শ্রীশ্রীপার্বতী পূজা পদ্ধতি (শিবমহাপুরাণোক্ত)

 


দেবী পার্বতী স্বয়ং আদ্যাশক্তি শিবজায়া, তিনি বেদে ব্রহ্মবিদ্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তার পূজা বিধি প্রকাশ করা হল ISSGT(International Shiva Shakti Gyan Tirtha)এর পক্ষ থেকে। পূজা বিধিটির বিধান দিয়েছেন শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী।


পার্বতী মাতার আরাধনার পদ্ধতি শিবমহাপুরাণে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের এই বাংলাতে দেবী পার্বতীর আরাধনার দৃষ্টিকোণ একটু আলাদা। মাতা পার্বতী অন্নপূর্ণা , বাসন্তী ও দূর্গা হিসেবে এখানে পূজিত হন ৷ বাংলাতে শঙ্করপত্নী হিসেবে পরমেশ্বর শিবের বামভাগে বসিয়ে পূজিত হ‌ওয়ার কথা খুবই বিরল । অথচ পশ্চিমবাংলা বাদে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যতে দেবী পার্বতীর আরাধনা খুব বেশি প্রচলিত রয়েছে। দক্ষিণ ভারতে এর প্রভাব খুব বেশি। গুজরাত , মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশ , উত্তরপ্রদেশ , কর্ণাটক , তামিলনাড়ু ও তেলঙ্গানাতে মাতা পার্বতীকে শিবপত্নী হিসেবে আরাধনা প্রচলিত আছে । দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে মঙ্গলা গৌরী ব্রত , জয়া-পার্বতী ব্রত ও জ্যৈষ্ঠ গৌরী ব্রত সেই অঞ্চলের গৃহবধূ তথা অবিবাহিতা কন্যারা ঘরে ঘরে পালন করে থাকেন । দেবী পার্বতীর এই অর্চনা পদ্ধতি টি শিবমহাপুরাণ হতে নেয়া হয়েছে, এটি বাংলার প্রচলিত অনান্য তন্ত্রোক্ত আচারের পূজাপদ্ধতি নয় ।


🔴মাতা পার্বতী আরাধনার সময়কাল


👉মাস অনুসারে দেবী পার্বতীর আরাধনার তিথি —

বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, শ্রাবণ ও ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ,পৌষ,মাঘ,ফাল্গুন ও চৈত্রমাসের — শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি।

আশ্বিন মাসের — শুক্লপক্ষ তিথির নবরাত্র (প্রতিপদ থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত) ও চতুর্দশী।

এছাড়া যেকোনো মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী , নবমী ও অমাবস্যা এবং শুক্লপক্ষের পঞ্চমী ও দশমী তিথি ।


🔥এছাড়াও চৈত্র মাসের বাসন্তী পূজার শুক্লা নবমী তিথি হল মাতা পার্বতীর মর্তে আবির্ভাব (দিব্যজন্ম) তিথি। এই তিথিতে মাতার আরাধনা করা হয়। এই পূজার সঠিক সময় হল নবমী তিথি চলাকালীন ব্রহ্মমুহূর্ত(ভোর ৩:৩০মিনিট থেকে ৫:৫০মিনিট পর্যন্ত)। অথবা নবমীর যেকোনো সময় এই পূজা করতে পারেন।


⭕আশ্বিন মাসের নবমী তিথিতে মাতা পার্বতীর যে আরাধনা করা হয় সেই তিথি উল্কানবমী নামে বিখ্যাত।


🔴পার্বতী মায়ের আরাধনার ফল –

বিবাহিত মহিলারা সংসারে সুখ শান্তির নিমিত্তে ও পুরুষেরা বিদ্যা , ধন , স্ত্রী , সন্তান প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে এবং অবিবাহিত মহিলারা সৌভাগ্য ও ভালাে স্বামী প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে দেবী পার্বতীর আরাধনা তথা ব্রতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করেন । এছাড়া নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই মাতা পার্বতীর পূজা করতে পারেন। এছাড়া দেবী পার্বতীর আরাধনা করার ফল সম্পর্কে আরো জানতে শিবমহাপুরাণের উমা সংহিতার ৫১নং অধ্যায় পাঠ করুন। 

🔴 পার্বতী মাতার পূজার সামগ্রী


১) দেবী পার্বতীর একটি মূর্তি অথবা প্লাস্টিক ল্যামিনেশন করা একটি ছবি । দেবীর ডান পাশে একটি শিবলিঙ্গ অথবা মহাদেবের একটি ল্যামিনেশন করা ছবি রাখবেন । দেবীর বাম পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশের একটি মূর্তি বা ল্যামিনেশন করা একটি ছবি রাখবেন । অথবা শিবপরিবারের একত্রের ছবিও ব্যবহার করতে পারেন ।নিচে দুটি ছবি দেওয়া হল প্রয়ােজনে আপনার ইচ্ছা মত এইগুলিকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে ফটো ফ্রেম করে বাঁধিয়ে নিতে পারেন ।

উপরোক্ত এই ছবিতে একবার স্পর্শ করে নিন প্রথমে, তারপর ছবিটির ভেতরে ঢুকে গিয়ে ছবিটির উপর আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করুন দু সেকেন্ড সময় মতো, দেখবেন ডাউনলোড অপশন পাবেন, ওই ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে ছবিটি High Quality তে ডাউনলোড করুন।

অথবা এক‌ই ভাবে এই নীচের ছবিটি ডাউনলোড করুন - 



২) তামা অথবা পিতলের একটি থালা, ঘটি ও গ্লাস

৩) কিছুটা গোটা আতপচাল

৪) অভিষেকের জন্য গরুর দুধ (কাঁচা), [অথবা যদি পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করাতে চান তবেই

গরুর দুধ, মধু, ঘি, দ‌ই ও চিনি সংগ্রহ করবেন]

৫) কিছু গন্ধপুষ্প (বিষ্ণুকান্তা এবং তুলসী বাদে) এবং সাধ্য থাকলে ১ টি পদ্মফুল (কারণ এটি মাতার প্রসন্নকারীপুষ্প) ও লাল জবা ফুল,

৬) কিছু বেলপাতা

৭) পানীয় জল

৮) ধূপ (সম্ভব হলে অষ্টাদশাঙ্গ ধূপ)

৯) চন্দন

১০) নৈবেদ্য হিসাবে গোটা একটি পাকা ফল এবং আপনার সাধ্যমত অন্য প্রসাদ হিসেবে মিষ্টান্ন ও অন্য ফলসমূহ।

১১) গন্ধ হিসেবে অগুরু

১২) দূর্বাঘাস

১৩) কর্পূর

১৪) ঘি ও কর্পূরের দীপ

১৫) গঙ্গাজল

১৬) জপের জন্য রুদ্রাক্ষমালা (অথবা স্ফটিকমালা/ রক্তচন্দনকাঠেরমালা/বেলকাঠের মালা) অথবা হাতের শৈবমালাতে জপ করবেন।

১৭) একটি ছোট পরিষ্কার কাপড়। 


[যদি কুমারী কন্যা পূজা করতে চান তবে তাকে পূজার পূর্বে যে কোনো সময় পবিত্র মনে দেবীরূপে পূজা করার জন্য আমন্ত্রন করে আসবেন, পূজার সময় উপস্থিত হলে সেই কুমারী কন্যা কে এনে আসনে বসাবেন এবং নিম্নোক্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে যথা সময়ে কুমারী কন্যাকে পূজা করবেন]


শৈবশাস্ত্রে বলা হয়েছে, যদি পার্বতী মাতার আরাধনার সময় কুমারী কন্যা কে পার্বতী রূপে পূজা করে ভোজন করে তৃপ্ত করানো হয় তবে নারীজাতির প্রতিক মাতা পার্বতী সেই উপাসকের প্রতি অতি প্রসন্ন হয়ে সদয় হন, সেই উপাসকের সমস্ত আপদ বিপদ দূর করে দেন এবং ভোগ ও মোক্ষ প্রদান করে থাকেন।


[🟣শিবমহাপুরাণে বলা হয়েছে যে পূজার মধ্যে শিব সহ দেবী পার্বতীকে দোলনায় রেখে তাদের দোল দিতে হয়, এতে দেবীর কৃপার ভাগীদার হন উপাসক, তাই যদি কেউ পূজার সময়ে দেবীকে দোলনায় রেখে দোল দিতে চান তবে ছোট একটি দোলনা বানিয়ে সেটি ফুল দিয়ে সাজাবেন এবং দেবীর চিত্রটি বা শিবসহিত দেবীপ্রতিমাটি সেখানে রেখে অতি সাবধানে দোলাবেন। কিছু সময় দোল দেবার পর দেবীর স্থানে দেবীকে স্থাপন করে দেবেন । নিচের পূজা বিধি অনুসরণ করে যথা সময়ে এটি করবেন] 

🔴 পূজার দিনের কর্মসূচি


✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –

কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥

তারপর স্নান সেরে কপাল সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করুন এবং গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন । পূজা যতক্ষন না সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষন উপবাস থাকতে হবে। পরিষ্কার বস্ত্র ধারণ করতে হবে। তখন পুনরায় কপাল সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করুন এবং গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন। পূজার তিথি যতক্ষন আছে সেই সময়ের মধ্যে যখন ইচ্ছা তখন পূজা করতে পারবেন ।


⭕রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন নিচের যে কোনো একটি মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে —

রুদ্রগায়ত্রী মন্ত্র 👇

ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্র প্রচোদয়াৎ ॥

অথবা এই শৈব পরম্পরার মন্ত্রে 👇

রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।

নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥


🔴পার্বতী মাতার আরাধনার শুভারম্ভ


✅ পুজোর স্থানে এসে কুশের আসন অথবা কম্বলের আসন পেতে বসুন।

✅ হাতজোড় করে শিবস্মরন করুন —

কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥

✅ এবার হাতজোড় করে ঋগ্বেদীয় শিবসংকল্পসূক্ত পাঠ করুন –

পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ ।

তৎপরাৎ হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

যো বৈ বেদ মহাদেবং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

য সর্বং যস্য চিৎসর্বং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

কৈলাসশিখরাভাসা হিমবদ্গিরিসংস্থিতা ।

নীলকন্ঠং ত্রিনেত্রং চ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

(ঋগ্বেদ সংহিতা /খিলানি/ ৪ নং অধ্যায় / ১১ নং খিলা)


✅ নিজ গুরুকে স্মরণ করুন —

অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম ।

তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।।


✅এবার ধূপ ও ঘিয়ের দীপ জ্বেলে নিন।


✅প্রথমে ব্রতসংকল্প করতে হবে —


ডান হাতের তালুতে কিছু অল্প পরিমাণে জল , ফুল ও গোটা আতপ চাল নিয়ে নিন।

তারপর বলুন —

শিবর্নমােহদ্য (মাসের নাম) মাসি (পক্ষের নাম) পক্ষে (তিথির নাম) তিথৌ (নিজের গােত্র) গােত্রা শ্ৰী / শ্রীমতী (নিজের নাম) (যে উদ্দেশ্যে পূজা করছেন) কামায় উমা পূজাতদুব্রতকর্মাহং করিষ্যে ।


এরপর হাতে ধারণ করা বস্তুগুলি নীচে মাটিতে দিয়ে দিন ।


✅ হাতজোড় করে সংকল্প সূত্র পাঠ করুন –

ॐ নমঃ পার্বত্যৈ নমােহস্তুতে ।

কর্তুমিচ্ছাম্যহং উমাপূজাব্রতং তব ।

তব প্রভাবাদ্দেবেশী নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।

কামাদ্যাঃ শত্রুবাে মাং বৈ পীড়াং কুর্বন্তু নৈবহি ।


✅এবার বিশুদ্ধিকরণ করে নিন — পূজার প্রত্যেকটি সামগ্রীর উপরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিন নিম্নোক্ত মন্ত্র বলতে বলতে 👇

ॐ নমঃ শিবায় ॥ 

✅ এবার শৈব আচমন করুন , যার ফলে বাক , মন এবং চিত্ত শুদ্ধি হয় —


ডান হাতের তালুটি নৌকার মতো করে তার মধ্যে একটি মাষকলাই ডুবে যায় এই পরিমাণ জল নিয়ে হাতের ব্রাহ্মতীর্থে মুখ লাগিয়ে সেই জল পান করুন নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করতে করতে -


ॐ আত্মতত্ত্বায় স্বধা‌ ॥


পুনরায় আবার জল নিয়ে আগের মতো পান করুন নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করে -


ॐ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বধা ॥


আবার সেই ভাবে জল নিয়ে জলপান করুন নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করতে করতে -


ॐ শিবতত্ত্বায় স্বধা ॥

 


☘️এবার ভগবান গণেশজীর পূজা করুন —

চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা সহিত হাতে নিয়ে উচ্চারন করুন – ॐ গাং গণেশায় নমঃ ॥


এবার উক্ত দ্রব্য গণেশজীকে প্রদান করে দিন।


☘️ কার্তিকের চিত্র থাকলে তাতে ভগবান কার্তিকেয় জীর পূজা করুন — চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা সহিত হাতে নিয়ে উচ্চারন করুন – ॐ স্কন্দায় নমঃ ॥


এবার উক্ত দ্রব্য কার্তিকেয় জীকে প্রদান করে দিন । অথবা শিবলিঙ্গতেও কার্তিকেয় ও গণেশ জীকে কল্পনা করে পূজা করতে পারেন।


💠 এবার পরমেশ্বর প্রভু শিবের পূজন সম্পন্ন করুন —


✅এবার পরমেশ্বর শিবকে জল দ্বারা অভিষেক করান ভক্তিযুক্ত মনে এই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে ।


☘️ মহামৃত্যুঞ্জয় মহামন্ত্র –


ॐ ত্রয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥


এবার সমগ্র জলটি শিবলিঙ্গ ঢেলে দিন।


✅এবার শ্বেতচন্দন সহ ফুল বেলপাতা পরমেশ্বর শিবকে অর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে –

ॐ নমঃ ভগবতে শ্রীসাম্বসদাশিবায় সচন্দন গন্ধপুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলী সমর্পয়ামি ॥


✅এবার হাতজোড় করে শিব প্রনামমন্ত্র পাঠ করুন।


☘️ শিব প্রনামমন্ত্র –

ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে ।

নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর ॥


✅অতঃপর ধূপ দীপ দিয়ে তাদের পূজা করুন।


🔴এবার দেবী পার্বতীর মাতার আহ্বান করুন —


✅ এবার পার্বতী মাতার সামনে সাধ্যমত ভোগসহ ভোগপ্রসাদের থালাগুলি মাতাকে সাজিয়ে দিন পানীয় জলপূর্ণ গ্লাস সাজিয়ে দিন । পানীয় জলে খুব ই সামান্য পরিমাণ কর্পূর দিয়ে দেবেন।


✅পার্বতী মাতার সামনে নিজের হাতে আবাহনী মুদ্রা ধারণ করে ভক্তিসহকারে হয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করুন👇



☝️হাতটি এইভাবে করুন, এটি আবাহনী মুদ্রা, এবার নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করুন👇

অস্মদ উমাপূজাং করিষ্যে ।

ওঁ শিবপ্রিয়ায় আবাহয়ামি নমঃ ।

ওঁ স্কন্দমাতয়ে আবাহয়ামি নমঃ ।

ওঁ শক্তিয়ে আবাহয়ামি নমঃ ।

ওঁ শঙ্করীয়্ আবাহয়ামি নমঃ ।

ইত ব্যুষ্টতি ইত ব্যুষ্টতি ইত ব্যুষ্টতি ।


✅এরপর দেবী পার্বতী মাতাকে অভিষেক করাতে হবে – 

গরুর দুধ ও চন্দন , কর্পূর , অগুরু ও দূর্বা দ্রব্যগুলি একত্রে মিশিয়ে নেবেন একটি ঘটিতে, এটি দিয়ে অবগাহন করাবেন ।


[⭕মনে রাখুন – যারা পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করতে ইচ্ছুক তারা পঞ্চামৃত সহ চন্দন , কর্পূর , অগুরু ও দূর্বা দ্রব্যগুলি একত্রে মিশিয়ে নেবেন একটি ঘটিতে, এটি দিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে অবগাহন করাবেন এবং শেষে ছোট পরিষ্কার কাপড় টি দিয়ে দেবীকে পরিষ্কার করে দেবেন]


☘️একটি মাঝারি সাইজের তামা অথবা পিতলের থালার মধ্যে দেবীর মূর্তি বা চিত্রটি রাখুন ।


☘️একটি ছােটো তামা বা পিতলের ঘটিতে গােদুগ্ধ নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে অল্প অল্প করে ঢেলে দেবীপ্রতিমা কে সরাসরি স্নান করাতে পারেন নিম্নোক্ত স্নান করানোর মন্ত্র উচ্চারণ করে।

কিন্তু দেবীচিত্রের ক্ষেত্রে ঐ মিশ্রিত দ্রব্যের ঘটির মধ্যে চার পাঁচটি দূর্বা ভিজিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে চিত্রের উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ ছিটিয়ে ছিটিয়ে স্নান করাবেন এবং শেষে ছোট পরিষ্কার কাপড় টি দিয়ে দেবীকে পরিষ্কার করে দেবেন।


☘️স্নান করানোর মন্ত্র 👇


ॐ নমঃ পরমকল্যাণ গুণসঞ্চয় মূর্তয়ে ।

ত্বওঃ খলু সমুৎপন্নং জগত্ত্বয্যেব লীয়তে ॥

ত্বদ্বিনাতঃ ফলং দাতুমীশ্বরোঽপি ন শক্ নুয়াৎ ।

জন্মপ্রভৃতি দেবেশি জনােঽয়ং ত্বদুপাশ্রিতঃ ।

অতোহস্য তব ভক্তস্য অবগাহন স্বীকারতে ॥


✅ এবার ছোট পরিষ্কার কাপড় টি দিয়ে দেবীকে পরিষ্কার করে দিন।


✅ হাতে একটি ফুল নিয়ে পার্বতীদেবীর বিগ্রহ বা চিত্রের সম্মুখে ধ্যান আসনে বসে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করে চোখ বন্ধ করে দেবী পার্বতীর ধ্যান করুন —


গৌরীং রত্ন নিবন্ধ নূপুররণৎ পাদম্বুজামিষ্টদাং কাঞ্চী রত্নদুকূল হারনিনদাং নীলাং ত্রিনেত্রোজ্জ্বলাম ।

শূলাদ্যস্ত্রসহস্র মণ্ডিত ভূজামুদ্বৃত্ত তুঙ্গস্তনীমাবদ্ধামৃত রশ্মিরত্মমুকুটাং বন্দে মহেশপ্রিয়াম ॥


☘️ ধ্যান অন্তে হাতের ফুল টি নিজের মাথায় রেখে দিন।


✅ এবার ধূপ দীপ নৈবেদ্য জল ফুল দ্বারা ভক্তিসহকারে পূজা করুন।


✅ পার্বতী মাতার সামনে সাধ্যমত সাজিয়ে রাখা ভোগসহ ভোগপ্রসাদের থালাগুলি এক এক করে মাতাকে নিবেদন করুন ৷ পানীয় জলপূর্ণ গ্লাস নিবেদন করুন।


☘️ এক এক করে মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা প্রসাদপূর্ণ পাত্র গুলি এবং একটি গোটা পাকা ফল মাতার সম্মুখে তুলে ধরে বলুন – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, নৈবেদ্যং সমর্পয়ামি ॥


☘️ এবং পানীয় জলপূর্ণ গ্লাসটি মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে মাতার সম্মুখে তুলে ধরে বলুন – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, পানার্থ পয়ঃ সমর্পয়ামি ॥


☘️ এবার হাতে পদ্ম বা লাল জবা অথবা অন্য যেকোনো ফুল স্বল্প পরিমাণে নিয়ে মাতা পার্বতীকে সমর্পিত করুন ভক্তিভরে এই নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, পুষ্পং সমর্পয়ামি ॥


☘️এবার ধূপ দ্বারা আরতি প্রদান করুন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে — ॐ নমঃ শিবায়ৈ, ধূপমাঘ্রাপয়ামি ॥


☘️ভক্তি সহকারে নিজ হাতে দীপ নিয়ে নিম্নলিখিত এই মন্ত্র উচ্চারণ করে পরমেশ্বরী মাতা পার্বতীকে প্রদান করবেন —

দীপং হি পরমং পার্বতী ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।

দত্তং গৃহাণ দেবেশী মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥

দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।

গৃহাণ পরমেশানী মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥

দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বরী ।


বাংলাতে সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন –


হে পার্বতী মাতা , এই ঘৃতপ্রজ্বলিত পরম দীপ তোমাকে প্রদান করলাম । ইহা গ্রহণ করো দেবেশী এবং আমাকে জ্ঞান প্রদান করো ॥

হে পরমেশানী, তোমার শান্তির নিমিত্ত আমি এই সর্বৌষধি সমুদ্ভাসিত বিশিষ্ট দীপ প্রদান করলাম, ইহা তুমি গ্রহণ করো ॥

হে পরমেশ্বরী, আমার দ্বারা নিবেদন করা এই দীপাবলী তুমি গ্রহণ করো জননী ।


[⭕যেকোনো আরতির সময়ে শাঁখ , ঘন্টা , কাঁসর প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন]


✅ শিবমহাপুরাণ অনুসারে পার্বতী মাতার পূজাতে মাতৃসূক্ত বা শ্রীসূক্ত বা দেবীসূক্ত বা মূলমন্ত্র পাঠ করতে হয় ।

অথঃ দেবীসূক্ত

ॐ অহং রুদ্রেভিঃ বসুভিঃ চরামি অহং আদিত্যৈঃ উত বিশ্বদেবৈঃ।

অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্মি অহং ইন্দ্ৰাগ্নী অহং অশ্বিনা উভা ॥১॥

অহং সোমং আহনসং বিভর্মি অহং ত্বষ্টারং মুত পৃষণং ভগম্ ।

অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে ॥২॥

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ ।

তাং মা দেবাঃ ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূরি আবেশয়ন্তীম্ ॥৩॥

ময়া সোঽঅন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্ ।

অমন্তবোমান্ত উপক্ষিয়ন্তি শ্রুধিশ্ৰুত শুদ্ধিবং তে বদামি ॥৪॥

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ ।

যং কাময়ে তং তমুগ্ৰং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধাম্ ॥৫॥

অহং রুদ্রায় ধনুরা তনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ ।

অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ ॥৬॥

অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্ মম যোনিরপস্ব অন্তঃ সমুদ্রে।

ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো তামূং দ্যাং বর্ষ্মণোপ স্পৃশামি ॥৭॥

অহমেব বাত ইব প্র বাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা।

পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈ তাবতী মহিনা সং বভূব ॥৮॥

ॐ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ॥


✅এবার মাতা পার্বতীর মূলমন্ত্র ১০৮বার জপ করুন জপ মালাতে👇


॥ ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✅ হাতে একটু ফুল নিয়ে পার্বতী গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করে মাতার চরণে প্রদান করুন —

ॐ জগন্মাত্রে বিদ্মহে শৈলসুতায়ৈ ধীমহি । তন্নো পার্বতী প্রচোদয়াৎ ॥


✅এবার হাতজোড় করে বলুন –


প্রসীদ ভগবত্যাদ্যে প্রসীদ শিবরূপিণী ।

প্রসীদ ভক্তবরদে জগন্মায়ে নমোঽস্তু তে ॥


বাংলাতে সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন —


হে ভগবতী আদ্যাশক্তি ! আমার ওপর প্রসন্ন হোন , হে শিবরূপিনী শিবা ! আমার ওপর প্রসন্ন হোন । হে ভক্তবরদায়িনী আমার ওপর প্রসন্ন হোন , হে জগন্মায়ে আপনাকে আমার নমস্কার ॥


✅ অতঃপর নিজের হাতে কিছু গোটা আতপচাল , চন্দনযুক্ত ফুল ও বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করুন —


জয়াম্বিকে জগন্মাতর্জয় সর্বজগন্ময়ি ।

জয়ানবধিকৈশ্বর্যে জয়ানুপমবিগ্রহে ॥

জয় বাঙ্মমনসাতীতে জয়াচিদ্ ধ্বান্তভঞ্জিকে ।

জয় জন্মজরাহীনে জয় কালোত্তরোত্তরে ॥

জয়ানেকবিধানস্থে জয় বিশ্বেশ্বরপ্রিয়ে ।

জয় বিশ্বসুরারাধ্যে জয় বিশ্ববিজৃম্ভিণি ॥

জয় মঙ্গলদিব্যাঙ্গি জয় মঙ্গলদীপিকে ।

জয় মঙ্গলচারিত্রে জয় মঙ্গলদায়িনি ॥

সদাশিবাঙ্কমারূঢ়া শক্তিরিচ্ছা শিবাহ্বয়া ।

জননী সর্বলোকানাং প্রযচ্ছতু মনোরথম ॥


এবার আতপচাল সহ ফুলবেলপাতা গুলি অর্পন করুন মাতা পার্বতীর চরণে ।


☘️ হাতজোড় করে নিম্নোক্ত প্রণাম মন্ত্র পাঠ করে দেবী আদ্যাশক্তি পার্বতী মাতাকে প্রনাম করুন —


জয় দুর্গে মহেশানি জয়াত্মীয়জনপ্রিয়ে । ত্রৈলোক্যত্রাণকারিণ্যৈ শিবায়ৈ তে নমো নমঃ ॥

নমো মুক্তিপ্রদায়িন্যৈ পরাম্বায়ৈ নমো নমঃ ।

নমঃ সমস্তসংসারোৎ পত্তিস্থিত্যন্তকারিকে ॥ কালিকারূপসম্পন্নে নমস্তারাকৃতে নমঃ।

ছিন্নমস্তাস্বরূপায়ৈ শ্রীবিদ্যায়ৈ নমোঽস্তু তে ॥

ভুবনেশি নমস্তুভ্যং নমস্তে ভৈরবাকৃতে ।

নমোঽস্তু বগলামুখ্যৈ ধূমাবত্যৈ নমো নমঃ ॥

নমস্ত্রিপুরসুন্দর্যে মাতঙ্গ্যৈ তে নমো নমঃ ।

অজিতায়ৈ নমস্তুভ্যং বিজয়ায়ৈ নমো নমঃ ॥

জয়ায়ৈ মঙ্গলায়ৈ তে বিলাসিন্যৈ নমো নমঃ।

দোগ্ধ্রীরূপে নমস্তুভ্যং নমো ঘোরাকৃতেঽস্তু তে ॥

নমো অপরাজিতাকারে নিত্যাকারে নমো নমঃ । শরণাগতপালিন্যৈ রুদ্রাণ্যৈ তে নমো নমঃ ॥

নমো বেদান্তবেদ্যায়ৈ নমস্তে পরমাত্মনে। অনন্তকোটিব্রহ্মাণ্ডনায়িকায়ৈ নমো নমঃ৷৷

ॐ উমাহেশ্বরাভ্যাং নমঃ

ॐ গৌরয়ে নমঃ ।

ॐ সাম্বশিবায় নমঃ ।

ॐ হ্রীং পার্বত্যৈ নমঃ ।

ॐ হ্রীং নমঃ শিবায়ৈ । ॐ হ্রীং নমঃ শিবায়ৈ । ॐ হ্রীং নমঃ শিবায়ৈ ॥


☘️ মাতা পার্বতীকে প্রণাম করে ভক্তিসহকারে মাতার কাছে প্রার্থনা করুন –

মহিষগ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনি।

দ্রব্যমারোগ্যবিজয়ং দেহি দেবি নমোহস্ত তে ভূতপ্রেতপিশাচেভ্যে রক্ষোভ্যশ্চ মহেশ্বরি।

দেবেভ্যো মানুষেভ্যশ্চ ভয়েভ্যো রক্ষ মাং সদা ॥

সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সব্বার্থসাধিকে।

উমে ব্রহ্মাণি কৌমারি বিশ্বরূপে প্রসীদ মে॥৩৩


বাংলাতে সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন —

হে মহিষঘ্নি! হে মহামায়ে! হে চামুণ্ডে ! হে মুণ্ডমালিনি! আমাকে অভীষ্ট বস্তু, আরোগ্য ও বিজয় দান কর ।

হে দেবি! তোমাকে নমস্কার ।

হে মহেশ্বরি! ভূত, প্রেত, পিশাচ, রাক্ষস, দেবতা, মনুষ্য এবং যাবতীয় ভয় হইতে আমাকে সতত রক্ষা কর ।

হে সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে ! হে শিবে! তুমি বিশ্বরূপা ও সৰ্ব্বার্থসাধিকা,

অতএব হে উমে! হে ব্ৰহ্মাণি ! হে কৌমারি ! আমার প্রতি প্রসন্না হও ।


[মাতা পার্বতীর আর‌ও অনান্য পবিত্র স্তোত্র পাঠ করতে পারেন, নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করে পাঠ করতে পারেন 👉 শ্রীশ্রীপার্বতীস্তোত্রসমূহ]


🌺-------[[[যদি আপনি কুমারী পূজা করতে চান তবেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। নচেৎ এড়িয়ে যান🔴এবার মাতা পার্বতীর কুমারী রূপে আপনার আমন্ত্রন করে আনা কন্যাকে পূজা করুন।


☘️কুমারী কন্যাকে দেবী পার্বতীর সামনে বসিয়ে দিন। একটি পাত্রে তার চরণ দুটি জল দিয়ে ধুয়ে দিন । তারপর মুছিয়ে দিন।

✅এবার নিজের হাতে চন্দনসহ লাল ফুল ও বেলপাতা নিয়ে হাত জোড় করে বলুন – ॐ হ্রীং নমঃ শিবায়ৈ । পুষ্পার্ঘ্য সমর্পয়ামি ॥

✅ এবার ফুল গুলি কুমারী কন্যার চরণে সমর্পন করুন।

✅এবার কুমারী কন্যাকে দেবী ভাবনা করে প্রণাম করুন এই মন্ত্র পাঠ করে — ॐ নমামি কুলকামিনীং পরম ভাগ্য সন্দায়িনীং

কুমার রতিচাতুরীং সকলসিদ্ধিমানন্দিনীম্ ।

ষ্রবালগুটিকাস্রজং রজতরাগবস্ত্রান্বিতাং

হিরণ্যতুল্যভূষণাং ভুবনবাক্ কুমারীং ভজে ॥

✅এরপর পুনরায় মাতা পার্বতীর কাছে প্রার্থনা করুন এবং পূজা অন্তে দেবীজ্ঞানে কুমারী কন্যা কে নিজ হাতে অন্ন মিষ্টান্ন তথা অনান্য খাদ্য খাইয়ে দিন। তাকে সর্বোতোভাবে তৃপ্ত করবেন, ভুল করেও তাকে অসন্তুষ্ট করবেন না এবং শেষে তাকে আনন্দ সহকারে গৃহে পৌঁছে দিয়ে আসবেন ]]]]]----------🌺


✅মাতা পার্বতীর কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করুন —

পাহি দেবী জনানস্মান্ প্রপন্নান্ দীনবৎসলে


বাংলাতে সরল ভাবেও সুরক্ষা প্রার্থনা করতে পারেন –

হে দীনবৎসলে দেবী পার্বতী মাতা ! আমি আপনার শরণাগত , আপনি আমাদের রক্ষা করুন ।


✅ ঘরে সুখ শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন –

মুনিঅনুশাসন গনপতি হি পূজেহু শম্ভু-ভবানি ।

কোউ সুনি সংশয় করে জনি সুর অনাদি জিয় জানি ॥ (লোকাচারের মন্ত্র)


✅ ইচ্ছিত বর অথবা বধূ পাওয়ার জন্য এই মন্ত্রে প্রার্থনা করুন –

হে গৌরী শঙ্করার্ধাঙ্গী যথা ত্বং শংকরপ্রিয়া ।

তধা মাং কুরু কল্যাণী কান্ত কান্তাং সুদুর্লভাম্ ॥


✅কার্যসিদ্ধির নিমিত্তে এই মন্ত্র জপ করুন —

উং ক্লীং বাগ্বাদিনী ভগবতী মম কার্যসিদ্ধি কুরুফুরুফট স্বাহা ॥

[🟣যারা দেবীকে দোলনায় দোল দিতে চান একমাত্র তারা শিব সহিত দেবীপার্বতীকে দোলনায় রেখে পাঁচ মিনিট দোল দেয়ির পর তথা স্থানে দেবীর স্থানে দেবীকে স্থাপন করে দেবেন]


✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

সদাকার্যে দাসৈরেনঃ ক্ষমাপনম্ ।

প্রসীদ পরমেশানি জগদানন্দদায়িনি ॥অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব পার্বতী ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে জগদম্বা পার্বতী ! আমি আপনার দাস হয়ে সদাকার্য করি, আমার ত্রুটি ক্ষমা করুন, হে জগতের আনন্দদায়িনি পরমেশ্বরী ঈশানি আপনি প্রসন্ন হোন ।আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]

ফুলটি মাতার শ্রীচরণে প্রদান করে দিন ।

✅ এবার কর্পূর জ্বেলে আরতি করুন


[🔴আরতির সময় পার্বতী আরতি ভজন সঙ্গীত নিজে গায়ন করতে পারেন অথবা সঙ্গীত টি অনলাইনে চালিয়ে নিতে পারেন। নিচে লিঙ্ক দেয়া হল, এখানে ক্লিক করে সরাসরি শুনুন অনলাইনে👉 শ্রীপার্বতী আরতি ভজন ]https://youtu.be/XJgbLGFzzy0


🔴আরতি অন্তে অবশেষে মাতার পার্বতীর কাছে শিবভক্তি চেয়ে মিনতি করুন —

মন্ত্র –

শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।

ভক্ত্যা ময়ার্চিতো মহ্যং প্রার্থিতং শং প্রয়চ্ছতু ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে জননী পার্বতী ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। আমি ভক্তিসহকারে আপনার সেবা অর্চনা করেছি, আপনি আমাকে প্রার্থিত কল্যাণ প্রদান করুন]


[⭕সম্ভব হলে দেবীর পূজার শেষে দেবীর ভজন সঙ্গীত গায়ন করতে পারেন, তার সহিত বাদ্য যন্ত্র বাজাতে পারেন, এতে প্রভু শিবের সহিত দেবী পার্বতী মাতা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে থাকেন]


🌺🌸 মাতা পার্বতীর আরাধনা সম্পূর্ণ হল 🌸🌺


⬛খাদ্য খাবারের বিষয় :

মাতা পার্বতীর যে কোনো ব্রত করার সময় নিরামিষ আহার গ্রহণ করবেন। লবন ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করবেন। ব্রতের দিন লবন খাওয়া নিষিদ্ধ।


☝যে সমস্ত অপকর্ম থেকে বিরত থাকবেন :

১)মিথ্যাচার করবেন না,

২)বাজে চিন্তা করবেন না,

৩)বাজে ভাষা প্রয়োগ করবেন না,

৪)কারোর অপকার করবেন না,

৫)মাদকদ্রব্য সেবন করবেন না,

৬)স্ত্রী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন,

৭)পশুপাখিকে পীড়া দেবেন না অথবা হত্যা করবেন না,

৮)অকারণে বৃক্ষকে পীড়া দেবেন না,

৯)ঘর থেকে কখনো ভিক্ষুক কে খালি হাতে ফেরাবেন না,

১০)বাচ্চাদের বিরক্ত করবেন না।

🌞যা করলে আপনার ব্রতের ফল পাওয়া সহজ হবে তথা আরো বেশি ফলদায়ক হবে :

১)মাতা পিতার প্রতি বিনয়ী হয়ে তাদের শিব শিবা রূপে দেখবেন এবং তাদের সাথে সদব্যবহার করবেন,

২)পশুপাখিদের খাদ্য প্রদান করবেন,

৩)সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন,

৪)দরিদ্র মানুষের সহায়তা করবেন প্রসন্ন ভাবে,

৫)সর্বদা শিবগৌরীনাম হৃদয়ে ধারণ করে সবার উপকারের কথা চিন্তা করবেন, নচেৎ ব্রতের ফল তো নষ্ট হবেই বরং উল্টো ফল হতে পারে।


অতএব, সর্বদা জগৎ কল্যাণের চিন্তা করবেন।


॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥

॥ ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✒️সংগ্রহে ও লেখনীতে – শ্রীকৌশিক রায় শৈবজী

©️ Copyright এবং প্রচারে – International Shiva Shakti Gyan Tirtha


© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt108.blogspot.com


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত