একাদশ রুদ্রগণের বৃত্তান্ত (শিবমহাপুরাণোক্ত)

এটি একাদশীর দিন পাঠ করা অবশ্যই উচিত । এটি সংগ্রহ করেছেন শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী। প্রচারে - ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha)


বৃত্তান্তের শুভারম্ভ :

 ব্রহ্মার মানসপুত্র সনৎ কুমার শিবের বিভিন্ন স্বরূপের পবিত্র বৃত্তান্ত শ্রবণ করবার জন্য শিবভক্ত নন্দীমহারাজের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। 

তখন নন্দীকেশ্বর বললেন -

 আমি শংকরের একাদশ শ্রেষ্ঠ অবতারদের বর্ণনা করছি, শোনো। এটি শুনলে অসত্যাদিজনিত বাধা পীড়া দিতে পারে না। পূর্বকালের কথা, একবার ইন্দ্রাদি সমস্ত দেবতা দৈত্যদের দ্বারা পরাজিত হন। তাঁরা তখন ভীত হয়ে নিজেদের পুরী অমরাবতী ছেড়ে পলায়ন করেন। দৈত্য দ্বারা অপদস্ত হয়ে এইসব দেবতা কশ্যপের কাছে যান। সেখানে তাঁরা অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে হাতজোড় করে মস্তক নত করে তাঁকে অভিবাদন করেন এবং ভালোভাবে তাঁর স্তব করে শ্রদ্ধাসহকারে তাঁদের আসার কারণ জানালেন এবং দৈত্য দ্বারা পরাজিত হওয়ায় তাঁদের সমস্ত দুঃখের খবর তাঁকে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করলেন। তাত! তখন তাঁদের পিতা কশ্যপ দেবতাদের কষ্টের কথা শুনেও বেশি দুঃখ পেলেন না; কারণ তাঁর বুদ্ধি শিবে আসক্ত ছিল। মুনে! সেই শান্তবুদ্ধি মুনি ধৈর্য ধরে দেবতাদের আশ্বস্ত করলেন এবং নিজে পরম আনন্দিত মনে বিশ্বনাথপুরী কাশী রওনা হলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি গঙ্গাজলে স্নান করে নিজের নিত্যকর্ম পূর্ণ করলেন এবং শ্রদ্ধাসহকারে উমাসহ সর্বেশ্বর ভগবান বিশ্বনাথের ভালোভাবে অর্চনা করলেন। পরে শম্ভু দর্শনের উদ্দেশ্যে এক শিবলিঙ্গ স্থাপন করে, -দেবতাদের হিতার্থে পরম প্রসন্নতাসহকারে ভীষণ তপস্যা করতে লাগলেন। 

মুনে! শিবের চরণকমলে অনুরক্ত মনসম্পন্ন ধৈর্যশালী মুনিবর কশ্যপের যখন এইভাবে তপস্যা করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে গেল, তখন সৎপুরুষদের গতিস্বরূপ ভগবান শংকর তাঁর চরণে তল্লীন হওয়া কশ্যপ ঋষিকে বর প্রদান করার জন্য সেখানে প্রকটিত হলেন। ভক্তবৎসল মহেশ্বর তো পরম প্রসন্ন ছিলেনই, তিনি তাঁর ভক্ত মুনিবর কশ্যপকে বললেন – 'বর চাও।' মহেশ্বরকে দর্শন করেই প্রসন্ন বুদ্ধিযুক্ত দেবতাদের পিতা কশ্যপ হর্ষান্বিত হয়ে হাতজোড় করে তাঁর চরণে প্রণাম করে স্তুতি করে বললেন—“মহেশ্বর ! আমি সর্বতোভাবে আপনার শরণাগত। স্বামিন্ ! দেবতাদের দুঃখ দূর করে আমার অভিলাষ পূর্ণ করুন। দেবেশ ! পুত্রদের দুঃখে আমি বিশেষভাবে দুঃখিত। অতএব ঈশ! আমাকে সুখী করুন। কারণ আপনি দেবতাদের সহায়ক। নাথ ! মহাবলী দৈত্যরা দেবতা ও যক্ষদের পরাজিত করেছে, তাই শম্ভো ! আপনি আমার পুত্ররূপে প্রকটিত হয়ে দেবতাদের জন্য আনন্দদাতা হয়ে উঠুন।’


নন্দীশ্বর বললেন— মুনে! 

কশ্যপ এই কথা বলায় সর্বেশ্বর ভগবান শংকর তাঁকে ‘তথেতি' – ‘তাই হবে' বলে তাঁর সামনে থেকে অন্তর্ধান করলেন। কশ্যপও তখন মহানন্দে নিজ স্থানে ফিরে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেবতাদের সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন। ভগবান শংকর তাঁর বচন সত্য করার জন্য কশ্যপ দ্বারা সুরভীর উদর থেকে এগারোটি রূপধারণ করে প্রকটিত হলেন। তখন মহাউৎসব পালন করা হল। সমগ্র জগৎ শিবময় হয়ে গেল। কশ্যপমুনির সঙ্গে সকল দেবতা হর্ষে বিভোর হয়ে গেলেন। তাঁদের নাম রাখা হল—কপালী, পিঙ্গল, ভীম, বিরূপাক্ষ, বিলোহিত, শাস্তা, অজপাদ, অহির্বুধ্ন্য, শম্ভু, চণ্ড ও ভব। এই একাদশ রুদ্রকে সুরভীর পুত্র বলা হয়। এঁরা সুখের আবাসস্থল এবং দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্য শিবরূপে উৎপন্ন। কশ্যপনন্দন বীরবর এই রুদ্রগণ মহাবলপরাক্রম সম্পন্ন ছিলেন ; তাঁরা যুদ্ধে দেবতাদের সাহায্য করে দৈত্যদের সংহার করেছিলেন। এই রুদ্রগণের কৃপায় ইন্দ্রাদি দেবতাগণ দৈত্যদের পরাজিত করে নির্ভয় হয়ে যান। স্থিতচিত্ত হয়ে তাঁরা নিজ কার্যাদিতে নিযুক্ত হন। এখনও শিব-স্বরূপধারী এই সকল মহারুদ্র দেবতাদের রক্ষার জন্য সর্বদা স্বর্গে বিরাজ করেন। তাত! আমি তোমাকে শংকরের একাদশ রুদ্র-অবতারদের বর্ণনা করলাম। এ সবই সমস্ত জগতের পক্ষে সুখদায়ক। এই নির্মল কাহিনী সমস্ত পাপের বিনাশক, ধন, যশ ও আয়ুর প্রদাতা এবং সমস্ত মনোরথ পূরণকারী।


হর হর মহাদেব ॥


(তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/শতরুদ্রসংহিতা/অধ্যায় ১৮)


আরো দেখুন

এখানে ক্লিক করে 👉 একাদশী ব্রত বিধি 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত