প্রস্তর শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা বিধি (শিবমহাপুরাণোক্ত)

 


॥ শিব ॐ ॥

পরমেশ্বরের নির্গুণ স্বরুপকেই শিবলিঙ্গের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। শিবলিঙ্গ পূজন সর্বোত্তম। সমস্ত দেবদেবীর পূজা শিবলিঙ্গে করা যায় কেননা এক নির্গুণ শিবই গুনান্বিত হয়ে সব দেবী দেবতার রুপ ধারন করেন। সাধারন শিবমূর্তি পূজনের থেকে লিঙ্গস্বরূপে পূজা অধিক ফলপ্রদ।


📌শিবপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতার একাদশ অধ্যায়ে শিবলিঙ্গ স্থাপন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণন পাওয়া যায়। সেখান থেকেই লিঙ্গস্থাপনের অতি সহজ পদ্ধতিটি আনা হল।


শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার স্থান নির্বাচন :


⭕ নিত্যদিন পূজা করা যাবে এমন কোনো পবিত্র জায়গা যেমন বাড়ির উপাসনালয় বা তীর্থক্ষেত্র বা নদীর পাড়ও শিবলিঙ্গ স্থাপনের জন্য আদর্শ।যেকোনো শুভ দিন দেখে এই কাজ শুরু করা উচিৎ।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১ নং অধ্যায়/শ্লোক নং ২-৩)


⭕ পার্থিব যেকোনো দ্রব্য (যেমন মাটি, পাথর এসব), জলময় যেকোনো দ্রব্য এবং ধাতু জাতীয় যেকোনো পদার্থ দ্বারা শিবলিঙ্গ তৈরী করা সম্ভব, এটা ভক্তের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১ নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৩)


স্থান বিশেষে লিঙ্গ নির্বাচন :


⭕ স্থাবর স্থায়ী লিঙ্গকে বলে অচললিঙ্গ। অচল লিঙ্গ প্রতিষ্ঠার জন্য স্থূল-বড় আকারের শিবলিঙ্গ শ্রেষ্ঠ।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১ নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৫)

👆অর্থাৎ ইহা মন্দিরে প্রতিষ্ঠার জন্য ।


⭕ আবার অস্থায়ী, বহনযোগ্য জঙ্ঘমলিঙ্গকে বলে চললিঙ্গ। চললিঙ্গ প্রতিষ্ঠার জন্য ছোটো আকারের শিবলিঙ্গ শ্রেষ্ঠ।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৫ )👆অর্থাৎ গৃহে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠার জন্য এই শিবলিঙ্গ।


উত্তম লক্ষনযুক্ত লিঙ্গের নির্বাচন :


⭕ উত্তম লক্ষনযুক্ত এবং গৌরীপট্ট সহ শিবলিঙ্গই শিবমহাপুরাণ অনুযায়ী একমাত্র পূজনীয় ও স্থাপনের যোগ্য।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৫)


⭕ যোনিপীঠ পরাপ্রকৃতি জগদম্বার স্বরুপ এবং সমস্ত শিবলিঙ্গ চৈতন্যস্বরুপ। যেমনটা মাতা পার্বতী সদাশিবের বাম ক্রোড়ে উপস্থিত থাকেন তেমনই লিঙ্গভাগ সর্বদা পীঠভাগের সাথেই বিরাজিত থাকে।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ২২-২৩)


⭕ শিবলিঙ্গের গৌরীপীঠ সর্বদা মণ্ডলাকৃতি (গোলাকার), অথবা চৌকাকার অথবা ত্রিকোণাকার অথবা খটবাঙ্গকার (উপরে গোল এবং পরে ক্রমশ লম্বা অর্থাৎ যোনি আকৃতির)। (বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৬)


⭕ চললিঙ্গই হোক বা অচললিঙ্গই হোক লিঙ্গভাগ আর পীঠভাগ যেন একই জাতীয় বস্তু দ্বারা নির্মিত হয়। এটা কিন্ত খেয়াল রাখার বিষয়। কিন্তু বাণেশ্বর লিঙ্গের ক্ষেত্রে এমনটা আবশ্যক নয়।

(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ৭-৮)





মন্দির/সিংহাসনের সজ্জারীতি :

⭕ সাধারন মন্দিরে বা গৃহমন্দিরে অচললিঙ্গ স্থাপনের ক্ষেত্রে শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য নির্মানকর্তার বারো  আঙ্গুলের সমান হওয়া দরকার, তার চেয়ে কম নয়। তবে বেশি হলে ক্ষতি নেই ॥৯

⭕ আবার সাধারন গৃহসিংহাসনে চললিঙ্গ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লিঙ্গের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে নির্মাণকর্তার এক আঙুল বরাবর হতে হবে, বেশি হলে ক্ষতি নেই ॥৯

⭕ যে সিংহাসনে লিঙ্গ স্থাপন করা হবে সেটাকে অন্যান্য দেবদেবী অর্থাৎ দেবী পার্বতী,কার্তিকেয়,গণেশ, শিবগণ নন্দী এদের মূর্তি (অথবা ছবি) দ্বারা সজ্জিত করতে হবে। অন্দরভাগ(গর্ভগৃহ)যেন দৃঢ় ও স্বচ্ছ হয় এবং নবরত্ন দ্বারা সজ্জিত হয় (নীলা, লালরত্ন, বৈদূর্য , শ্যামরত্ন, মরকত/পান্না, মোতি/মুক্তা, মূঁগা/প্রবাল,  গোমেদ ও বজ্রা/হীরা)। সিংহাসনের মূখ্য দ্বারদ্বয় যেন পূর্ব ও পশ্চিমমুখী হয় ॥১০-১১


[দশকর্মার দোকানে পূজার সামগ্রী হিসেবে সস্তার নবরত্ন পাওয়া যায় এবং সিংহাসনটি কাঠের/পাথরের/লোহার অথবা অন্য ধাতু দিয়ে বানাতে পারেন]


নবরত্ন


করণীয় জীবসেবা :

⭕ স্থাবর,  জঙ্গম সকল জীবকেই সন্তুষ্ট করতে হবে অর্থাৎ উদ্ভিদ, গুল্ম, লতা সহ বিভিন্ন প্রাণীদের  জল ও খাদ্য প্রদান করতে হবে ॥১৫

  এর  তাৎপর্য  হল –

⭕ সমগ্র স্থাবর জীব যেমন বৃক্ষ,  লতা এসব সাক্ষাৎ স্থাবর লিঙ্গ স্বরুপ , তাই তাদেরকে সিঞ্চিত করা উচিৎ এবং বিশ্বের সমগ্র জঙ্ঘম জীব যেমন কৃমি কীট পিঁপড়ে প্রভৃতি এরা সাক্ষাৎ জঙ্ঘম/চল লিঙ্গ স্বরুপ, তাই তাদের খাদ্য, পানীয় দান করা উচিৎ ॥২০-২১


পূজার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ :


১) এক ঘটি গঙ্গাজল

২) এক গ্লাস মহাদেবের পানীয় জল

৩) নবরত্ন (পূজার জন্য) 

৪) দূর্বা

৫) চন্দন

৬) আঁতপচাল

৭) ভস্ম (বিভূতি) বা খড়িমাটি

৮) সিঁদুর বা কুমকুম

৯) সুগন্ধ যুক্ত ফুল এবং ফুলের মালা

১০) বেশকিছু বেলপাতা (অন্তত ১০টি)

১১) একটি তামার পাত্র

১২) একটি রুদ্রাক্ষ (যে কোনো মুখী)


প্রতিষ্ঠা পদ্ধতি :


স্নানাদি কর্ম সেরে শুদ্ধবস্ত্র (ধোয়া পরিষ্কার বস্ত্র) পরিধান করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন।


👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণের নিয়ম


রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন নিম্নের দুটির মন্ত্রের যেকোনো একটি মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ।

রুদ্রাক্ষ ধারণ মন্ত্রॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্র প্রচোদয়াৎ ॥

রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।

নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅ পূজা শুরু করার আগে বৃক্ষে জল প্রদান করবেন, পশুপাখিকে খেতে দেবে, পিপড়েকেও চিনিজাতীয় কিছু খাবার দিতে পারেন। এতে পরমেশ্বর শিব অতি প্রসন্ন হন।

এবার পূজার ঘরে উপস্থিত হয়ে “নমঃ শিবায়” মন্ত্র জপ করতে করতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিতে হবে।


অল্প করে কিছু দূর্বা, আঁতপচাল, বেলপাতা সহ নবরত্ন হাতে নিয়ে নিম্নোক্ত বৈদিক পঞ্চবক্ত্র শিবের মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করুন 👇

ॐ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ।

ভবে ভবেনাতি ভবে ভবস্ব মাং ভবোদ্ভবায় নমঃ ॥

ॐ বামদেবায় নমো জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায় নমো রুদ্রায় নমঃ কালায় নমঃ কলবিকরণায় নমো বলবিকরণায় নমো বলায় নমো বলপ্রমথনায় নমঃ সর্বভূত দমনায় নমো মনোন্মনায় নমঃ ॥

ॐ অঘোরেভ্যোঽথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥

ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥

ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ॥


এবার সিংহাসনের যে স্থানে শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হবে সেখানে ঐ মন্ত্রপূত দ্রব্যগুলি রেখে একটু ছড়িয়ে দিন।


এবার শিবলিঙ্গটিকে একটি তামার পাত্রে রেখে গঙ্গাজল দ্বারা অভিষেক করে শোধন করে নিন ॐ নমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করতে করতে।


এবার কিছু দূর্বা,আতপচাল ও বেলপাতা ডান হাতে নিয়ে নিন। বাম হাতে শিব লিঙ্গ কে ধরুন।


শিবলিঙ্গের পাঁচটি স্থানের প্রত্যেকটিতে একটি করে স্থানে ওই দ্রব্যসমূহ উপর থেকে নীচ পর্যন্ত স্পর্শ করে একটি একটি করে ক্রমশ পাঁচটি মন্ত্র উচ্চারণ করুন।


নম্বর অনুসারে প্রত্যেকটি স্থানে দ্রব্য স্পর্শ করে মন্ত্র পাঠ করবেন

[১] শিবলিঙ্গের উপরে প্রথম ১নং স্থানে দ্রব্যসমূহ স্পর্শ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন👇

ॐ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ।

ভবে ভবেনাতি ভবে ভবস্ব মাং ভবোদ্ভবায় নমঃ ॥


[২]শিবলিঙ্গের উপরে দ্বিতীয় ২নং স্থানে দ্রব্যসমূহ স্পর্শ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন👇

ॐ বামদেবায় নমো জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায় নমো রুদ্রায় নমঃ কালায় নমঃ কলবিকরণায় নমো বলবিকরণায় নমো বলায় নমো বলপ্রমথনায় নমঃ সর্বভূত দমনায় নমো মনোন্মনায় নমঃ ৷৷


[৩]শিবলিঙ্গের উপরে তৃতীয় ৩নং স্থানে দ্রব্যসমূহ স্পর্শ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন👇

ॐ অঘোরেভ্যোঽথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥


[৪]শিবলিঙ্গের উপরে চতুর্থ ৪নং স্থানে দ্রব্যসমূহ স্পর্শ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন👇

ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥


[৫]শিবলিঙ্গের উপরে পঞ্চম ৫নং স্থানে দ্রব্যসমূহ স্পর্শ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন👇

ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্॥


(বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ১৩ )


এবার সেই শিবলিঙ্গকে হাতে ধারণ করে সেই একই পাঁচটি মন্ত্র উচ্চারণ করে পঞ্চবক্ত্র মহাদেবের ধ্যান করতে হবে। 


কিছুক্ষন ধ্যান করার পর -কার মন্ত্র জপ করতে করতে শিবলিঙ্গকে সিংহাসনে বসাতে হবে(পীঠভাগের দিকটি উত্তর দিকে মুখ করে রাখবেন) ॥১৬-১৭


এবার শিবলিঙ্গে ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র উচ্চারণ করে ভস্ম বা সাদা খড়িমাটি ত্রিপুণ্ড্র এঁকে দিন এবং ত্রিপুণ্ড্রের মধ্যবর্তী রেখার মাঝখানে একটি কুমকুম অথবা সিঁদুরের গোলাকার ফোটা দিন।


[প্রসঙ্গত বলে রাখা উচিৎ যে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সময় যেমন প্রণব -কার জপের বিধান আছে তেমনই মহেশ্বরের মূর্তি স্থাপনের সময় প্রণবের পরিবর্তে পঞ্চাক্ষর[নমঃ শিবায়] মহামন্ত্র জপের বিধান আছে (বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১১নং অধ্যায়/শ্লোক নং ১৮)]


এবার শিবলিঙ্গের সামনে হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে বেদোক্ত শিবলিঙ্গ সূক্ত পাঠ করবেন -

শিবলিঙ্গ সূক্ত(বেদোক্ত শিবলিঙ্গ প্রণাম মন্ত্র )


ॐ নিধনপতয়ে নমঃ | নিধনপতান্তিকায় নমঃ | ঊর্ধ্বায় নমঃ | 

ঊর্ধ্বলিঙ্গায় নমঃ | হিরণ্যায় নমঃ | হিরণ্যলিঙ্গায় নমঃ | সুবর্ণায় নমঃ |

সুবর্ণলিঙ্গায় নমঃ | দিব্যায় নমঃ | দিব্যলিঙ্গায় নমঃ | ভবায় নমঃ |

ভবলিঙ্গায় নমঃ | শর্বায় নমঃ | শর্বলিঙ্গায় নমঃ | শিবায় নমঃ |

শিবলিঙ্গায় নমঃ | জ্বলায় নমঃ | জ্বললিঙ্গায় নমঃ | আত্মায় নমঃ |

আত্মলিঙ্গায় নমঃ | পরমায় নমঃ | পরমলিঙ্গায় নমঃ | এতৎসোমস্য সূর্যস্য

সর্বলিঙ্গং স্থাপযতি পাণিমন্ত্রং পবিত্রম্ |

 (রেফারেন্স- কৃষ্ণ যজুর্বেদ/ তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক/১৬ নং অনুবাক)

এবার বেলপাতা অর্পণ করে দিন শিবলিঙ্গে ।


এবার নিজের সাধ্যমতো শৈব আচারে পরমেশ্বর শিবের। অর্চনা করুন। অন্তত ফুল, জল, ধূপ ও দীপ, নৈবেদ্য, সুগন্ধ চন্দন দিয়ে পঞ্চোপচারে ভক্তিভরে পূজা করতে পারেন।

যখন পূজা করবেন তখন পরমেশ্বর কে বেলপাতা অর্পন করবেন। বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও পাকা ফল ও একগ্লাস জল নিবেদন করবেন। শেষে আরতি করবেন। শিবমহাপুরাণের কোনো একটি অধ্যায় পাঠ করবেন।


☘️এরপর ভক্তিভরে শিব লিঙ্গাষ্টকম্ পাঠ করুন।


অথ লিঙ্গাষ্টকম্ স্তোত্রম্

ব্রহ্মমুরারি সুরার্চিত লিঙ্গং

নির্মলভাসিত শোভিত লিঙ্গম ।

জন্মজ দুঃখ বিনাশক লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ১ 


দেবমুনি প্রবরার্চিত লিঙ্গং

কামদহন করুণাকর লিঙ্গম্ ।

রাবণ দর্প বিনাশন লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ২ 


সর্ব সুগন্ধ সুলেপিত লিঙ্গং

বুদ্ধি বিবর্ধন কারণ লিঙ্গম ।

সিদ্ধ সুরাসুর বংদিত লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৩ 


কনক মহামণি ভূষিত লিঙ্গং

ফণিপতি বেষ্টিত শোভিত লিঙ্গম্ ।

দক্ষ সুয়জ্ঞ নিনাশন লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৪


কুঙ্কুম চংদন লেপিত লিঙ্গং

পঙ্কজ হার সুশোভিত লিঙ্গম্ ।

সঞ্চিত পাপ বিনাশন লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৫ 


দেবগণার্চিত সেবিত লিঙ্গং

ভাবৈ-র্ভক্তিভিরেব চ লিঙ্গম্ ।

দিনকর কোটি প্রভাকর লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৬


অষ্টদলোপরিবেষ্টিত লিঙ্গং

সর্বসমুদ্ভব কারণ লিঙ্গম্ ।

অষ্টদরিদ্র বিনাশন লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৭


সুরগুরু সুরবর পূজিত লিঙ্গং

সুরবন পুষ্প সদার্চিত লিঙ্গম্ ।

পরাত্পরং পরমাত্মক লিঙ্গং

তত্-প্রণমামি সদাশিব লিঙ্গম্ ॥ ৮


লিঙ্গাষ্টকমিদং পুণ্যং য পঠেশ্শিব সন্নিধৌ ।

শিবলোকমবাপ্নোতি শিবেন সহ মোদতে ॥


॥ লিঙ্গাষ্টকম্ স্তোত্রম্ সম্পূর্ণম্ ॥


এবার সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করুন পরমেশ্বর শিবের সম্মুখে।

এখানে পূজা সমাপ্ত করে ভক্ত শৈবগণকে নিজ সাধ্যমতো ভোজন করাবেন। সকল শিবভক্তের কপালে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করে দেবেন।

শেষে পরমেশ্বর মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করে বলবেন,


হে প্রভু !

হে জগতস্বামী !

হে উমাপতি শিব !

আপনি সর্বদা আমার গৃহে অবস্থান করে আমার পরিবার,বংশ,কূল এবং সকল পুরুষকে রক্ষা করুন। আপনার আশীর্বাদ যেন চিরকাল আমাদের সকলের উপর থাকে। আমরা যেন কখনোই আপনার কৃপা দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত না হই। সমস্ত বিপদ থেকে আপনি আমাদের উদ্ধার করুন, আমরা নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করছি।

হে পরমেশ্বর আমাদের প্রতি কৃপা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আমাদের প্রতি কল্যাণ করুন ।


[বিঃদ্রঃ - তবে উপাচার ছাড়াও ভক্তিভরে মন থেকে করা ভক্তিভাবের পূজাও পরমেশ্বর মহাদেব অতি প্রসন্ন হয়ে গ্রহণ করেন। যে গৃহে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত থাকেন সেই ব্যক্তির কূল ধন্য হন, পূর্বপুরুষগণ আনন্দিত হয়ে আশীর্বাদ করেন। গৃহের উপর পরমেশ্বরের সদা কৃপা বর্ষিত হয়। এই প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গে প্রতিদিন স্নান করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করে শিবারাধনা করা অবশ্যই প্রয়োজন গৃহস্তের]

॥ শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা বিধি সম্পূর্ণ হল ॥

॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥


✍️সংগ্রহে/লেখনীতে – Koushik Roy ও Rohit Kumar Chowdhury


©️কপিরাইট এবং প্রচারে – #ISSGT

International Shiva Shakti Gyan Tirtha


© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত