সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের অন্তর্গত “ ষষ্ঠ সমুল্লাস” -এর খণ্ডন — মিথ্যার্থ প্রকাশ

সত্যার্থ প্রকাশ ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন


সত্যার্থ প্রকাশ ষষ্ট সমুল্লাস খণ্ডন — মিথ্যার্থ প্রকাশ 


আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের খণ্ডন —

সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন এক ও অদ্বিতীয় গুরুপরম্পরা হল - মহাপাশুপত শৈব পরম্পরা, সেই মহাপাশুপতের ধারা শৈব অবধূত পরম্পরার বর্তমান মহামান্য আচার্য শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী স্বয়ং লিখিত আকারে ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন উপস্থাপন করলেন।

 International Shiva Shakti Gyan Tirtha — ISSGT শৈব সংগঠনের পক্ষ থেকে সমগ্র বাংলাতে এই সর্ব প্রথমবার প্রকাশ করা হল “সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের খণ্ডন” সমন্বিত — মিথ্যার্থ প্রকাশ

অথ মিথ্যার্থ প্রকাশ — সত্যার্থ প্রকাশের অন্তর্গত ষষ্ঠ সমুল্লাস ও তার খণ্ডন 

 ॥ ॐ গণেশায় নমঃ । ॐ শ্রীগুরুভ্যো নমঃ । ॐ নমঃ শিবায় ॥

সত্যার্থ প্রকাশের অন্তর্গত ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন

"রাজধর্মপ্রকরণ"

 এই ষষ্ঠ সমুল্লাসে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী জী রাজধর্মের ব্যাখ্যা করেছেন, মনুস্মৃতির সম্পূর্ণ শ্লোক এতে লেখা আছে, যা প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি সবাই অনুসরণ করে আসছে, তাতে কোনো আলোচনা নেই। কিন্তু স্বামীজী মনু সংহিতার শ্লোক উদ্ধৃতি করে যা লিখেছেন। সেই সবের মধ্যে যে বিষয়ে তিনি চর্চা করে মান্য করেছেন, যা তিনি অন্য স্থানে অমান্য করেছেন। সেগুলি প্রমাণ সহ তুলে ধরে প্রশ্ন তুলে খণ্ডন করা হয়েছে ।


🟪(১) দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রথম দাবী (১)🟪


॥ রাজকর্ত্তব্যম্ প্রকরণ ॥

 🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১০৩ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

এই সভায় চারিবেদ, ন্যায়শাস্ত্র, নিরুক্ত এবং ধর্মশাস্ত্রাদির জ্ঞাতা বিদ্বান্ সভাসদ্‌ থাকিবেন।



🔸 আবার, সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

এস্থলে সংক্ষেপে রাজধর্ম বর্ণিত হইল। বিশেষ করিয়া বেদ, মনুস্মৃতির সপ্তম, অষ্টম ও নবম অধ্যায়, শুক্রনীতি তথা বিদুরপ্রজাগণ, এবং মহাভারতের শান্তি পর্বের অন্তর্গত রাজধর্ম ও আপদ্ধর্ম প্রভৃতি পাঠ করিয়া পূর্ণ রাজনীতি আয়ত্ত করিবেন,

❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রথম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

আচ্ছা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বলুন, আপনার সেই শপথ কোথায় গেল ? আপনিই তো বলেছেন আমি বেদ ই মানি, বেদের বাইরে কিছু মানি না । তাহলে যদি শুধু বেদ‌ই ?   মানেন তাহলে এসব বিষয়ে মনুর লেখার কি আবশ্যকতা ছিল ? বেদ থেকেই লিখে দিতেন, কিন্তু আপনি তা লিখতে পারলেন না। এর থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, মনুষ্যের ব্যবহার রাজধর্ম আদি বিষয় ধর্মশাস্ত্র থেকেই হয়, তবেই তা যথাযথ মানবার বিষয়ের মতো হবে, বেদ অনুসারে হবে না, যদি বেদ অনুসারেই হত তাহলে বলুন এই রাজধর্ম কোন বেদ থেকে বেরিয়েছে ? 

আবার আপনি মহাভারত‌ও মেনে নিয়েছেন। সাক্ষী চাওয়া, দণ্ড-বিধান আদি প্রভৃতির বিধান বেদে কোথায় রয়েছে ? বলুন। অর্থাৎ এখান থেকে এই বিষয়ে ধর্মশাস্ত্রই স্বতঃ প্রমাণ - তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অর্থাৎ শুধু বেদ বেদ করে চিৎকার করলেই হয় না, বেদের বাইরে থাকা স্মৃতি পুরাণ ইতিহাস শাস্ত্র‌ও মানতে হয়


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী বেদ ছাড়া কিছুই মানবেন না বলা সত্ত্বেও বেদ ছাড়া, মনুসংহিতা, মহাভারত ও শুক্রনীতি প্রভৃতি শাস্ত্রকেও মেনে বসে আছেন। অর্থাৎ নিজের বেদের মধ্যে থাকার সিদ্ধান্ত কে খণ্ডন করে শেষ পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন বিষয়ের বিধানের জন্য বেদের বাইরে গিয়েই সিদ্ধান্ত মানতে হয়েছে। সুতরাং দয়ানন্দ সরস্বতী হলেন স্ববিরোধী ব্যক্তি। যিনি স্বয়ং নিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করেন ।



🟪(২) দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বিতীয় দাবী (২)🟪


॥ রাজকর্তব্য প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১০৬ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

কুলীন এবং সুপরীক্ষিত এমন সাত-আট জন ধার্মিক ও চতুর 'সচিবান্' অর্থাৎ মন্ত্রী নিযুক্ত করিবে ॥ ১

সত্যার্থ প্রকাশ ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন


প্রশংসনীয় কুলোদ্ভব, চতুর, পবিত্রচিত্ত, আকার-ইঙ্গিত ও চেষ্টা দ্বারা অন্তরের ভাব ও ভবিষ্যৎ জ্ঞাতা, সর্বশাস্ত্রবিশারদ ব্যক্তিকে দূত পদে নিযুক্ত করিবেন ॥ ৮

সত্যার্থ প্রকাশ ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বিতীয় দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

এখানে দয়ানন্দ সরস্বতী জী কুলীন ও কুলোদ্ভব ব্যক্তিকেই যোগ্য বলে ঘোষনা করতে গিয়ে সরাসরি জন্মগত জাতিবাদ কে স্বীকার করে নিয়েছেন, কেননা যদি শূদ্র সম্পূর্ণ গুণের দ্বারা যুক্ত হয় তবে সে দূত হবার যোগ্য নয়, কিন্তু যার কুল ই শ্রেষ্ঠ - সেই কুলেই জন্মানো ব্যক্তিকে মন্ত্রী আর দূত বানাতে হবে, কুলীনতা তো জন্ম হবার থেকেই হয়ে থাকে, এর অন্যথায় নয় । 


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী জন্মগত জাতিবাদী ছিলেন।


🟪(৩) দয়ানন্দ সরস্বতীর তৃতীয় দাবী (৩)🟪


॥ মন্ত্রিদূতাদিরাজপুরুষলক্ষণানি  প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

উচ্চকুলসম্ভবা, সুলক্ষণা, আত্মসদৃশ বিদ্যাগুণকর্মস্বভাব বিশিষ্টা ও ক্ষত্রিয় কুলজাতা একমাত্র স্ত্রীকেই বিবাহ করিবেন।

সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর তৃতীয় দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

এখানেও দয়ানন্দ সরস্বতী জী উচ্চ কুল সম্ভবা ও কুলজাতা বলে উত্তম জাতীবাদকে স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন যে, ক্ষত্রিয় কন্যা উচ্চ কুলে জন্মেছেন, তাকে বিবাহ করো। যদি শিক্ষিত নীচকুলের গুণবতী কন্যাও হয় তবুও তার সাথে বিবাহ করা উচিত বলে লেখেননি। কিন্তু এখানে শ্রেষ্ঠ কুলের কন্যার সাথে বিবাহ করবার বিধানকে স্বীকার করে লিখে দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ এখানে জন্মগত জাতিবাদকে প্রধান বলে স্বীকার করে নিয়েছেন দয়ানন্দ সরস্বতী। তবেই না শূর বীর উৎপন্ন হতো যারা ভারতের উদ্ধার করতেন ।


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী জন্মগত জাতিবাদী ছিলেন।



🟪(৪) দয়ানন্দ সরস্বতীর চতুর্থ দাবী (৪)🟪


॥ যুদ্ধকরণ প্রকার প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১০৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

যে খ্যাতি প্রতিপত্তি দ্বারা সে ইহলোকে এবং পরলোকে সুখী হইতে পারিত, তাহা তাহার প্রভু প্রাপ্ত হন।

সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাস খণ্ডন


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১২৪ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

যে সাক্ষী সত্য কথা বলেন, তিনি জন্মান্তরে উত্তম জন্ম এবং উত্তম লোকান্তরে জন্মলাভ করিয়া সুখভোগ করেন। 

Satyarth Prakash 6th Samullas Khandan


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর চতুর্থ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

দয়ানন্দ সরস্বতীর এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবী অর্থাৎ মর্ত্যলোক ছাড়াও অন্য লোকে যাবার অর্থাৎ স্বর্গলোক বা নরক লোকে যাবার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। আপনি লোকান্তরে জীবের গতি হবার কথাকে মেনে নিয়েছেন, তাহলে কেন আপনি স্বর্গলোকের অস্তিত্বকে মানতে রাজি নন ?

যদিও বা এখানে একটি ভাববার বিষয় আছে, সর্বলোকে শুধুমাত্র পুণ্যাত্মা প্রবেশ করতে পারে, সেখানে পক্ষপাতী বা ধর্মত্যাগীদের প্রবেশের কোন পথ নেই। এই কারণে আপনি হয়তো ভেবেছেন যে সেখানে তো আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না। এই নিমিত্তেই হয়তো স্বর্গলোক-নরকলোক সব মিথ্যা বলে নিজের মনগড়া সিদ্ধান্ত লিখে দিয়েছিলেন ।

দয়ানন্দ সরস্বতী জী পরলোক কে বিশ্বাস করেন না, অথচ কঠ‌ উপনিষদের ১/২/৬-নং মন্ত্রে যমরাজ বলছেন, অয়ং লোকো নাস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনর্বশমাপদ্যতে মে । অর্থাৎ, ইহলোক‌ই আছে, পরলোক বলে কিছু নেই — এই কথা যে ব্যক্তি মনে করে সে বারবার আমার(যমরাজের) অধীন হয়, অর্থাৎ বারংবার জন্মমৃত্যুর চক্রেই ঘুরতে থাকে(মোক্ষ লাভ হয় না)। সুতরাং দয়ানন্দ সরস্বতী জী যে কোথায় যাবেন তা নিশ্চয়ই পাঠকবৃন্দ বুঝতে পারছেন।

[স্বর্গলোক-নরকলোকের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দয়ানন্দ সরস্বতী যে সমুল্লাসের অন্তর্গত লেখায় উল্লেখ করে পরলোককে অস্তিত্বহীন বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেখানে তার সেই সিদ্ধান্ত খণ্ডন করে আমি স্বর্গ নরক লোকের অস্তিত্ব শাস্ত্র থেকেই প্রমাণ করে লিখে রেখেছি, এবিষয়ে জানবার জন্য সেই অংশটুকু পড়ুন]

সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী পৃথিবীলোক অর্থাৎ মর্ত্যলোক ছাড়াও পরলোক অর্থাৎ স্বর্গলোক ও নরকলোকের অস্তিত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।



🟪(৫) দয়ানন্দ সরস্বতীর পঞ্চম দাবী (৫)🟪


॥ চৌর্য্যাদিষু দণ্ডাদিব্যাখ্যা প্রকরণ ॥

🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১২৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

“সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থ হইতে গৃহীত হইয়াছে এবং হইবে। যাহা স্পষ্টরূপে লিখিত হয় নাই, প্রত্যহং লোকদৃষ্টাশ্চ শাস্ত্রদৃষ্টাশ্চ হেতুভিঃ। তৎ সম্বন্ধে—

যে সকল নিয়ম রাজা ও প্রজার পক্ষে সুখকর ও ধর্মসঙ্গত বিবেচিত হইবে, পূর্ণ বিদ্বান্দিগের রাজসভা সেই সকল নিয়ম বিধিবদ্ধ করিবেন

কিন্তু সর্বদা লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে যতদূর সম্ভব বাল্য বিবাহ হইতে দেওয়া হইবে না। যৌবন ব্যতীত ও প্রসন্নতা ব্যতীত বিবাহ করিবেন না এবং করিতে দিবেন না।


Satyarth Prakash 6th Samullas Khandan


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর পঞ্চম দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

ওহে দয়ানন্দ সরস্বতী জী ! আপনি তো শাস্ত্র ছাড়া কিছুই মানতেন না, এখন হঠাৎ ই আপনার আর্যসমাজী শিষ্যদের অনুমতি দিয়ে দিলেন নতুন নতুন শাস্ত্র রচনার জন্য। এই জন্য‌ই হয়তো আজকালকারের আর্যসমাজীরা আপনার লেখা নকল বেদভাষ্যগুলোকেও বদলে দিয়ে নিজেদের মনের মতো ভাষ্য করে ছাপিয়ে প্রচার করছে। আপনার বেদভাষ্যের ত্রুটি বের করে আমরা শিবভক্ত শৈব সনাতনীরা যখন ফাঁস করে দিচ্ছি, তখন আপনার আর্যসমাজী শিষ্যরা নিজেদের সম্মান বাঁচাতে গিয়ে আপনার‌ই নকল ভাষ্য ফেলে দিয়ে নতুন নতুন ভাষ্য রচনা করে সেটিই আসল বেদভাষ্য বলে দাবি করছে।

অবশ্য আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েই দিয়েছেন যে, নিজের ইচ্ছামতো নিয়ম লিখে বিধিবদ্ধ করে শাস্ত্র রচনা করবার । তাহলে আপনার শিষ্যরা কেন করবে না ? 

এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আপনিও নিজের ইচ্ছে মতো বহু জায়গায় নতুন নতুন কাল্পনিক বিধান দিয়েছেন, আর নিজের মতবাদকে সমাজের বুকে দাঁড় করাবার জন্য এইসব নিয়মগুলোকেই বেদসম্মত বলে চালিয়ে গেছেন।

কারণ এ কাজ আপনি যদি না করতেন, তবে আপনি আপনার অনুসারীদের  নতুন নতুন নিয়ম লিখে নতুন বিধিবদ্ধ শাস্ত্র রচনা করবার নির্দেশ দিতেন না। যেহেতু আপনি নতুন নতুন নিয়ম লেখবার নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু সেখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আপনিও এই একই কাজ আপনার ওই সব তথাকথিত বেদভাষ্যে আপনি লিখেছেন, যেমন — বেদ মন্ত্রে নিয়োগ শব্দ না থাকা সত্ত্বেও সেখানে নিয়োগের বিধান আছে বলে দাবি করেছেন, সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসের মধ্যে শিবপুরাণ সমীক্ষা লিখতে গিয়ে শিবপুরাণকে মিথ্যা ও অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করবার জন্য নিজের মনগড়া গল্প বলে অসত্য কথা দাবী করেছেন। মোক্ষ লাভের পর জীবাত্মা আবার জন্ম নেয় বলে দাবী করেছেন, এছাড়াও এমন অনেক কিছুই লিখেছেন যার কোনো প্রমান দেননি। অর্থাৎ বহু জায়গায় আপনি নিজস্ব মতামত ঢুকিয়ে মিশিয়েছেন।  আপনার ঝোলার ঘর থেকে এই কাল্পনিক গল্প বের হয়েছে।

কিন্তু মজার বিষয় হল সেগুলো কি বেদসম্মত ? আপনাদের সে সব লেখা যে বেদসম্মত তা কিভাবে প্রমাণ করবেন ? 

তাছাড়া আপনি বলেছেন, যৌবন ব্যতিত বিবাহ না করবার জন্য। অথচ দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনিই সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসে লিখে বিধান দিয়েছেন যে,

কন্যার বয়স ২৪ বছর ও পুরুষের বয়স ৪৮ বছর হলো বিয়ের জন্য উৎকৃষ্ট বয়স৷ যে দেশে এই বিবাহবিধি রয়েছে সে দেশ সুখী। কনের বয়স ১৬ এবং বরের বয়স ২৫ হলে সেটা নিকৃষ্ট বিবাহ। বরের বয়স ৩০-৪০ এবং কনের বয়স ১৮-২০ হলে সেটা মধ্যম বিবাহ। 

তাহলে দয়ানন্দ সরস্বতী জী ! আপনি একদিকে যৌবনে বিবাহ করতে বলেছেন। অন্যদিকে কনের ১৬ ও ২৫ বছর বয়েসে বরের বিবাহ কে নিকৃষ্ট বলেছেন। তাহলে কি আপনি ৪৮ বছরের পুরুষকে যৌবনসম্পন্ন পুরুষ বলে চিহ্নিত করছেন ?
আপনার আর্যসমাজী শিষ্যরা ৪৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর ২৪ বছরের কন্যাকে বিয়ে করবে তো ?
যদি কোনো আর্যসমাজী ৪৮ বছরের আগেই বিয়ে করে তাহলে সে তো দয়ানন্দ সরস্বতী আপনার বিধানের বিরুদ্ধে বিবাহ করে আর্যসমাজের নিয়ম বিরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। হায়রে এ কি চমৎকার আপনার বিধান দয়ানন্দ সরস্বতী জী । বেচারা আর্যসমাজীরা ফেঁসে গেলেন তো ?? 

বাহঃ চমৎকার অসাধারণ বুদ্ধি আপনার দয়ানন্দ সরস্বতী জী । আপনি আসলেই স্ববিরোধী দোষে দুষ্ট । এক এক স্থানে এক এক ধরণের সিদ্ধান্ত দিয়ে নিজেই নিজের কথাকে খণ্ডন করে বসে আছেন । আর এই রকম স্ববিরোধী দোষে আক্রান্ত উন্মাদ ব্যক্তিই নাকি আজকালকার আর্যসমাজীদের কাছে ‘মহর্ষি’ ?
হায় হায় রে.... মহর্ষি পদের সম্মানটুকুও সমাপ্ত করে দিয়েছে আর্যসমাজীরা। 


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী নিজস্ব মনগড়া নকল সিদ্ধান্ত লেখায় ও তার শিষ্য আর্যসমাজীদের নতুন নতুন নকল সিদ্ধান্ত লেখাতে উদ্বুদ্ধ করতেন, স্ববিরোধী ছিলেন ছিলেন। তার সাথে সাথে দয়ানন্দ সরস্বতীর কথা অনুসারে আর্যসমাজীরাও ৪৮ বছরের আগে উত্তম বিবাহের যোগ্য নন।


🟪(৬) দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবী (৬)🟪


॥ যুদ্ধকরণ প্রকার প্রকরণ ॥


🔸 সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের ১০৯ নং পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন ,

রথাশ্বং হস্তিনং ছত্রং ধনং ধান্যং পশূন্ স্ত্রিয় ।

সর্বদ্রব্যাণি কুপ্যং চ য়ো য়জ্জয়তি তস্য তৎ॥ ১১ ॥

দয়ানন্দ সরস্বতী এর অর্থ লিখেছেন — যুদ্ধে যে যে সৈনিক অথবা সেনাধ্যক্ষ রথ, অশ্ব, ছত্র, ধন, ধান্য, গবাদি পশু, নারী এবং অন্য সকল প্রকার দ্রব্য, ঘৃত, তৈলের কলস প্রভৃতি যাহা যাহা জয় করিবেন, তিনি তাহা প্রাপ্ত হইবেন, এইরূপ ব্যবস্থা কখনও ভঙ্গ করা উচিত নহে ৷৷ 

১১ ৷৷

সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন


❌ দয়ানন্দ সরস্বতীর ষষ্ঠ দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —

বাহঃ রে সত্যার্থ প্রকাশের লেখক দয়ানন্দ সরস্বতী জী !  বাহঃ ! 

এটাই কি আপনার উত্তম বিচার ? এটাই কি আপনার উত্তম বুদ্ধি ? এটাই কি আপনার উত্তম বিশুদ্ধ মনুসংহিতার অর্থ ? 

লুটপাট এর উদ্দেশ্যে লড়ে যাওয়া যুদ্ধ শত্রুর ধন সম্পত্তি আর তাদের স্ত্রীগণকে ভোগ করাই কি ধর্মের অনুকূল আর বেদসম্মত ?


 মনুস্মৃতি আপনার ধারণারও বাইরে , তাও আপনি এর অর্থের অনর্থ করবার উদ্দেশ্যে যেখানে উক্ত মনু স্মৃতির শ্লোকে “পশূন্ স্ত্রিয়ঃ” অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গের পশুকে বোঝানো হয়েছে , সেখানে দয়ানন্দ সরস্বতী আপনি  আলাদা করে ‘পশু’ আর আলাদা করে ‘নারী’ লিখেছেন। অর্থাৎ নারীদের লুটের বস্তু বানিয়ে ফেলেছেন আর্যসমাজীদের তথাকথিত নিষ্কলঙ্ক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী।


পাঠক বৃন্দ ! 

ভেবে দেখুন একটি শ্লোকের মধ্যে থাকা একটি শব্দের অর্থ কে সামান্য বদলে দিলে কত বড় অনর্থ সৃষ্টি হতে পারে। 

স্ত্রী পশু আর শুধু নারী বলার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। এই দয়ানন্দ সরস্বতী স্ত্রীলিঙ্গের পশুকে ‘পশু' কমা  ‘, ’ ‘ নারী’ লিখেছেন। অর্থাৎ পশু ও নারী শব্দের মাঝে কমা চিহ্ন দিয়ে পশু ও নারী উভয়কেই লুটের বস্তু বানিয়ে ফেলেছেন ।


ওহে ভণ্ডানন্দ !! এইটাই কি আপনার বুদ্ধির দৌড় ?


আপনার অনুসারে লুটপাটের উদ্দেশ্যে লড়ে থাকা যুদ্ধ ধন-সম্পত্তি পশু আদির মতো নারীগণেদের লুটে নেওয়াও কি ধর্মের অনুকূল ?


 এইরকম নিচু মানসিকতা সম্পন্ন কর্ম তো দয়ানন্দ সরস্বতীর মতো আবোধ , ধূর্ত ও মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির ই শোভা দেয় ।


ওহে দয়ানন্দ সরস্বতী ! আপনার এই নারী লুটে নেবার বক্তব্য আর মুসলমানদের কোরাণের “৮নং - সুরা আল আনফাল”-এর আয়াত ৬৯ -এর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই । দেখুন 👇 

فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَّلًا طَيْبًا وَاتَّقُوا اللَّهُ إِنَّ اللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (الأنفال - ٦٩)

আর যা কিছু গনিমতের (লুটের) মাল তুমি প্রাপ্ত করেছো, সেগুলি বৈধ পবিত্র ভেবে খাও আর আল্লাহকে ভয় করো, তার আজ্ঞাবহ হ‌ও ।

আর আপনার মনগড়া কাল্পনিক অর্থে আপনি বলেছেন যে, 

যুদ্ধে যে যে সৈনিক অথবা সেনাধ্যক্ষ রথ, অশ্ব, ছত্র, ধন, ধান্য, গবাদি পশু, নারী এবং অন্য সকল প্রকার দ্রব্য, ঘৃত, তৈলের কলস প্রভৃতি যাহা যাহা জয় করিবেন, তিনি তাহা প্রাপ্ত হইবেন, এইরূপ ব্যবস্থা কখনও ভঙ্গ করা উচিত নহে ৷৷ ১১ ৷৷


অর্থাৎ আপনি তো ইসলামের থেকেও দুই কাঠি উপরে উঠে গেছেন ।

আর যুদ্ধতে জয় লাভ করে শত্রুপক্ষের থেকে প্রাপ্ত করা স্ত্রীগণেদের লুটের মালের মত ভাগকারী নিজেকে বৈদিক বৈদিক বলে ফাটাতে থাকা আর্যসমাজীরা দয়ানন্দের এই লেখার প্রসঙ্গে কি বলবেন ?

আপনাদের ভগবান দয়ানন্দ তো নবী মুহাম্মদের থেকেও দুই কাঠি উপরে উঠে গেছেন, যার কারণে তিনি লড়াইতে নারীদের লুটের ও ভাগাভাগি করে ভোগ করবার কথা বলেন । 

এর থেকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে দয়ানন্দ সরস্বতী ও তার অনুসারী আর্যসমাজীদের সাথে ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ।

আর্য সমাজীদের নিষ্কলঙ্ক দয়ানন্দ সরস্বতী এতটুকুও জানেন না যে এই ধরনের নিচকর্ম ধর্মের অনুকূল নয়, এগুলি বেদ বিরুদ্ধ কথা । দয়ানন্দ যে কত বড় জ্ঞানী তা আর আমাদের বলবার প্রয়োজন নেই, তার অজ্ঞানতা তারই লেখা থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে

যাই হোক এসব দয়ানন্দের মস্তিষ্কে গোবর ভরে থাকার‌ই ফলাফল ।

মনুসংহিতার উক্ত শ্লোকের প্রকৃত অর্থ এমন হওয়া উচিত , দেখুন 👇 


রথাশ্বং হস্তিনং ছত্রং ধনং ধান্যং পশূন্ স্ত্রিয় ।

সর্বদ্রব্যাণি কুপ্যং চ য়ো যজ্জয়তি তস্য তৎ ॥ ৯৬ ॥

(মনু সংহিতা/৭ অধ্যায়/৯৬ শ্লোক)

অর্থ —

রাজার দ্বারা যুদ্ধতে শত্রুর রথ, ঘোড়া, হাতি, ছত্র, ধনধান্য, স্ত্রী পশু (গোমাতা আদি), ঘি তেল আদি যা কিছু জয় হয়েছে, তা তাদের‌ই । অর্থাৎ জয় করা সব কিছুর উচিত ব্যবহার হল এই যে - যদি জয়ী রাজা সমস্ত কিছু সেই পরাজিত রাজ্যের তা তাদের‌ই(প্রজাদেরই) ফিরিয়ে দেন(যে রাজ্যকে তিনি জয় করেছিলেন) ।


                 — উপরি উক্ত অর্থ ই যথার্থ,(দয়ানন্দ সরস্বতী বাদেও বর্তমানে অনেক অনুবাদক‌ই ব্যাখ্যা সহ অনুবাদ না লেখবার কারণে তাদের অনুবাদ‌ও দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা অনুবাদের প্রায় সহিত এক মনে হয়, কিন্তু তা আসলেই নয়)। এমনটা যদি না হতো তবে পরবর্তীতে শ্লোক গুলিতে কখনোই পরাজিত রাজার রাজ্যের থেকে জয় করা সবকিছু পুনরায় সেই রাজ্যকেই ফিরিয়ে দেবার কথা মনু সংহিতা বলতো না। দেখুন এই প্রমাণ 👇


জিত্বা সম্পূজয়েদ্দেবান্ ব্রাহ্মণাঞ্চৈব ধার্মিকান ।

প্রদদ্যাৎপরিহারার্থং খ্যাপয়েদভয়ানি চ ॥ ২০১

সর্বেষাং তু বিদিত্বৈষাং সমাসেন চিকীর্ষিতম্ ।

স্থাপয়েত্তত্র তদ্বংশ্যং কুর্যাচ্চ সময়ক্রিয়াম্ ॥ ২০২

প্রমাণানি চ কুর্বীত তেষাং ধর্মান্ যথোদিতান্ ।

রত্নৈশ্চ পূজয়েদেনং প্রধানপুরুষৈঃ সহ ॥ ২০৩

পার্ষ্নিগ্রাহং চ সংপ্রেক্ষ্য তথাক্রন্দং চ মণ্ডলে ।

মিত্রাদশাপ্যমিত রাদ্বা যাত্রাফলমবাপ্নুয়াৎ ॥ ২০৭

হিরণ্য ভূমিসংপ্রাপ্ত্যা পার্থিবো ন তথৈধতে ।

যথা মিত্রং ধ্রুবং লব্ধ্বা কৃশমপ্যায়তিক্ষমম্ ॥ ২০৮

 [মনুস্মৃতি/অধ্যায় ৭/২০১-২০৩, ২০৭-২০৮ শ্লোক]

অর্থ —

রাজা দারা শত্রুর ওপর বিজয়প্রাপ্ত করবার পর তার দেবতা তথা ধর্মাত্মা ব্রাহ্মণদের পূজা(প্রতি শ্রদ্ধা বশত মনোভাব) করে যুদ্ধতে প্রজাদের যে ব্যক্তিদের অন্যধন এবং জলের হানি হয়েছে তা পূরণ করা উচিত তথা প্রজাদের অভয় দান করে তাদের নিশ্চিন্ত করা উচিত ॥২০১

বিজয় রাজার উচিত যে তিনি যুদ্ধতে পরাজিত হওয়া রাজা তথা তার মন্ত্রীদের মনোরথ জেনে পরাজিত হওয়া রাজার অথবা সেই রাজা বংশে জন্ম হওয়া যোগ্য পুরুষকে রাজগদীতে বসানো। সেই পরাজিত রাজ্যতে যে নিয়ম-কানুন নিষেধ আদি প্রচলিত ছিল তার স্বীকৃতি ঘোষণা করে দেওয়া ॥ ২০২

বিজয়ী রাজার উচিত তিনি যুদ্ধতে পরাজিত হওয়ার রাজার রাজ্যে যে ধর্ম আচার প্রচলিত হত তার মান্যতা হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া ।  রাজা নিজের প্রমুখ মন্ত্রীর সাথে পরাজিত রাজাকে রাজ্যতে অভিষিক্ত করে তাকে রত্নাদি উপহার হিসেবে প্রদান করা ॥ ২০৩

বিজয়ী রাজা তথা তার সহায়কেরা পরাজিত রাজার যাত্রার জন্য ফল, মিত্রতা আদি সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে বহুমূল্য উপহার প্রদান করা উচিত ॥ ২০৭

কারণ কারোর কাছ থেকে সে না অথবা ভূমি নিয়ে রাজা ততটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠেন না যতটা মিত্রতা প্রাপ্ত করলে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। দুর্বল থেকে দুর্বলতর রাজাও মিত্রতার দ্বারা বলবান হয়ে ওঠে ॥ ২০৮


অর্থাৎ রাজার উচিত নিজের ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করতে থেকে সমস্ত শত্রু রাজাদের নিজের মিত্র বানিয়ে নেওয়া , আর এরকম দূর্বল শত্রুকে যেন না মারে , বরং মিত্র বানিয়ে নেয়।

সংগ্রামেম্বনিবর্তিত্বং প্রজানাঞ্চৈব পালনম্।।

শুশ্রূষা ব্রাহ্মণানাঞ্চ রাজ্ঞাং শ্রেয়স্করং পরম্।। ৮৮৷৷

ন কূটেরায়ুধৈইন্যাদ যুধ্যমানো রণে রিপূন্।

ন কর্ণিভিনাপি দিন্ধৈনাগ্নিজ্বলিততেজনৈঃ।। ৯০।।

ন চ হন্যাৎ স্থলারূঢ়ং ন ক্লীবং ন কৃতাঞ্জলিম্।

ন মুক্তকেশং নাসীনং ন তবাস্মীতিবাদিনম্।। ৯১ ৷৷

ন সুপ্তং ন বিসন্নাহং ন নগ্নং ন নিরায়ুধম্।

নায়ুধ্যমানং পশ্যন্তং ন পরেণ সমাগতম্।। ৯২৷৷

নায়ুধব্যসনপ্রাপ্তং নার্ভং নাতিপরিক্ষতম্।

ন ভীতং ন পরাবৃত্তং সতাং ধর্মমনুস্মরন্।। ৯৩।।

যস্তু ভীতঃ পরাবৃত্তঃ সংগ্রামে হন্যতে পরৈঃ।

ভতুর্যদুস্কৃতং কিঞ্চিৎ তৎ সর্বং প্রতিপদ্যতে।। ৯৪৷৷

যচ্চাস্য সুকৃতং কিঞ্চিদমুত্রার্থমুপার্জিতম্।

ভর্তা তৎ সর্বমাদত্তে পরাবৃত্তহতস্য তু।। ৯৫৷৷

[মনুস্মৃতি/অধ্যায় ৭/শ্লোক ৮৮,৯১-৯৫]

 मनुस्मृति [७/८८-९५]


যিনি বাহন বা রথ থেকে আলাদা হয়ে ছিটকে পড়েছেন মাটিতে, নপুংশক, হাত জোড় করে মাটিতে হাটু গেড়ে বসে পড়েছেন, যে প্রার্থনা করে বলে -  আমি তোমার শরণাপন্ন,  শাস্ত্র হীন, যুদ্ধতে অনিচ্ছুক, যে বিপত্তিতে পড়েছে, অথবা দুঃখী, ঘায়েল হয়ে গেছে, ভয়ে ভীত হয়েছে অথবা যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

বীর ক্ষত্রিয় রাজা পরাজিত রাজার প্রজার সাথে সেই ভাবেই ব্যবহার করবে যেভাবে বীর ক্ষত্রিয় রাজা নিজের প্রজার সাথে ব্যবহার করেন ।

যাক... এসব কথা জিহাদী দয়ানন্দ সরস্বতীর ধারণার‌ও বাইরের বিষয় ।

দয়ানন্দ সরস্বতী ছোটবেলা থেকেই মুসলিমদের মতই কট্টরপন্থী বিচারধারার ব্যক্তি ছিলেন। থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটির দালাল,

নিরাকারের উপাসনা, 

দেবদেবীর মূর্তি পূজা বিরোধ,

সনাতন ধর্ম থেকে আলাদা করে নিজের মতবাদ বানানো, 

সনাতন ধর্মের দেবদেবীদের, নিজের পিতা মাতা, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অপমান ও নিন্দা সূচক বক্তব্য দেওয়া, 

নিজের মনগড়া কাল্পনিক সিদ্ধান্ত কে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া,

একজন স্ত্রী ১১ জন পর পুরুষ দিয়ে যৌন ক্রিয়া করতে পারবে বলে বিধান দেওয়া,

অশ্লীল নিয়োগ(স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গে পুরুষের যৌনাঙ্গের প্রবেশ) বিধান দেওয়া,

পাঠার ঘি দুধ উৎপন্ন হয় বলে দাবীদার,

লুটপাটের সমর্থক, নারীদের লুটের গনিমতের মাল বলে চিহ্নিতকারী,

নিজের পিতাকে পর্যন্ত ধূর্ত, পাখন্ডী, মূর্খ বলে চিহ্নিতকারী,

বেদ বিরোধী, ধর্ম বিরোধী, ধর্মগ্রন্থের অপমানকারী, শিব মহাপুরাণ কে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করবার জন্য মিথ্যা গল্প রচনাকারী, বস্ত্র যাচনাকারী  শিবভক্ত ভিক্ষুক ব্রাহ্মণকে পিটিয়ে হত্যাকারী, কাশিতে ১০০-র বেশি সংখ্যক দেব দেবীর প্রতিমা লাঠি দিয়ে আঘাত করে ভঙ্গকারী, নদীতে ভেসে আসা মরা পচা মৃত লাশকে চিরে ফেরে দেওয়ার মতো নীচ কর্মকারী, নিজেকে সন্ন্যাসী দাবি করবার পরেও নিজের কাছে যৌনবর্ধক বড়ি রাখবার মতো কার্যকর্তা, মাঝরাতে নগ্ন হয়ে নিজের অনুসারী ছেলেমেয়েদের দিয়ে ওই নগ্ন দেহ টেপাটিপি করানোর মতো দুষ্টকর্মকারী, প্রতিদিন মলদ্বারে অশ্বলিঙ্গ প্রবেশ করাবার মতো অশ্লীল বেদভাষ্যকারী দয়ানন্দ সরস্বতীর কাছে আর কি ভালো আশা করা যেতে পারে ? 


আর দয়ানন্দ সরস্বতী যে সত্যিই মুসলিম দের নবী মুহাম্মদের মতোই ছিল, তা আর্যসমাজীদের এক পণ্ডিত‌ই স্বীকার করেছেন, প্রমাণ দেখুন 👇 

🤧মার্কেটে আসা নতুন ভগবান দয়ানন্দ সরস্বতী কে নবী মোহাম্মদের মতোই মনে হতো বলে দাবী করেছে আর্যসমাজের তথাকথিত বেদজ্ঞ এক পণ্ডিত 🔥 


সুতরাং আর্যসমাজীরা যত‌ই নিজেদেরকে সনাতনী প্রমাণ করবার জন্য সনাতনী রূপের ছদ্মবেশ ধরে প্রচার প্রচারণা করুক, তাদের কার্যকলাপ ও ইতিহাস বারংবার এটা প্রমাণ করে দেয় যে তারা মুসলিমদের থেকে কোন অংশে কম নয়। বরং আরো একধাপ এগিয়ে বলা যায় যে,

দয়ানন্দ সরস্বতী= আর্য সমাজ = মুসলিম ।

[ বিঃ দ্রঃ — অনেক আর্য সমাজী এই আর্টিকেল পড়বার পর দাবি করতে পারে যে, দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের খণ্ডন করে গেছেন। তাই তিনি কখনোই মুসলিম নন। কিন্তু আসল সত্য কথা হলো - দয়ানন্দ সরস্বতী এক বেশ্যা নারীর হাতে বিষ খেয়ে অপমৃত্যুর পদ্ধতিতে মরে দয়াপ্রেত হয়ে নরকে যাবার পর, হিন্দু সনাতনী পণ্ডিত ও হিন্দু সনাতনী সমাজের কাছে দয়ানন্দ সরস্বতীর এই আর্যসমাজ সম্পূর্ণরূপে একটা সনাতন ধর্মের বিরোধী দল বলে পরিচিত হয়ে যাচ্ছিল, কারণ দয়ানন্দ সরস্বতী জীবিত অবস্থায় তার সত্যার্থ প্রকাশে কোথাও ইসলাম খ্রিস্টান দের বিরুদ্ধে কোন কিছু লিখে যান নি, তখন আর্য সমাজের এই দুর্বলতা ঢাকতে, সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে  সেখানে খ্রিস্টান ও যবনমত সমীক্ষা বলে আরও একটি সমুল্লাস বাড়িয়ে লিখে ছেপে নতুন সত্যার্থ প্রকাশ বের করে পিঠ বাঁচায়। যাতে তারা দেখাতে পারে যে দয়ানন্দ সরস্বতী কত বড় সনাতনী ছিলেন, আসলে সনাতনীদের চোখে ধুলো দেবার জন্য  দয়ানন্দ সরস্বতী নরকে যাওয়ার পর এসব কারসাজি করেছে আর্যসমাজীরা]


বর্তমান সময়ে আমাদের সনাতনীদের বোকা বানিয়ে আর্যসমাজীরা নিজেদের দল ভারী করছে যা আমাদের সকল সনাতনী দের জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জনক।

তাই আর্য সমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতীর পর্দা ফাঁস করে সত্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

যতদিন আর্যসমাজী ওরফে আর্যনামাজীরা  সনাতন ধর্মের ক্ষতি করবার জন্য চেষ্টা করবে, ততদিন আমরা শৈব অর্থাৎ আদি সনাতনীরা পরমেশ্বর শিবের আশীর্বাদে আর্যসমাজীদের দমন করে যাবো ।

কারণ, সত্য সর্বদাই জয়ী হয় ।


সিদ্ধান্ত — দয়ানন্দ সরস্বতী নিজস্ব মনগড়া নকল সিদ্ধান্ত লিখতে গিয়ে সনাতন ধর্মের বিপক্ষে থাকা ইসলাম মজহাবের গ্রন্থ কোরাণ হাদিসের মধ্যে থাকা জিহাদ করবার মতোই এক‌ই বিধান লিখে সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। 


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 

সত্যার্থ প্রকাশের ষষ্ঠ সমুল্লাসের খণ্ডন সম্পূর্ণ হল।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ