শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধ দূর করবার জন্য হোমযজ্ঞ করে আর্যসমাজ

 


ভূমিকা —

 দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা, দয়ানন্দ সরস্বতী সর্বত্র বলে বেরিয়েছেন তিনি বেদ মানেন, বেদের বাইরে আর কোনো কিছু তিনি মানেন না, যারা পুরান শাস্ত্র সহ বেদকে মানেন - সেই ব্যক্তিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দয়ানন্দ সরস্বতী ও তার অনুসারী আর্য সমাজীরা পৌরাণিক বলে অবজ্ঞা করেন। পৌরাণিকেরা নাকি কাল্পনিক কাহিনী রচনা করে বৃথাই পূজার্চনা করেন, দেবদেবীর প্রতিমাপূজকেরা সকলেই নাকি বেদ বিরুদ্ধ । অথচ দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই আর্যসমাজীদের জন্য যে হোমযজ্ঞ করবার বিধি লিখেছেন সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৯নং পৃষ্ঠায়। সেখানেই রয়েছে সবচেয়ে বড় বেদ বিরুদ্ধ কাল্পনিক রচনা, যা স্বয়ং দয়ানন্দ সরস্বতী জী নিজেই লিখেছেন।

আর বর্তমানে বোধবুদ্ধি হারিয়ে যাওয়া কিছু অজ্ঞ ব্যক্তি এই আর্যসমাজীদের দলে নাম লিখিয়ে সেই পুতুল খেলার মতো হোমযজ্ঞ করে চলেছে। যারা আর্য সমাজ সম্পর্কে কিছুই জানেনা সেই সব মানুষ এই আর্য সমাজীদের করা হোমযজ্ঞ দেখে আপাত দৃষ্টিতে ধারণা করে যে, আর্যসমাজ কত সুন্দর ধর্ম পালন করছে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সুন্দর হোম যজ্ঞ করছে।

কিন্তু, প্রকৃত সত্য অন্য কিছু, চলুন সেই সত্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কথা দিচ্ছি, সম্পূর্ণ বিষয়টি ধৈর্য্য ধরে পড়ে বুঝে নিয়ে আপনি চরম বিনোদন পাবেন। কারণ দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই নিজেকে সেই বিনোদন দাতা পর্যায়ে নামিয়েছেন।

_______________________________________________



॥ হোমের উদ্দেশ্য প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের তৃতীয় সমুল্লাসের ২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী জী লিখেছেন,

প্রশ্নঃ- হোম করিলে কি উপকার হয়?

উত্তরঃ- সকলেই জানে যে দুর্গন্ধময় বায়ু ও জল হইতে রোগ জন্মে, রোগ হইতে প্রাণীদিগের দুঃখ হয়। সুগন্ধিত বায়ু ও জল দ্বারা আরোগ্য এবং রোগনাশ হওয়ায় সুখ লাভ হয়।

প্রশ্নঃ- চন্দনাদি ঘর্ষণ করিয়া কাহারও দেহে লেপন করিলে অথবা ঘৃতাদি ভক্ষণ করিতে দিলে বহু উপকার হয়। সেই ঘৃত অগ্নিতে বৃথা নিক্ষেপ করিয়া নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কার্য্য নহে।

উত্তরঃ- পদার্থবিদ্যা বিষয়ে তোমার জ্ঞান থাকলে এরূপ কথা কখনও বলিতে না, কারণ কোনও দ্রব্যের কদাপি অভাব হয় না। দেখ, যে স্থানে হোম হয়, সেই স্থান হইতে দুরস্থ ব্যক্তি নাসিকা দ্বারা সুগন্ধ গ্রহণ করে এইরূপে দুর্গন্ধও হোক গ্রহণ করিয়া থাকে। ইহা দ্বারাই বুঝিয়া লও যে, অগ্নিতে অর্পিত পদার্থ সূক্ষাকারে বিস্তৃত হইয়া বায়ুর সহিত দূর দেশে বিস্তৃত হইয়া দুর্গন্ধ নাশ করে।

প্রশ্নঃ- যদি এইরূপই হয়, তবে কেসর, কস্তুরী, সুগন্ধ পুষ্প এবং আতর প্রভৃতি গৃহে রাখিলে বায়ু সুগন্ধময় হইয়া সুখকর হইবে।

উত্তরঃ- সুগন্ধিত দ্রব্যাদির এরূপ সমর্থ্য নাই যে, গৃহের বায়ুকে সে বাহির করিয়া বিশুদ্ধ বায়ু প্রবেশ করাইবে। কারণ ইহাতে ভেদক শক্তি নাই, কিন্তু ঐ বায়ু এবং দুর্গন্ধময় পদার্থকে ছিন্নভিন্ন এবং হালকা করিয়া বাহির করিবার তথা পবিত্র বায়ু প্রবেশ করাইবার সামর্থ্য অগ্নিরই আছে।

প্রশ্নঃ- তবে মন্ত্রপাঠ করিয়া হোম করিবার প্রয়োজন কী?

উত্তরঃ- মন্ত্র সমূহে যাহা ব্যাখ্যাত আছে উহা দ্বারা হোমানুষ্ঠানের উপকারিতা জানা যায়। আবৃত্তির দ্বারা মন্ত্রগুলো কন্ঠস্থ থাকে। এবং বেদের পঠন ও রক্ষিত হয়।

প্রশ্নঃ- হোম না করিলে কি পাপ হয়?

উত্তরঃ- অবশ্যই হয়। কেননা, মানুষ্যের শরীর হইতে যে পরিমাণ দুর্গন্ধ উৎপন্ন হইয়া জলবায়ুকে দূষণ করে এবং রোগোৎপত্তির কারণ হইয়া প্রাণীদের পক্ষে দুঃখকর হয়, সেই মানুষ্যের সেই পরিমাণ পাপও হইয়া থাকে। এই জন্য সেই পাপ নিবারণার্থ সেই পরিমাণ অথবা তদপেক্ষা অধিক সুগন্ধ বায়ু এবং জলের মধ্যে ছড়াইয়া দেওয়া আবশ্যক। পানাহারের দ্বারা কেবল ব্যক্তি বিশেষের সুখ হইয়া থাকে। কিন্তু একজন লোক যে পরিমাণ ঘৃত এবং সুগন্ধ পদার্থাদি ভোজন করে, সেই পরিমাণ দ্রব্যের হোম দ্বারা লক্ষ লক্ষ লোকের উপকার হইয়া থাকে। কিন্তু যদি মনুষ্য উত্তম ঘৃতাদি উত্তম বস্তু ভোজন না করে তাহা হইলে তাহাদের শারীরিক ও আত্মিক বল বৃদ্ধি হইতে পারে না। অতএব উত্তম ভজ্য এবং পানীয় গ্রহণ করানও আবশ্যক। কিন্তু তদপেক্ষা অধিক পরিমাণে হোম করা উচিত। অতএব হোম করা আবশ্যক।

প্রশ্নঃ- প্রত্যেক ব্যক্তি কত আহুতি দেবে এবং প্রত্যেক আহতির পরিমাণ কত হওয়া উচিত?

উত্তরঃ- প্রত্যেক ব্যক্তি ষোলটি টি করিয়া আহুতি দেবে এবং প্রত্যেক আহতির পরিমাণ নূন্যকল্পে ছয় মাষা ঘৃতাদি হওয়া উচিত। আর যদি অধিক করা হয়, তবে অতি উত্তম এই জন্য আর্য্যবর শিরোমণি মহাশয়, ঋষি, মহর্ষি, রাজা, মহারাজারা অনেক হোম করিতেন ও করাইতেন।

বিশ্বানি দেব সবির্তদুরিতানি পরাসুব । ইয়দ্‌ ভদ্রত্নন্ন আ সুব । (যজু ১০ । ৩)
এই মন্ত্রটি এবং পূর্বোক্ত গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা আহুতি প্রদান করিবে।

অগ্নিহোত্রের জন্য কোন ধাতু অথবা মৃত্তিকা নির্মিত বেদী(যজ্ঞকুণ্ড) এইরূপে প্রস্তুত করিবেঃ- বিধির উপরিভাগ দ্বাদশ অথবা ষোড়শ অঙ্গুলি (চতুষ্কোণ) , থাকিবে অর্থাৎ উপরিভাগ যে পরিমাণ প্রশস্ত হইবে, নিম্ন ভাগ তাহার এক চতুর্থাংশ হইবে। উহাতে চন্দন, পলাশ অথবা আম্র প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ কাষ্ঠ খন্ড সমূহ সেই বেদীর পরিমাণে ছোট বড় করিয়া রাখিবে তন্মধ্যে অগ্নি স্থাপন করিয়া পুনরায় উহাতে সুবিধা অর্থাৎ পূর্বোক্ত ইন্ধন রাখিয়া দিবে।
_________________________________________________

❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

বাহ! স্বামী জীঃ !  আপনাদের নিয়োগী চ্যালারা বলে বেড়ায় যে, আপনি দয়ানন্দ সরস্বতী জী নাকি হাজার হাজার গ্রন্থের অধ্যয়ন করে তথাকথিত গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ রচনা করেছেন,  কিন্তু আপনি হাজারো গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছেন - এটা শুধু ফাঁকা আওয়াজ মাত্র, আপনার বেদজ্ঞতা সম্পর্কে কতটা জ্ঞান আছে, তা এখানে প্রমাণ হয়ে যায়। কারণ, আপনি হোমযজ্ঞ করতে করতে যে মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘৃত দ্বারা আহুতি দেওয়ায় কি ফল লাভ হয় সে বিষয়ে বেদ থেকে একটা প্রমাণ দেখাতে পারলেন না। 

আপনি শুধু বলেছেন, হোমযজ্ঞ করলে নাকি দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু আর জল শুদ্ধ হয়ে যায় 🤣 সেই দুর্গন্ধ কিভাবে আসে ? আপনি বলেছেন, মানুষের শরীর থেকে আসে, অর্থাৎ আপনার কথা অনুযায়ী — মানুষের শরীর বগল ইত্যাদি থেকে বের হ‌ওয়া ঘাম বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়, মানুষের মুখ থেকে দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়ায়, মানুষের মলদ্বার থেকে বের হ‌ওয়া পশ্চাৎ দেশের বায়ু ‘পাদ’ থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় 🤣
তা বেশ ! কিন্তু আপনি বলছেন, এই দুর্গন্ধ যুক্ত বাতাস থেকে রোগ উৎপন্ন হয়, আর এই রোগ থেকে পাপ জন্মায়, আর এই পাপ দূর করার উপায় হল ঐ দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসের সমান সমান বা তার চেয়েও বেশি সুগন্ধযুক্ত বাতাস ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনার মতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেই নাকি পাপ দূর হয়ে যাবে। আর এতে নাকি জলবায়ু শুদ্ধ হয়ে যাবে । এইসব দুর্গন্ধ দূর করবার জন্য‌ই হোমযজ্ঞ করা হয় বলে আপনি দাবী করেছেন। 
তাহলে, আপনি যখন এই কথা গুলি হোমযজ্ঞ করবার ফল হিসেবে দাবী করেছেন, তাহলে আপনার মতানুসারে ‘হোমযজ্ঞ করলে যে ফল লাভ হয় তা বেদ থেকে তো দেখাতে পারতেন’ এই বিষয়ে বেদ থেকে অন্তত একটি প্রমাণ তো দেখাতে পারতেন। কিন্তু একটিও প্রমাণ আপনি দেখাতে পারলেন না। তাহলে এটি কি করে বেদ সম্মত মত হল ? — আপনি হোমযজ্ঞের ফলাফল সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা সব‌ই কাল্পনিক, বেদবাহ্য ও বেদবিরুদ্ধ।

হোমের উদ্দেশ্য নাকি মানুষের ঘাম-‘পা দ’ থেকে উৎপন্ন দেহের দুর্গন্ধযুক্ত বায়ুকে সুগন্ধে পরিনত করবার জন্য 🤣

 নিশ্চয়ই আপনি আর আপনার আর্যসমাজী চ্যালাদের অম্বল-গ্যাস ও অজীর্ণ রোগের সমস্যা আছে। আর নিশ্চয়‌ই আপনারা সকালে উঠে মুখ হাত পা ধৌত করেন না, স্নান‌ও করেন না। তাই আপনাদের শরীর থেকে অত্যাধিক পরিমাণে দুর্গন্ধ বের হয় বলেই আপনারা এমন কাল্পনিক বিধি বার করে হোমযজ্ঞের নামে দুর্গন্ধ চেপে দেবার উপায় বার করেছেন, যাতে অন্য মানুষের আপনাদের অপবিত্র শরীরের দুর্গন্ধ টের না পায়। 🤣🤣🤣 ছিঃ ছিঃ ছিঃ দুর্গন্ধ সমাজ।

এমনকি আপনার অগ্নিহোত্র বিধিও বেদ বিরুদ্ধ। যতদূর পদার্থবিদ্যার কথা, তা আপনার পদার্থবিদ্যার দৌড় অষ্টম ও নবম সমুল্লাসে দেখা গেছে, যেখানে আপনি সূর্য, চন্দ্র তারা আদি মানুষের প্রজা এবং আকাশের নীল রং জলের কারণে হয় লিখেছেন তার খণ্ডন সেখানেই করা হয়েছে। আপাতত আপনার পদার্থবিদ্যার খণ্ডন করছি।

 আপনি যে, অগ্নিহোত্রের প্রয়োজন জলবায়ুর শুদ্ধির জন্য বলেছেন, তা আপনারই কল্পিত সিদ্ধান্ত শাস্ত্র এবং যুক্তি উভয়ের বিরুদ্ধে মত পোষণ করে, যদি ঘৃতদ্বারা আহতি প্রদান করলেই শুদ্ধ হয়ে যেত, তবে কেন শুধু মাত্র ষোলটি আহুতি প্রদানের কথা বলা হলো ? 

এর থেকে তো এটা ভালো হতো যে আপনার কোনো আর্যসমাজী চ্যালা — ঘি এর গোদামে(Godown-এ) আগুন লাগিয়ে দিলেই হত যখন এরকম হাজার কোটি সংখ্যক গোদাম একত্রে দাহ করা হবে তখন জলবায়ু অনেক দ্রুত শুদ্ধ হবে এবং তাতে জন মানুষের কল্যান হবে। এখন পদার্থবিদ্যার মহাজ্ঞানী দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনি শুনুন জলবায়ু শুদ্ধ স্বয়ং হতে থাকবে।

 সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্র-নদীর জলে জোয়ার ভাটা হয়, জল হতে বাষ্প উৎপন্ন হয়, তার থেকে মেঘ সৃষ্টি হয়, মেঘ হতে বৃষ্টি হয়, আবার বনে স্বয়ং প্রসফুটিত সুগন্ধিত পুষ্প, ঔষধি আদির উৎপত্তি হয়, বায়ুর প্রসারণ ক্ষমতা সুগন্ধিত পুস্পের পরমাণু বায়ুতে সংমিশ্রিত করে, ঋতু পরিবর্তন হয়, এইসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, এইসব এত‌ই বৃহৎ স্তরে হয় যে, আপনার এসব কাল্পনিক সিদ্ধান্ত ধোপেও টিকবে না।


এখন ভণ্ড দয়ানন্দ সরস্বতীর মতানুসারে “হোমের সময় মন্ত্রের উচ্চারণ নাকি মন্ত্র কন্ঠস্থ করার জন্য। আর ঐ হোমের মন্ত্রে নাকি হোম করবার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়।  ঘৃতের আহুতি জলবায়ু শুদ্ধ করার জন্য,”  আবার গায়েত্রী মন্ত্রের সাথে স্বাহা শব্দ জুড়ে দেওয়া, তাও আবার স্বাহা শব্দের কল্পিত অর্থ ব্যবহার করা, আপনার হোমের তো কোনো যথার্থ অর্থ‌ই রইলো না ।
আর দয়ানন্দ সরস্বতী জী ! আপনার দেওয়া হোমযজ্ঞ করবার আহুতি মন্ত্রে কোথাও “মানুষের গায়ের থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধযুক্ত দূর হয়ে বাতাস শুদ্ধ করে জলবায়ু পরিবর্তন হয়” - এমন উপকারিতার কথা উল্লেখ ই নেই। তাহলে আপনি যে বললেন, হোমযজ্ঞ করবার সময়ে হোমের বেদমন্ত্র পাঠ করলে হোমের উপকারিতা জানা যায়, সেটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কারণ এমন কথা তো আপনার‌ই উক্ত হোম মন্ত্রে নেই। তাহলে আপনার এই হোমকার্যের উদ্দেশ্য ও ফলাফল কি করে বেদ সম্মত হলো ?

সুতরাং, 
হোমযজ্ঞের নামে এসব পুতুল খেলার মতো — অহেতুক ঘিয়ের অপচয় করা ছাড়া আর কিছুই করেন না।

প্রথমে স্বামীজি ঝুটি বাঁধলেন তারপর জপ করলেন, তারপর ফুক ঝাড়লেন, এমনকি দয়ানন্দের অনুসারী আর্যসমাজীরা মৃত ব্যক্তির অন্তিম সংস্কারেও গায়ত্রী মন্ত্রের প্রয়োগ করে ।

 দেখুন পাঠক বৃন্দ এক গায়ত্রী মন্ত্রের  দ্বারা দয়ানন্দ সরস্বতী কত লাভ করে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে যখন আরও বিদ্যার উৎপত্তি হবে তখন তিনি এর সাথে ইঞ্জিন লাগিয়ে দয়ানন্দ জী রেল চালাবেন, পাখনা লাগিয়ে জাহাজ উড়াবেন ।


যদি বায়ু শুদ্ধ করা ই হোমযজ্ঞের - এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে কেন শুধুমাত্র সকালে ও বৈকালিক সন্ধ্যা কালে  সন্ধ্যার নিয়ম পালনের সময় ঘি দিয়ে হোমযজ্ঞ করবার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হবে ??

আপনাদের যদি বায়ু শুদ্ধ করাটাই উদ্দেশ্য হয় - তাহলে তো যখন খুশি আগুনে ঘি প্রজ্বলিত করা যায়,  আপনাদের তো স্নান করার‌ও কোন আবশ্যকতা নেই,  যখন ইচ্ছে করবে তখন‌ই আগুনে ঘি ঢেলে দিলেই হবে।🥴

 🔷 আবার সত্যার্থ প্রকাশ এর ২৮ তম পৃষ্ঠায়  আপনি লিখেছেন যে, 
 “এইরূপ একটি প্রোক্ষণী পাত্র, এইরূপ প্রণীতা পাত্র,  এবং  এই প্রকারের আর  একটি আজস্থালী  অর্থাৎ ঘৃত রাখিবার পাত্র এবং এইরূপ চমসা-  স্বর্ণ, রৌপ্য অথবা কাষ্ঠ নির্মিতও  হইতে পারে। প্রণীতা ও প্রোক্ষণীতে  জল থাকিবে এবং এইভাবে আজ্যস্থলীতে  অর্থাৎ ঘৃত পাত্রে ঘৃত  রাখিয়া উহাকে  তপ্ত করিয়া লইবে।  জল রাখিবার জন্য প্রণীতা এবং প্রোক্ষণী  এই জন্য যে,  ইহা দ্বারা হস্ত প্রক্ষালনের  জল লইবার সুবিধা হয়।”

        এইসব সোনা-রূপা ইত্যাদি ধাতু দিয়ে চমসা তৈরী, প্রোক্ষণী পাত্র, আজ্যপাত্র ইত্যাদি ইত্যাদি আরম্বর সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করবার বিধান তো আপনি অযথাই লিখেছেন। 
কারণ, আপনার মতানুসারে মন্ত্র উচ্চারণ করলে মন্ত্র কন্ঠস্থ হয়, তাই বৃথা হোম করে পরিশ্রম করে সময় ব্যয় না করে মন্ত্র কন্ঠস্থ করা যেতে পারে, আবার শুধুমাত্র হোম করে মন্ত্র গুলো কন্ঠস্থ করার কোন যৌত্তিকতা নেই, তার উপর স্বাহা যুক্ত করার কোন আবশ্যকতা নেই। শুধু আগুনে ঘি ঢেলে দিলেই বাতাস শুদ্ধ ও সুগন্ধযুক্ত হয়ে উঠবে। 😆😂🤣

সব থেকে হাস্যকর হল, দয়ানন্দ সরস্বতী জী বলছেন, দুর্গন্ধ হল পাপ। মন্ত্র পাঠ করলে কি হয় ?   মন্ত্র পাঠ করলে মন্ত্র মুখস্ত থাকে। মন্ত্র মুখস্ত কেন করবো ? মন্ত্র পাঠ করলে মন্ত্রের উপকারীতা জানা যায়, উপকারিতা টা কি ? বাতাস থেকে দুর্গন্ধ দূর হয় ।  তাই মন্ত্র আবৃত্তি করলে বেদ মন্ত্র মুখস্ত থাকে। মুখস্ত কেন করবো ? পাঠ করবার জন্য। পাঠ করলে কি হয় ? মন্ত্র মুখস্ত থাকে 😂
দুর্গন্ধ বাতাস দূর করবার জন্য নাকি বেদের মন্ত্র পাঠ করে এত ঘটা করে হোমযজ্ঞ করা হয়। 

 আর্যসমাজীরা আবার আমাদের প্রতিমাপূজক বলে হাসে, পৌরাণিক বলে হাসে। অথচ, এরা নিজেদের এইসব পাগলাগারদ যেন চোখেই দেখতে পায় না, এদের মস্তিস্ক তখন বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। অথচ, দয়ানন্দের দেওয়া এইসব কাল্পনিক গল্প কে আর বেদবিরুদ্ধ অশাস্ত্রীয় গাঁজাখুরি গল্প বলে মনে হয় না। 


 শুনুন! স্বামী অজ্ঞানী জী ! 
 হোমযজ্ঞের দ্বারা কেবল মাত্র জলবায়ুর শুদ্ধি ও মন্ত্র উচ্চারণের দ্বারা তা করার সিদ্ধান্ত একদম ভুল কথা। কারণ, হবনে (হোম-যজ্ঞে) ঘৃত দ্বারা আহুতি প্রদান করা ও মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা সুখ, ধৈর্য্য, ধান্য, রক্ষা, সামর্থ্য প্রাপ্তি এবং পাপ নষ্ট হয়  তার সাথে স্বর্গ প্রাপ্তি হয়
 দেখুন আপনাকে বেদ হতে প্রমাণ দেখাচ্ছি —

প্রথমে ঘৃত দ্বারা হবন করার ফলের বর্ণনা করা হচ্ছে —

বিতিহোত্রং ত্বা কবে দ্‌যুমন্তম্‌ সম্‌ ইধীমহি। অগ্রে বৃহন্তম্‌ অধ্বরে ।।৪।।

ঘৃতাচ্য্‌ অসি গুহূর্‌ নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ঘৃতাচ্য্‌ অস্য উপভৃন্‌  নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ঘৃতাচ্য্‌ অসি ধ্রুবা নাম্না সেদং প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

প্রিযেণ ধাম্না প্রিযম্‌ সদ ঽ আ সীদ ।

ধ্রুবা ঽ অসদন্ন ধতস্য যোনৌ তা বিষ্ণো পাহি । পাহি যজ্ঞং । পাহি যজ্ঞপাতিম্‌ ।

পাহি মা যজ্ঞন্যম্‌ ।। ৬ ।।

  [শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ২, মন্ত্র ৪,৬]

অর্থ — ভূত-ভবিষ্যতের জ্ঞাতা ক্রান্তাদর্শী অগ্নিদেব! ঐশ্বর্য প্রাপ্তির কামনা কারী তেজস্বী, মহান, যাজক যজ্ঞে আপনাকে সমিধা দ্বারা প্রজ্বলিত করছি ।।৪।।

হে জুহু! আপনি আপনার প্রিয় ঘৃত দ্বারা পূর্ণ হয়ে এই যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত হোন, হে উপভৃত! আপনি ঘৃত দ্বারা যুক্ত হয়ে আপনার পিয় যজ্ঞস্থলে স্থাপিত হোন, হে ধ্রুবা ! আপনি আপনার প্রিয় ঘৃত দ্বারা সিঞ্চিত হয়ে যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত হোন, হে যজ্ঞ-স্থলে প্রতিষ্ঠিত বিষ্ণুদেব! আপনি যজ্ঞ-স্থলে স্থাপিত সমস্ত সাধন, উপকরণ, যজ্ঞকর্তা এবং আমাদের রক্ষা করুন ।।৬।।

সমিধাগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্‌ বোধযতাতিথিম্‌ ।

আস্মিন্‌ হব্যা জুহোতন ।। ১।।

সুসমিদ্ধায শোচিষে ঘৃতং তীব্রং জুহোতন ।

অগ্রযে জাতবেদসে ।।২।।

তং ত্বা সমিদ্ভির্‌ অঙ্গিরো ঘৃতেন বর্ধযামসি ।

বৃহচ্ছোচা যবিষচ্য ।। ৩।।

উপ তাগ্রে হবিষ্মতীর্‌ ঘৃতাচীর্‌ যন্তু হর্যত ।

জুষস্ব সমিধো মম ।। ৪।।

 [শুক্ল-যর্জুবেদ/অধ্যায় ৩, মন্ত্র ১-৪]

অর্থ — হে ঋত্বিজ! আপনি ঘৃতসিক্ত সমিধা দ্বারা (যজ্ঞ) অগ্নিকে প্রজ্বলিত করে, ঘৃতের আহুতি প্রদান করে সব কিছু আত্মসাৎকারী অগ্নিদেবকে প্রদীপ্ত করো এবং অনেক প্রকারের দ্রব্য পদার্থ দ্বারা যজ্ঞ করতে করতে উনাকে প্রদীপ্ত যুক্ত কর ।। ১।।

হে ঋত্বিজ ! সুপ্রজ্বলিত জাজ্বল্যমান, সর্বত্র (জাতবেদ) দোদীপ্যমান যজ্ঞাগ্নিতে শুদ্ধ ঘৃত দ্বারা আহূতি প্রদান কর ।। ২।।

হে প্রদীপ্ত অগ্নিদেব! আমার আপনাকে ঘৃত (এবং তাতে সিক্ত) সমিধা দ্বারা উদ্দীপ্ত করছি, হে নিত্যরূপা (তেজস্বী) অগ্নিদেব! (ঘৃত আহূতি প্রাপ্ত হওয়ার পর) আপনি উচ্চ শিখাগ্নির মাধ্যমে প্রকাশ যুক্ত হোন ।।৩।।

হে অগ্নিদেব! আপনাকে হবি-দ্রব্য এবং ঘৃত সিক্ত সমিধার প্রাপ্তি নিরন্তর হোক, হে দীপ্তিমান অগ্নিদেব! আপনি আমাদের দ্বারা সমর্পিত সমিধা গুলো স্বীকার  করুন ।। ৪।।

ঘৃতং মিমিক্ষে ঘৃতম্‌ অস্য যোনির্‌ ঘৃতে শ্রিতো ঘৃতম্‌ ব্‌ অস্য ধাম্‌ ।

অনুষ্বধম, আ বহ মাদযস্ব স্বাহাকৃতং বৃষভ বক্ষি হব্যম্‌ ।।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭/মন্ত্র ৮৮]

অর্থ - এই ঘৃত এই অগ্নির উৎপত্তির শান, ঘৃত উওনাকে তীক্ষ্নতা প্রদান করে, অগ্নি এই ঘৃতের আশ্রিত হয়ে, অতএব আমি এই অগ্নির মুখে ঘৃত সিঞ্চনের ইচ্ছা প্রকট করি, হে অধ্বরযে! হবি সংস্কারের পর অগ্নি আহবান করো, এবং যখন তিনি তৃপ্ত হবে তখন তাতে হব্যের দ্রব্যাদি দেবতাদের নিকট পৌছানোর জন্য নিবেদন করো।

অভি প্রবন্ত সমনেব যোষাঃ কল্যাণ্যঃ স্মযামানা সো ঽ অগ্নিম্‌ ।

ঘৃতস্য ধারাঃ সমিধো নসন্ত তো জষাণো হর্যতি জাতবেদঃ ।। 

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭/মন্ত্র ৯৬]

অর্থ — ঘৃতের ধারা অগ্নিতে ঢেলে, সমিধা ব্যাপ্ত করে, অগ্নিতে সুসংগত করে, ওই জাতবেদা অগ্নিতেই সেই ঘৃতের ধারাকে প্রাপ্ত করতে বারংবার ইচ্ছা প্রকাশ করে ।

অভ্য অর্ষত সুষ্টুতিং গব্যম্‌ আজিম্‌ অস্মাসু ভদ্রা দ্রবিণানি ধও ।

ইমং যজ্ঞং নযত দেবতা নো ঘৃতস্য ধারা মধুমত্‌ পবন্তে ।। 

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৭/মন্ত্র ৯৮]

অর্থ — হে দেব! আপনি শ্রেষ্ঠ স্তুতি ও ঘৃত যুক্ত এই যজ্ঞে আসুন, এই মধুময় ঘৃতের ধারা বর্ষণ হচ্ছে, এই আহূতিকে স্বর্গ লোকে প্রাপ্ত করান, এবং আমাদের সর্ব প্রকার ধন- ঐশ্বর্য প্রদান করুন।


এবার দেখুন, মন্ত্র পড়ে হোম করার ফলঃ-

বিশ্বেঽঅদ্য মরুতো বিশ্বঽঊতী বিশ্বে ভবন্ত্ব ্‌ অগ্রযঃ সমিদ্ধাঃ ।

বিশ্বে নো দেবাঽঅবসা গমন্তু বিশ্বম্‌ অস্তু দ্রবিণং বাজো ঽ অস্মে ।।

 [শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৮/মন্ত্র ৩১]

অর্থ — আমাদের এই যজ্ঞতে আজ সমস্ত মরুদ্ গণ আপনারা আসুন, সমস্ত গণদেবতা ও রুদ্রদেব এবং আদিত্য আপনারাও আসুন, বিশ্বদেবতাও আমাদের হবি গ্রহণ করার জন্য আসুন,  সমস্ত অগ্নি প্রদীপ্ত হোক, এবং আমাদের ঐশ্বর্য ও অন্নের প্রাপ্তি হোক।

আযুর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং প্রাণো যজ্ঞেন কল্পতাং চক্ষর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ শ্রোত্রং যজ্ঞেন কল্পতাং বাগ্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং মনো যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ আত্মা যজ্ঞেন কল্পতাং ব্রহ্মা যজ্ঞেন কল্পতাং জ্যোতির্‌ যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ স্বর্‌ যজ্ঞেন কল্পতাং পৃষ্ঠং যজ্ঞেন কল্পতাং যজ্ঞো যজ্ঞেন কল্পতাম্‌ । স্তোমশ্‌ চ যজুশ্‌ চ ঽ ঋক্‌ চ সাম চ বৃহচ্‌ চ রথন্তরং চ । স্বর্‌ দেবা ঽ  অগন্মামৃতা ঽ অভূম্ প্রজাপ্তেঃ প্রজা ঽ অভূম বেট্‌ স্বাহা ।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৮/মন্ত্র ২৯]

অর্থ — এই যজ্ঞের ফলস্বরূপ আমাদের আয়ু বৃদ্ধি হোক, যজ্ঞের প্রসাদে আমাদের প্রাণ রোগমুক্ত হোক, যজ্ঞের প্রভাবে আমাদের চোখে জ্যোতি আসুক, আমাদের কান ও বাক্‌শক্তি উন্নতি লাভ করুক, যজ্ঞের প্রভাবে আমাদের মন সুস্থ ও শান্ত হোক, যজ্ঞের ফলস্বরূপ আমাদের মন-আত্মা আনন্দে ভরে উঠুক, যজ্ঞের কৃপায় আমরা শাস্ত্রসমূহের প্রতি প্রেম অনুভব করি, যজ্ঞের প্রভাবে আমরা পরম জ্যোতিরূপ ঈশ্বরের উপলব্ধি লাভ করি, যজ্ঞের ফলে আমরা স্বর্গে গমন করতে পারি, যজ্ঞের প্রভাবে আমি মহাযজ্ঞ সম্পাদন করতে সক্ষম হই, স্তোম, যজুঃ, ঋক্‌, সাম, বৃত্‌ত সাম এবং স্থান্ত‌র সাম — সবই যজ্ঞের প্রভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করুক, এই যজ্ঞের ফলেই আমরা দেবত্ব লাভ করে স্বর্গে পৌঁছাই, প্রজাপতি পরমাত্মার প্রজারূপে সুখ ভোগ করি। এই অভিলাষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই বিশেষ আহুতি অর্পণ করা হচ্ছে — সকল দেবতা একে গ্রহণ করুন॥


বাজশ্‌ চ মে প্রসবশ্‌ চ মে প্রযতিশ্‌ চ মে প্রসিতিশ্‌ চ মে ধীতিশ্‌ চ মে ক্রতুশ্‌ চ মে স্বরশ্‌ চ মে শ্লোকশ্‌ চ মে শ্রবশ্‌ চ মে শ্রুতিশ্‌ চ মে জ্যোতিশ্‌ চ মে স্বশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১।।

প্রানশ্‌ চ মে ঽপানশ্‌ চ মে ব্যানশ্‌ চ মে ঽসুশ্‌ চ মে চিত্তং চ মে ঽআধীতং চ মে বাক্‌ চ মে মনশ্‌ চ মে চক্ষুশ্‌ চ মে শ্রোত্রং চ মে দক্ষশ্‌ চ মে বলং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।২।।

ওজস্‌ চ মে সহশ্‌ চ ম ঽ আত্মা চ মে অনূশ্‌ চ মে শর্ম চ মে বর্ম চ মে ঽঙ্গানি চ মে ঽস্থীনি চ মে পরূম ষি চ মে শরীরাণি চ ম ঽ আযুশ্‌ চ মে জরা চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৩।।

জৈষ্ঠ্যং চ মে ঽ আধিপত্যং চ মে মনুয়শ্‌ চ মে ভামশ্‌ চ মে ঽমশ্‌ চ মে ঽম্ভশ্‌ চ মে মহিমা চ মে বরিমা চ মে প্রথিমা চ মে বর্ষিমা চ মে দ্রাঘিমা চ মে বৃদ্ধং চ মে বৃদ্ধিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৪।।

সত্যং চ মে শ্রদ্ধা চ মে জগচ্‌ চ মে ধনং চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্‌ চ মে ক্রীডা চ মে মোদশ্‌ চ মে জাতাং চ মে জনিষ্যমাণং চ মে সূক্তং চ মে সুকৃতং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৫।।

ঋতং চ মে ঽমৃতং চ মে ঽযক্ষমং চ মে ঽনামযচ্‌ চ মে জীবাতুশ্‌ চ মে দীর্ঘাযুত্বং চ মে ঽনামিত্রং চ মে ঽভযং চ মে সুখং চ মে শযনং চ মে সূষাশ্‌ চ মে সুদিনং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৬।।

যন্তা চ মে ধর্তা চ মে ক্ষেমশ্‌ চ মে ধৃতিশ্‌ চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্‌ চ মে সংবিচ্‌ চ মে জ্ঞাত্রং চ মে সূশ্‌ চ মে প্রসূশ্‌ চ মে সীরং চ মে লযশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৭।।

শং চ মে মযশ্‌ চ মে প্রিযং চ মে ঽনুকামশং চ মে কামশ্‌ চ মে সৌমনসশ্‌ চ মে ভগশ্‌ চ মে দ্রবিণং চ মে ভদ্রং চ মে শ্রেযশ্‌ চ মে বসীযশ্‌ চ মে সশশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।৮।।

ঊর্ক চ মে সূনৃতা চ মে পযশ্‌ চ মে রসশ্‌ চ মে ঘৃতং চ মে মধু চ মে সগ্ধিশ্‌ চ মে সপিতিশ্‌ চ মে কৃষিশ্‌ চ মে বৃষ্টিশ্‌ চ মে জৈত্রং চ মে ঽ ঔদ্ভিদ্যং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ৯।।

রযিশ্‌ চ মে রাযশ্‌ চ মে পৃষ্টং চ মে পুষ্টিশ্‌ চ মে বিভু চ মে প্রভু চ মে পূর্ণং চ মে পূর্বতরং চ মে কুযবং চ মে ঽক্ষিতং চ মে ঽন্নং চ মে ঽক্ষুচ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১০।।

বিত্তং চ মে বেদ্যং চ মে ভূতং চ মে ভবিষ্যচ্‌ চ মে সুগং চ মে সুপথ্যং চ মে ঽ ঋদ্ধং চ ম ঽ ঋদ্ধিশ্‌ চ মে ক্লৃপ্তং চ মে ক্লৃপ্তিশ্‌ চ মে মতিশ্‌ চ মে সুমতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১১।।

ব্রীহযশ্‌ চ মে যবাশ্‌ চ মে মাষাশ্‌ চ মে তিলাশ্‌ চ মে মুদ্রাশ্‌ চ মে খল্বাশ্‌ চ মে প্রিযঙ্গবশ চ মে ঽণবশ্‌ চ মে শ্যামাকাশ্‌ চ মে নীবারাশ্‌ চ মে গোধূমাশ্‌ চ মে মসূরাশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১২।।

অশ্মা চ মে মৃত্তিকা চ মে গিরযশ্‌ চ মে পর্বতাশ্‌ চ মে সিকতাশ্‌ চ মে বনস্পতযশ্‌ চ মে হিরণ্যং চ মে যশ্‌ চ মে শ্যামং চ মে লোহং চ মে সীসং চ মে ত্রপু চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৩।।

অগ্নিশ্‌ চ মে ঽ আপশ্‌ চ মে বীরুধশ্‌ চ ম ঽ ওষধযশ্‌ চ মে কৃষ্টপচ্যাশ্‌ চ মে ঽ কৃষ্টপচ্যাশ্‌ চ মে গ্রাম্যাশ্‌ চ মে পশব ঽ আরণ্যাশ্‌ চ মে বিত্তং চ মে বিত্তিশ্‌ চ মে ভূতং চ মে ভূতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৪।।

বসু চমে বসতিশ্‌ চ মে কর্ম চ মে শক্তিশ্‌ চ মে ঽর্থশ্‌ চ ম ঽ ক্রমশ্‌ চ ম ঽ ইত্যা চ মে গতিশ্‌ চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্‌ ।।১৫।।

[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৮, মন্ত্র ১-১৫ নং মন্ত্র]

অর্থ — এই যজ্ঞ হতে আমাদের জন্য অন্য-সম্পদা, ঐশ্বর্য, পুরুষার্থ পরায়ণতা, প্রবন্ধ ক্ষমতা, কর্তব্য শক্তি, স্বর, শ্রবণ ক্ষমতা, তেজস্বীতা এবং আত্মশক্তি প্রাপ্ত হোক ।।১।।

আমাদের এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ প্রাণ, অপান, ব্যান, মানস, সঙ্কল্প, ব্রহ্ম, জ্ঞা্‌ বাণী-সামর্থ্য, মন, চক্ষু, শ্রোত্র,  জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং বলের প্রাপ্তি হোক ।।২।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের ওজ,  বল,  আত্মজ্ঞান, শরীর পুষ্টি, কল্যা্‌ কবচ, অঙ্গের দৃঢ়তা, অস্থি আদির  দৃঢ়তা, অঙ্গুলি আদির  দৃঢ়তা, আরোগ্য, প্রবৃদ্ধতা,  এবং আয়ুর প্রাপ্তি হোক ।।৩।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের শ্রেষ্ঠতা স্বামিত্ব, বাহ্যকোপ,  আন্তরিক কোপ, অপার মেধা, মধুর জল, বল, মহিমা, বলিষ্ঠতা, দীর্ঘ জীবন, বংশ পরম্পরা, ঐশ্বর্য এবং বিদ্যাদিগুণ উৎকৃষ্টতার  প্রাপ্তি হোক ।।৪।।

 এই যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের সত্য শ্রদ্ধা স্থাবর, জঙ্গম যুক্ত জগৎ, মহতা ক্রীড়া, মোদ,  আপত্যাদি, ঋচাত্রং এবং ঋচাওং দ্বারা শুভ ভবিষ্যতের  প্রাপ্তি হোক ।।৫।।

 আমাদের যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফল স্বরূপ স্বর্গ প্রাপ্তি, রোগাভাব, ব্যাধির অভাব, ঔষধি শত্রুর অভাব,  অভয়, আনন্দ, সুখ, শৌর্য,  শ্রেষ্ঠ প্রভাত এবং যোগ্য দান আদি কর্ম দ্বারা কল্যাণকারী দিবস দেবতাদের প্রাপ্ত হোক ।।৬।।

 এই যজ্ঞের ফল আমাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, প্রজা-পালন-সামর্থ্য, ধন-রক্ষা-সামর্থ্য,  ধৈর্য্য,  সমস্অত কিছুর অনুকূলতা, শাস্ত্র-জ্ঞান, বিজ্ঞান বল, অপত্যাদির  সামর্থ্য, কৃষি আদির জন্য উপযুক্ত সাধন, অনাবৃষ্টির অভাব, ধন ধান্যাদি প্রাপ্তি ।।৭।।

 আমাদেরই ইহলকের সুখ প্রাপ্ত হোক, পরলোকের সুখ প্রাপ্ত হোক, প্রসন্নতা প্রদানকারী পদার্থ আমাদের অনুকূল হোক, আমরা ইন্দ্রিয় সম্বন্ধী সমস্ত সুখ ভোগ করি, আমাদের মন সুস্থ থাকুক আমরা সৌভাগ্যশালী হয়ে ধন প্রাপ্ত করি, আমাদের শ্রেষ্ঠ নিবাস যুক্ত ঘর ও যশ যজ্ঞের ফল স্বরূপ প্রাপ্ত হোক ।।৮।।

  যজ্ঞের ফল স্বরূপ আমাদের অন্ন, জ্ঞানময় বাণী, দুগ্ধ, রস যুক্ত খাদ্য, ঘৃত, মধু আদি প্রাপ্ত  হোক আমরা নিজেদের স্ত্রীর সহিত মিলিত হয়ে ভোজন করতে পারি বৃষ্টি আমাদের জন্য ধান্য উৎপন্ন করুক,  তথা আমাদের কৃষি সুবিকাশিত ও অনুকুল হোক আমাদের বৃক্ষের বটতরু সুপ্রকাশিত  হোক এবং আমরা বিজয়ের নিমিত্তে উপযুক্ত শক্তি সম্পন্ন হয়ে শত্রু জয়ী হতে পারি  ।।৯।।

যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের সম্পদা, আমাদের ঐশ্বর্য এই প্রকার পুষ্ট হোক, শরীর আদির সব প্রকারের পুষ্টিপ্রাপ্ত করুক আমাদের ব্যাপকতা, প্রভুতা, পূর্ণতা, এবং ধনধান্যে প্রাচুর্যতা, পর্যাপ্ত বৃদ্ধির হোক আমাদের ধান্য ক্ষয় রোহিত অন্ন পুষ্টিকরক অন্ন এবং আমাদের ক্ষুধাতে ো অভিবৃদ্ধহোক ।।১০।।

যজ্ঞাদি বিশেষ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের ধন-ধান্য নিরন্তর অভিবৃদ্ধি হোক পূর্বসঞ্চিত ধন ও ভাবী প্রাপ্ত ধনে বৃদ্ধি হোক, ধন প্রাপ্তির কর্ম সুগম হোক, পথ অবরোধ মুক্ত হো্‌ যজ্ঞীয় সৎকর্ম সমৃদ্ধ হোক আমাদের এই কর্ম শ্রেষ্ঠ দ্রব্য এবং সৎ সমর্থ বর্ধনকারী হোক এই যজ্ঞীয় সৎ পরিনাম আমাদের মতিকে উচ্চতা প্রদান কারী সবার জন্য হিতকারী হোক ।।১১।।

যজ্ঞাদি কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের জন্য ব্রিহি ধান্য, জৌ, উরদ, তিল, মগ, ছোলা, কাঙ্গনী, চাল, গম এবং মসুর, আদি ধান্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক ।।১২।।

যজ্ঞাদি শ্রেষ্ঠ কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের পাষাণ, উত্তম মাটি, ছোট বড় পর্বত, বালি, বনস্পতি, স্বর্ণ, লোহা, তাম্র, আদি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক ।।১৩।।

যজ্ঞের ফলস্বরূপ দেবতাগণ আমাদের জন্য অগ্নি, আকাশীয় জল অনুকূল করুক, গুল্ম, তৃণ, বনস্পতি ঔষধি পূর্ণরূপে বিকশিত হোক এই যজ্ঞ গ্রাম ও জঙ্গলী পশুদের পুষ্ট করুক পূর্ব প্রাপ্ত ভাবী ধন, পুত্রাদি সুখ ও ঐশ্বর্য আদিতে অধিবৃদ্ধি হোক ।।১৪।।

যজ্ঞের ফল স্বরূপ দেবতা গণ আমাদের গবাদি ধন গৃহ সম্পত্তি বিবিধ কর্ম ও যজ্ঞাদি বল প্রাপ্তব্য ধন, ইচ্ছিত পদার্থ প্রাপ্তি করাক, আমাদের সমস্ত কামনা দেবতাদের কৃপায় পূর্ণ হোক।।১৫।।


আরো শুনুন —

অযং নো অগ্নির্‌ বরিবস্‌ কৃণোত্ব ্‌ অযং মৃধঃ পুর ঽত্রতু প্রভিন্দন্‌ ।

অযং বাজান্‌ জযতু বাজসাতাব্‌ অযম্‌ শন্ত্রূন্‌ জযতু জর্হৃষাণঃ স্বাহা ।।

  (শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ৫/মন্ত্র ৩৭)

অর্থ — এই অগ্নি আমাদের শ্রেষ্ঠ ধন প্রদান করুক, এই অগ্নি শত্রুদের বিনাশ করে আমাদের সন্মুখে প্রকট হোক, এই অগ্নি অন্নের কামনাকারী যজমান, শত্রুদের হতে প্রাপ্ত ধন প্রদান করে বিজয়ী হোক, এই অগ্নি শত্রুদের পরাজিত করে প্রসন্ন হোক, অথা আমাদের দ্বারা সমর্পিত আহূতি গ্রহন করুক ।।

সীদ হোতঃ স্ব ঽ উ লোকে চিকিত্বান্‌ সাদযা যজ্ঞম্‌ সুকৃতস্য যোনৌ ।

দেবাবীর্‌ দেবান হবিষা যজাস্য অগ্নে বৃহদ্‌ যজমানে বযো ধাঃ ।। ৩৫।।

সম্‌ সীদস্ব মহাম্‌ ঽ অসি শোচস্ব দেববীতমঃ।

বিধূমম্‌ ঽ অগ্নে অরুষং মিযেধ্য সৃজ প্রশস্ত দর্শতম্‌ ।।৩৭।।

 (শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১১/মন্ত্র ৩৭)

অর্থ — হে দেবতাদের আহবাঙ্কারী অগ্নিদেব, সর্ব কর্মের জ্ঞাতা, আপনি নিজের প্রতিষ্ঠিত স্থানকে সুশোভিত করুন, এবং শ্রেষ্ঠ কর্মরূপী যজ্ঞকে সম্পন্ন করুন, দেবতাদের তৃপ্তকারী অগ্নি! আপনি যাজকদের দ্বারা প্রদত্ত আহূতি দ্বারা দেবতাদের আনন্দ প্রদান করুন ।। ৩৫।।

যজ্ঞীয় গুণ যুক্ত প্রশংসনীয় অগ্নে! আপনি দেবতাদের স্নেহপাত্র এবং মহান গুণের প্রেরক, আপনি উপযুক্ত স্থানে আসন গ্রহন করুন, এবং প্রজ্বলিত হয়ে ঘৃতের আহূতি দ্বারা  দর্শন-যোগ্য এবং তেজস্বী হয়ে সঘন ধূম্র বিসর্জিত করুন ।। ৩৭।।


এইপ্রকার সামবেদ আদিতে ও অগ্নিকে দেবতাদের দূত বলে উলেখ করা হয়েছে এবং ঘৃতাদি শ্রেষ্ঠ পদার্থ দ্বারা আহূতি প্রদানের উওল্লেখ করা হয়েছে, কারণ ঘৃত দেবতাদের প্রিয় যার প্রমাণ পূর্বে এ দেয়া হয়েছে এখন ভগবদ্গীতা ও মনুস্মৃতি হতে হবনের লাভের কথা উদ্ধৃতি করা হল -

ত্রৈবিদ্যামাং সোমপাঃ পূতপাপাযজ্ঞৈরিষ্ট্বা স্বররগতিং প্রার্থযন্তে । 

তে পুন্যমাসাদ্য সুরেদ্রলোকমশ্নন্তি দিব্যান্দিবি দেবভোগান্‌ ।।

(শ্রীমদ্ভগবদগীতা/অধ্যায় ৯/২০নং শ্লোক)

অর্থ — তিন বেদ (ঋক, যজু, সাম)  এ বিধান প্রদত্ত সকাম কর্মকারী সোমরস পানকারী, পাপরহিত পুরুষ দ্বারা আমাকে পূজা করে স্বর্গের প্রাপ্তি কামনা করে, সেই পুরুষ নিজে পুণ্যের ফলস্বরূপ স্বর্গলোক প্রাপ্ত করে স্বর্গে দিব্য দেবতাদের ভাগ্যকে ভোগ করে ।।


স্বাধ্যযেন ব্রতৈর্হোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যষা সুতৈঃ ।

মহাজৈশ্চ যজৈশ্চ ব্রাম্মীয ক্রিযতে তনু ঃ ।।

[মনুস্মৃতি/অধ্যায় ২/শ্লোক ২৮]

অর্থ — সমস্ত উত্তম বিদ্যার পঠন-পাঠন দ্বারা ব্রত পালনকারী হবন আদি সম্পন্ন করার মাধ্যমে শরীর ব্রহ্ম প্রাপ্তির যোগ্য হয়ে ওঠে ।।


স্বাধ্যযে নিত্যযুক্তঃ স্যাদ্দৈবৈ চৈবেহ কর্মাণি ।

দৈবকর্মণি যুক্তো হি বিভর্তীদং চরাচরম্‌ ।।৩৫।।

অগ্নৌ প্রাস্তাহুতিঃ সম্যগাদিত্যমুপতিষ্ঠতি ।

আদিত্যাজ্জযতে বৃষ্টির্বৃষ্টেরন্নং ততঃ প্রজাঃ ।। ৩৬।।

[মনুস্মৃতি/অধ্যায় ৩/শ্লোক ৩৫-৩৬]

অর্থ — নিত্য যজ্ঞ-হবন আদি কর্মকান্ডের দ্বারা জগতের সমস্ত জড়-চেতন এর পালন তথা বিকাশ হয়, কারণ যজমান দারা অগ্নিতে আহূতি সুরয়্‌ পর্যন্ত পৌছায়, সূর্য ও বর্ষার কারণ বর্ষার দ্বারা ওই ক্ষেতে অন্ন উৎপন্ন হয় এবং সে অন্ন দ্বারা প্রজা পালন হয় ।। ৩৫-৩৬।।


পূর্বাং সংধ্যাং জপংস্তিষ্ঠন্নৈশমেনো ব্যপোহতি ।

পশ্চিমাং তু সমাসীনো মলং হন্তি দিবাকৃতম্‌ ।।

[মনুস্মৃতি/অধ্যায় ২/শ্লোক ১০২]

অর্থ — প্রাতঃকালের সন্ধ্যার দ্বারা রাত্রির এবং সায়ংকালের সন্ধ্যার দ্বারা দিনের পাপ নষ্ট হয়, এই প্রকার দুসময়ে সন্ধ্যা কৃত্যাদি দ্বারা সমস্ত প্রকার পাপ নষ্ট হয়, এই প্রকার হবন দ্বারাও পাপ নষ্ট হয়। কারণ বেদ মন্ত্র পাপ ক্ষয় কারক, এবং যার বিধি আছে সেই মন্ত্র হবনের সময় উচ্চারণ করা হয় ।।

__________________________________________________

দয়ানন্দ সরস্বতী জী বলেছেন যে, প্রাচীন কালেন রাজা মহারাজা মুনি ঋষিগণ নাকি - বাতাসে মিশে যাওয়া শরীরের দুর্গন্ধ  কে দূর করার জন্য হোম যজ্ঞ করতেন। 😂🤣😂

অথচ, 

বাল্মীকি রামায়ণের বালকাণ্ডে ৮তম সর্গে 

মম লালপ্যমানস্য সুতার্থং নাস্তি বৈ সুখম্ । 

তদর্থং হ্যমেধেন যক্ষ্যামীতি মতির্মম ॥ ৮ ॥

তদহং যষ্টুমিচ্ছামি শাস্ত্রদৃষ্টেন কর্মণা । 

কথং প্রাপ্স্যাম্যহং কামং বুদ্ধিরত্র বিচিন্ত্যতাম্ ॥ ৯ ॥

[বাল্মীকি রামায়ণ/বালকাণ্ড/৮তম সর্গ]

অর্থ — হে মহর্ষিগণ! আমি সর্বদা পুত্রের জন্য বিলাপ করে থাকি। তার অনুপস্থিতিতে এই রাজ্য প্রভৃতি বিষয় থেকে আমি কোনো সুখ পাই না; অতএব আমি এই সংকল্প করেছি যে, পুত্রপ্রাপ্তির জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞের মাধ্যমে আমি ভগবানের পূজা করব ॥ ৮ 

আমার ইচ্ছা হলো শাস্ত্রে নির্দিষ্ট বিধি অনুযায়ী এই যজ্ঞের অনুষ্ঠান করা; অতএব, কীভাবে আমি আমার মনের ইচ্ছিত বস্তু লাভ করতে পারি — এ বিষয়ে আপনারা এখানে চিন্তা করুন ॥ ৯ ॥


আবার..

বাল্মীকি রামায়ণের বালকাণ্ডে ১২তম সর্গে একই কথা বলা হয়েছে, 

মম তাতপ্যমানস্য পুত্রার্থং নাস্তি বৈ সুখম্‌ ॥ ৮ ॥

পুত্রার্থং হয়মেধেন যক্ষ্যামীতি মতির্মম।

তদহং যষ্টুমিচ্ছামি হয়মেধেন কর্মণা ॥ ৯ ॥

ঋষিপুত্রপ্রভাবেণ কামান্‌ প্রাপ্স্যামি চাপ্যহম্‌ ।..॥ ১০

[বাল্মীকি রামায়ণ/বালকাণ্ড/১২তম সর্গ]

অর্থ — আমি পুত্রের অভাবের জন্য অন্তর থেকে দগ্ধ হচ্ছি; পুত্র না থাকায় আমি সুখ পাচ্ছিনা। তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, পুত্রলাভের উদ্দেশ্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ করব ॥ ৮৬ ॥

এই সংকল্প অনুযায়ী আমি অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে চাই। আমার বিশ্বাস, ঋষিপুত্র ঋশ্যশৃঙ্গের প্রভাবে আমি আমার সকল মনোবাসনা পূরণ করতে সক্ষম হব ॥ ৯৩ ॥


শেষ প্রমাণ দেখুন -

মেধাবী তু ততো ধ্যাত্বা স কিঞ্চিদিদমুত্তরম্‌। 

লব্ধসংজ্ঞস্ততস্তং তু বেদজ্ঞো নৃপমব্রবীৎ ॥ ১ ॥

ইষ্টিং তেঽহং করিষ্যামি পুত্রীয়াং পুত্রকারণাৎ ।

অথর্বশিরসি প্রোক্তৈঃ মন্ত্রৈঃ সিদ্ধাং বিধানতঃ॥ ২॥

[বাল্মীকি রামায়ণের/বালকাণ্ড/১৫তম সর্গ]

অর্থ — মহাত্মা ঋষ্যশৃঙ্গ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং বেদজ্ঞ। তিনি কিছুক্ষণ ধ্যান করে নিজের ভবিষ্যৎ করণীয় কর্তব্য কে নির্ধারণ করলেন। তারপর ধ্যান থেকে বিরত হয়ে রাজাকে এইভাবে বললেন — ॥ ১ ॥

“মহারাজ! আমি আপনার পুত্রলাভ করানোর জন্য অথর্বশির উপনিষদের শ্রুতি মন্ত্র দ্বারা ‘পুত্রেষ্টি’ নামক যজ্ঞ সম্পাদন করবো। বেদবিধি অনুসারে অনুষ্ঠান করলে সেই যজ্ঞ অবশ্যই সফল হবে ॥ ২ ॥


দেখুন, দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনার চেয়েও বড় বেদজ্ঞ হলেন মহাত্মা ঋষ্যশৃঙ্গ। তিনি কোনো বাতাসের দূর্গন্ধ দূর করবার জন্য হোমযজ্ঞ করেননি, বরং তিনি শৈবদের অথর্বশির উপনিষদকে শ্রুতি বলে মান্যতা দিয়ে, সেই বেদের বিধি দ্বারা হোমযজ্ঞ করতে বলেছেন, যার ফলস্বরূপ দশরথ নিজের জন্য পুত্র লাভ করতে সক্ষম হবেন বলে জানিয়ে দেন, তাও আবার ধ্যানের মাধ্যমে তিনি পরমেশ্বর শিবের সাথে সম্পর্কিত অথর্বশির উপনিষদের শ্রুতিকেই ব্যবহার করবার অবসর পেয়েছেন। দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই নিজেকে বেদ তথা অনান্য শাস্ত্র সম্পর্কে চরম অজ্ঞ বলে প্রমাণ করে দিয়েছেন। 

__________________________________________________


দয়ানন্দ সরস্বতী জীর অনুসারী আর্য‌সমাজীরা বর্তমানে খুব হবন (হোম-যজ্ঞ) করছেন, নিজেদের সনাতন ধর্মের প্র‌চারক হিসেবে দেখাবার জন্য ঘন ঘন হবন (হোম-যজ্ঞ) করছেন ঘি ও কাঠ পুড়িয়ে, কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল - তাদের হোম-যজ্ঞের উদ্দেশ্য ঈশ্বর প্রতি নয়, শুধুমাত্র আর্য‌সমাজীরা নিজেদের দেহের থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসকে দূর করবার জন্য এত সেজেগুজে, গায়ে উত্তরীয় জড়িয়ে, একটা কড়াইতে বা বালতির ন্যায় পাত্রের মধ্যে ঘী ও কাঠ পুড়িয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করছে, আবার এর জন্য ফুল ছিঁড়ে তা দিয়ে সাজিয়ে ফুলের অপচয় করে এরা — শুধুমাত্র কি না আর্য‌সমাজী নিজেদের দেহের থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ বাতাস দূর করবার জন্য। 

 হায় রে মূ র্খ‌ সমাজ, আর এদের এই সব ‘পা গলা’ গারদের  সমাজী কারখানায় অজ্ঞ ব্যক্তিরা যোগ দেয়, যে সব সাধারণ  মানুষ আর্য‌সমাজের বিষয়ে কিছুই জানে না তারা মনে করে যে - আহা ! সনাতন ধর্মের বিরাট প্রচার হচ্ছে, ঈশ্বরের আরাধনা করে হোমযজ্ঞ হচ্ছে। কিন্তু আসলেই তো হচ্ছে সার্কাস, যে সার্কাসের উদ্যোক্তা হলেন দয়ানন্দ সরস্বতী জী ও তার অনুসারী আর্য‌সমাজী রা হল সেই সার্কা‌সের জোঁ কার মাত্র। 


সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন এক ও অদ্বিতীয় গুরুপরম্পরা হল - মহাপাশুপত শৈব পরম্পরা, সেই মহাপাশুপতের ধারা শৈব অবধূত পরম্পরার বর্তমান মহামান্য আচার্য শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য গুরুদেব জী স্বয়ং লিখিত আকারে দয়ানন্দ সরস্বতী দ্বারা হোম প্রকরণ খণ্ডন উপস্থাপন করলেন।

______________________________________________

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩

🔥 লেখনিতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী

© কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT








মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ