একাদশী ব্রত বিধি (শৈবশাস্ত্রোক্ত)
॥ একাদশীব্রত ॥ - এটি সনাতন হিন্দু সমাজে খুব জনপ্রিয় ব্রত গুলির মধ্যে একটি, উভয়পক্ষের একাদশী তিথিতে এই ব্রত পালিত হয়। একাদশী ব্রত বলতে বেশিরভাগ মানুষ বৈষ্ণবদের একাদশী ব্রতকে বোঝে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যে একাদশী তিথিতে শৈবরা এই একাদশী ব্রত পালন করে থাকেন। বর্তমান যুগে শৈব দের পালন করা একাদশী ব্রতটি অপ্রচলিত হয়ে গিয়েছে, তারই সাথে বৈষ্ণবদের অনুষ্ঠিত একাদশী ব্রত খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই সাধারণ ভাবেই আধুনিক কালে জনসাধারণ একাদশী ব্রত বলতে শুধুমাত্র বিষ্ণু-একাদশী ব্রতটি ধারণা করে।
পরমেশ্বর শিবের মহান শৈব সংস্কৃতির পুনরুত্থানের জন্য সেই প্রাচীন "শিব একাদশী ব্রত " সম্পর্কিত তথ্য ও তার নিয়মাবলী ISSGT(International shiva shakti gyan tirtha-) -এর পক্ষ থেকে নিচে তুলে ধরা হল । সম্পূর্ণ শৈব একাদশী ব্রত বিধিটি সংগ্রহ করে লিখেছেন শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী । বিশেষ সহযোগিতা করেছেন শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী ।
🔥 শিব একাদশী ব্রত এর শৈব শাস্ত্রে উল্লেখ :
শিব মহাপুরাণে অন্তর্গত কোটিরুদ্রসংহিতার ৩৭ নং অধ্যায়ে ১০টি শৈব ব্রতের মধ্যে একাদশী তিথিতেও পরমেশ্বর শিবের আরাধনার কথা উল্লেখ রয়েছে।
পরম পবিত্র শ্রী শ্রী শিবগীতার অন্তর্গত ভক্তিযোগ নামক ১৫ নং অধ্যায়ে একাদশী ব্রত করার নির্দেশ দেওয়া আছে।
শিবধর্মপুরাণে একাদশী তিথিতে পরমেশ্বর শিবের ভজনা করার উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও শৈবদের গুরু পরম্পরা শৈব অবধুত পরম্পরাতে এটির নির্দেশ দেয়া আছে এবং সেটি পালিতও হয়ে থাকে ।
☘️ ব্রতের ফল : এই ব্রত পালন করলে দেহশুদ্ধ হয়, মনশুদ্ধ হয়, একাদশরুদ্রের কৃপা লাভ করা যায়, এই ব্রত সমস্ত পাপের বিনাশক, ধন, যশ ও সমস্ত মনোরথ পূরণকারী, আয়ু বৃদ্ধি পায়, অন্তিমে শিবলোক প্রাপ্ত হয়।
☘️ ব্রতের নিয়ম :
১) একাদশী তিথির সারাদিন উপবাস করতে হয় শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ ভাবে উপবাস থাকতে হবে অর্থাৎ এই তিথিতে আহার গ্ৰহণ করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যাবেলা(প্রদোষকালে) পূজা সম্পন্ন করতে হবে । এরপর খাওয়া যাবে। কিন্তু শুক্ল পক্ষের একাদশীতে সম্পূর্ণভাবে খাদ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ, তবে যদি একদিনে উপবাস থাকা অসম্ভব মনে হয় তবে ফল, দুধ, দই প্রভৃতি গ্ৰহণ করা যেতে পারে, কিন্তু ধান,গম,যব, সরিষা জাতীয় কোনো খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। সমগ্র রাত্রি জাগরণ করে শিবমন্ত্র জপ করা উচিত ।
দ্বাদশীর দিন অর্থাৎ একাদশীর পরবর্তী দিনে পারণ করে নিত্য দিনের মতই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
একাদশীতে সারাদিন পরমেশ্বর শিবের ও ১১জন রুদ্রকে স্মরণ করাই হল এই তিথির মূল উদ্দেশ্য ।
২) শিবলিঙ্গে পরমেশ্বর শিবের ১১ জন রুদ্র অর্থাৎ একাদশ রুদ্রকে আরাধনা করতে হয়।
৩) ব্রতের দিন মাদক দ্রব্য গ্ৰহণ নিষিদ্ধ, কোনো প্রাণীকে নির্যাতন করা নিষিদ্ধ, মৈথুন ও বীর্যপাত থেকে বিরত থাকতে হবে, স্ত্রী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টি রাখতে হবে।
[মনে রাখবেন - পরমেশ্বর শিবকে বৈষ্ণব বলে ভাবনা করে পূজা করবেন না, যদি এমন ভাবনা করে পূজা করেন তবে নরকের ভাগী হবেন, প্রভু শিবকে অদ্বিতীয় পরমেশ্বর পরমব্রহ্ম পরমাত্মা ও সকলের একমাত্র আরাধ্য মনে করে আরাধনা করবেন, তবেই ব্রতের সম্পূর্ণ ফল পাবেন।]
☘️ পূজার উপকরণ :
১) একটি শিবলিঙ্গ অথবা একটি শিবমূর্তি(শিবলিঙ্গ ও শিবমূর্তির অভাবে শিব চিত্রে পূজা করতে পারেন)
২)অভিষেকের জন্য গঙ্গাজল অথবা শুদ্ধ জল
৩) বেশকিছু গোটা ফুল (অন্তত ১১টি অথবা ১৫টি)
৪) সাধ্যমতো মিষ্টান্ন ও পাকা ফল।
৫) অন্তত ১৫টি অথবা ১ টি বেলপাতা।
৬) চন্দন বা ভস্ম।
৭) ধুপ, দীপ
৮) ভগবান্ শিবের জন্য একগ্লাস পানীয় জল।
৯) দূর্বা, আতপ চাল
🔵🔵🔴🔴ব্রতের শুভারম্ভ 🔴🔴🔵🔵
সকালের করণীয় কার্য :
🔴 সকালের করনীয় কর্ম :
✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –
কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।
সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ।।
✅ সকালে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন ।
🔵 এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ বিধি
✅এবার ব্রত সংকল্প করুন এই মন্ত্রে(অথবা সরল বাংলা ভাষাতেই বলুন) –
🛑 মন্ত্র – দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।
কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব একাদশীব্রতং তব ॥
তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।
কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়া কুর্বন্তু নৈব হি ॥
(অথবা এই সহজ ভাষায় সংকল্প করুন,
বলুন – দেবদেব মহাদেব হে নীলকন্ঠ আপনাকে নমস্কার করি। হে দেব পরমেশ্বর! আমি আপনার একাদশীব্রতের অনুষ্ঠান করতে চাই। হে মহেশ্বর প্রভু শিব ! আপনার প্রভাবে এই ব্রত যেন সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় এবং কামাদি শত্রু যেন আমাকে পীড়া প্রদান না করে)
সন্ধ্যাবেলায় মূল পূজার শুভারম্ভ :
পূজার স্থানে এসে বসুন কিছুটা গঙ্গাজল হাতে নিয়ে 'ॐ নমঃ শিবায়' বলে ছিটিয়ে দিন।
✅ সর্বপ্রথম বৈদিক মন্ত্রে শিবস্মরণ করুন –
ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈ রার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
✅এবার হাতজোড় করে শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –
ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।
যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
✅ ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ ॥
✅ নিজ গুরুকে স্মরণ করুন।
এরপর ধূপ দীপ জ্বেলে নিন। ঘিয়ের দীপ জ্বালাতে পারেন।
নিজ সাধ্যমত পাকা ফল ও মিষ্টান্ন প্রসাদ হিসেবে প্রভু শিবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন নিচের এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে - ॐ শিবার্পণমস্ত ॥
এবার শিবলিঙ্গে জল দ্বারা অভিষেক করুন (গঙ্গাজল দিয়েও করতে পারেন অথবা শুদ্ধ জল)
✅ হাতে এক ঘটি জল নিয়ে পাঠ করুন মহামৃত্যুঞ্জয় মহামন্ত্র –
ॐ ত্র্যয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।
উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥
এবার সমগ্র জলটি শিবলিঙ্গ বা শিবমূর্তিতে ঢেলে দিন ॐ নমঃ শিবায় মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে।
[যদি শিবলিঙ্গ না থাকে তবে বেলপাতা জলে ভিজিয়ে উপরোক্ত মহামৃত্যুঞ্জয় মহামন্ত্র পাঠ করে ॐ নমঃ শিবায় বলতে বলতে ছবির উপর সামন্য ছিটিয়ে দেবেন, আর নিম্নোক্ত পদ্ধতিটিও এভাবেই ছিটিয়ে ছিটিয়ে সম্পন্ন করবেন]
✅এবার আলাদা আলাদা ভাবে একাদশ রুদ্রের উদ্দ্যেশ্যে মন্ত্র পাঠ করে শিবলিঙ্গে একটু একটু করে জল প্রদান করুন -
১) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ কপালায় নমঃ ।
২) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ পিঙ্গলায় নমঃ ।
৩) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ ভীমায় নমঃ ।
৪) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ বিরূপাক্ষায় নমঃ ।
৫) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ বিলোহিতায় নমঃ ।
৬) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ শাস্তায় নমঃ ।
৭) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ অজপাদায় নমঃ ।
৮) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ অহির্বুধ্নায় নমঃ ।
৯) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ শম্ভবে নমঃ ।
১০) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ চণ্ডায় নমঃ ।
১১) একটু জল দিন এই মন্ত্রে - ॐ ভবায় নমঃ ।
✅এবার অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য হাতে দূর্বা চন্দন বেলপাতা আতপচাল নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –
রূপং দেহি যশো দেহি ভোগং দেহি চ শঙ্কর
ভুক্তিমুক্তিফলং দেহি গৃহীত্বার্ঘ্যং নমোঽস্তু তে ॥
✅ এবার একটি করে চন্দনযুক্ত বেলপাতা ও ফুল নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে ১১বার একাদশ অর্থাৎ ১১ জন রুদ্রগণের উদ্দ্যেশ্যে মন্ত্র পাঠ করে শিবলিঙ্গে (অথবা শিবের চিত্রতে) প্রদান করুন -
১) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ কপালায় নমঃ ।
২) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ পিঙ্গলায় নমঃ ।
৩) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ ভীমায় নমঃ ।
৪) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ বিরূপাক্ষায় নমঃ ।
৫) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ বিলোহিতায় নমঃ ।
৬) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ শাস্তায় নমঃ ।
৭) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ অজপাদায় নমঃ ।
৮) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ অহির্বুধ্নায় নমঃ ।
৯) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ শম্ভবে নমঃ ।
১০) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ চণ্ডায় নমঃ ।
১১) ফুল বেলপাতা দিন এই মন্ত্রে - ॐ ভবায় নমঃ ।
[যদি আপনার কাছে এত ফুল পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তবে একবারই ফুল বেলপাতা দিন শিবলিঙ্গে এই মন্ত্র পাঠ করে - ॐ একাদশরুদ্রায় নমঃ ]
✅হাতে বেলপাতা সহ ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলী প্রদান করুন এই মন্ত্রে –
অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া।
কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥ তাবকস্ত্বগতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।
ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥
ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।
ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্ৰভো ॥
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
✅ এবার পরমেশ্বর শিবের ষড়াক্ষর মহামন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন - ॐ নমঃ শিবায় ॥
✅ এবার ধূপ-দীপ দিয়ে আরতি করুন ।
✅ এবার চন্দন নিবেদনের জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –
সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো ।
ভক্ত্যা পরময়া শম্ভো সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥
✅ এবার দাড়িয়ে ঘন্টা বাজিয়ে কর্পূর জ্বালিয়ে আরতি করুন ।
✅ হাতজোড় করে শিবপ্রনাম মন্ত্র পাঠ করে প্রনাম করুন -
ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণত্রয় হেতবে
✅এবার প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।
মন্ত্র –
শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।
অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥
[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]
🔥এবার শৈব একাদশী ব্রত কথা পাঠ করুন -
লোককথা অনুসারে একাদশী ব্রতের কথন :
একদা এক সর্বস্বহারা গরিব বৃদ্ধ শিবভক্ত ব্রাহ্মণ পরমপবিত্র কাশীতে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ দর্শণের জন্য, সেখানে গিয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি তিনদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন বিশ্বেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করবার, বার্ধক্য জনিত কারণে সেখানে যেতে অসমর্থ হন। তিনদিন অপেক্ষা করেও বিশ্বনাথ মন্দিরে ঢুকতে পারেননি, কেননা সেখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু শিবভক্তরা এসে পূজা দিত এবং সেই বিপুলসংখ্যক ভক্তের সমাগমে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ সেখানে প্রবেশের সুযোগ পাননি, তিনি সেদিন ছিলেন ক্ষুধার্ত, তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।
দৈববশত সেই স্থানের মাটির নীচে ছিল একটি শিবলিঙ্গ, যার মধ্যে একাদশ রুদ্র লিঙ্গ বর্তমান ছিল। ঐ বৃদ্ধের অশ্রু নীচের দিকে মাটিতে ঝড়ে পড়তে লাগলো, তখন সন্ধ্যাও হয়ে গিয়েছে, তিথি ছিল একাদশী তিথি।
বৃদ্ধ খুবই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবেগের সহিত হা মহেশ্বর হা মহেশ্বর বলে কাঁদতে লাগলেন, তারপর তিনি রুদ্র গণেদের ডেকে বলতে লাগলেন হে কপালি, হে বিরূপাক্ষ, হে ভব ইত্যাদি ইত্যাদি নাম উচ্চারণ করে বলতে লাগলেন আমি মৃত্যুমুখী, আমার শিবদর্শন কিভাবে হবে ? আমি তো দুঃখসাগরে নিমগ্ন হলাম, আমার প্রভুর দর্শন করতে আমি অসমর্থ, হে প্রভু আমি অসহায়, আমার কি তবে তোমার দর্শন হবে না ?
এভাবে কাতর স্বরে ডাকতে ডাকতে তার অশ্রু দ্বারাই ১১ জন রুদ্রগণের অভিষেক সম্পন্ন হল । বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে পড়লেন।
ঠিক তখনই রুদ্রগণ সহিত পরমেশ্বর সদাশিব প্রকটিত হয়ে সেই বৃদ্ধ কে কোলে তুলে নিয়ে বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রবেশ করেন।
রাত্রির সময়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। কিন্তু শিব কৃপায় সেই বন্ধ অবস্থাতেই বৃদ্ধকে নিয়ে মূল মন্দিরের ভেতরে শিব প্রবেশ করেন।
বিশ্বনাথ মন্দিরের ভেতরে তাকে রেখে অদৃশ্য হয়ে যান। এদিকে কিছু সময় পর বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখলেন সাক্ষাৎ বিশ্বেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ তার সামনে, তিনি ঐ দৃশ্য দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে জ্যোতির্লিঙ্গ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। অনেকক্ষণ পর তার মনে হল আমি এখানে কি করে এলাম ?
সে এটি প্রভু শিবের লীলা বলেই মনে করে আনন্দেই কাঁদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন হে পরমপিতা তুমি কত দয়ালু , তা নাহলে আমি এখানে এলাম কিভাবে ।
তখন পরমেশ্বর রুদ্র দর্শন দিয়ে তাকে এবং তার সাথে থাকা ১১জন রুদ্রগণেরা তাকে আয়ু প্রদান করলেন, তার প্রানবায়ুর ক্ষমতা বৃদ্ধি করলেন, তাকে যুবকে রূপান্তরিত করলেন । পরমেশ্বর শিব তাকে একাদশী তিথির মাহাত্ম্য ও বিধি বর্ণনা করে বললেন যিনি এই তিথিতে শিবের একাদশী ব্রত পালন করেন তিনি চারপুরুষার্থ লাভ করেন, অন্তিমে সমস্ত লোকের ঊর্ধ্বে বিরাজমান শিবলোক প্রাপ্ত করেন। পরমেশ্বর শিবের কৃপায় তিনি রুদ্রলোকে কিছুকাল আনন্দ উপভোগ করে মর্তে পুণরায় অবতরণ করে মহাসুখভোগ করে জীবনের অন্তিমে সাধনার দ্বারা শিবত্ব প্রাপ্ত করে কৈবল্যস্বরূপ শিবলোকে স্থিত হলেন ।
🔴এবার একাদশ রুদ্রের বৃত্তান্ত পাঠ করুন এখানে ক্লিক করে 👉 একাদশ রুদ্রের বৃত্তান্ত একাদশী ব্রত কথা
✅এবার পরমেশ্বর শিব ও একাদশরুদ্রগণেদের স্মরণ করে প্রনাম করুন। একাদশী তিথির পূজা সম্পন্ন হল ।
সারা রাত্রি জাগরণ করে নিজ সাধ্যমত শিবমন্ত্র ॐ নমঃ শিবায় জপ করুন । নিজের ইচ্ছে মতো শিবগীতা পাঠ করুন, শিবমহাপুরাণ পাঠ করুন, শরভ উপনিষদ, কৈবল্য উপনিষদ, অথর্ব-শির উপনিষদ, কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ, দক্ষিণামূর্তি উপনিষদ, রুদ্রহৃদয় উপনিষদ প্রভৃতি পাঠ করুন ।
তারপর পরদিন সকালে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করে পারণ মন্ত্র পাঠ করে ব্রত সম্পন্ন করে শিবপ্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করুন ।
প্রনাম করে "ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব" উচ্চারণ করে উচ্চস্বরে ধ্বনী দিন ।
॥ শৈব একাদশী ব্রত বিধি সমাপ্ত ॥
নমঃ শিবায় ।।
© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com
আরো দেখুন
শিব শিব
উত্তরমুছুন