পরমেশ্বর শিবের গলায় থাকা মুণ্ডমালাতে কাদের মুণ্ড থাকে ?
পরমেশ্বর শিবের গলায় থাকা মুণ্ডমালাতে কাদের মুণ্ড থাকে ?
উত্তর — এই প্রশ্নের উত্তর স্কন্দমহাপুরাণের প্রভাসখণ্ডের প্রভাসক্ষেত্র মাহাত্ম্যের অধ্যায় ৯ - এর শ্লোক ৬-৭ নং এ বলা হয়েছে -
ততো বিহস্য দেবেশঃ শংকরো বাক্যমব্রবীৎ ।
অনেকমুণ্ডকোটীভির্যা মে মালা বিরাজতে ॥ ৬ ॥
নারায়ণ সহস্রাণাং ব্রহ্মণামযুতস্য চ ।
কৃতা শিরঃ করোটীভিরনাদিনিধনা ততঃ ॥ ৭ ॥
[তথ্যসূত্রঃ- স্কন্দমহাপুরাণ/প্রভাসখণ্ড/প্রভাসক্ষেত্র মাহাত্ম্য/অধ্যায় ৯/শ্লোক ৬-৭]
অর্থ — তখন দেবেশ শংকর হেসে এই কথা বললেন, আমার এই মালা কোটি কোটি মুণ্ড দ্বারা শোভিত। এটি সহস্র সহস্র নারায়ণ ও দশ হাজার ব্রহ্মার শির মুণ্ড-করোটি দ্বারা নির্মিত। এর আরম্ভ বা শেষ কিছুই নেই।
ব্যাখ্যা — পরমেশ্বর শিবের কোনো জন্মই নেই, তার কোনো মৃত্যুও নেই। তিনি অজন্মা । এ কথা বেদ স্বীকার করেছেন। কৃষ্ণ-যজুর্বেদের শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যেই ৪নং অধ্যায়ের ২১নং মন্ত্রে পরমেশ্বর শিবকে অজাত বলে উল্লেখ পর্যন্ত রয়েছে -
অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ॥ ২১
অর্থ : হে রুদ্র, তুমি জন্মরহিত। তাইতো মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ তোমার শরণ নেয়। তোমার দক্ষিণ(কল্যাণময় দক্ষিণামূর্তি) মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং সর্বদা আমাকে রক্ষা কর।
ন জাতোঽস্যা পতিদেব্যা যন্মযোক্তং হিমাচল ।
ন স জাতো মহাদেবো ভূতভব্যভবোদ্ধবঃ ।
শরণ্যঃ শাশ্বতঃ শাস্তা শঙ্করঃ পরমেশ্বরঃ ॥১৭৮
ব্রহ্মবিষ্ণিবন্দ্রমুনয়ো জন্মমৃত্যুত্যুজরার্দিতা ।
তস্যৈতে পরমেশস্য সর্ব ক্রীড়নকা গিরে ॥১৭৯
আস্তে ব্রহ্মা তদিচ্ছাতঃ সম্ভূতো ভুবনপ্রভুঃ ।
বিষ্ণুর্যুগে যুগে জাতো নানাজাতির্মহাতনুঃ ॥১৮০
[তথ্যসূত্র : মৎস্যমহাপুরাণ/অধ্যায় ১৫৪]
অর্থ - নারদজী বললেন - হে গিরিরাজ !
আমি যে বিষয়ে আপনাকে বললাম যে এই দেবীর পতি কখনো উৎপন্ন হননি, এ কথার অভিপ্রায় হল এই - যিনি ভূত ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান তিনকালই বর্তমান থাকেন, যিনি জীবের শরণদাতা, অবিনাশী, নিয়ামক, কল্যাণকর্তা এবং পরমেশ্বর, সেই মহাদেব কখনো উৎপন্ন হননি, অর্থাৎ তিনি অনাদি, ওনার কখনোই জন্ম হয় না।
হে পর্বতরাজ !
ব্রহ্মা বিষ্ণু ইন্দ্র মুনি আদি সকলেই জন্ম-মৃত্যু এবং বৃদ্ধ অবস্থা গ্রস্থ হয়ে থাকেন। এনারা সবাই সেই পরমেশ্বর মহাদেবের খেলনা মাত্র। সেই পরমেশ্বর মহাদেবের ইচ্ছেতেই ত্রিভুবনের স্বামী ব্রহ্মা প্রকট হয়েছেন এবং প্রত্যেক যুগে শ্রীবিষ্ণু বিশাল শরীর ধারণ করে নানা প্রকারের জীব জাতিতে উৎপন্ন হয়ে থাকেন ।
বেদের বচনে শিবের জন্মহীনতা ও মৎস পুরাণের বচনে বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মৃত্যু হওয়ার বিষয়ে সমর্থন রয়েছে। অর্থাৎ বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মৃত্যু হলে তাদের মুণ্ড নিয়ে প্রভু শিব মালা হিসেবে ধারণ করেন। অসংখ্য বার ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি ও প্রলয়ে অসংখ্য বিষ্ণু ও ব্রহ্মা জন্মেছেন আবার মৃত্যুবরণও করেছেন। সেই প্রত্যেক কল্পের মৃত ব্রহ্মা ও নারায়ণ-বিষ্ণুর মুণ্ড করোটি পরমেশ্বর শিবের গলায় মুণ্ডমালা হিসেবে স্থান পেয়ে শোভিত হচ্ছে।
______________________________________________
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
🔥 লেখনিতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
© কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন