সনাতনী শৈবদের জন্য কোন শাস্ত্র সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত হিসেবে মান্য — বেদ নাকি শৈব আগম ❓
সনাতনী শৈবদের জন্য কোন শাস্ত্র সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত হিসেবে মান্য — বেদ নাকি শৈব আগম❓
উত্তর — এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের কিছু প্রাথমিক বিষয় আলোচনা করে বুঝে নিতে হবে।
বর্তমান সময়ে আর্য সমাজীরা বলতে থাকে যে, মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে “বেদ অখিল ধর্মমূলম্”
অর্থাৎ অখিল ধর্মের মূল বেদ।
এখন পবিত্র বেদের অন্তর্গত বেদের অন্তভাগ বেদান্ত অর্থাৎ সিদ্ধান্ত, যাকে যাকে উপনিষদ বলে, সেই উপনিষদের সংখ্যা হল ১০৮ ।
(যদি কোন মূর্খ আর্যসমাজী বলে থাকে যে ১০৮ উপনিষদ মানি না, তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, তাদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই তার লেখা সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের প্রথম সমুল্লাসের মধ্যে কৈবল্য উপনিষদকে প্রামাণিক হিসেবে মেনে গিয়েছেন, যা আমাদের শৈবদের মান্য উপনিষদ, যা ১০৮ উপনিষদের মধ্যে একটি। সুতরাং, যদি ১০৮ উপনিষদের মধ্যে থাকা ১টি উপনিষদ আর্যসমাজীরা ব্যবহার করতে পারে, তবে বাকি উপনিষদ গুলিকেও স্বীকার করতেই হবে। তাই উপনিষদের সংখ্যা ১০৮ টি ই)
১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে অন্নপূর্ণা উপনিষদ হল অন্যতম ।
প্রমাণ দেখুন 👇
মুক্তিকা উপনিষদের মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫নং মন্ত্রে ১০৮ উপনিষদের মধ্যে “অন্নপূর্ণা উপনিষদ” একটি অন্যতম উপনিষদ বলা হয়েছে, দেখুন প্রমাণ 👇
প্রশ্নমুণ্ডকমাণ্ডুক্যাথর্বশিরোথর্বশিখাবৃহজ্জাবাল-
নৃসিংহতাপনীনারদপরিব্রাজকসীতাশরভমহানারায়ণ-
রামরহস্যরামতাপনীশাণ্ডিল্যপরমহংসপরিব্রাজক-
অন্নপূর্ণাসূর্যাত্মপাশুপতপরব্রহ্মত্রিপুরাতপনদেবীভাবনা-
ব্রহ্মজাবালগণপতিমহাবাক্যগোপালতপনকৃষ্ণহয়গ্ৰীব-
দত্তাত্রেয়গারুড়ানামথর্ববেদগতানামেকত্রিংশত্সংখ্যাকানা-
মুপনিষদাং ভদ্রং কণোংভিরিতি শান্তিঃ॥৫॥
(তথ্যসূত্র - মুক্তিকা উপনিষদ/১ম অধ্যায়/৫নং মন্ত্র)
এবার দেখুন বেদোক্ত
অন্নপূর্ণা উপনিষদের ৩ নং অধ্যায়ের মন্ত্র সংখ্যা ২১ নং এ বলা হয়েছে —
শিবঃ শৈব আগম স্থানাং কালঃ কালৈকবাদিনাম্ ।
যৎ সর্বশাস্ত্রসিদ্ধান্তং যৎ সর্বহৃদয়ানুগম্ ॥ ২১
[তথ্যসূত্র — অথর্ব-বেদ/অন্নপূর্ণা উপনিষদ/৩য় অধ্যায়/মন্ত্র ২১]
🌷 অর্থ — শৈব আগমে বর্ণিত হয়েছে যেই পরমেশ্বর শিবের বিষয়বস্তু তথা যেখানে শিবতত্ত্ব বর্ণনা রয়েছে, সেই শৈব আগম শাস্ত্র সমস্ত কালের জন্য মান্য, সমস্ত কালের সকল জীবের জন্য মান্য এবং ইহাই সমস্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তসার স্বরূপ ও সকলের হৃদয়ের অনুগত তথা শুভকারক ॥ ২১
🔥 সিদ্ধান্ত — শৈব আগম শাস্ত্র সমস্ত শাস্ত্রের মধ্যে সিদ্ধান্ত রূপী সর্বোত্তম, এই শৈবাগমেই পরমেশ্বর শিবের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, সাক্ষাৎ বেদশাস্ত্র একথা স্বীকার করে নিয়ে শৈব আগমের গুণগান করছে, সুতরাং শৈব আগমকে কোনোভাবে অবৈদিক বলা যাবে না। যারা শৈব আগমকে সর্বোপরি না মানে তারা সনাতনী নয়।
মার্কণ্ডেয় স্মৃতিতে বলা হয়েছে -
ঈশেন রচিতং শাস্ত্রং অষ্টবিংশতিসংখ্যয়া ।
তথৈব বৈষ্ণবং চাপি ব্যামোহায় পুরা কৃতম্।
সুগতানাং রাক্ষসানাং দেবদেবন বিষ্ণুবা ॥ ১১
তদেতদখিলং তস্মাৎ শাস্ত্রং তদ্ দ্বিবিধং পরম্।
ব্যামোহকং পরিত্যাজ্যং তারকং পরিগৃহ্য বৈ ॥ ১২
(তথ্যসূত্র - মার্কণ্ডেয় স্মৃতি/বেদেতরমুক্তিবর্ণন/১১-১২ নং শ্লোক)
✅ অর্থ — পরমেশ্বর ঈশান শিব ২৮ টি শৈব আগমশাস্ত্র রচনা করেন তথা অতীতকালে বিষ্ণুদেব বৈষ্ণবদের জন্য মোহিত করবার জন্য পাঞ্চরাত্র শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। শ্রীবিষ্ণু মূলত ভয়ঙ্কর রাক্ষসদের নাশ করবার নিমিত্তে এই মোহনাত্মক পঞ্চরাত্র ও সুগতবুদ্ধরূপে মোহনাত্মক বৌদ্ধশাস্ত্র রচনা করেছিলেন । এই অখিল জগতে বিভিন্ন রকমের শাস্ত্র উপস্থিত রয়েছে। তার মধ্যে পঞ্চরাত্রের মতো আরো যে সমস্ত অনান্য মোহশাস্ত্র আছে সেসব পরিত্যাজ্য করে যে সমস্ত তারক শাস্ত্র অর্থাৎ পরমমুক্তি প্রদানকারী বেদ সহ শৈব আগমাদি আছে সর্বদা তা গ্রহন করা উচিত ॥ ১১-১২
🟥 চলুন এবার দেখে নেয়া যাক আগমশাস্ত্র যদি বেদবিরুদ্ধ অশুভ শাস্ত্র হয়ে থাকে তবে শৈব আগম সম্পর্কে বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় পদ্মপুরাণই কি বলছে —
অথ ধৰ্ম্মাঃ শিবেনোক্তাঃ শিবধৰ্ম্মাগমোত্তমাঃ ।
জ্ঞেয়া বহুবিধাস্তে চ কৰ্ম্মযোগপ্রভেদতঃ ॥১
হিংসাদিদোষনিৰ্ম্মুক্তাঃ ক্লেশায়াসবিবৰ্জ্জিতাঃ ।
সৰ্ব্বভূতহিতাঃ শুদ্ধাঃ সূক্ষ্মায়াসা মহৎফলাঃ ॥২
অনন্তশাখাকলিতাঃ শিবমূলৈকসংশ্ৰিতাঃ ।
জ্ঞানধ্যানসুপুষ্পঢ্যাঃ শিবধৰ্ম্মাঃ সনাতনাঃ ॥৩
[তথ্যসূত্র : পদ্মপুরাণ/ভূমিখণ্ড/৬৯নং অধ্যায়]
✅ অর্থ — শিব দ্বারা প্রকটিত শৈবআগম শাস্ত্রে বর্ণিত শিবধর্ম বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ঐ সকল ধৰ্ম কৰ্ম্মযোগ ভেদে বহুবিধ এবং হিংসাদি দোষরহিত, ক্লেশায়াসবিবর্জ্জিত সৰ্ব্বভূত হিতকর, শুদ্ধ, সূক্ষ্ম মহাফল, অনন্তশাখাযুক্ত, মঙ্গলমূল, জ্ঞান ধ্যানসুপুষ্পাঢ্য ও সনাতন(শাশ্বত) ॥১-৩
• শৈব আগম শাস্ত্রগুলিকে অবৈদিক বলা বৈষ্ণবদের দাবী খণ্ডিত হল ।
• আর্যসমাজীরা বেদের আধারে বেদের বাইরের অন্য সমস্ত শাস্ত্র তথা সকলকে নিকৃষ্টতম দাবী করতো, বেদ অনুযায়ী ই শৈব আগম সর্বোচ্চ প্রমাণিত হল। যদিও বেদ ও আগম উভয়েই শ্রৌতশাস্ত্র । এমনকি স্মৃতি অনুযায়ীও শৈবাগম পরমশাস্ত্র।
বেদ — শ্রুতি
শৈব আগম — মহাশ্রুতি,
মহাশ্রুতি শৈব আগম শাস্ত্র আমাদে শৈব দের কাছে সর্বাগ্রে মান্য। যদিও বেদ ও শৈবাগম এক বলেই মান্য আমাদের শৈব সনাতনীদের কাছে।
তার কারণ হল, মনু স্মৃতি অনুযায়ী বেদ(শ্রুতি) ধর্মের মূল, কিন্তু বেদ স্বয়ং বলছে যে, শৈব আগম(মহাশ্রুতি) শাস্ত্র সর্বশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত স্বরূপ, যা স্বয়ং পরমেশ্বর শিবের মুখ নিঃসৃত বানী। সুতরাং, শ্রুতির বাক্যের ঊর্ধ্বে মনুস্মৃতির বচন মান্য নয় , শ্রুতি অর্থাৎ বেদের বচনই গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ শৈব আগম ই সর্বোপরি বলে মান্য । কারণ, স্বয়ং বেদ একথা স্বীকার করেছেন।
এবার শৈব আগম শাস্ত্রে পরিষ্কার ভাবে মনুর বচনের চরম বিশ্লেষণ রয়েছে ।
চলুন দেখে নেওয়া যাক 👇
শৈব আগম শাস্ত্র হতেই বেদের উৎপত্তি এবং আগমের অকাট্যতা —
ঈশ্বর উবাচ্
শৈবং তু মূলভূতং স্যাৎ চতুর্বেদাস্তমুদ্ভবাঃ ।
তদাপি বৈদিকং বেদসারং ইত্যাদি বাক্যতঃ ॥ ৪৬
ন পুম্ভিরার্ষকং বাক্যং দৈবিকং ঋষিভিস্তথা ॥ ৬০
ন দেবৈঃ ব্রাহ্মণো বাক্যং বৈষ্ণবং পদ্মজেনবা ।
ন শৈবং বিষ্ণুনা বাক্যং বাধ্যতে ন কদাচন ॥ ৬১
উত্তরোত্তর বৈশিষ্যং সর্বেশাং পরিকীর্তিতম্ ॥ ৬২
[তথ্যসূত্র - উত্তর কামিকাগম/ক্রিয়াপাদ/২৫ নং পটল]
✅ অর্থ - ঈশ্বর বললেন, শৈব শাস্ত্র অর্থাৎ শিব মুখ হতে প্রকটিত আগম শাস্ত্রই সর্বশাস্ত্রের মূল। এই শৈব আগম শাস্ত্র(-এর অংশ মাত্র) হতেই (উচ্ছিষ্টস্বরূপ)চতুর্বেদের সৃষ্টি হয়েছে,
সেই কারণে শৈব আগমশাস্ত্র বৈদিক শাস্ত্ৰ তথা বেদসার ইত্যাদি নামে বোধিত হয়ে থাকে। সাধারণ মানব বাক্য দ্বারা যেমন আর্য (ঋষি) বাক্য খণ্ডন করা যায় না, ঋষি বাক্য দ্বারা যেমন দেববাক্য খণ্ডন করা যায় না, দেব বাক্য দ্বারা যেমন ব্রহ্মা এর বাক্যকে খণ্ডিত করা যায় না, ব্রহ্মার বাক্য দ্বারা যেমন বিষ্ণুর বাক্য খণ্ডিত হয় না, সেইরূপ বিষ্ণুর বাক্য দ্বারা শিবের বাক্যকে কদাপি খণ্ডিত করা যায় না। এই ভাবেই ক্রমবর্ধমান শ্রেষ্ঠতার ক্রমানুসার শিব বাক্য আগম শাস্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠতা-ই সিদ্ধ হয়ে থাকে, যা সর্বদাই অকাট্য তথা অখণ্ডনীয়।
এছাড়াও আমাদের শিবমহাপুরাণ পরিষ্কার ভাবেই বলেছে যে, আমাদের শৈবদের জন্য শৈব আগম শাস্ত্র ই সর্বোপরি। প্রমাণ 👇
শ্রীকণ্ঠেন শিবেনোক্তং শিবায়ৈ চ শিবাগমঃ ।
শিবাশ্রিতানাং কারুণ্যাচ্ছ্রেয়সামেকসাধনম্ ॥ ৩৯
[তথ্যসূত্র — শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরখণ্ড/ ৭ম অধ্যায়/৩৯ নং শ্লোক]
✅ অর্থ — পরমেশ্বর শ্রীকণ্ঠ শিব দেবী শিবা-পার্বতীর কাছে যে পরম জ্ঞান প্রকাশ করেছেন তা হল - শিবাগম অর্থাৎ শৈব আগম শাস্ত্র। যারা পরমেশ্বর শিবের শৈব মার্গে আশ্রিত শিবভক্ত শৈব, একমাত্র সেই তাদের কল্যাণের নিমিত্তেই করুণাবশত এই শৈবাগমের জ্ঞান প্রদান করেছেন, যা সাধনের একমাত্র মার্গ ॥ ৩৯
এছাড়াও, যদি পাতঞ্জল যোগদর্শনের দিকে দেখি তবে সেখানেও দেখা যাচ্ছে ‘আগম’ কে প্রমাণ বলা হয়েছে, দেখুন 👇
প্রত্যক্ষানুমানাগমাঃ প্রমাণানি ॥
[তথ্যসূত্র : পাতঞ্জল যোগদর্শন/সমাধিপাদ/৭ নং সূত্র]
অর্থ — প্রত্যক্ষ, অনুমান ও আগম হল প্রমাণ ।
‘আগম’ শব্দের ব্যাখ্যা :
♦️ আগম-প্রমাণ — এটিকে শব্দ প্রমাণও বলে। যে সকল পুরুষ অত্যন্ত শুদ্ধচিত্ত যাদের সংশয়, ভ্রম, প্রমাদ বিপ্রলিপ্সা (ঠকাইবার ইচ্ছা) প্রভৃতি নেই, এইরকম আপ্ত পুরুষ যখন নিজে কোন বস্তু প্রত্যক্ষ বা অনুমান করে কোনো শ্রদ্ধালু ব্যক্তিকে তার বিষয়ে উপদেশ করেন, তখন শ্রোতার চিত্তে যে সেই বস্তুবিষয়ক বৃত্তির উদয় হয় (যার দ্বারা সেই ব্যক্তির ঐ বস্তুর জ্ঞান হয়), তাকেই আগম-প্রমাণ বলে।
অর্থৎ, সর্বশ্রেষ্ঠ আপ্তপুরুষ একমাত্র পরমেশ্বর শিব, তিনি সবকিছুর জ্ঞাতা, তাই পরমেশ্বর শিবের মুখ নিঃসৃত পরম শৈবজ্ঞান সম্পন্ন শৈবআগম শাস্ত্রকেই সর্বোচ্চ প্রমাণ বলে জানা উচিত।
মহাশ্রুতি শৈবাগম ও শ্রুতি উভয়ই বেদতত্ত্ব বলেই আমাদের শৈবাচার্যগণ মান্যতা দিয়েছেন । বীরশৈব গুরু পরম্পরার ‘সিদ্ধান্ত শিখামণি’ তে বলা হয়েছে —
বেদধর্মাভিধায়িত্বাৎ সিদ্ধান্তাখ্যাঃ শিবাগমঃ।
বেদবাহ্যবিরোধিত্বাদ্ বেদসম্মত উচ্চতে।।১২
বেদসিদ্ধান্তযোরৈক্যমেকার্থপ্রতিপাদনাৎ।
প্রামাণ্যং সদৃশং জ্ঞেয়ং পণ্ডিতৈরেতয়োঃ সদা।।১৩
[শ্রী সিদ্ধান্ত শিখামণী/ পরিচ্ছেদ ৫/১২-১৩]
অর্থ — সিদ্ধান্ত নামক শিবাগম বেদোক্ত ধর্মের প্রতিপাদক তথা বেদবাহ্য বিরোধী হওয়ার কারণে বেদসম্মত বলা হয়।।
এক অর্থ অর্থাৎ সমান বিষয়ের প্রতিপাদক করার কারণে পণ্ডিত লোকদের বেদ আর শৈবসিদ্ধান্ত এই দুইয়ের প্রামাণ্য এক সমান বুঝতে হবে।।
🌸শৈবাচার্য শ্বেত জীর শিষ্য শ্রীকণ্ঠ শিবাচার্য তার ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে
উল্লেখ করে বলেছেন -
বেদশিবাগমযোর্ভেদং ন পশ্যামঃ ।
[শ্রীকণ্ঠ কৃত ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য/২/২/৩৮ সূত্র]
✅ অর্থ — বেদ ও শিবাগমের মধ্যে কোনো পার্থক্য বা ভেদ নেই।
আরো দেখুন 👇
আগমাদাপ্ত বক্ত্রোৎথান্নান্যথা মুনিপুঙ্গব ।
আপ্তশ্চৈবাগমাৎসিদ্ধঃ স চেদানীং বিচার্যতে ॥ ২৭
[তথ্যসূত্র : মতঙ্গ-পারমেশ্বর আগম/যোগপাদ/৪র্থ পটল/ ২৭ নং মহামন্ত্র]
অর্থ — আপ্তপুরুষ শিবেরর বক্ত্র(মুখ) থেকে আগত শাস্ত্রই হল আগমশাস্ত্র, আপ্তপুরুষ প্রণীত শাস্ত্র (বেদ-শৈব আগম) ব্যতিত অন্যান্য সকল শাস্ত্র মুনিঋষিদের দ্বারা সৃষ্ট। শৈব আগম বাক্য যেহেতু স্বয়ং আপ্তপুরুষ সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিব দ্বারা সিদ্ধ বচন, তাই শিবের বচন কখনোই মুনিঋষির বচন দ্বারা বিচার করবার মতো দুঃসাহস করা যাবে না ॥ ২৭
সুতরাং, শৈব আগম শাস্ত্রের প্রামাণ্যতা নিঃসন্দেহে মান্য, কিন্তু শ্রুতির বচন অনুযায়ী বেদ তথা অনান্য সকল শাস্ত্রেরও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে শৈব আগম শাস্ত্রই সর্বোচ্চ।
🔥 সিদ্ধান্ত — এই বাক্য দ্বারা সহজেই উপলব্ধ হয় যে, শিবাগম কোনো অন্য শাস্ত্রের বাক্যের দেওয়া সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না।
তাই আর্যসমাজীদের দাড় করানো বেদের আধারে সকল তথাকথিত বেদবাদ যা কি না নকল, তা সবই এখানে নস্যাৎ হয়ে গেল, মনুসংহিতার বাক্য দিয়ে শিববাক্য শৈবাগম শাস্ত্র কে খণ্ডানো তো দূরের কথা ভাবাটাও অসম্ভব তথা মূর্খামি ।
কারণ সকল সনাতনী শৈবদের জন্য শৈব আগম শাস্ত্র ই সর্বোচ্চ ও সর্বোপরি সর্বোৎকৃষ্ট মহাপ্রমাণ, তাই মনুসংহিতা বা বেদের দোহাই দিয়ে কোনো ভাবেই শৈবদের সিদ্ধান্ত খণ্ডন করা সম্ভব নয় । বরং আর্যসমাজীদের যেহেতু শৈব আগমের ভাষ্য তো দূরের কথা শৈব আগম শাস্ত্র কি ? তা আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতী ই জানতেন না, তাহলে আর্যসমাজীরা কোথা থেকে জানবে ? শৈব আগম সম্পর্কে আর্যসমাজীরা যেহেতু বিন্দুমাত্র অবগত নয়, একারণে আমাদের শৈবদের কাছে মূর্তিপূজা বিরোধী ভণ্ড আর্যসমাজীরা সর্বদাই শাস্ত্র পঠনপাঠনেরও অযোগ্য বলে বিবেচিত । তাহলে তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত তো পাতে নেওয়ারও যোগ্য নয়। কারণ, যারা নিজেদের মতবাদ শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করবার জন্য প্রক্ষিপ্তবাদের ভণ্ড যুক্তি ব্যবহার করে তাদের সাথে প্রমাণ অপ্রমাণের বিষয় নিয়ে কথা বলাও বৃথা ।
যদি কোনো পাখণ্ডী পরমেশ্বর শিবের দেওয়া এই মহাশ্রুতি শৈব আগম নিয়ে কোনো রকম কটুক্তি করে, তবে চরমতম খণ্ডন উপস্থাপন করে সকল অধার্মিক মতবাদ দমন করবো ।
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
✍️লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
🚩 কপিরাইট ও প্রচারে — ©International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
আরো দেখুন 👇
• বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় পঞ্চরাত্র গুলি বেদ বিরুদ্ধ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন