বাল্মীকি রামায়ণে — পরমেশ্বর শিবের উল্লেখ ১২টি প্রমাণ সহ

Parameshwara Shiva is mentioned in Valmiki Ramayana


শ্রীগুরবে নমঃ 

গণেশায় নমঃ 

নমঃ শিবায় ॥

সনাতন ধর্মের মহাকাব্যরূপী ইতিহাস শাস্ত্রের মধ্যে রামায়ণ শাস্ত্র হল অন্যতম, যার লিখিত রূপে রচনা করেন মহামুনি বাল্মিকী জী ।

এই “বাল্মিকী রামায়ণ” শাস্ত্রে পরমেশ্বর শিবের উল্লেখ রয়েছে কি না নিয়ে বহু মানুষের কৌতূহল সৃষ্টি হয়ে থাকে।

বর্তমানে ‘ আর্যসমাজ ’ নামক এক ছদ্মবেশী হিন্দু সংগঠন, যারা প্রায় অর্ধযবনের ন্যায় সমাজে গজিয়ে উঠেছে, এরা দাবী করছে যে, রামায়ণে সাকার পরমেশ্বর রূপে শিবের উল্লেখ নেই । কোনো আর্যসমাজী তো আবার এমন দাবী করে যে রামায়ণে উল্লেখিত শিব হল একজন যোগী মনুষ্য পূর্ববর্তী বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন, এদের এই সমস্ত অসত্যের অপপ্রচারের কারণে সাধারণ সনাতনীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে, বিপথে চলে যাচ্ছে।

তাই “বাল্মিকী রামায়ণ” থেকে শ্লোকসহ সম্পূর্ণ তথ্যসূত্র উল্লেখ করে আমি ‘শ্রী নন্দীনাথ শৈব’ সাকার পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর শিবের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছি এই নিম্নোক্ত প্রতিবেদনে ।

[ক্ষেমরাজ প্রকাশনী দ্বারা প্রকাশিত তথা পণ্ডিত জ্বালাপ্রসাদ মিশ্রের অনুবাদিত বাল্মিকী রামায়ণ পুস্তক এবং গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত বাল্মিকী রামায়ণ থেকে নিম্নোক্ত তথ্যসূত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, তাই গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত বাল্মিকী রামায়ণ পুস্তকের অধ্যায় ও শ্লোক সংখ্যার সহিত ক্ষেমরাজ প্রকাশনীর প্রকাশিত বাল্মিকী রামায়ণ পুস্তকের অধ্যায় ও শ্লোক সংখ্যার বেশ কিছুটা ভিন্নতা বিদ্যমান আছে, কিন্তু মূল আলোচ্য বিষয়বস্তু এক‌ই রয়েছে।]


(প্রমাণ —১)


পরমেশ্বর শিবের মাতা পার্বতীর সহিত 

বিবাহ প্রসঙ্গে —

যা চান্যা শৈলদুহিতা কন্যাসীদ্রঘুনন্দন ।

উগ্রং সুব্রতমাস্থায়তপস্তেপেতপোধনা ॥ ১৯

উগ্রেণতপসাযুক্তাং দদৌ শৈলবরঃ সুতাম্ ।

রুদ্রায়াপ্রতিরূপায় উমা লোকনমস্কৃতাম্ ॥২০

(তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/বাল কাণ্ড/সর্গ ৩৫)

✅ অর্থ — হে রঘুনন্দন ! হিমালয়ের যে ‘ উমা ’ নামক দ্বিতীয়তম কন্যা আছে, তিনি কঠিন ব্রত অবলম্বন করে ঘোর তপস্যা করেছিলেন।

হিমালয় নিজে সেই ত্রিলোকপূজিত মহাতপকারী যোগশালিনী কন্যা উমাকে ‘পরমেশ্বর শিব’ -এর হাতে সম্প্রদান করে (বিবাহ) দিয়েছেন ।

◀️[বিশেষ নজর — পরমেশ্বর শিবের সাকার হবার উল্লেখ তো রয়েছেই, এমনকি তিনি মাতা উমা অর্থাৎ পার্বতী দেবীকে বিবাহ করেছেন এটিও উল্লেখ করেছে বাল্মিকী রামায়ণ, কেন উপনিষদে অলংকার পরিহিতা স্ত্রীমূর্তি মাতা ‘ উমা ’ র উল্লেখ রয়েছে]▶️



(প্রমাণ — ২)


পরমেশ্বর শিবের জটায় গঙ্গা নদীর 

অবতরণ প্রসঙ্গে —


দেবদেবে গতেতস্মিন্ স অঙ্গুষ্ঠাগ্রনিপীড়িতাম্ ।

কৃত্বাবসুমতীং রামবৎসরং সমুপা সত ॥ ১

অথসংবৎসরে পূর্ণে সর্বলোকনমস্কৃতঃ ।

উমাপতিঃ পশুপতীরাজানমিদমব্রবীৎ ॥ ২

প্রীতস্তে নরশ্রেষ্ঠ করিষ্যামি তব প্রিয়ম্ ।

শির সাধারয়িষ্যামিশৈলরাজ সুতামহম্ ॥ ৩

ততো হৈমবতী জেষ্ঠাসর্বলোকনমস্কৃতা ।

তদাসাতিমহদ্ রূপং কৃত্বাবেগংচদুঃসহম॥ ৪

আকাশদপতদ্রাম শিবে শিবশিরস্যুত ।

অর্চিতয়চসা দেবী গঙ্গা পরম দুর্ধরা ॥ ৫

বিশাম্যহংহিপাতালং স্তোতসাগৃহ্য শঙ্করম্

তস্যা বলেপনং জ্ঞাত্বা ক্রুদ্ধস্তু ভগবা রন্হঃ ॥ ৬

তিরোভাবয়িতুং বুদ্ধিং চক্রে ত্রিনয়নস্তদা ।

সাত স্মিন্পতিতা পুণ্যাপূণ্যে রুদ্রস্যমূর্ধনি ॥ ৭

হিমবৎ প্রতিমেরাম জটামণ্ডলগহ্বরে ।

সা কথঞ্চিন্মহীন্গন্তুংনাশক্নো দ্যত্নমা স্থিতা ॥ ৮

নৈবসা নিগমলে ভেজটামণ্ডলমং ততঃ ।

তত্রৈবাভ্রমদ্দেবীসংবৎসরগণান্বহূন্ ॥‌ ৯

তামপশ্যৎ পুনস্তত্রতপঃ পরমমাস্থিতঃ ।

সতেনতোষিতশ্চাসীদত্যং তং রঘুনন্দন ॥ ১০

বিসসর্জততোগং গাং হরো বিন্দুসরঃ প্রতি ।

তস্যা বিসৃজ্য মানায়াং সপ্তস্রোতাং সিজজ্ঞিরে ॥ ১১

প্রায়াদগ্রে মহাতেজগঙ্গা তং জাপ্যনুব্রজত ।

গগনাৎ শঙ্কর শিরস্ততোধরণিমাগতা ॥ ১৫

(তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/বালকাণ্ড/৪৩ সর্গ)

✅ অর্থ — দেব দেব প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবলোক প্রস্থান করলে, সেই ভগীরথ পায়ের এক আঙুলের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে এক বছর সময় ধরে পরমেশ্বর শিবের তপস্যা করছিলেন ॥ ১

সংবত(বছর) পেরিয়ে গেলে সর্বলোক বন্দিত উমার পতি পশুপতি পরমেশ্বর মহাদেব, তিনিই স্বয়ং সেখানে উপস্থিত হয়ে ভগীরথ কে বললেন ॥ ২

(পরমেশ্বর শিব বললেন) হে নর শ্রেষ্ঠ ! আমি তোমার উপর প্রসন্ন হয়েছি, তোমার ইচ্ছা অনুসারে হিমালয়ের পুত্রী গঙ্গাকে আমি আমার মস্তকের জটার মাধ্যমে ধারণ করবো ॥ ৩

সেই সময় সর্বলোকের নমস্কৃতা উমা হৈমবতীর জ্যেষ্ঠভগিনী, সেই দেবী গঙ্গা অত্যন্ত শোভাসম্পন্ন মানযুক্ত রূপ ধারণ করে প্রবল বেগে নেমে এলেন ॥ ৪

হে রাম ! আকাশ থেকে কল্যাণরূপী পরমেশ্বর শিবের মস্তকের উপর নেমে আসার সময় পরম বেগ সম্পন্ন গঙ্গা দেবী চিন্তা করতে লাগলেন যে, ॥ ৫

(গঙ্গা দেবী ভাবলেন) আমি আমার প্রবল গতিবেগের প্রবাহের দ্বারা শঙ্কর কে পাতালে নিয়ে যাবো, আর সেখানেই তার সাথে অবস্থিত হবো, ধূর্জটি মহাদেব গঙ্গার মনের অভিপ্রায় জেনে মনে মনে কুপিত হলেন ॥ ৬

মহাদেবের সামনে গঙ্গার ঐ দূর্বার মতো এমন জেদের অহংকার সম্পর্কে প্রভু শিব জানতে পেরে , শিব চাইলেন এমন যাতে গঙ্গা দেবী ত্রিনয়নধারী শিবের জটার মধ্যেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন , এরপর তখন গঙ্গা দেবী, সেই পার্বত্র রুদ্রদেবের শরীরের মস্তকের উপর নেমে এলেন ॥ ৭

শিবের জটায় পতিত হবার পরদেবী  গঙ্গা খুব চেষ্টা করলেন সেই জটা থেকে বেরিয়ে ভূতলে চলে যাওয়ার জন্য, কিন্তু হিমালয়ের সমান অতি গম্ভীর জটার মধ্যে তিনি ঘুরে ঘুরে এতটাই বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন যে, কোন ভাবেই তিনি সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হলেন না ॥ ৮

গঙ্গা দেবী এইভাবেই জটা মণ্ডলের মধ্যে আটকে গিয়ে এইভাবে বহু বছর ধরে সেই জটার মধ্যেই ঘুরতে থাকলেন, কিন্তু আর বের হতে পারলেন না ॥ ৯

ভগীরথ এটি দেখে পুনরায় পরমেশ্বর শিবের তপস্যা আরম্ভ করলেন, হে রাম ! ভগীরথ অত্যন্ত তপস্যা করে পরমেশ্বর শিবকে প্রসন্ন করলেন ॥ ১০

তার তপসাতে প্রশ্ন হয়ে গঙ্গাধর শিব গঙ্গা দেবী কে জটা জালের মধ্য থেকে বের করে বিন্দু সরোবরের কাছে ছেড়ে দিলেন, তিনি ছেড়ে দেবার ফলে সাতটি ধারার উৎপত্তি হল ॥ ১১

সেই মহা তেজস্বী ভগীরথ গঙ্গার অগ্রভাগে চলতে লাগলেন, আর গঙ্গা ভগীরথের পেছনে চলতে চলতে ভগিরথকে অনুসরণ করতে করতে এভাবেই পরমেশ্বর শঙ্করের জটাজূট থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করলেন ॥ ১৫

 ◀️[বিশেষ নজর — পরমেশ্বর শিবের নাম ও মহিমার উল্লেখের সাথে সাথে জগৎজননী পার্বতীদেবীর “উমা” নামটির উল্লেখ তো রয়েছেই, তার সহিত “হৈমবতী” নাম‌ও উল্লেখ করা হয়েছে ৪নং শ্লোকে, বেদের অন্তর্গত ‘ কেন উপনিষদ ’ -এর মধ্যে উমার সহিত এই হৈমবতী নামটি রয়েছে]▶️



(প্রমাণ — ৩)


পরমেশ্বর শিবের দ্বারা ভয়ঙ্কর হলাহল বিষ পান করবার প্রসঙ্গে —


ততোনিশ্চিৎ মথনংয়োকন্কৃত্বা চ বাসুকিম্ ।

মন্থান্নমন্দরং কৃত্বামমন্থুরমিতৌজসঃ ॥ ১৮ 

অথ বর্ষসহস্রেণয়োকং সর্পশিরোং সিচ ।

বমন্তোঽতিবিষন্ত ত্রদদংশুর্দৃশনৈঃ শিলাঃ ॥ ১৯

উৎপাত অগ্নি সংকাশং হালাহল মহাবিষম্ ।

তেনদ্গ্ধুং জগৎ সর্ব স দেবাসুর মানুষম্ ॥ ২০

অথ দেবা মহাদেবং শঙ্করং শরণার্থিণঃ ।

জগ্মুঃ পশুপতিং রুদ্রং ত্রাহী ত্রাহী তিতুষ্টুবুঃ ॥ ২১

এবমুক্তস্ততো দেবৈর্দেবদেব ঈশ্বরঃ প্রভুঃ

প্রাদুরাসীত্ততোঽত্রৈব শঙ্খচক্রধরোহরিঃ ॥ ২২

উবাচৈনং স্মিতং কৃত্বা রুদ্র শূলধরং হরিঃ ।

দৈবতৈর্মথ্যমানেতুয়ৎ পূর্ব সমুপস্থিতম্ ॥ ২৩

তত্ত্বদীয়ং সুরশ্রেষ্ঠ সুরাণাং অগ্রতোহিয়ৎ

অগ্র পূজামিহস্থিত্বাগৃহাণে দংবিপ প্রভো ॥ ২৪

ইত্যুক্ত্বা চ সুরশ্রেষ্ঠস্তত্রৈবান্তরধীয়ত ।

দেবতানাং ভয়ং দৃষ্ট্বা শ্রুত্বা বাক্যং তু শার্ঙ্গিণঃ ॥ ২৫

হালাহলং বিষং ঘোরং সংজগ্রাহামৃতোপমম্ ।

দেবান্বিসৃজ্যদেবেশোজগাম ভগবান্ হরঃ ॥ ২৬

[তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/বালকাণ্ড/সর্গ ৪৫/১৮-২৬ নং শ্লোক]

অর্থ — সেই মহাপরাক্রমীগণেরা বিবেচনা পূর্বক সমুদ্রমন্থন করতে প্রবৃত্ত হলেন, তখন মন্দরাচল মন্থন দণ্ড এবং বাসকিনাগ বিশাল দড়িরূপে ব্যবহৃত হয়ে মন্থনকার্য আরম্ভ হল ॥১৮

এইভাবে হাজার বছর পেরিয়ে গেলে বাসুকী নাগ বিষ উগরে আর দাঁতের দ্বারা মন্দরাচলের শিলা কেটে যেতে থাকলো ॥১৯

তার শিলা কাটার ফলে সেই সাগরে এমন হলাহল মহাবিষ অগ্নির সমান বেরিয়ে এল যে এর তেজের দ্বারা সুর-অসুর আর মনুষ্য সহিত বিশ্ব সংসার দগ্ধ হতে আরম্ভ হল ॥২০

তখন দেবতারা মহাদেব শঙ্কর শিবের শরণাপন্ন হবার ইচ্ছা করে পশুপতি রুদ্রের কাছে গিয়ে আমাদের রক্ষা করুন ! রক্ষা করুন ! বলতে বলতে পরমেশ্বরের স্তুতি করতে লাগলেন ॥২১

যখন দেবতারা এভাবে পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করলেন তখন যিনি দেবতাদের‌ও আরাধ্য, যিনি ঈশ্বর, সেই প্রভু মহাদেব  সেখানে প্রকট হলেন, ঠিক তখনই শঙ্খ চক্রধারী ভগবান শ্রী হরিও সেখানে প্রকট হয়ে গেলেন ॥২২

তখন স্মিতহাস্য করে শ্রী বিষ্ণুজী ত্রিশূলধারী পরমেশ্বর রুদ্র কে বললেন যে, “সমুদ্র মন্থনে দেবতাদের দ্বারা যে বস্তু প্রথম নির্গত হয়েছে, হে দেবতাদের শ্রেষ্ঠ দেব ! অগ্রগণ্য পরমেশ্বর ! হে প্রভু ! আপনিই সমস্ত পূজা প্রথম পূজ্য, (আপনাকেই পূজার প্রথম ভাগ দেওয়া হয়, তাই আপনি প্রথম পূজনীয় হবার কারণে) এই বিষ‌ও আপনার‌ই গ্রহণ করা উচিত (তথাপি সেই বিষ আপনিই ধারণে সক্ষম)” ॥২৩-২৪

এই পর্যন্ত বলবার পর মাধব সেখান থেকে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন, পরমেশ্বর মহাদেব দেবতাগণকে ভয়ে ভীত দেখে এবং শ্রীবিষ্ণুজীর কথা ভেবে বিষ গ্রহণ করতে সচেষ্ট হয়ে বিষকেই অমৃত হিসেবে পান করলেন, এরপর দেতাদের‌ও যিনি ঈশ্বর সেই ভগবান হর-শিব দেবতাদের বিদায় করে নিজের স্থানে স্থিত হলেন ॥২৫-২৬


◀️[বিশেষ নজর — ২২নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিবকে ঈশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ২৩নং শ্লোকে ভগবান বিষ্ণু পরমেশ্বর শিবকে সমস্ত দেবতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, প্রথম স্থানে থাকা ও পূজ্য পরমেশ্বর বলে উল্লেখ করেছেন, শ্রী বিষ্ণু বলেছেন, সমস্ত পূজার্চনার প্রথম ভাগ পরমেশ্বর শিব‌কেই সমর্পন করতে হয়, কারণ সমস্ত দেবতার পূর্বে পরমেশ্বর শিব‌ই সেই ভাগ গ্রহণ করেন। এমনকি শ্রীবিষ্ণু ২৪নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিবকে “প্রভু” বলেও স্পষ্টভাবে সম্বোধন করেছেন]▶️


(প্রমাণ — ৪)


বিশ্বামিত্রের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে পরমেশ্বর শিবের বরদান প্রদান প্রসঙ্গে —


সগত্বাহিমবৎপার্শ্বে কিন্নরোরগসেবিতে ।

মহাদেব প্রসাদার্থতপস্তেপে মহাতপাঃ ॥ ১২

কেনচিত্ত্বথ কালেন দেব ঈশ বৃষভধ্বজঃ

দর্শয়ামাস বরদো বিশ্বামিত্রং মহামুনিম্ ॥ ১৩

কিমথৈতপ্যসে রাজন্ব্রূহিযত্তেবিবক্ষিতম্ ।

বরদোঽস্মিব রোয়স্তেকাঙ্ক্ষিতঃ সোঽভিধীয়তাম্ ॥ ১৪

এবমুক্তস্তুদেবেন বিশ্বামিত্রো মহাতপাঃ ।

প্রণিপত্য মহাদেবং বিশ্বামিত্রোঽব্রবীদিদম্ ॥ ১৫

যদিতুষ্টো মহাদেব ধনুর্বেদোমমানঘ ।

সাঙ্গোপাঙ্গোপনিষদঃ স রহস্যঃ প্রদীয়তাম্ ॥ ১৬

যানি দেবেষুচাস্ত্রাণিদানবেষু মহর্ষিষু ।

গন্ধর্ব যক্ষরক্ষঃ সুপ্রতিভান্ তুমমানঘ ॥ ১৭

তব প্রসাদাদ্ভবতু দেবদেবমমেপ্সিতম্ ।

এবমস্ত্বিতি দেবেশো বাক্য মুক্ত্বাগতস্তদা ॥ ১৮

[বাল্মিকী রামায়ণ/বালকাণ্ড/সর্গ ৫৫/১২-১৮ নং শ্লোক]

✅ অর্থ — সেই মহাতাপা বিশ্বামিত্র হিমালয়ের কাছে কিন্নর আদি সেবিত স্থানে অবস্থান-পূর্বক পরমেশ্বর মহাদেবের আরাধনা পূর্বক তপস্যা আরম্ভ করলেন ॥১২

কিছুদিন তপস্যা করবার পর বরদান প্রদানকারী ঈশ্বরদেব বৃষভধ্বজ শিব বিশ্বামিত্রকে দর্শন দিলেন ॥১৩

আর প্রভু শিব বললেন যে, হে রাজন ! তোমার এই তপস্যা করবার কারন কি ? তোমার যে অভিলাষ আছে সেই বর আমার কাছ থেকে চেয়ে নাও আমি তোমাকে পর প্রদান করবো ॥ ১৪

পরমেশ্বর মহাদেব এই কথা বলবার পর মহান তপস্বী মহর্ষি বিশ্বামিত্র জী পরমেশ্বর শিবের চরণে প্রণাম করে তাকে বললেন ॥ ১৫

হে প্রভু মহাদেব ! যদি আপনি প্রসন্ন হয়ে থাকেন তাহলে সাঙ্গোপাঙ্গ মন্ত্রসহিত রহস্যযুক্ত ধনুর্বেদ আমাকে প্রদান করুন ॥ ১৬

হে পাপরহিত ঈশ্বর ! 

আমার মতো নিরক্ষর যেন বেদ, মানব, মহর্ষি, যক্ষ, রাক্ষস আর গন্ধর্বদের যত রকম অস্ত্রশস্ত্র আছে সেই সমস্ত কিছুই আমি চালাতে সক্ষম হ‌ই ॥ ১৭

আপনার অনুগ্রহের আমার মনোরথ পূর্ণ হোক এটাই আমার প্রার্থনা, এ কথা শুনে দেবেশ পরমেশ্বর মহাদেব “এমন‌ই হবে” বলে সেখান থেকে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন ॥ ১৮


(প্রমাণ — ৫)


শ্রীরামচন্দ্রের সহিত সীতা দেবীর বিবাহের জন্য যে ধনুক তোলা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে —


দক্ষযজ্ঞ বধে পূর্ব ধনুরায়ম্যবীর্যবান্ । 

বিধ্বস্যচিদশান্রোষাৎসলীলমিদম ব্রবীৎ ॥ ৯

যস্মাদ্ভাগার্থিনো ভাগান্নাকল্পয়ত মেসুরাঃ ।

বারাঙ্গানিমহার্হণিধনুপাশাতয়ামিবঃ ॥ ১০

ততো বিমনসঃ সর্বে দেবা বৈমুনিপুঙ্গবঃ ।

প্রাসাদয়ং তদেব ঈশং তেষাং তোঽভবদ্ভবঃ ॥ ১১

প্রীতি যুক্তস্তু সর্বেষাং দদৌতেষাং মহাত্মনাম্ ।

তদেত দেবদেবস্য ধনূরত্নং মহাত্মনঃ ॥ ১২

ন্যাসভূতং তদান্যস্তমস্মাকং পূর্বজে বিভো ।..॥ ১৩

[তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/বালকাণ্ড/সর্গ ৬৬]

✅ অর্থ — পূর্বকালে রুদ্রদেব দক্ষের যজ্ঞকে বিধ্বংস করবার জন্য লীলাক্রমে এই শরাসন আকর্ষণ করে দেবতাদের বলেছিলেন, যেহেতু তোমরা আমার প্রাপ্য যজ্ঞভাগের অংশ আমার উদ্দেশ্যে অর্পন করোনি, সেহেতু এই শরাসন দ্বারা তোমাদের সবার ওই সুন্দর অলংকার যুক্ত মস্তক কেটে ফেলবো ॥ ৯-১০

হে মুনি রাজ ! তখন থেকে দেবতাগণ দেবাদিদেব মহেশ্বরের বচন শুনে মন সহ মলিন বদন যুক্ত হয়ে গেলেন , তখন তারা কোন প্রকারে ঈশ্বর কে প্রসন্ন করলেন, তখন ভগবান ভব ক্রোধকে শান্ত করলেন ॥ ১১

পশুপতি শিব প্রসন্ন হয়ে এই ধনুক মহাত্মা দেবতাদের প্রদান করেছিলেন, এটি সেই ধনুকরত্ন, যা দেবাদিদেব প্রভু শিবের ॥ ১২

দেবতারা দয়া করে সেই ভগবান হরের  এই ধনুক কে আমাদের পূর্বপুরুষ কে দিয়েছিলেন, তখন থেকে সেটি এই স্থানেই থাকে ॥ ১৩


(প্রমাণ — ৬)


রাবণ বধ হলে ত্রিনয়নযুক্ত পরমেশ্বর শিবের রণক্ষেত্রে উপস্থিত হবার প্রসঙ্গে —

ষড়র্ধনয়নঃ শ্রীমান্ মহাদেবোবৃষধ্বজঃ ।

কর্তাসর্বস্যলো কস্যব্রহ্মা ব্রহ্মাবিদাংবরঃ ॥ ৩

এতেসর্বেসমাগম্যবিমানৈঃ সূর্যসন্নিভৈঃ ।

আগম্যনগরীলংকামভিজগ্মুশ্চরাঘবম্ ॥ ৪

(তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/যুদ্ধ কাণ্ড/সর্গ ১১৯)

✅ অর্থ — ত্রিনয়নধারী বৃষধ্বজ ভগবান শ্রীমান্ মহাদেব সহ সমস্ত লোকের সৃজনকারী বেদবেত্তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মাজী ও তার সহিত আরো অন্যান্য দেবতারা সূর্যের সমান প্রকাশিত নিজের নিজের বিমানের ওপর আরূঢ় হয়ে লঙ্কা নগরীতে উপস্থিত হলেন যেখানে শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন ॥ ৩-৪


(প্রমাণ — ৭)


শ্রী রামচন্দ্র কে কৈলাসপতি রুদ্রদেবের অনুচর ১১জন রুদ্রগণেদের মধ্যে ৮ম তম রুদ্র হিসেবে 

বলবার প্রসঙ্গে —

রুদ্রাণাং অষ্টমোরুদ্রঃ ।..॥৮

(তথ্যসূত্র — বাল্মিকী রামায়ণ/যুদ্ধ কাণ্ড/সর্গ ১১৯)

✅ অর্থ — (হে রামচন্দ্র !) রুদ্রগণের মধ্যে তুমি ৮ম রুদ্রগণ ।


(প্রমাণ — ৮)


রামচন্দ্র সীতাকে নিয়ে হনুমান প্রভৃতির সহিত আকাশ পথে বিমানে বসে লঙ্কা থেকে অযোধ্যায় ফিরে যাবার সময় মাতা সীতাকে বলেছেন —


অত্র পূর্বং মহাদেবঃ প্রসাদমকরোদ্বিভূঃ ।..॥ ২০

(বাল্মিকী রামায়ণ/যুদ্ধ কাণ্ড/সর্গ ১২৫/শ্লোক সংখ্যা ২০)

অর্থ — যিনি সর্বত্র বিভু (ব্যাপ্ত হয়ে আছেন) সেই দেবাদিদেব মহাদেব পরমাত্মা, তারই প্রসাদে (কৃপায়) এই সমস্ত জয় প্রাপ্ত হয়েছি। 


(প্রমাণ — ৯)


সুকেশ নামক রাক্ষস কে বধ করবার জন্য দেবতাদের পরমেশ্বর শিবের কাছে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার করবার প্রার্থনা করবার প্রসঙ্গে —


জগৎ সৃষ্ট্যন্তর্তারং অজং অব্যক্তরূপিণম্ ।

আধারং সর্বলোকানাং আরাধ্যং পরমং গুরুম্ ॥ ২

তে সমেত্য তু কামারি ত্রিপুরারি ত্রিলোচনম্

ঊচুঃ প্রঞ্জলয়ো দেবা ভগবদভাষিণঃ ॥ ৩

ইত্যুক্তস্তু সুরৈঃ সর্বৈঃ কপর্দী নীললোহিতঃ ।..॥ ৯

ততস্তু জয়শব্দেন প্রতিনন্দ্য মহেশ্বরম্ ।..॥ ১২

সুকেশং রাক্ষসং জানে ঈশান বরদর্পিতম্ ।..॥ ২০

অমরা ঋষয়শ্চৈব সংগম্য কিল শঙ্করম্ ।..॥ ২৪

তদস্মাকং হিতার্থায় জহি তাংশ্চ ত্রিলোচন

রাক্ষসান্ হুকৃতেনৈব দহ প্রদতা বর ॥ ২৭

ইত্যেবং ত্রিদশৈরুক্তো নিশম্য অন্ধকসূদনঃ ।..॥ ২৮

[তথ্যসূত্র — গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত - বাল্মিকী রামায়ণ/উত্তর কাণ্ড/৬ সর্গ]

✅ অর্থ —

যিনি জগতের সৃষ্টিকর্তা ও সংহারকারী, যিনি অজন্মা (অর্থাৎ যার কখনো কারোর থেকে জন্ম হয়নি), যিনি অব্যক্ত (অর্থাৎ যার বিষয়ে সম্পূর্ণ রূপে বিস্তারিত বলে বোঝানো সম্ভব নয়), যিনি প্রকৃত পক্ষে সকলের আরাধ্য দেব, যিনি স্বয়ং পরম গুরু,  যিনি কাম উৎপন্নকারী কামদেবকেও জ্বালিয়ে ভস্ম করে কামারি নামে বিখ্যাত, যিনি ত্রিপুরের তিন অসুরকে বিনাশ করে ত্রিপুরারি নামে বিখ্যাত, যিনি তিনটি চক্ষু ধারণ করে ত্রিলোচন নামে অভিহিত হন, সেই পরমেশ্বর ভগবান শিবের কাছে গিয়ে ভয়ে ভীত হ‌ওয়া সকল দেবতা হাত জোড় করে প্রার্থনা করলেন ॥ ২-৩

সমস্ত দেবতাদের এ কথা শুনে নীলকন্ঠলোহিত বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল জটাধারী পরমেশ্বর শিব  বললেন ।..॥ ৯

এটি শুনে তখন দেবতারা মহেশ্বরের নামে জয় জয় ধ্বনী দ্বারা অভিনন্দন জানালেন ॥ ১২

শ্রী বিষ্ণু বললেন সুকেশ নামক রাক্ষসকে আমি জানি, সে ঈশান শিবের বরদান পেয়ে এখন অত্যন্ত অভিমানী হয়ে গিয়েছে ॥ ২০

ঋষি ও দেবতারা মিলে শঙ্করের কাছে আমাকে বধ করবার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে গিয়েছে ॥ ২৪

 ত্রিলোচন প্রভু ! আপনি আমাদের হিতের জন্য সেই অসুরদের বধ করুন । দহনকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আপনি রুদ্রদেব ! আপনি আপনার মাত্র‌ই হুংকার দিয়ে রাক্ষসদের জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিন ॥ ২৭

দেবতারা এভাবে বললেন, তা শুনে অন্ধকাসুরের নাশকারী প্রভু শিব বলবার জন্য উদ্যত হলেন ।..॥ ২৮

◀️[বিশেষ নজর — ২নং শ্লোকে প্রভু শিবকে সমগ্র জগতের স্রষ্ঠা ও সংহার কর্তা বলা হয়েছে, তার সাথে তাকে যে বাক্যের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাচিত হওয়া সম্ভব নয়,তাও বলা হয়েছে। তাকে একমাত্র আরাধ্য বলে ও পরম গুরু বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। ৩নং শ্লোকে বলা হয়েছে তিনি তিনটি চোখ বিশিষ্ট, কামদেবকে ধ্বংস করবার জন্য কামারি বলা হয়েছে, ত্রিপুরের তিনসুরকে বিনাশ করবার জন্য তাকে ত্রিপুরারী বলা হয়। ৯নং শ্লোকে তাকে কপর্দী অর্থাৎ যটা জটাধারী বলা হয়েছে, নীললোহিত অর্থাৎ কন্ঠে বিষ ধারণ করবার কারণে প্রভু শিবের কন্ঠ নীল হওয়ায় তিনি নীলকন্ঠ বলে উল্লিখিত হয়েছেন , লোহিত শব্দে তার পিঙ্গল বর্ণের আভা যুক্ত জটার কথাই বলা হয়েছে, শুক্ল-যজুর্বেদের ষোলো অধ্যায়ের ৭নং ও ৮নং মন্ত্রে প্রভু শিবের এই ‘নীলগ্রীব’ নাম উল্লেখ রয়েছে। ২৯নং মন্ত্রে প্রভু শিবের এই ‘কপর্দী’ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে।]▶️


(প্রমাণ — ১০)


কুবের নিজের শিব উপাসনার দ্বারা অর্জিত বরদানের বিষয়ে রাবণকে শোনাবার প্রসঙ্গে —


অহম তুং হিমবৎপৃষ্ঠং ধর্মমুপাসিতুম্ ।

রৌদ্রং ব্রতং সমাস্থায় নিয়তো নিয়তেন্দ্রিয়ঃ ॥ ২১

তত্র দেবো ময়া দৃষ্ট উময়া সহিতঃ প্রভুঃ

সব্যং চক্ষুর্ময়া দৈবাৎ তত্র দেব্যা নিপাতিতম্ ॥ ২২

কা বেষেতি মহারাজ ন খল্বন্যেন হেতুনা ।

স্বয়ং চানুপমং কৃত্বা রুদ্রাণী তত্র তিষ্ঠতি ॥ ২৩

এবং তেন সখিত্বং চ প্রাপ্যানুজ্ঞাং চ শঙ্করাৎ ॥ ৩১

[তথ্যসূত্র — গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত - বাল্মিকী রামায়ণ/উত্তর কাণ্ড/১৩ সর্গ]

অর্থ — আমি শৌচ সন্তোষ আদি নিয়ম পালন আর ইন্দ্রিয় সংযমপূর্বক রুদ্রব্রত -এর আশ্রয় নিয়ে ধর্মের অনুষ্ঠান করবার জন্য হিমালয়ের এক শিখার উপরে গিয়েছিলাম ॥ ২১

সেখানে আমি উমার সহিত পরমেশ্বর প্রভু শিব কে দর্শন করে ছিলাম । হে মহারাজ ! সেই সময় আমি কেবলমাত্র এই জানবার জন্য দেবীর দিকে দেখছিলাম এই ভেবে যে ইনি আবার কে ? (কি করছেন এখানে?) । দৈববশে আমি দেবী পার্বতীর উপর আমার জিজ্ঞাসুবিষয়ক দৃষ্টি ই নিক্ষেপ করেছিলাম, অন্য কোন হেতুতে নয়। সেখানে দেবী রুদ্রানী অত্যন্ত অনুপম রূপ ধারণ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ॥ ২২-২৩

এইভাবে আমি ভগবান শংকরের সাথে তার বরদানের কারণে তার মিত্র হবার সৌভাগ্য লাভ করলাম ।..॥ ৩১


◀️[বিশেষ নজর — ২১নং শ্লোকে ‘রুদ্র ব্রত’ অর্থাৎ পাশুপতব্রত ও সোমবারব্রত সহ সমগ্র শিববিষয়ক ব্রত তথা তপস্যাকে বোঝানো হচ্ছে এখানে, এরপর ২২নং শ্লোকে উমার সহিত পরমেশ্বর শিব প্রভু বলে সম্বোধিত হয়েছেন, ৩১নং শ্লোকে শঙ্কর নাম উল্লেখ হয়েছে।]▶️


(প্রমাণ — ১১)


কাহিনী বিস্তারিত হ‌ওয়ায় আলাদা প্রতিবেদনে লিখিত হয়েছে , এখানে ক্লিক করে দেখুন  👇

নন্দী মহারাজ দ্বারা রাবণকে অভিশাপ ও পরমেশ্বর শিবের দ্বারা রাবণের দম্ভ নাশ


(প্রমাণ — ১২)


⏺️ এছাড়াও বাল্মিকী রামায়ণের বালকাণ্ডের ৩৭তম সর্গ -র মধ্যে “কার্তিকেয়্ উৎপত্তি” প্রসঙ্গে ‘পরমেশ্বর শিব ও মাতা পার্বতী’-র স্পষ্টভাবে প্রচুর পরিমাণে উল্লেখ রয়েছে । 


⚜️ সিদ্ধান্ত —

(১) সমগ্র বাল্মিকী রামায়ণ জুড়ে পরমেশ্বর শিবের নামের অসংখ্য  উল্লেখ রয়েছে ।

(২) বাল্মিকী রামায়ণে প্রভু শিব ‘ঈশ্বর’ বলে শব্দপ্রমাণ সহ স্বীকৃত হয়েছেন ।

(৩) পরমেশ্বর শিবের তিনটি চক্ষু রয়েছে, তার জটাজূট রয়েছে, তিনি বৃষধ্বজ অর্থাৎ তিনি বৃষ্ণ চিহ্নে অঙ্কিত ধ্বজ ধারণ করেন, তিনি গঙ্গাধর, তিনি জটাধারী, তিনি নীলকন্ঠ, তিনি ত্রিশূলধারী, তিনি উমার স্বামী । এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সেই ঈশ্বর শিব সাকার বলে প্রমাণিত হলেন বাল্মিকী রামায়ণে।

(৪) বাল্মিকী রামায়ণের মধ্যে শ্রীবিষ্ণু পরমেশ্বর শিবকে ‘প্রভু’ বলে  সম্বোধন করেছেন ।

(৫) বাল্মিকী রামায়ণে বলা হয়েছে শ্রীরামচন্দ্র পরমেশ্বর শিবের কৃপায় জয় লাভ করেছেন।

(৬) বাল্মিকী রামায়ণ স্বীকার করেছে যে, শিব‌ই জগতের সৃষ্টিকর্তা ও সংহারকারী, আরাধ্য, পরমগুরু ।

(৭) শৈবমূলক সমস্ত ব্রত ‘রুদ্রব্রত’ উল্লেখের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে বাল্মিকী রামায়ণ স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের ।


সুতরাং, দিনের আলোর মতো ‘বাল্মিকী রামায়ণ’ থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, 

পার্বতীপতি পরমেশ্বর শিব‌ই অদ্বিতীয় ভক্তবৎসল পরমেশ্বর প্রভু ।

বাল্মিকী রামায়ণ থেকে পরমেশ্বর শিবের উল্লেখ প্রমাণের মাধ্যমে প্রক্ষিপ্তবাদের রোগে আক্রান্ত দয়ানন্দ সরস্বতীর অন্ধ অনুসারী আর্যসমাজীদের অজুহাতকেও আগাগোড়া নস্যাৎ করে দেওয়া হল ।

এরপরেও যদি কোনো আর্যসমাজী বলে বেড়ায় যে , এই বাল্মিকী রামায়ণ অশুদ্ধ , শুধুমাত্র আর্যসমাজীদের বানানো ‘শুদ্ধ রামায়ণ’ নামক পুস্তক ই একমাত্র বিশুদ্ধ। 

তাহলে তাদের বানানো ‘শুদ্ধ রামায়ণ’ নামক পুস্তকের অশুদ্ধতাও আমি প্রমাণ করে রেখেছি, এখানে ক্লিক করে দেখুন 👇 

আর্যসমাজের “ শুদ্ধ রামায়ণ ” পুস্তকের অশুদ্ধতা প্রমাণ


অতএব, আর্যসমাজের দাবীও খণ্ডিত হল, আর পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর শিবের মহিমা অক্ষুন্ন র‌ইল ।


পরমেশ্বর শিবের জয়

জগজ্জননী পার্বতী দেবীর জয় 

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


✅ সত্য উন্মোচনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — © International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত