ভস্ম তৈরীর বৃহৎ পদ্ধতি (শৈব আগমোক্ত)

 


এই প্রথমবার বাংলাতে ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) – এর পক্ষ থেকে শৈব আগমশাস্ত্র থেকে পবিত্র ভস্ম তৈরী করার বৃহৎ পদ্ধতি প্রকাশিত হল। এটি শ্রী রোহিত কুমার চৌধুরী শৈবজী সংগ্রহ করেছেন তথা লেখনীতেও তার‌ই অতি পরিশ্রম বিদ্যমান। সম্পাদনা করেছেন শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী ।


✴️ যাদের কাছে সময় কম রয়েছে তারা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন, নিম্নোক্ত এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিন 👉ভস্ম তৈরীর সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি (শৈব আগমোক্ত)


🟥🟥🟥 ভস্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় 🟥🟥🟥


💠পূর্ব-কামিকাগম মতে ভস্ম বা বিভূতি চারপ্রকারের – কল্প , অনুকল্প , উপকল্প ও অকল্প। এদের মধ্যে কল্প ভস্ম সর্বোত্তম।


(পূর্বকামিকাগম- অষ্টম পটল শ্লোক নং ৪২-৪৩)


1. কোনো রোগমুক্ত, কালো না নীলচে বা খয়েরী গাত্র বর্ণের গোরুর তাজা গোবর মাটিতে পড়ার আগেই সেটা সংগ্রহ করে তা থেকে তৈরী ভস্ম – কল্প ভস্ম।


2. শুকানো, জঙ্গল এলাকা থেকে সংগ্রহ করা গোময় থেকে তৈরী ভস্ম – অনুকল্প ভস্ম।


3. নদীর ধার বা অন্যান্য জলযুক্ত এলাকা থেকে সংগ্রহীত গোময় থেকে তৈরী ভস্ম- উপকল্প ভস্ম।


4. অন্যান্য জায়গা থেকে সংগৃহীত করে নিজের মতো করে ভস্ম বানালে তা হয় – অকল্প ভস্ম।


🟦আবার বৃহজ্জাবাল উপনিষদ মতে ভস্মের পাঁচটি স্বরূপ আছে , যথা – বিভূতি , ভসিত , ভস্ম , ক্ষার ও রক্ষা 


 🛑 সদ্যোজাত থেকে পৃথিবী তত্ত্বের সৃষ্টি হয় । সেখান থেকে জাত হয় নিবৃত্তি কলা । তার থেকে জাত হয় ধ্রুপিল বর্ণের ( খয়েরী বা লালচে ) নন্দা গাভী । এই গাভীর গোবর থেকে প্রস্তুত ভস্মকে বলে - বিভূতি । 


🛑 বামদেব থেকে জলতত্ত্বের সৃষ্টি হয় । সেখান থেকে জাত হয় প্রতিষ্ঠা কলা । তার থেকে জাত হয় কৃষ্ণ বর্ণের ভদ্রা গাভীর । সেই গাভীর গোময় থেকে প্রস্তুত হয় – ভসিত ৷


🛑 অঘোর থেকে অগ্নি তত্ত্বের সৃষ্টি হয় । সেখান থেকে জাত হয় বিদ্যা কলা । সেখান থেকে জাত হয় লাল বর্ণের সুরভী গাভী । সেই গাভীর গোময় থেকে প্রস্তুত ভস্মকে - ভস্ম বলে । 


🛑 তৎপুরুষ থেকে বায়ু তত্ত্বের সৃষ্টি হয় । সেখান থেকে জাত হয় শান্তিকলা । সেখান থেকে জাত হয় শ্বেত বর্ণের সুশীলা গাভী । সেই গাভীর গোময় থেকে প্রস্তুত ভস্মকে - ক্ষার বলে I


 🛑 ঈশান থেকে আকাশ তত্ত্বের সৃষ্টি হয় । সেখান থেকে জাত হয় শান্ত্যতীত কলা । সেখান থেকে জাত হয় মিশ্র বর্ণের সুমনা গাভী । সেই গাভীর গোময় থেকে প্রস্তুত ভস্মকে রক্ষা বলে ।


⏹️ এই ভস্মের আরও কিছু প্রকার শৈবাগমে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন –


☘️মাটিতে পড়ার আগেই গোময় সংগ্রহ করে সেটিকে পঞ্চব্রহ্ম মন্ত্র দ্বারা শোধন করার পর সেটাকে ব্যবহার করে যে ভস্ম তৈরী হয় তাকে শান্তিক ভস্ম বলে।


☘️যদি গোময়কে ষড়াঙ্গ মন্ত্র দ্বারা শোধন করা হয় তবে সেটা থেকে তৈরী ভস্মকে পৌষ্টিক ভস্ম বলে।


☘️ভূমিতে পতিত হওয়া গোবর সংগ্রহ করে সেটা থেকে যে ভস্ম তৈরী করা হয় তাকে কামদ ভস্ম বলে।


(পূর্বকামিকাগম – শ্লোক নং ৪৫-৪৮ )


চন্দ্রজ্ঞানাগম মতে পবিত্র গোময় স্বয়ং বিদ্যা স্বরুপ এবং গোমূত্র স্বয়ং উপনিষদ স্বরূপ।


(চন্দ্রজ্ঞান আগম- ক্রিয়াপাদ-ষষ্ঠ পটল – শ্লোক নং ৫)



🟩শিবাগ্নি দ্বারা প্রস্তুত ভস্ম শিবযোগীদের জন্য আদর্শ।


🟩বিরজা দীক্ষাকৃত অগ্নি থেকে প্রস্তুত ভস্ম ভস্ম স্নানের জন্য আদর্শ।


🟩ঔপাসনা অগ্নির/গৃহাগ্নির দ্বারা প্রস্তুত ভস্ম গৃহস্থের জন্য আদর্শ।


🟩সমিদ অগ্নি থেকে উদ্ভূত ভস্ম ব্রহ্মচারিদের জন্য আদর্শ। ইত্যাদি।


( চন্দ্রজ্ঞান আগম – ক্রিয়াপাদ – ষষ্ঠ পটল – শ্লোক নং ৩৪-৩৬)


🟥🟥🟥 ভস্ম তৈরীর বিধি 🟥🟥🟥

কপিলা (লালচে বা খয়েরী) বর্ণের গোমাতা(গাভী/গরু) শৈব আগম ও শিবপুরাণ মতে সর্বোত্তম। এর অভাবে যে কোনো বর্ণের গরু প্রযোজ্য হবে।


১. সবার প্রথমে গোমাতার কর্ণে শিব পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র – নমঃ শিবায় জপ করে তাকে শোধন করতে হবে।


২. এরপর গোমাতাকে দেওয়ার পূর্বে জল এবং ঘাসকেও ১০৮ বার পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র নমঃ শিবায় উচ্চারণ করে শোধন করে নিতে হবে।


৩. সাধারনত কৃষ্ণ অথবা শুক্ল পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে সকাল বেলা উঠে নিজেকে শুদ্ধ করে , ধ্যান-আসনাদি করে , স্নান করে, ধৌত বস্ত্র পরিধান করে উপবাস থেকে এই রীতি পালন করা দরকার।


৪. গোমাতাকে শুদ্ধিকৃত জল , তৃণ অর্পণের পর গোমাতার পবিত্র মূত্র সংগ্রহের পূর্বে গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে এবং তারপর মাটির বা তামার বা চাঁদির পাত্রে অথবা পদ্ম বা পলাশ গাছের পাতায় পবিত্র গোমূত্র সংগ্রহ করতে হবে।


✅বৈদিক গায়ত্রী মন্ত্র –


ॐ ভূর্ভূবঃ স্বঃ ।

তৎসবিতুর্বরেণ্যম্ ভর্গো দেবস্য ধীমহি ।

ধীয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ ॥


[ অথবা কেউ বৈদিক শিব গায়ত্রী পাঠ করতে চাইলেও করতে পারেন – ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥ ]


৫. সাথে এর আগে সেই সংগ্রাহক পাত্রটিকেও পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র নমঃ শিবায় মারফত শুদ্ধ করে নেওয়া বা বাঞ্ছনীয়।


৬. অন্যদিকে পবিত্র গোবরকে ভূমি স্পর্শ করার আগেই সংগ্রহ করে হবে একই জাতীয় কোনো পাত্রে।


৭. এরপর গোময় কে শুদ্ধ করতে হবে নমঃ শিবায় পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্রের ৮ বার উচ্চারণ মারফত এবং গোমূত্রকে শোধন করতে হবে ১০ বার পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র উচ্চারণ মারফত।


৮. এরপর ভবায় নমঃ মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে গোময় ও গোমূত্রকে পরস্পর মেশাতে হবে।


৯. এরপর শর্বায় নমঃ জপ করতে করতে সেই মণ্ডটির ১৪ টি ছোট ছোট গোল খন্ড করতে হবে।


১০.এরপর মণ্ডগুলিকে সূর্যালোকে শুকিয়ে নিতে হবে তারপর ৭ বার নমঃ শিবায় পঞ্চাক্ষরী মহামন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা সেই শুকোনো পিণ্ড গুলিকে পূর্বের সেই তাম্র বা রৌপ্য বা মাটির পাত্রে রাখতে হবে।


১১. এরপর শৈবাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতে হবে শৈব আগমোক্ত পদ্ধতি অনুযায়ী। [কয়েকদিনের মধ্যেই শৈবাগ্নি প্রজ্জ্বলনের শৈব আগমোক্ত বৃহৎ বিধি আনা হবে ISSGT এর পক্ষ থেকে।] সময়ের অভাবে আপনারা অঘোর মন্ত্রোচ্চারণ পূর্বক শিবাগ্নি জ্বালিয়ে সেটিকে ভস্ম তৈরীর কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। শিবমহাপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতা অনুযায়ী অঘোর মন্ত্রোচ্চারণ পূর্বক প্রজ্জ্বলিত অগ্নিই শিবাগ্নি। (বৈদিক অথবা আমগমোক্ত যে কোন একটি মন্ত্র পাঠ করবেন)


✅অঘোর ( বহুরূপ ) মন্ত্র – 


👉বৈদিক – ॐ অঘোরেভ্যো অথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ । সর্বেভ্যঃ সর্ব শর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥


👉শৈব আগমোক্ত – ॐ হুং অঘোর হৃদয়ায় নমঃ ॥


১২. এরপর সেই পিণ্ডগুলিকে সেখানে ছাড়তে হবে একে একে এবং প্রত্যেকবার জপ করতে হবে

ॐ নমঃ শিবায় স্বাহা এবং য় বা শি মঃ ন ॐ স্বাহা (reverse ordered) পরপর।


১৩. সব পিণ্ড ছাড়া হয়ে গেলে তারপর সেগুলিকে পুড়তে দিতে হবে সাথে জপতে হবে – ॐ নমঃ শিবায় ॐ ।


১৪. এরপর অগ্নিতে নৈবেদ্য প্রদান করতে হবে সাথে উচ্চারণ করতে হবে –


নিধনপতয়ে নমঃ ।

নিধনপতান্তিকায় নমঃ ।


(মহানারায়ণ উপনিষদোক্ত মন্ত্র)


১৫. তারপর পঞ্চব্রহ্ম মন্ত্র এবং নমঃ দেবায় শম্ভবে স্বাহা মন্ত্র পাঠ করতে করতে ঘৃতাহুতি দিতে হবে।


১৬. তারপরে অষ্টমূর্তির নামে অগ্নিতে আহুতি দিতে হবে। এইভাবে –


ॐ ভবায় শিবায় স্বাহা

ॐ শর্বায় শিবায় স্বাহা

ॐ মৃডায় শিবায় স্বাহা

ॐ রুদ্রায় শিবায় স্বাহা

ॐ হরায় শিবায় স্বাহা

ॐ শম্ভবে শিবায় স্বাহা

ॐ মহেশ্বরায় শিবায় স্বাহা

ॐ শিবায় শিবায় স্বাহা


(চন্দ্রজ্ঞান আগম- ক্রিয়াপাদ-ষষ্ঠ পটল – শ্লোক নং ১৭)


১৭. এরপর সেই অগ্নিতে তিনবার স্বিষ্টাকৃৎ আহুতি

দিতে হবে –


ॐ অগ্নয়ে স্বিষ্টিকৃতে স্বাহা মন্ত্রোচ্চারণ পূর্বক (পূর্ব-কামিকাগমোক্ত মন্ত্র) সাথে পাঠ করতে হবে পঞ্চাক্ষর মন্ত্র নমঃ শিবায় ।


১৮. ধানের তুষ বা পুলক সংগ্রহ করতে হবে তারপর সেই তুষ দ্বারা সেই প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকে ঢেকে দিতে হবে। কিন্তু তাঁর পূর্বে বলতে হবে –


শৈবানামাহরিষ্যামি সর্বেষাং কর্মগুপ্তয়ে ।

জাতবেদসমেনং ত্বাং পুলকৈশ্ছাদয়াম্যহম্ ॥


১৯. কিন্তু আগুন যাতে নিভে না যায়। কম আচে যেন সেটা তিনদিন ধরে গরম থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।


২০. তিনদিন পর স্নান করে সাদা বস্ত্র পরে ত্রিপুণ্ড্র লাগিয়ে সেই তুষ সরিয়ে সেখান থেকে পবিত্র ভস্ম সংগ্রহ করতে হবে সাথে জপতে হবে – পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র নমঃ শিবায় ।


২১. তারপর সেই ভস্মকে শুদ্ধ করতে উচ্চারণ করতে হবে সদ্যোজাত মন্ত্র দ্বারা। (বৈদিক বা আগমোক্ত যেকোনো একটি মন্ত্র)


✅সদ্যোজাত মন্ত্র –


👉বৈদিক – ॐ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ ।

ভবে ভবে নাতিভবে ভবস্ব মাম্ ।

ভবোদ্ভবায় নমঃ ॥


👉শৈব আগমোক্ত – ॐ হং সদ্যোজাতমূৰ্তয়ে নমঃ ॥



২২. তারপর বামদেব মন্ত্র জপ করতে করতে সেটাকে মিহি গুঁড়ো করে ফেলতে হবে।


✅বামদেব মন্ত্র –


👉বৈদিক – ॐ বামদেবায় নমো জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায় নমো রুদ্রায় নমঃ কালায় নমঃ কলবিকরণায় নমো বলবিকরণায় নমো বলায় নমো বলপ্রমথনায় নমঃ সর্বভূতদমনায় নমো মনোন্মনায় নমঃ ॥


👉শৈব আগমোক্ত – ॐ হিং বামদেবগুহ্যায় নমঃ ॥


২৩. তারপর তাতে সুগন্ধি জল , গোমূত্র এবং কর্পূর , কুমকুম , কস্তুরী , চন্দন , খুসখুস , আগর গাছ (Agarwood) এসবের মূল ও বাকল গুঁড়ো করে দিতে হবে।


২৪. তারপর সেগুলিকে মিশিয়ে করে ভস্মের বল/মন্ড তৈরী করতে হবে সাথে জপ করতে হবে – পঞ্চাক্ষর মহামন্ত্র নমঃ শিবায় এবং সাথে দশবার অঘোরমন্ত্র এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে।


✅অঘোর ( বহুরূপ ) মন্ত্র –


👉বৈদিক – ॐ অঘোরেভ্যো অথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ । সর্বেভ্যঃ সর্ব শর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥


👉শৈব আগমোক্ত – ॐ হুং অঘোর হৃদয়ায় নমঃ ॥


তারপর সেটা শুকিয়ে গেলেই ভস্মের বল তৈরী। সেখান থেকে তারপর প্রয়োজন মত ভস্ম গুঁড়ো করে নিতে হবে।


🟩এবার একটি কৌটো তে ভস্ম ভরে সুরক্ষিত রাখুন, প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।


॥ সমাপ্ত ॥


🚩প্রচারে – International Shiva Shakti Gyan Tirtha – ISSGT


© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত