১৮ টি পুরাণশাস্ত্র কে কাল্পনিক বলে দাবী করা আর্যসমাজীদের দাবীর খণ্ডন

18 puran authentic


 বর্তমানে আর্যমসমাজী ম্লেচ্ছ রা দাবি করছে যে ১৮পুরাণ বলতে কিছুই ছিল না, এগুলো নাকি ১০০০বছর আগে তৈরি করা নতুন সাম্প্রদায়িক গল্প। 

এদের পাণ্ডা দয়ানন্দ সরস্বতী ওরফে খ্রিষ্টান মতবাদের এক দালাল, যার সত্যার্থ প্রকাশ নামক অপবিত্র পুস্তকের সত্যনাশ করা যুক্তির উপর নির্ভর করে এই আর্যসমাজী পাষণ্ডরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আর্যসমাজীদের ভণ্ডামির একটি দৃষ্টান্ত দিই,

 আর্যসমাজী ওরফে নামাজীরা বেদের অংশ ব্রাহ্মণ ভাগকে ইতিহাস শাস্ত্র বলে দাবি করে, অথচ সনাতনীদের প্রাচীন মান্যতা অনুযায়ী মহাভারত ও রামায়ণ কে ইতিহাস শাস্ত্র বলা হয়। 

 - এবার এদের ভণ্ডামিটা হল এরকম, 

  এই আর্যনামাজীরা একদিকে মহাভারতকে ইতিহাস শাস্ত্র বলে মানে না, অথচ সেই মহাভারতের মধ্যে থাকা মূল চরিত্রগুলো কে নিয়ে প্রচার প্রসার করে, আজকাল মহাভারত কে পুরাতন ভারতের সাহিত্য বলে চিহ্নিত করে প্রচার প্রসার করছে, মহাভারতের মধ্যে থাকা ভগবদগীতা নিয়ে প্রচার করে, এরা নিজেদের আর্যমসমাজী মতের একটা ভগবদ্গীতা ছাপিয়ে প্রচার করছে, যার নাম - শুদ্ধধ্বনী শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা।

 অথচ মহাভারতের যেখানে যেখানে ঈশ্বরের সাকারবাদ রয়েছে বা পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে, সেই সেই অংশ গুলি নাকি প্রক্ষিপ্ত(অর্থাৎ পরবর্তীকালে মহাভারতের মধ্যে সংযোজন করা হয়েছে), কেননা এরা জানে এগুলোকে প্রক্ষিপ্ত না বললে অন্য কোনো যুক্তিতে এরা এগুলো এড়িয়ে যেতে পারবে না। 

আর্যনামাজীদের মতের অনুকূল যে সমস্ত শ্লোক আছে সেগুলিই মান্য আর যে যে শ্লোকের সাথে আর্যনামাজীদের মত মিলবে না সেগুলিই হল প্রক্ষিপ্ত শ্লোক। এইভাবে এরা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কাছে পুরাণ সম্পর্কেও বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। 

এরা পৌরাণিক দের কাছে বারংবার জিজ্ঞাসা করে যে অষ্টাদশ পুরাণের উল্লেখ কোথায় আছে ? 

 আমরা শৈবরা ISSGT থেকে আগেই বলেছি পুরাণ শাস্ত্র ঈশ্বরের বানী, যা একটি পুরাণ শাস্ত্র হিসেবেই উপস্থিত ছিল, কিন্তু দ্বাপর যুগে ব্যাসদেব তা সংক্ষিপ্ত ও ১৮টি ভাগে বিভক্ত করে ১৮পুরাণে পরিনত করেন । 

কিন্তু একথা আর্যমসমাজীদের মাথায় ঢোকে না।

তা প্রমাণ সহ দেখিয়েওছি আগের পোষ্টে, সেটি দেখতে পারেন 👉 পুরাণের প্রকাশক স্বয়ং পরমাত্মা শিব, ব্যাসদেব পুরাণের রচয়িতা নন

যাইহোক, এর পরবর্তীতে আর্যসমাজীদের কাছে যখন মহাভারতের মধ্যে স্বর্গারোহণপর্বের ৫নং অধ্যায়ের ১৬৮ নং শ্লোক থেকে 

অষ্টাদশ পুরাণানাং শ্রবণাদ্যৎ ফলং ভবেৎ ।.. ॥ ১৬৮

এই শ্লোক টির মাধ্যমে অষ্টাদশপুরাণ এর শব্দ প্রমাণ তুলে ধরা হয় তখন তারা কথা প্যাচাতে শুরু করে,


আর্য সমাজীদের কথা হল,মহাভারতের উক্ত শ্লোকের উপর নীলকন্ঠজীর টীকা নেই ।

 এর ভিত্তিতে এরা পরোক্ষভাবে বোঝাতে চায় যে, যেহেতু নীলকণ্ঠ জী অষ্টাদশ পুরাণ নামক শ্লোকের টীকা করেননি তাই এটি অমান্য।

দেখে নিন বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্যসমাজী ম্লেচ্ছদের Back To The Vedas নামক ব্লগে এরা সেই দাবিটি করেছে, 

নীচে তার চিত্র তুলে ধরা হল👇

Bangladesh Agniveer Exposed

আর্যমসমাজীরা এই শিশুসুলভ দাবি করে ভাবছে নীলকন্ঠ জী এদের বাঁচিয়ে দিয়েছে, 

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই ১৬৮নং শ্লোকের‌ও বহু আগেই এই অষ্টাদশপুরাণ শব্দটি ঐ অধ্যায়ের‌ই ৪৫ ও ৪৬ নং শ্লোকে উল্লেখিত হয়ে গিয়েছে, এমনকি সেখানে নীলকন্ঠ জী তার টীকাও করে দিয়েছেন। 

চলুন দেখে নিই 👇


18 puran name mentioned in Mahabharat 
চিত্র নং ১

18 puran mentioned in Mahabharat
চিত্র নং ২

 স্বর্গারোহণপর্বের ৫ম তম অধ্যায়ের ৪৫ ও ৪৬নং শ্লোকে বলা হয়েছে -


অষ্টাদশ পুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশঃ ।

বেদাঃ সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকতঃ স্থিতম্ ॥৪৫॥

শ্রূয়তাং সিংহনাদোঽয় মৃষেস্তস্য মহাত্মনঃ ।

অষ্টাদশ পুরাণানাং কর্ত্তুর্বেদমহোদধেঃ ॥৪৬॥


নীলকন্ঠ টীকা - ভারতকৌমুদী 

অষ্টেতি। অষ্টাদশপুরাণানি ব্রাহ্ম- পাদ্মাদীনি, ধৰ্ম্মশাস্ত্রাণি মম্বাদীনি অঙ্গৈঃ শিক্ষা - কল্পাদিভিঃ সহেতি সাঙ্গাঃ, বেদা ঋগাদযশ্চত্বারঃ। এতৎ সর্ব্বম্ একত্র তুলাদণ্ডলম্বিত একস্মিন্ পাত্রে এতদ্ ভারতঞ্চ, একত একত্র তদ্ দ্বিতীয়পাত্রে স্থিতম্ । তত্র মহাভারতমেবাধিক জাতমিত্যশয়ঃ ॥৪৫

শ্রূয়তাং। অষ্টাদশপুরাণানাং কর্ত্তু প্রণেতুঃ, বেদানাং মহোদধেঃ সর্ব্ববেদ নিধে-রিত্যর্থঃ। মহাত্মনস্তস্য ঋষের্বেদব্যাসস্য, অয়ং সিংহনাদঃ সিংহনাদবদ্ গর্বসূচক উচ্চরবঃ, শ্রুয়তাং ভবদ্ভিঃ ॥৪৬


✅ সরলার্থ : অষ্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারটি বেদ তুলাদণ্ডলম্বিত এক পাত্রে ছিল, আর এই মহাভারত তাহারই অন্য পাত্রে রহিয়াছিল (তখন মহাভারতই ভারে অধিক হইয়াছিল) ॥৪৫॥

অষ্টাদশপুরাণ প্রণেতা, বেদের মহাসাগর সেই মহাত্মা বেদব্যাসের এই সিংহনাদ আপনারা শ্রবণ করুন ॥৪৬॥


পাঠকবৃন্দ দেখুন অষ্টাদশ পুরাণ সম্পর্কিত শ্লোকে নীলকন্ঠ জীর টীকাও স্পষ্টভাবে উপস্থিত রয়েছে । এবং ৪৫নং শ্লোকের টীকাতে নীলকন্ঠ জী অষ্টাদশপুরাণ বলতে সরাসরি “ ব্রাহ্ম- পাদ্মাদীনি ” অর্থা ব্রহ্মপুরাণ-পদ্মপুরাণ আদি যত পুরাণ আছে সেই সমস্ত পুরাণকে বুঝিয়েছেন তিনি। 


🔥 আর্যসমাজীরা যেহেতু নীলকন্ঠ টীকা না থাকার ভিত্তিতে মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বের “অষ্টাদশ পুরাণ” উল্লেখিত শ্লোককে প্রক্ষিপ্ত বলে দাবি করেছিল, সেটি খণ্ডিত হল । 


এবার আসি... আর্যসমাজীদের দ্বিতীয় দাবীর খণ্ডনে ।


বর্তমানে আর্যসমাজীরা মহাভারতের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পর্ব সহিত বহু শ্লোককে তথা পুরান শাস্ত্রকে অমান্য হিসেবে সমাজে পুরান সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে মহাভারতের  স্বর্গারোহন পর্বের “অষ্টাদশ পুরাণ” উল্লেখিত শ্লোককে প্রক্ষিপ্ত বলে দাবি করে , BORI অর্থাৎ  ভাণ্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশন  - এর প্রকাশিত নতুন মহাভারত পুস্তককে প্রকৃত মহাভারত বলে প্রচার করেন ।

 ১৮ পুরাণকে প্রকৃত পুরান হিসেবে যে মান্যতা মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বের মধ্যে রয়েছে তা নাকচ করার জন্য আর্যসমাজীরা বলেন, 

      “ মহাভারতের ক্রিটিকাল এডিশনেও এই শ্লোকটি রাখা হয়নি ।

অতঃ প্রমাণিত হয় যে এই পুরাণ বেদব্যাসের রচনা এটা দাবি করা সম্পূর্ণ‌ই ভ্রান্ত ও মিথ্যা ”

 আর্যসমাজীদের দাবীর ছবি দেয়া হল 👇

Exposed of arya samaj


অপ-দাবীর খণ্ডন — 

 থিওসোফিক্যাল সোসাইটি অর্থাৎ আমেরিকার খ্রিস্টানদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত থাকা আর্য সমাজের মতো আরেকটি সংস্থাও যুক্ত ছিল, যার নাম প্রার্থনা সমাজ । যাদের সবার‌ই মূল উদ্দেশ্য ছিল, সনাতন ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পন্ন প্রতিমা পূজা ও সাকারবাদের বিরোধিতা করে সনাতনীদের মধ্যে প্রতিমাপূজার বিরোধী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করা। 

রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর - নামক এক ব্যক্তি এই প্রার্থনা সমাজ এর একজন কট্টর সমর্থক তথা সদস্য ছিলেন। 

ইনি মহাভারতের ভেতর থেকে দেব দেবী তথা পরমেশ্বরের সাকারত্ব ও পৌরাণিক কাহিনী গুলিকে সরিয়ে নিরাকারবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য রির্সাচ শুরু করেন । 

তার বক্তব্য ছিল, মহাভারতের সবচেয়ে প্রাচীন পান্ডুলিপির ভিত্তিতে প্রকৃত মহাভারত গ্রন্থ তিনি প্রকাশ করবেন । এই লোক দেখানো গল্প শুনিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে প্রকৃতপক্ষে মহাভারতের ভেতর থেকে বিভিন্ন দেবদেবীর কাহিনীগুলিকে বা পরমেশ্বর সাকার হবার ঘটনাগুলিকে তিনি ছেটে বাদ দিয়ে দেন ।

তৎকালীন সময়ে ইংরেজ আমলে সমাজ সংস্কারের নামে খ্রিস্টান মতবাদের পরিপন্থী এই থিওসফিক্যাল সোসাইটির বিভিন্ন শাখা এই অপকৌশল এর দ্বারা সনাতন ধর্মকে বিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়ে গিয়েছিলেন । 

পুনেতে বিখ্যাত ভাণ্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশন রয়েছে। তারা এই নূতন মহাভারত গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, যেখানে প্রকৃত মহাভারতের মধ্যে থাকা পুরাণ সম্পর্কিত শ্লোকের উল্লেখ নেই, দেবদেবীর মাহাত্ম্য নেই । এখন এরা প্রশ্নের সম্মুখীন হলেই অপযুক্তি দিয়ে বলে যে,

  মহাভারতের মধ্যে কোন প্রসঙ্গ চলাকালীন সময়ে অন্য কোন অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা ঢুকলে তাকে প্রক্ষিপ্ত বলে ধরে নেওয়ায় উচিত। 

 তাই BORI এর ক্রিটিক্যাল এডিশনের মহাভারতের সেই প্রক্ষিপ্ত অংশগুলিকে বাদ দিয়ে প্রকৃত মহাভারত গ্রন্থকে প্রকাশ করা হয়েছে ।

 এক কথায় বলা যায়, প্রকৃত মহাভারতের অছিলায় সনাতন ধর্মের মধ্যে থাকা ঈশ্বরের সাকারবাদ মুছে ফেলাই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।

এ কারণে আর্য সমাজীরা শুদ্ধ মহাভারত হিসেবে BORI এর লেখা বিকৃত মহাভারত পুস্তককেই মান্য হিসেবে ব্যবহার করে।

 এরপরেও যদি ঐ BORI -এর বিকৃত মহাভারতেও কখনো আর্যসমাজের মতবাদের বিরোধী কোনো শ্লোক ধরা পড়ে, তখন সাফাই গেয়ে পিঠ বাঁচানোর জন্য আর্য সমাজীরা বলে, BORI CRITICAL EDITION -এর মহাভারতের মধ্যেও এখনো কিছু প্রক্ষিপ্ত শ্লোক আছে, তাই যেখানে যেখানে ঐ প্রক্ষিপ্ত শ্লোক আছে তা আমরা মানি না।

 এভাবেই উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজীরা পুরাণশাস্ত্র ও ঈশ্বরের সাকার রূপকে অস্বীকার করে চলেছে। 

 সুতরাং BORI CRITICAL EDITION এর প্রকাশিত মহাভারত পুস্তক শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে বানানো হয়েছে। একারণে উক্ত বিকৃত মহাভারত পুস্তকের কোনো মান্যতা সমগ্র সনাতন ধর্মে নেই, আমরা ঐ BORI CRITICAL EDITION এর প্রকাশিত মহাভারত পুস্তক মান্য করি না । 


🔥 সিদ্ধান্তসনাতন ধর্মে ১৮ টি পুরাণ‌ই আমাদের সনাতনী শাস্ত্র হিসেবেই মান্য

হর হর মহাদেব

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩

❤️‍🔥অপপ্রচার দমনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী

©️কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত