত্মনস্তস্য ঋষের্বেদব্যাসস্য, অয়ং সিংহনাদঃ সিংহনাদবদ্ গর্বসূচক উচ্চরবঃ, শ্রুয়তাং ভবদ্ভিঃ ॥৪৬

অর্থ — অষ্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারটি বেদ তুলাদণ্ডলম্বিত এক পাত্রে ছিল, আর এই মহাভারত তাহারই অন্য পাত্রে রহিয়াছিল (তখন মহাভারতই ভারে অধিক হইয়াছিল) ॥৪৫॥
অষ্টাদশপুরাণ প্রণেতা, বেদের মহাসাগর সেই মহাত্মা বেদব্যাসের এই সিংহনাদ আপনারা শ্রবণ করুন ॥৪৬॥

🔥যেসব জ্ঞানপাপীরা বলেন পুরাণ বলতেই অষ্টাদশ পুরাণকে বোঝায় না তাদের উদ্দেশ্যে বলি— ব্রাহ্মণ বলতেই বেদ।  ব্রাহ্মণ গ্রন্থের সংখ্যা (প্রধান)—
ঋগ্বেদ— ২টি
যজুর্বেদ— ৫টি (প্রায়)
সামবেদ— ৪-৫টি
অথর্ববেদ— ১টি

এভাবে প্রত্যেকটা কোথাও আলাদা করে উল্লেখিত করে না। তা নিজ জ্ঞানে বুঝে নিতে হয়। ইতিহাস বলতেও বেদের মধ্যে কোথাও রামায়ণ/ মহাভারত/ শিবরহস্য মহা ইতিহাস এভাবে বলা থাকে না সেটাও নিজ জ্ঞান ও আচার্যদের ভাষ্য দ্বারা বুঝে নিতে হয়। ঠিক একই ভাবে বেদে পুরাণ বলতে অষ্টাদশ পুরাণকেই বুঝে নিতে হবে। তার জন্য আমাদের পূর্ব আচার্যরা নিজেদের ভাষ্য দিয়ে গেছে বিভিন্ন শাস্ত্রে। তাই একচেটিয়া সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা ভাবতে হবে যে- আচার্য্যরা কেন বলে গেছেন, নিশ্চয় তারা জ্ঞানহীন ছিলেন না।

দেখুন, ধর্মসূত্রে আর আমামদের পৌরাণিক দের শিবমহাপুরাণে বচনে সাদৃশ্য -

👉আপস্তম্ব ধর্মসূত্র – নীতিবচনে পুরাণের ভূমিকা—

যো হিংসার্থমভিক্রান্তং হন্তি মন্যুরেব মন্যুং স্পৃশতি ন তস্মিন্‌ দোষ ইতি পুরাণে ॥ ৭ ॥

[আপস্তম্ব ধর্মসূত্র/প্রথম প্রশ্ন/দশম পটল/ঊনবিংশতি খণ্ড]

অর্থ — যদি কেউ আত্মরক্ষার্থে আগত আক্রমণকারীকে বধ করে, তবে এটি পাপ নয়, এটি "ক্রোধের বিপরীতে ক্রোধ"। এই নীতিবচন পুরাণে বলা আছে।


এবার দেখুন 👉 আপস্তম্ব ধর্মসূত্র বলেছে যে, যে যেমন ব্যবহার করবে তার সাথে সেই ব্যবহার করতে হবে এমনটা নাকি পুরাণে বলা আছে।
চলুন দেখে নিই সত্যিই এমন কথা পুরাণে বলা আছে কি না ?
 👇

কৃতে চৈবাত্র কর্তব্যমিতি নীতির্গরীয়সী । ৫৯

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/কুমারখণ্ড/অধ্যায় ১৪]

☘️সরলার্থ - যে যেমন ব্যবহার করে তার সাথে তেমন‌ই ব্যবহার করা উচিত - এই নীতিই সর্বশ্রেষ্ঠ ।৫৯


 — এবার ভেবে দেখুন ! শাস্ত্রের বচনে মিল পাচ্ছেন।

তাই পুরাণকে “নতুন” বলে দাবি করা সেই বেদ-বিরোধী নাস্তিক দয়ানন্দ এবং তার নিয়োগী চামচাদের নিজের সীমার মধ্যে থেকেই কথা বলা উচিত। তারা যেন কখনো ভুলে না যায়—যে পুরাণের মাহাত্ম্যের গুণগান বেদ, উপনিষদ, ব্রাহ্মণ, মনুস্মৃতি, বাল্মীকি রামায়ণ ও মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন গ্রন্থে করা হয়েছে, যেটিকে ঋষি-মুনিরা বেদগুলির মধ্যেই পঞ্চম বেদ বলে স্বীকার করেছেন—সেই পুরাণকে “নতুন” বলে খণ্ডন করা মানে বেদাদি গ্রন্থগুলিরই অপমান করা।
অতএব, বুদ্ধিমানদের উচিত হবে না যে পুরাণকে “নতুন” বলে তার বিরোধিতা করে, সেই দয়ানন্দীয় নিয়োগী সম্প্রদায়ের কথায় কান দেওয়া; বরং তাদের কানমলায় দুই ঘা দিলেই তাদের বুদ্ধি ঠিক জায়গায় ফিরে আসবে। কারণ, প্রকৃত পণ্ডিতদের কাছে তো বেদ, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদের চেয়ে বড় কোনো প্রমাণই নেই।


সিদ্ধান্ত - ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কখনোই পুরাণ শাস্ত্র নয়, দয়ানন্দ সরস্বতী নিজের কল্পিত মতবাদ অন্যের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার জন্য, বিচার না করেই নিজের মুখে যা এসেছে তাই বলেছেন।


এই বিষয়ে আরও অধিক জানবার জন্য 

এইখানে ক্লিক করে দেখুন  👉 পুরাণ শাস্ত্র কি কাল্পনিক ও মনুষ্য রচিত ?



🟪 (১২) দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বাদশ তম দাবী (১২) 🟪

 মত মান্য প্রকরণ 


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ৪৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,


প্রশ্ন- আপনার মত কী?

উত্তর- বেদ অর্থাৎ বেদে যাহা যাহা গ্রহণ ও বর্জন করিতে ও পরিত্যাগ করিতে শিক্ষা দিয়াছে সেগুলি যথাবৎ পালন করা ও বর্জনীয়কে বর্জন করা উচিত বলিয়া মানি। যেহেতু বেদ আমাদের মান্য, সেই হেতু আমাদের মত বেদ। এইরূপই মানিয়া সকল মনুষ্যের বিশেষতঃ আর্য্যদের একমত হইয়া থাকা উচিত।


 দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বাদশ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

আপনি বলেন যে আপনার মতই হলো “বেদ”, আর বেদে যা যা করতে বলা হয়েছে এবং যা করতে নিষেধ করা হয়েছে, আপনি নাকি সেই অনুযায়ীই করেন বা ত্যাগ করেন — তাহলে এবার বলুন তো, আপনার এই লিখিত “সত্যনাশ প্রকাশ” গ্রন্থে যা কিছু লেখা আছে, সেগুলো কি সবই বেদ থেকে নেওয়া ? 

আপনার মতবাদ অনুসারে মন্ত্র সংহিতা একমাত্র বেদ, তাহলে যদি আপনার মতবাদ সত্যিই বেদভিত্তিক হয়, তবে ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, মনুস্মৃতি, বাল্মীকি, মহাভারত, চরক, সুশ্রুত ইত্যাদি গ্রন্থের বচন কে প্রামাণিকতা হিসেবে দেখাবার জন্য ব্যবহার করেছেন কেন ? সব প্রমাণ বেদ থেকেই কেন দেন না ?

আপনার মতবাদ অনুসারে মন্ত্র সংহিতায় কোথাও বলা আছে নাকি যে তৈত্তিরীয় আরণ্যক মান্য করতে হবে ? নির্দিষ্ট করে নাম উল্লেখ করে কি ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, মনু স্মৃতি, বাল্মীকি রামায়ণ, মহাভারত, চরক, সুশ্রুতের কথা মান্য করতে বলা হয়েছে ? কোথাও তো এমন উল্লেখ নেই, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনি এই সব ব্যবহার করেছেন ?

দয়ানন্দ যে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করেছে, তা বলি কোন বেদে তার নির্দেশ আছে ? আগে বেদে থাকতে হবে তাপর তো অন্য শাস্ত্রের মধ্যে তার উল্লেখ থাকলে তা মান্য হবে, কিন্তু এরকম তো বহু জিনিস  দয়ানন্দের মান্য তথাকথিত বেদে নেই, তাহলে কিসের ভিত্তিতে দয়ানন্দ বলছে যে তিনি শুধু বেদের মত মানেন ?

আর আপনি তো বলেন, “যা বেদে করতে বলা হয়েছে তা করবো, আর যা না করতে বলা হয়েছে তা ত্যাগ করবো ”— তাহলে বলুন দেখি, আপনার বেদে কি অন্যদের নিন্দা করতে বলা আছে?

আপনার এই “সত্যনাশ প্রকাশ”-এ আপনি যে সব অশ্লীল ও নীচ ভাষা ব্যবহার করেছেন — যেমন “রান্ড”, “রান্ডখরেহি”, “ভঙ্গি”, “চামার”, “ভাণ্ড”, “ভণ্ডবে”, “চূতড়”, “গোবরগণ্ড” ইত্যাদি — এমন ব্যবহার করবার নির্দেশ কি বেদে লেখা আছে ?

আর সন্ন্যাসী হয়ে বিদেশী বুটজুতা পায়ে, হুঁকা খেয়ে, চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে, টাকা কামিয়ে, নারীজাতিকে গালাগালি করা — এসবই বা কোন বেদসম্মত আচরণ ?


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই বেদের পন্থী নন।




🟪 (১৩) দয়ানন্দ সরস্বতীর ত্রয়োদশ তম দাবী (১৩) 🟪


॥ ঈশ্বর প্রতিমা, তিলক, ব্রত, নাম প্রকরণ 

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ৫০ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

ঈশ্বরের ধ্যান পরিত্যাগ করিয়া অন্য জড় ও পাষাণ মূর্ত্তির দর্শন এবং পূজায় বৃথা সময় নষ্ট করা 

 উর্দ্ধপুন্ড্র, তিলক, কণ্ঠী ও মালা ধারণ করা; একাদশী প্রভৃতি ব্রত করা; কাশী প্রভৃতি তীর্থ এবং রাম, কৃষ্ণ, নারায়ণ, শিব, ভগবতী ও গণেশাদির নাম স্মরণে পাপ বিনাশ হয় বলিয়া বিশ্বাস করা; 


 দয়ানন্দ সরস্বতীর ত্রয়োদশ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

ওহে যবনদের নতুন সংস্করণের অবতার দয়ানন্দ সরস্বতী ! পাষাণ মূর্তি পূজা করে মহাভারতের অর্জুন ঈশ্বর কৃপা লাভ করেছিলেন। দেখুন মহাভারত থেকে প্রমাণ দিলাম মাটি দিয়ে শিবপ্রতিমা বিগ্রহ তৈরি করে তাতে ফুলের মালা পরিয়ে পূজা করবার 👇

শরণ্যং শরণং গত্বা ভগবন্তং পিনাকিনম্ ।

মৃন্ময়ং স্থণ্ডিলং কৃত্বা মাল্যোনাপূজয়দ্ভবম্ ॥৬৫

[তথ্যসূত্র — মহাভারত/বনপর্ব/৩৫ অধ্যায়]

অর্থ —পিনাকধনুক ধারণকারী শরণাগতরক্ষক ভগবান  মহাদেবের শরণাপন্ন হয়ে, স্থণ্ডিলের উপরে শিবের মৃন্ময়(মাটির) প্রতিমা বানিয়ে মালা দ্বারা শিব প্রতিমার পূজা করলেন অর্জুন ‌।


আপনি যে ব্রহ্মচর্য পালনে ব্যাঘাত ঘটবার কারণ হিসেবে মূর্তিপূজাকে দোষ দিয়ে নিন্দা করেছেন প্রাচীন মুনিষীরা সেই প্রতিমা পূজাকে প্রিয় বলে মানতেন। সেই শিব লিঙ্গের পূজা করেই আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ হয় ।

 মহাভারত থেকে প্রমাণসহ দেখিয়ে দেওয়া হল যে, প্রাচীন ঋষিগণ শিববিগ্রহ প্রতিমা তথা শিবলিঙ্গ পূজা করতেন 👇

নিত্যেন ব্রহ্মচর্য্যেণ লিঙ্গমস্য যদা স্থিতম্ ।

মহয়ত্যস্য লোকশ্চ প্রিয়ং হ্যেতমহাত্মনঃ ॥ ১৪

বিগ্রহং পূজয়েদযো বৈ লিঙ্গং বাপি মহাত্মনঃ ।

লিঙ্গং পূজয়িতা নিত্যং মহতীং শ্রিয়মশ্নুতে ॥১৫

ঋষয়শ্চাপি দেবাশ্চ গন্ধনর্বাপ্সরসস্তথা । 

লিঙ্গমেবার্চয়ন্তি স্ম যতদূৰ্দ্ধং সমাস্থিতম্ ॥ ১৬

[তথ্যসূত্র : হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ-র অনুবাদিত বিশ্ববাণী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৩৯ অধ্যায়/১৪-১৬ নং শ্লোক”]

অর্থ — মহাদেবের লিঙ্গ যোগের সময়ে সর্বদা ব্রহ্মচর্য্যে অবস্থান করে এবং সমস্ত লোক শিবমূর্তির পূজা করে থাকে, এই পূজা সেই মহাত্মার প্ৰিয় ॥ ১৪

যে লোক মহাত্মা মহাদেবের বিগ্রহ-মূর্তি বা শিবলিঙ্গ পূজা করে, সেই শিবমূর্তিপূজক ও শিবলিঙ্গপূজক মানুষ সর্বদা মহৎ সম্পদ লাভ করে থাকে ॥ ১৫

ঋষিগণ, দেবগণ, গন্ধর্বগণ ও অপ্সরাগণ শিবের লিঙ্গেরই পূজা করে থাকেন, সেই যে লিঙ্গ সকলেরই ঊর্ধ্বে থাকে ॥১৬


কি হে... ! অসনাতনী ম্লেচ্ছ .... ! এবার বুঝলেন তো যে বেদ অনুযায়ী পরমেশ্বর সাকার হন কি না ? তার প্রতিমা আছে কি না ? 

সেই প্রতিমা স্থাপন করার মন্ত্র আছ কি না ?


 এবার দেখুন তিলক ধারণ বিষয়ে আপনার মূর্খতা সিদ্ধ হবে -


বাল্মিকী রামায়ণের অযোধ্যা কান্ডের ১৬ নং সর্গে  ভগবান শ্রী রামচন্দ্র চন্দন তিলক নিজের দেহে ধারণ করেছিলেন —

বরাহরুধিরাভেণ শুচিনা চ সুগন্ধিনা ।

অনুলিপ্তং পরাধ্যেন চন্দনেন পরন্তপম্ ॥ ৯ ॥

স্থিতয়া পার্শ্বতশ্চাপি বালব্যজনহস্তয়া ।

উপেতং সীতয়া ভূয়শ্চিত্রয়া শশিনং যথা ॥ ১০ ॥

[বাল্মিকী রামায়ণ/অযোধ্যা কাণ্ড/১৬ নং সর্গ/৯-১০ নং শ্লোক]

অর্থ — শত্রুদের সন্তান প্রদানকারী শ্রীরামচন্দ্র জীর শ্রী অঙ্গতে বরাহের রক্তের মতো লাল, পবিত্র ও সুগন্ধযুক্ত উৎকৃষ্ট চন্দনের লেপ দেওয়া আছে। দেবী সীতা তাঁর পাশে বসে নিজের হাতে চামর (বালব্যজন) দোলাচ্ছেন। সীতা দেবীর একেবারে সন্নিকটে বসে থাকা শ্রী রাম যেন চিত্রা নক্ষত্রে যুক্ত চন্দ্রের মতো অপরূপভাবে জ্যোতির্ময় হয়ে প্রকাশিত হচ্ছেন ॥ ৯–১০ ॥


মনুস্মৃতি থেকে দেখুন -

মঙ্গলাচার যুক্তঃ স্যাৎ প্রযতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ।

জপেচ্চ জুহুয়াচ্চৈব নিত্যমগ্নিমতন্দ্রিতঃ ॥

মঙ্গলাচারযুক্তানাং নিত্যঞ্চ প্রযতাত্মনাম্।

জপতাং জুহুতাঞ্চৈব বিনিপাতো ন বিদ্যতে ॥

[মনুস্মৃতি/৪র্থ‌ অধ্যায়/১৪৫-১৪৬ নং শ্লোকো]

অর্থ - (গোরোচনাদি ধারণ রূপ) মঙ্গল যুক্ত, (গুরুসেবাদি) আচারবান্, শুচি ও জিতেন্দ্রিয় হবে ; সর্বদা অনলস হয়ে (গায়ত্র্যাদি) জপ ও (অগ্নিতে) হোম করবে।

মঙ্গলাচারযুক্ত, সতত শুচি এবং জপ ও হোমকারী ব্যক্তির (দৈব ও মনুষ্যকৃত) উপদ্রব হয় না।

গোরোচনাদি ধারণ রূপ” বলতে বোঝায় —

গোরোচন, চন্দন, কেশর, রক্তচন্দন ইত্যাদি শুভ দ্রব্য শরীরে (বিশেষত ললাটে, বুকে, বাহুতে) তিলক বা অলংকাররূপে ধারণ করার আচার বা পদ্ধতি।


বেদের অন্তর্গত মুণ্ডক উপনিষদ কপালে ভস্ম ধারণের নির্দেশ দিয়েছে -

তদেতদ্‌চাঽভ্যুক্তম্—

ক্রিয়াবন্তঃ শ্রোত্রিয়া ব্ৰহ্মনিষ্ঠাঃ

স্বয়ং জুহুত একর্ষিং শ্রদ্ধয়ন্তঃ।

তেষামেবৈতাং ব্রহ্মবিদ্যাং বদেত

শিরোব্রতং বিধিবদ যৈস্ত চীৰ্ণম্ ॥১০

[তথ্যসূত্র : মুণ্ডক উপনিষদ/৩য় মুণ্ডক/২য় অধ্যায়]

অর্থ — শাস্ত্র বলে, যে ব্যক্তি শাস্ত্রের বিধি মেনে কর্ম করেন, শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, ব্রহ্মনিষ্ঠ হন, একর্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং অথর্বশির উপনিষদে বর্ণিত শির-ব্রত(হবনের শ্বেত ভস্ম ত্রিপুণ্ড্র তিলকের ব্রত) ধারণ করেন, সেই ব্যক্তিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যা লাভের জন্য উপযুক্ত, অন্য কেউ নয় ।


ব্যাখ্যা — অথর্ববেদের অন্তর্গত “শির উপনিষদ” -এ পাশুপতব্রত করার নির্দেশ রয়েছে, যজ্ঞের অগ্নির মাধ্যমে হ‌ওয়া ভস্ম কপালে ধারণ করলেই তা পাশুপতব্রত বা শিরব্রত বলে অভিহিত হয়। বেদ অনুযায়ী পাশুপত ব্রতের ভস্মধারণ সম্পূর্ণ বৈদিক । কারণ, মুণ্ডক উপনিষদ স্পষ্ট করেই বলছে যে, শাস্ত্র অধ্যয়ন করে, শাস্ত্র মেনে, ব্রহ্মে অর্থাৎ শিবের প্রতি মন সমর্পণ করে, যজ্ঞ করে তার অগ্নিস্বরূপ ভস্ম শির অর্থাৎ মস্তক বা কপালে ধারণ করে - এমন ব্যক্তিই ব্রহ্মবিদ্যা অর্থাৎ আত্মজ্ঞান লাভের যোগ্য ব্যক্তি।


হাস্যকর বিষয় হল, দয়ানন্দ সরস্বতী বলছেন ঈশ্বরের নাম না নিলে নাকি ব্রহ্মচর্য ভালোভাবেই পালন হতো। ঈশ্বরের নামে নাকি পাপ যায় না, তা বলি ঈশ্বরর নামে যদি পাপ দূর না হয় তাহলে কি আপনার বাতাসের দূর্গন্ধ দূর করবার জন্য অনুষ্ঠিত ঐ হোম করলেই পাপ দূর হয়ে যাবে ?


আপনিই প্রথম সমুল্লাসে বলেছিলেন, ঈশ্বরের নাম শিব, গণেশ ইত্যাদি, তাহলে সেই ঈশ্বরের নামের কোনো মহিমা নেই ? 

তাহলে আপনাদের আর্যসমাজীরা চ্যালারা হে সৃষ্টি কর্তা আমাদের প্রেরণা দিন বলে বৃথা প্রার্থনা করে কেন ? 

বেদ মন্ত্রে উল্লেখিত ঈশ্বরের নামে বৃথাই কেন এত ভাসন দেয় আপনার গোয়ার শিষ্য গুলো ?


মানুষ ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করবে না তোকে আপনার নাম উচ্চারণ করবে ? আপনার এই সত্য নাশ প্রকাশের নাম উচ্চারণ করবে ? 


আপনারা তো ঈশ্বরের নামের মহিমাকেও অস্বীকার করে বসে আছেন। এই অবস্থায় আপনাদের তো মনু সংহিতা অনুসারে শুধু বৈড়ালব্রতধারীই বলা যুক্তিযুক্ত। যারা ধার্মিক হবার বেশ ধারণ করে মানুষকে ঠকিয়ে বেড়াচ্ছে।

ধিক্কার জানাই দয়ানন্দ সরস্বতী আপনাকে আর আপনার অন্ধভক্ত আর্যসমাজীদের, যারা নিরপেক্ষ বিচার করবার সৎ সাহস হারিয়ে ফেলেছে।


অর্থাৎ, দয়ানন্দ সরস্বতী আপনি নিজেও মূর্খ অন্যদেরও মূর্খ বানাচ্ছেন আর আপনার দ্বারা প্রচারিত এই আর্য সমাজের মতবাদ কলিযুগের বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে, তা না হলে এই ধরনের কুরুচিকর মতবাদ সৃষ্টি করতে পারতেন না।

  সকল পাঠকবৃন্দের উদ্দেশ্যে আমি বলছি -  নিরপেক্ষ বিচারের দ্বারা যা সত্য, তার পক্ষ অবলম্বন করবেন ।


পরমেশ্বর শিবের কৃপায়, শৈব আচার্য তথা গুরুদেবের কৃপায় সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাস খণ্ডন সম্পূর্ণ করা হল।

তারিখ - 18/10/2025

সময় - 08 : 56 pm

 পরবর্তী  ৪র্থ‌ সমুল্লাসের খণ্ডন বিষয়ক প্রবন্ধ টি আসছে.... অপেক্ষা করুন ।

🚩ॐ নমঃ শিবায় 🚩 শ্রীনন্দীকেশ্বরায় নমঃ 🚩 শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 হর হর মহাদেব 🚩

     ------------------------ইতি সত্যার্থপ্রকাশান্তর্গত তৃতীয় সমুল্লাস খণ্ডন সমাপ্ত----------------------





মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ