দুর্গাপূজায় স্মার্ত ও বৈষ্ণবাচারী পুরোহিত দের ভ্রষ্টাচার থেকে সাবধান

 দুর্গাপূজায় স্মার্ত ও বৈষ্ণবাচারী পুরোহিত দের ভ্রষ্টাচার থেকে সাবধান 😨


আমাদের ISSGT গ্রুপে যারা পুরোহিত হিসেবে দুর্গাপূজার দায়িত্বে আছো, তাদের কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন ।


বর্তমান সমাজে স্মার্তাচার ও বৈষ্ণবদের অপপ্রচারের শিকার হয়ে সমস্ত পূজাতেই ভ্রষ্টাচারে দেবদেবীদের পূজা হয়ে চলেছে।


পরমেশ্বর দুর্গা দেবীর পূজাতেও সেই এক‌ই ভ্রষ্টাচার দ্বারা পূজা হচ্ছে।


কালিকাপুরাণ বা বৃহৎনন্দীকেশ্বর পুরাণে বর্ণিত দুর্গাপূজার পদ্ধতিতে দুর্গাপূজা হলেও, সেখানারকার বেশ কিছু নিয়মে মা দুর্গার নাম বা শক্তিপতি পরমেশ্বর শিবের নামের স্থানে  বারংবার অন্যদেবতার নাম নেওয়া হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলি, 


🟦স্মরণ মন্ত্র উচ্চারণ করবার সময় বা আচমন করবার সময় স্মার্তাচার/বৈষ্ণবাচারের পরিপন্থী হয়ে পুরোহিতেরা 

বলছে —


"ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

 তদ্ বিষ্ণু পরমংপদম্ সদাপশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ॥ 

ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

অথবা

মাধব মাধব কেশব কেশব"


🟨 শুদ্ধি মন্ত্র উচ্চারণ করবার সময় স্মার্তাচার/বৈষ্ণবাচারের পরিপন্থী হয়ে পুরোহিতেরা 

বলছে — 

নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সৰ্ব্বাবস্থাং গতোঽপি বা। 

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরে শুচিঃ ॥


🟩 দুর্গাপূজার সময় বা অন্য পূজার সময়েও পুরোহিতেরা বলে থাকে "মাধব প্রীত্যর্থে" অর্থাৎ এই পূজা বিষ্ণুর প্রসন্নতার জন্য করা হচ্ছে।


এসব শুনে মনে হয় না এটা দুর্গাপূজা...... 

মনে হয় যেন এটা বিষ্ণুপূজা....


এই কাজগুলো মূলত কলিকালের প্রভাবেই হচ্ছে, মাতা আদ্যাশক্তি কি বলেছে দেখে নিন 👇

মোহনাত্মক শাস্ত্র পঠন ও শিব বিদ্বেষ


দেব্যুবাচ্-


" বামং কাপালকঞ্চৈব ভৈরবাগমঃ ।

শিবেন মোহনার্থায় প্রণীত নান্যহেতুকঃ ॥ ২৭”

 (নবমোহধ্যায়ঃ, দেবীগীতা)


♦️অনুবাদ - বাম, কাপাল, কৌল, ভৈরব তন্ত্র এসব মহাদেব শুধুমাত্র জগৎবাসীকে মোহনের নিমিত্ত প্রণয়ন করেছেন, এরপেছনে আর অন্যকোনো কারণ নেই।


"কাপালিকমতাসত্তা বৌদ্ধশাস্ত্ররতাঃ সদা । পাষন্ডাচারনিরতা ভবত ব্ৰাহ্মণাধমাঃ ॥ ৭২

পাঞ্চরাত্রে কামশাস্ত্রে তথা কাপালিকে মতে ।

বৌদ্ধে শ্রদ্ধাযুতা যূয়ং ভবত ব্ৰাহ্মণাধমা ॥ ৭৫  শিবোৎসবদিদৃক্ষায়াং শিবভক্তস্য পূজনে ।

রুদ্রাক্ষে বিল্বপত্রে চ তথা শুদ্ধে চ ভস্মানি । ভবতানুন্মূখা যূয়ং সৰ্ব্বদা ব্রাহ্মণাধমাঃ ॥ ৬৪, ৬৫ ॥ ” ( নবমোহধ্যায়ঃ, দ্বাদশ স্কন্দঃ, দেবীভাগবত উপপুরাণম্)


♦️অনুবাদ- বৌদ্ধশাস্ত্রানুসারী কাপালিক মত পাষণ্ডাচার হিসেবে পরিগণিত হবে। হে ব্রাহ্মণাধম তোমরা কলিযুগে পাঞ্চরাত্র(বৈষ্ণবশাস্ত্র), কামশাস্ত্র, কাপালশাস্ত্র ও বৌদ্ধশাস্ত্রের মতো নিম্নমানের শাস্ত্রেই শ্রদ্ধান্বিত হবে। শিবপূজনে, শিবভক্তপূজনে, রুদ্রাক্ষ, বিল্বপত্র পবিত্র ভস্ম ধারনে তোমরা বিমুখ হয়ে পড়বে।


     — মা দুর্গা নিজেই দেবীভাগবতপুরাণে বলেছেন যে, কলিযুগে অবৈদিক তন্ত্র, বৌদ্ধবাদী গ্রন্থের, বৈষ্ণবীয় পাঞ্চরাত্রের নিয়মের পরিপন্থী হয়ে সবাই ভ্রষ্টাচার পালন করবে ও প্রচার করবে। মায়ায় মোহিত হবার কারণে কেউ শৈবমার্গ অবলম্বন করবে না, কেউ ভস্মত্রিপুণ্ড্র কপালে ধারণ করবে না, এরা শিবভক্ত শৈবদের শ্রদ্ধা করবে না বরং অশ্রদ্ধা করবে, শিবপূজা করবে না।


শিবরাত্রির সময়েও এই এক‌ই কাজ করে স্মার্তাচারী/বৈষ্ণবাচারেপুষ্ট পুরোহিতেরা।

অবশ্য এনাদের কোনো দোষ নেই, মধ্যযুগীয় গোড়া স্মার্ত তথাকথিত ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা তথা বৈষ্ণবেরা এভাবেই প্রচার করে করে সবার মাথাতে এই ভ্রষ্টাচারকে প্রবেশ করিয়েছে ।

পুরোহিত দর্পনে এসব ছেপে কয়েক শতক ধরে এসব পুস্তক ই সমাজে পুরোহিত দের জন্য পূজা করবার নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে, ফলে এসব পুস্তকে যা লেখা থাকে সেটিই মেনে সমস্ত পূজা করা হয়ে থাকে , এই কারণেই ভ্রষ্টাচার ভালোমতো জায়গা দখল করে নিয়েছে আমাদের সমাজে।


সমস্ত আগম-বেদ, পুরাণ, ইতিহাস তথা সমগ্র সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের জ্ঞান প্রকাশ করেছেন শক্তিপতি পরমেশ্বর শিব।

একারণেই প্রভু পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যে বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের পরিশিষ্ট ভাগের ঈশান মন্ত্রে বলা হয়েছে — "ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং"

 

দুনিয়ায় যত বিদ্যা আছে প্রভু শিব সেই সমগ্র বিদ্যার পতি । বিদ্যা অর্থ শক্তি — তাই প্রভু শিবকে শক্তির পতি বলা হয়।


তাই

দুর্গাপূজা বা যে কোনো দেবদেবীর পূজার শুরুতেই গণেশ স্মরণ, গুরু স্মরণ করে তারপর সেই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিবের স্মরণ করা আবশ্যক ও কর্তব্য ।


আসুন প্রকৃত শাস্ত্রসম্মত শিবস্মরণ মন্ত্র , শুদ্ধিমন্ত্র, আচমন মন্ত্র জেনে নিন।


🚩 ১ম পদ্ধতি —


"ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

 তদ্ বিষ্ণু পরমংপদম্ সদাপশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ॥ 

ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

অথবা

মাধব মাধব কেশব কেশব" 

‌                       — এর স্থানে প্রত্যেক পুরোহিতেরা তথা সকলেই দুর্গাপূজায় এই “ শিবস্মরণ মন্ত্র ” ব্যবহার করবেন 👇  👇

✅ সর্বপ্রথম শিবস্মরণ করুন – 


ॐ শিবঃ ॐ শিবঃ ॐ শিবঃ বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈরার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥ 

ॐ নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥

শিবঃ ॐ তৎ সৎ ॥


[ শিবায়ৈ - শব্দটি মা আদ্যাশক্তি দুর্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, শিবমহাপুরাণে 'নমঃ শিবায়ৈ' মন্ত্রকে মা আদ্যাশক্তির মূল মন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে]


(তথ্যসূত্র : বৈদিক ভস্মজাবাল উপনিষদ/২/৭)


🚩২য় পদ্ধতি —


নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সৰ্ব্বাবস্থাং গতোঽপি বা। 

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরে শুচিঃ ॥

                          — এর স্থানে প্রত্যেক পুরোহিতেরা তথা সকলেই দুর্গাপূজায় এই “ শুদ্ধিমন্ত্র ” ব্যবহার করবেন 👇  👇


এবার শৈব আগম শাস্ত্রোক্ত শুদ্ধিমন্ত্র জেনে নিন 


✅এবার শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –


ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।

যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ‌‌॥

ॐ নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥


[ বিরূপাক্ষ - শব্দটির পরমেশ্বর শিবের একটি পরমপবিত্র নাম ]


(তথ্যসূত্র : শৈব আগম/কারণ আগম/তৃতীয় পটল/ ১২ নং মন্ত্র)


🚩৩য় পদ্ধতি —


"ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

 তদ্ বিষ্ণু পরমংপদম্ সদাপশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ ॥ 

ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ ॐ বিষ্ণুঃ

অথবা

মাধব মাধব কেশব কেশব" 

‌                       — এর স্থানে প্রত্যেক পুরোহিতেরা তথা সকলেই দুর্গাপূজায় এই “ শৈব আচমন মন্ত্র ” ব্যবহার করবেন 👇  👇


তিনবার হাতে জল নিয়ে এক একবার করে একটি একটি মন্ত্র উচ্চারণ করে আচমন করবেন।


ॐ আত্মতত্ত্বায় স্বধা । 

ॐ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বধা। 

ॐ শিবতত্ত্বায় স্বধা ।


🟥 সম্পূর্ণ আচমন বিধি জানবার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিন 👇

শৈব আচমন বিধি (শৈব আগমোক্ত)

https://issgt100.blogspot.com/2021/12/Shaiva%20Achman%20Vidhi%20or%20mahatmya%20.html


🚩 ৪র্থ পদ্ধতি —

    

"মাধব প্রীত্যর্থে" — এই শব্দের স্থানে “শিবশিবা প্রীত্যর্থে দুর্গাপূজা করিষ্যামি" অথবা শিব সংকল্পসূক্ত পাঠ করবেন 👇


✅ঋগ্বেদীয় শিবসংকল্পসূক্ত পাঠ করুন –


পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ ।

তৎপরাৎ হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

যো বৈ বেদ মহাদেবং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

য সর্বং যস্য চিৎসর্বং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

কৈলাসশিখরাভাসা হিমবদ্গিরিসংস্থিতা ।

নীলকন্ঠং ত্রিনেত্রং চ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥


এরপর সমস্ত আরাধনা সফল হোক এই প্রার্থনার জন্য ঈশান মন্ত্র পাঠ করুন — 

 

✅ বৈদিক ঈশান মন্ত্র :


 ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ॥


শেষে বলি, 

দুর্গা পূজা তথা সমস্ত দেবদেবীর পূজার সময়ে পুরোহিত সহ সকল সনাতনীদের কপালে ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করে পূজা করা আবশ্যক, রুদ্রাক্ষ ধারণ করা আবশ্যক।

(যার রুদ্রাক্ষ মালা নেই সে অন্তত কপালে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কন করে পূজা করবেন, এতে সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি‌ও প্রচার হবে, মানুষ আপনাকে দেখে সনাতন ধর্মের সংস্কৃতিকে জানতে পারবে, শিখতে পারবে। পূজার সমস্ত ফল‌ও লাভ হবে, সমস্ত দেবদেবী সহ পরমেশ্বর শিব অত্যন্ত প্রসন্ন হবেন)


দুর্গাপূজার সময় ভগবান কার্তিকেয়্ ও ভগবান গণেশ জীর  কপালে বৈষ্ণব তিলক এঁকে রাখছে শিল্পীরা, এই অশাস্ত্রীয় কাল্পনিক কাজ করা বন্ধ করতে হবে। ত্রিপুণ্ড্র ছাড়া অন্য কোনো তিলকে এঁকে অশাস্ত্রীয় কাজ করবেন না, যা শাস্ত্র নির্দেশ দিয়েছে সেই অনুযায়ী চলুন।


তাই ভগবান কার্তিক ও ভগবান গণেশের কপালে সাদা খড়িমাটি দিয়ে ত্রিপুণ্ড্র এঁকে দিন, স্মার্ত ও বৈষ্ণব আগ্রাসন বন্ধ হোক।

মা দুর্গার কপালেও ত্রিপুণ্ড্র থাকা আবশ্যক।


🟥 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ বিধি জানতে এখানে ক্লিক করে দেখে নিন 👇

ত্রিপুণ্ড্র ধারণ বিধি

https://issgt100.blogspot.com/2021/12/Tripundra%20Dharan.html


বিশেষ সংশয়ের সমাধান 👇👇


🔶 বৈষ্ণবেরা তদ্ বিষ্ণু পরমংপদম্ — এই কঠ উপনিষদের শ্লোক উচ্চারণ করে মনে করে এটি বিষ্ণুর মন্ত্র। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।


শ্রুতিবাক্য 'তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং' -- আসলেই কার পদ ?


জেনে নিন স্কন্দপুরাণে উক্ত শ্লোকের সম্পূর্ণ অর্থ ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে ব্রহ্মা দ্বারা —


শ্রীব্রহ্মা উবাচ্-


সোহধ্বনঃ পারমাপ্নোতি তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদম্‌ ॥২২  পদং যৎপরমং বিষ্ণোস্তদেবাখিলদেহিনাম্ ।

পদং পরমমদ্বৈতং স শিবঃ সাম্ববিগ্রহঃ ॥২৩

রুদ্রবিষ্ণু প্রজেশানামন্যেষামপি দেহিনাম্ ।

ঋতে সাম্বং মহাদেবং কিং ভবেৎপরমং পদম্‌ ॥২৪  "


(স্কন্দপুরাণ/ সূতসংহিতা/ যজ্ঞবৈভবখণ্ড/ উত্তরভাগ/ব্রহ্মগীতা/ অধ্যায় নং ১১)


ভাবার্থ--- সবকিছুর ঊর্ধ্বে সেই বিষ্ণু অর্থাৎ ব্যাপক ব্রহ্মই পরম প্রকৃষ্ট পদ, সেই পরম অদ্বৈত পদই মূলত সাক্ষাৎ শিব, তিনিই সাম্ববিগ্রহ (অর্ধনারীশ্বর)। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্র প্রমুখ দেহধারীদের জন্যও সেই অদ্বিতীয় মহাদেবের পদই পরমপদ। সেই 'ঋতং সত্যং পরমব্রহ্ম পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গল অর্ধনারীশ্বর রূপি মহাদেব ছাড়া পরমপদ আর কেইই বা হতে পারে?


সুতরাং স্কন্দ পুরাণের সুতো সংহিতার মাধ্যমে কঠ উপনিষদের "তদ্ বিষ্ণু পরমং পদম্" শব্দ মূলত পরমেশ্বর শিবকেই বোঝায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে, 

তদ্ বিষ্ণু পরমং পদম্ - শ্লোকটি যদি মহাদেবের হয়ে থাকে তাহলে এটি পূজার সময় বলতে সমস্যা কোথায় ?

তাদেরকে বলছি, আমরা শৈবরা "তদ্ বিষ্ণু পরমং পদম্ " -শ্লোককে প্রভু শিবের বলেই জানি কিন্তু তা সমাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। কেননা, সাধারণ মানুষ “তদ্ বিষ্ণু পরমং পদম্” শ্লোকের অন্তর্নিহিত অর্থ অবগত নন, তাদের কাছে এটি বিষ্ণুমন্ত্র ই মনে হবে।

আর স্মার্ত তথা বৈষ্ণবরা এটিকে বিষ্ণু মন্ত্র বলেই প্রচার করেছে আর এখনো করছে তার‌ই সাথে "মাধব মাধব কেশব কেশব" এমন শব্দ জুড়ে দিচ্ছে । তাই শাস্ত্রঅনুযায়ী এটি শিববাচক শ্লোক হলেও তা  স্মরণ মন্ত্র হিসেবে বা আচমন মন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অনুকূল নয়, 


বেদে ও শৈবআগম শাস্ত্রে স্মরণ মন্ত্রের, শুদ্ধিমন্ত্রের ও আচমন মন্ত্রের জন্য নির্ধারিত মন্ত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের উচিত সেই শাস্ত্র বিধি মেনে চলা। যাতে সঠিক ভাবে পূজার্চনা হতে পারে।


ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পূজায় তার জন্য নির্ধারিত মন্ত্র ব্যবহৃত হোক। কিন্তু অনান্য দেবদেবীর পূজাতে তার প্রাধান্য দেওয়া অনুচিত, একমাত্র সকল দেবদেবী কে স্মরণের সময়ে সকলের সাথে শ্রীবিষ্ণুকেও প্রণাম করা যেতে পারে, কিন্তু অহেতুকভাবে অকারণে সব পূজাতেই বিষ্ণুপ্রাধান্যতা না দিয়ে বরং যে দেবদেবীর জন্য তার যে নির্দিষ্ট পূজাঅনুষ্ঠানের মুহূর্ত রয়েছে তাতে শাস্ত্রসম্মত ভাবে সেই দেবদেবীর প্রসন্নতার জন্য পূজা করা উচিত।


☝️ বিশেষ ঘোষনা — ভগবান শ্রীবিষ্ণু বিরোধীতা করা হচ্ছে না এখানে। বরং অন্য মতের গোড়ামীর আগ্রাসন বন্ধ করবার কথা বলা হয়েছে।


অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সব জেনেও সত্য স্বীকার করতে চাননা, তাদের জন্য ভগবদ্গীতা এটি বলেছেন👇

🔶 যে ব্যক্তি শাস্ত্রের দেওয়া বিধি মান্য না করে নিজের ইচ্ছে মত কার্য করে, তিনি তো সিদ্ধিলাভ করতে পারেনই না, না সুখ পান আর না তার কোন পরমগতি হয় ॥২৩

[তথ্যসূত্র – ভগবদ্ গীতা/অধ্যায় ১৬/শ্লোক ২৩]


সুতরাং, এই কারণেই, সমস্ত পুরোহিত তথা সমস্ত সনাতনীদের বলছি শাস্ত্র অনুযায়ী পূজার্চনা করুন।


জয় মা দুর্গা

জয় পরমশৈব শ্রীহরি

জয় পরমেশ্বর সদাশিবের জয়

শৈব সনাতনঃ ধর্ম বিজয়তে 🚩


✍️ লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য (ISSGT প্রতিষ্ঠাতা)

 Copyright from International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত