বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় মহোপনিষদ ও পদ্মপুরাণ থেকে নারায়ণের পরমত্ত্ব খণ্ডন করে প্রভু শিবের পরমত্ত্ব প্রমাণ
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
নারায়ণকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ করবার জন্য অপযুক্তি,অপকৌশল প্রয়োগ করবার মতো ধূর্ততা সেই সুদূর অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত করে এসেছে বৈষ্ণবেরা। কলিকালের প্রভাবে শৈবদের প্রভাব পৃথিবীতে কমে যাওয়ার ফলে বর্তমানে যেন এই অপপ্রচেষ্টা বিরাট ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু এই অপপ্রচারকারী বৈষ্ণবেরা এটা ভুলে গেছে যে, যখন ধর্ম কথা বলে তখন কোন অধর্মী পাষণ্ড টিকে থাকতে সক্ষম হয় না। আর সেই কারণে আজও স্বল্প পরিমাণ হলেও শৈবদের পুনর্জাগরণ ঘটতে শুরু করেছে দিকে দিকে।
শৈবদের দ্বারা পুনরায় সেই সকল অপপ্রচারের সম্রাট বৈষ্ণবদের একচেটিয়া রাজত্বের অবসান ঘটবার ঘন্টা বেজে গিয়েছে।
আজ বৈষ্ণবদের সকল দাবীর মধ্যে থাকা সর্বোচ্চ দাবীর খণ্ডন বৈষ্ণবদের শাস্ত্র পদ্মপুরাণ থেকে উপস্থাপন করে বৈষ্ণবদের অবৈধ দাবীর শৃঙ্গ চূর্ণবিচূর্ণ করে ধূলোয় মিশিয়ে দেবো ।
অপপ্রচারে লিপ্ত মূর্খ বৈষ্ণবদের দাবী —
সৃষ্টির পূর্বে মৃত্যু, অমৃত,রাত্রি,দিন,বায়ু ছিলো না একমাত্র ব্রহ্মই বিদ্যামান ছিলেন। বেদ,স্মৃতি,ইতিহাস শাস্ত্রপ্রমাণ দ্বারা প্রতিপন্ন হয় ভগবান নারায়ণই পূর্বে বিদ্যমান ছিলেন।তার থেকে ব্রহ্মা জাত হোন যার দ্বারা ভূতসমূহের প্রাণীর উৎপত্তি, রাত্রিদিন, বায়ুর প্রকাশ হয়।তাই সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র ভগবান নারায়ণই ছিলেন।
"তদাহুরেকো হ বৈ নারায়ণ আসীন্ন ব্রহ্মা নেশানো নাপো নাগ্নীষোমৌ নেমে দ্যাবাপৃথিবী ন নক্ষত্রাণি ন সূর্যো ন চন্দ্রমাঃ।"( মহোপনিষদ ১/১)-------সৃষ্টির আদিতে কেবল পরম পুরুষ নারায়ণ ছিলেন।ব্রহ্মা ছিল না,শিব ছিল না,আপ(জল),অগ্নি, সোমাদি দেবগণ ছিল না, দ্যুলোক ছিল না, আকাশে নক্ষত্র ছিল না এবং সূর্য-চন্দ্রও ছিল না।
🔥 শৈবপক্ষ থেকে অপপ্রচার কারী বৈষ্ণবদের খণ্ডন —
মহো উপনিষদ অনুযায়ী যদি নারায়ণ সৃষ্টির আদিতেও থেকে থাকেন তাতেও শিবপরমত্ত্ব খণ্ডিত হয় না ।
কারণ, এখানে নিত্য সৎ ও অনিত্য সৎ — এর দৃষ্টিতে বেদমন্ত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমাদের শৈব মান্যতা খণ্ডিত হয় না। সৎ শব্দে এটি বোঝায় যা অস্তিত্ব সম্পন্ন।
কিন্তু নিত্য সৎ আর অনিত্য সৎ এর মধ্যে সেই অস্তিত্বের সংজ্ঞা ভিন্ন হয়ে যায়। নিত্য সৎ বলতে তাকে বোঝায় যিনি সর্বোচ্চ সত্ত্বা যার কোনো জন্ম বা বিনাশ নেই , যিনি সর্বদাই ছিলেন আছেন ও থাকবেন - নিত্য সৎ তাকেই বোঝায়।
অনিত্য সৎ - বলতে তাকে বোঝায় যিনি মায়ায় জগতে উৎপন্ন এমন এক সত্ত্বা যা স্বয়ং মায়ারূপী জগতকে ঈশ্বরের নির্দেশে প্রকাশ করে আবার সংকোচন করে নিজেই প্রলয়ের অন্তিমে থাকছেন, পুনরায় ঈশ্বরের নির্দেশে সৃষ্টি-প্রলয়ের আরম্ভ ঘটাচ্ছেন, কিন্তু মহাপ্রলয়ের সময় সেই সত্ত্বাও ঈশ্বরে বিলীন হয়ে যান, তাই এই সত্ত্বাকে অনিত্য সৎ বলা হয়। যাকে এককথায় বলা যায়, ক্ষণিকের জন্য অন্যের অস্তিত্ব হয়ে টিকে থাকা।
মহোপনিষদের বেদ বাক্যেও ‘সৃষ্টির পূর্বে নারায়ণ ছিলেন’ এই শব্দে সেই ‘অনিত্য সৎ’ এর বিষয়েই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর ‘নিত্য সৎ’ হলেন স্বয়ং হরি-হর(ঈশান)-ব্রহ্মার স্রষ্ঠা ‘পরশিব’। আবার
আপনারা বৈষ্ণবেরা দাবী করেছেন, যখন একমাত্র নারায়ণ ছিল তখন ব্রহ্মা ছিল না, শিব ছিল না।
কিন্তু মহো উপনিষদের শ্রুতি মন্ত্রে ‘আসীন্ন ব্রহ্মা নেশানো’ অর্থাৎ ‘না ব্রহ্মা ছিল, না ঈশান ছিল’ -এটি বলা হয়েছে।
অর্থাৎ এখানে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে ত্রিদেবের কথা বোঝানো হচ্ছে।
বেদে রুদ্র/ঈশান/ভব শব্দের দ্বারা ক্ষেত্র বিশেষে কখনো নিরাকার শিবকে বোঝায়, কখনো সাকার ব্রহ্ম ত্রিদেবের স্রষ্ঠা সাম্ব-সদাশিব,কখনো কালরুদ্রকে বোঝায়।
এক্ষেত্রে ঈশান শব্দে কালরুদ্রের কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যদি এক্ষেত্রে ঈশান শব্দে কালরুদ্রকে না বোঝায় তবে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে রুদ্রকে অর্থাৎ পরমশিবকে অজাত বলা হয়েছে, যার অর্থ অজন্মা ।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যেই ৪নং অধ্যায়ের ২১নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিবকে অজাত বলে উল্লেখ পর্যন্ত রয়েছে -
অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ।।২১
সরলার্থ: হে রুদ্র, তুমি জন্মরহিত। তাইতো মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ তোমার শরণ নেয়। তোমার দক্ষিণ(কল্যাণময় দক্ষিণামূর্তি) মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং সর্বদা আমাকে রক্ষা কর।
[ বিস্তারিত পড়ুন : শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের শ্রুতিমন্ত্রে বর্ণিত পরমেশ্বর শুধুমাত্র শিব। বিষ্ণু বা অন্য কেউ নয় ]
তাহলে ভাবুন ! বেদেই বলা হয়েছে অজন্মা রুদ্র, তাহলে বেদের অপর স্থানে মহোপনিষদের মন্ত্রের উপর নির্ভর করে যদি ভাবা হয় যে, সৃষ্টির পূর্ববর্তী কালে নারায়ণ উপস্থিতি ছিল কিন্তু ঈশানের অস্তিত্ব ছিল না অর্থাৎ পরমশিবের অস্তিত্ব ছিল না বলে ভেবে নেওয়া হয়, তবে বেদ স্বয়ং স্ববিরোধী হয়ে পড়ে।
কল্পভেদ অনুযায়ী, ত্রিদেব একে অপরের থেকে উৎপন্ন হন, কোনো কল্পে ব্রহ্মার থেকে নারায়ণ আর নারায়ণ থেকে কালরুদ্র উৎপন্ন হন, কোনো কল্পে রুদ্র থেকে নারায়ণ আর নারায়ণ থেকে ব্রহ্মা উৎপন্ন হন, আবার কোনো কল্পে নারায়ণ থেকে ব্রহ্মা আর ব্রহ্মা থেকে কালরুদ্র উৎপন্ন হন। কিন্তু আমাদের আরাধ্য সাম্বশিব এই ত্রিদেবকে সৃষ্টি করেছেন।
কারণ, বেদেই বলা হয়েছে ঐ নারায়ণেরই জন্মদাতা স্বয়ং শিব, দেখুন —
বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈরার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥
[তথ্যসূত্র : ভস্মজাবাল উপনিষদ/২/৭]
অর্থ — যিনি বৃষভ নন্দীকে বাহন বানিয়ে তার উপর আরূঢ় হন, যার বাহু হিরণ্য অর্থাৎ স্বর্ণালী বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল, দিব্যদেহ স্বর্ণালী বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল, যার রূপ মাধুর্য স্বর্ণালী বর্ণের ন্যায়, যিনি জীবরূপী সকল পশুর পাশরূপী বন্ধন কে মোচন করেন, যিনি স্বয়ং ব্রহ্মপুরুষ, কৃষ্ণপিঙ্গলরূপী অর্ধনারীশ্বর হিসেবে একই দেহে শক্তিদেবী উমা কে ধারণ করেন, যিনি ঊর্ধ্বরেতরূপে দেহের অভ্যন্তরের ঊর্ধ্বে সহস্রারচক্রে সকল শক্তির উৎস স্থিত, যার অসাধারণ বিরূপ ত্রিনেত্র রয়েছে, বিশ্বের সকল রূপ যার, চারিদিকে যার হাজার হাজার নেত্র রয়েছে, হাজার হাজার মস্তক রয়েছে, হাজার হাজার চরণ রয়েছে, যার বিশ্বের সকল দিকে হস্ত রয়েছে, যিনি বিশ্বের সকলের আত্মা, যিনি এক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা, যিনি সমস্ত কলার অতীত হিসেবে নিরাকার সত্ত্বা, যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা ও পরিচালনাকারী হয়েও হয়েও নিজে নিষ্ক্রিয়ভাবে স্থিত তথা শান্ত রূপে সমস্তদিকে সমানভাবে শান্ত তথা স্থির, সেই প্রভু হলেন স্বয়ং শিব, এই প্রভুই অক্ষরব্রহ্ম ॐ-কার, এই প্রভুই অব্যয় অর্থাৎ বিনাশহীন, এই প্রভু শিব(সদাশিব)ই ত্রিদেবরূপী হরি(বিষ্ণু), হর(কৈলাসপতি রুদ্র) ও হিরণ্যগর্ভ(ব্রহ্মা)-র সৃজন কর্তা, তিনি অপ্রমেয়রূপে অসীম, তিনি অনাদি, তার অন্ত নেই, রুদ্রসূক্ত (শতরুদ্রিয়) পাঠপূর্বক তার (দুধ তথা জল দ্বারা) স্নান-অভিষেক করা হয়, ভস্ম প্রদান করা হয়, শ্রীফল রূপী বেলগাছের বেলফল ও ত্রিশাখাযুক্ত ভেজা বা শুকনো বেলপাতা প্রভৃতি সহ (ধুতরা প্রভৃতি বন্য)ফুল তাকে অর্পন করা হয় (আমি সেই প্রভু শিবের ধ্যানে মগ্ন) ।
☢️ বিশ্লেষণ — দেখুন বৈষ্ণবগণ ! স্বয়ং বেদ বলেছেন যে, যিনি শিব তিনি ত্রিদেবেরও স্রষ্ঠা অর্থাৎ ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও সংহারকর্তা রুদ্র(মহেশ/ঈশান/হর) -এর সৃষ্টি করেছেন স্বয়ং সদাশিব(পরশিব) ।
এবার বলুন, একই বেদে দুরকমের কথা বলা থাকতে পারে কি ??
বেদে যদি দুইরকমের কথাই সত্য হয়ে বিষ্ণুই পরমব্রহ্ম হয় আবার সেই বিষ্ণুরই জন্ম সদাশিব থেকে হয় তবে আপনাদের বৈষ্ণবদের যুক্তিতর্ক অনুযায়ী বেদ স্ববিরোধী দোষে কলঙ্কিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু বেদ তো কখনোই স্ববিরোধী হতে পারে না। কারণ তা, ঈশ্বরবানী, ঈশ্বর কখনোই ছলনা করেন না, তার বাক্য অসত্য নয়।
তাহলে মীমাংসা কি ??
আপনাদের বৈষ্ণবদের কাছে ভস্মজাবাল উপনিষদের শ্রুতি মন্ত্রের বিষয়ে কি মতামত আছে ??
এর আগেও আমরা বারংবার এই প্রমাণ তুলে দেখিয়েছি যে বিষ্ণুর জন্ম পরমেশ্বর শিব থেকে হয়, কিন্তু আপনারা বারংবার সেটি এড়িয়ে গিয়েছেন।
শ্রুতির প্রমাণকে আপনারা বৈষ্ণবেরা উপেক্ষা কি করে করতে পারেন ?
আপনারা কি ভাবছেন আপনারা বেদ থেকে বিষ্ণুর কিছু নাম উল্লেখিত প্রশংসাবাচক মন্ত্র দেখিয়ে দিলেই আপনাদের বৈষ্ণব মতবাদ প্রমাণিত হয়ে যাবে ?
যদি বেদ মন্ত্র নিয়ে কথা বলতে হয় তবে বেদের মধ্যে উপস্থিত সকল মন্ত্রের মীমাংসা আপনাকে দিতেই হবে, তারপরে সঠিক যুক্তি ও মীমাংসা সহ আপনাদের মতের সাথে বেদের সিদ্ধান্ত যে এক তা উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু আপনারা বেদের কিছু মন্ত্র দেখিয়ে মনে করেন এতেই আপনাদের বৈষ্ণব মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, কিন্তু আপনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেদের অন্যান্য যে মন্ত্রে বিষ্ণুর অসর্বজ্ঞতা ও জীবত্ব প্রমাণিত হচ্ছে সেসব মন্ত্রের কোনো ব্যাখ্যা আপনারা দেননি, এতদিন ধরেও তার কোনো মীমাংসা বা বিশ্লেষণ করে যুক্তির ভিত্তিতে আপনাদের বিষ্ণুপরমত্ত্ব প্রমাণ করতে পারেননি। আপনারা অবশ্যই ভস্মজাবাল উপনিষদের শ্রুতির মীমাংসা বেদ থেকেই প্রমাণ করে দেখাবেন নচেৎ আপনাদের বিষ্ণুর জীবত্ব এখানেই প্রমাণিত বলে মেনে নিতে আপনারা বাধ্য।
যাই হোক,
বৈষ্ণবেরা এখন বলবেন যে, একমাত্র নারায়ণ ছিলেন এই শ্রুতি বাক্যের ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা শৈব রা কি করে বলতে পারেন যে, এই একমাত্র শব্দটি উপস্থিত থাকবার পরেও তার উপরেও আরো একজন আছেন ?? এটা কি করে সম্ভব ?
সদেব সাম্যেদমগ্র আসীৎ (ছান্দোগ্য উপনিষদ/৬/২/১ এবং ঐতেরেয় উপনিষদ/১/১/১)
(শৈবপক্ষ) হ্যা অবশ্যই সম্ভব ! বৈদিক সাহিত্যে দুই ধরণের সৎ, নিত্য এবং অনিত্যের কথা বলা হয়েছে। ছান্দোগ্য এবং ঐতরেয় উপনিষদে নিত্য সৎ- র কথা বলা হয়েছে যা মহাদেবের নির্দিষ্ট যক্ষ রূপে এসে পর্যবসিত হয়, এই উক্তি অনুসারে,
ॐ ব্রহ্ম হ বা ইদমগ্র আসীৎ স্বয়ম্ভে্ব কমেব। তদৈক্ষত-মহদ্ বৈ যক্ষম্, তদেকমেবাস্মি, হন্তাহং মদেব মন্মাত্রং দ্বিতীয়ং দেবং নির্মম ইতি..॥ ১
(তথ্যসূত্র: গোপথ ব্রাহ্মণ/পূর্বভাগ/প্রথম প্রপাঠক/১নং মন্ত্র)
অর্থ — ॐ-কার স্বরূপ স্বয়ম্ভূ পরম ব্রহ্ম প্রথমে একা ছিলেন। তখন তিনি দেখলেন (অনুভব করলেন), আমি তো মহান যক্ষ, এক এবং অদ্বিতীয়। ঠিক আছে-আমি আমার থেকে আমার মতো দ্বিতীয় একজন দেবতাকে নির্মাণ করবো।
লক্ষ করুন, এখানে সরাসরি ব্রহ্মের কথা বলা হয়েছে, আর ব্রহ্মই একমাত্র নিত্য ও সৎ । আর সেই ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় ছিলেন, সেই ব্রহ্ম নিজেকে ঐ অবস্থায় যক্ষ বলে দাবী করেছেন, কেন উপনিষদের মধ্যেও এই যক্ষকে মাতা পার্বতী ব্রহ্ম বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন। যক্ষ রূপ একমাত্র পরমেশ্বর শিবেরই, এর প্রমাণ শিবমহাপুরাণের শতরুদ্র সংহিতার ১৬নং অধ্যায়ে কাহিনী সহ উল্লেখিত হয়েছে, এছাড়াও লিঙ্গমহাপুরাণ, স্কন্দমহাপুরাণ, দেবীভাগবত পুরাণে রয়েছে।এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে, নিত্য সৎ হলেন পরমব্রহ্ম শিব আর অনিত্য সৎ হলেন নারায়ণ। কারণ, সেই বিষ্ণুর জন্ম হয় (ঋগ্বেদ/শাকলশাখা/৯/৯৬/৫)।
এখন বৈষ্ণবেরা বলবেন, সুবল উপনিষদে বিষ্ণুকে ‘অজ’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিষ্ণু অজন্মা ।
(শৈবপক্ষ) হ্যা বিষ্ণুকে ‘অজ’ বলা হয়েছে কিন্তু তার পরেও আপনাদের বৈষ্ণবদেরই প্রাণপ্রিয় মহ উপনিষদ ই বলেছে যে, অজ বিষ্ণুর মৃত্যু হয় ।
প্রমাণ দেখুন —
পরমেষ্ঠ্যপি নিষ্ঠাবান্ হীয়তে হরিরপ্যজঃ ।
ভাবোঽপ্যভাবমায়াতি জীর্যন্তে বৈ দিগীশ্বরাঃ ॥ ৫১
ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ রুদ্রশ্চ সর্বা বা ভূতজাতয়ঃ ।
নাশমেবানুধাবন্তি সলিলানীব বার্ডবম্ ॥ ৫২
[তথ্যসূত্র : মহ উপনিষদ/৩য় অধ্যায়/৫১-৫২ নং মন্ত্র]
অর্থ — ব্রহ্মাও বিনাশপ্রাপ্ত হন আর অজ বিষ্ণুও মৃত্যুপ্রাপ্ত হন। সমস্ত ভাব অভাবে পরিনত হয়ে যায়, এই ভাবে জাগতিক সকল কিছুই নশ্বর, দিকপালেরাও মৃত্যু প্রাপ্ত হন ॥ ৫১
ব্রহ্মা-বিষ্ণু রুদ্র তথা সকল দেবতা সহ যতরকম জীব আছে সবাই নাশ হবার জন্য ধাবিত হয় সেই প্রকারে যেভাবে জল বাড়বানলের দিকে ধাবিত হয় ॥ ৫২
— দেখুন বৈষ্ণব গণ ! আপনারা যে মহ উপনিষদের উপর নির্ভর করে নারায়ণকে অজন্মা একমাত্র পরমব্রহ্ম দাবী করেছিলেন, সেই মহ উপনিষদ স্বয়ং নিজেই নারায়ণের মৃত্যু হয় বলে দাবী করেছে।
তাহলে বলুন যার মৃত্যু হয় সেই জীব তত্ত্ব কি করে পরমব্রহ্ম হবেন ?
এরই সাথে দেখুন ত্রিদেবেরও নাশ হয়ে যায় বলে দাবী করেছে মহ উপনিষদ।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন বিষ্ণুকে অজ বলবার পরেও আপনাদের বৈষ্ণবদেরই মহ উপনিষদ কেন তার মৃত্যু হয় বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
প্রকৃত পক্ষে, যেমন ভাবে ব্রহ্মাকে স্বয়ম্ভু বা অজ বলা হয়, বিষ্ণুর ক্ষেত্রেও তেমনভাবেই অজ শব্দটি প্রয়োগ হয়েছে মাত্র, কিন্তু এর অর্থ এমন নয় যে, ব্রহ্মা বিষ্ণু সত্যিই অজন্মা, প্রকৃত পক্ষে অজন্মা শিবই এই ব্রহ্মা বিষ্ণু রূপে ব্যবহারিক জগতে প্রকট হন, তাই শিবদৃষ্টিতে ব্রহ্মা বিষ্ণু কে অজ মাত্র বলা হয়। আর বেদেই ব্রহ্মা বিষ্ণুর জন্ম পরমেশ্বর শিবের থেকে হয় তা বহু মন্ত্রে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। এই কারণে অজ বলা হলেও নারায়ণ মৃত্যুপ্রাপ্ত হয়ে যান অর্থাৎ নারায়ণ প্রকৃতি তত্ত্ব মাত্র, যার কারণে প্রকৃতিকে অনিত্য বলা হয়। প্রকৃতিরূপী নারায়ণ জগৎ সৃষ্টি করে সেখানে ব্রহ্মা কালরুদ্র উৎপন্ন করেন কল্পভেদে, কিন্তু সাধরণ প্রলয়ে অন্তিমে ব্রহ্মা কালরুদ্র তথা সব কিছু নাশ হলেও পরবর্তী কল্পতে নূতন সৃষ্টি ঘটাবার জন্য প্রকৃতিরূপী নারায়ণ ই অবশিষ্ট থাকেন । তাই মহোপনিষদে বলা হয়েছে সৃষ্টি হবার পূর্বে এক নারায়ণ ছিলেন, তখন ব্রহ্মা, কালরুদ্র ঈশান, চন্দ্র সূর্য কেউ ছিলনা। এখানে কেউ ছিলনা বলতে প্রকৃতির কোনো বিচিত্র বিভিন্ন সত্ত্বার অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে। নারায়ণ সেই যোনীরূপী প্রকৃতি, যেখানে পরশিব কারণরূপী বীজ প্রদান করেন, তারপরেই সেখান থেকে সৃজন হয়।
দেখুন —
রুদ্রাৎপ্রবর্ততে বীজং বীজযোনির্জনার্দনঃ।
যো রুদ্রঃ সস্বয়ং ব্রহ্মা যো ব্রহ্মা স হুতাশনঃ ॥৭॥
(কৃষ্ণ যজুর্বেদ/রুদ্রহৃদয় উপনিষদ/৭নং মন্ত্র)
অর্থ : পরমেশ্বর পরারুদ্র শিব'ই সকল কিছুর উৎপত্তির কারণরূপী বীজ, আর সেই কারণরূপী বীজ বপন করবার জন্য যোনীস্বরূপ হলেন জনার্দন নারায়ণ। আবার যিনি 'মহারুদ্র সদাশিব' তিনি স্বয়ং (সদ্যোজাত রূপে সৃজনকর্তা) ব্রহ্মা, আর যিনি ব্রহ্মা তিনিই হলেন মূলত হুতাশন অগ্নিদেব ॥৭॥
— উপরোক্ত শ্রুতি প্রমাণ দ্বারা নারায়ণের ঐ একা অবস্থানের অবস্থা প্রকৃতিসত্ত্বা মাত্র হিসেবে পরিচিত হচ্ছে।
প্রকৃতিরূপী নারায়ণের কার্য যখন সম্পন্ন হবে অর্থাৎ মহাপ্রলয় যখন আসবে তখন শুধু ব্রহ্মা ও কালরুদ্র নয় বরং ঐ প্রকৃতিরূপ নারায়ণেরও নাশ হয়ে যাবে , যা মহ উপনিষদের ৩/৫১-৫২ তে বলা হয়েছে ।
এই ত্রিদেব নাশ হয়ে গেলেও একজনই তখনও বর্তমান থাকেন, ভস্মজাবাল উপনিষদের বেদমন্ত্রে সেই ত্রিদেব (ব্রহ্মা-বিষ্ণু-কালরুদ্র) -এর চেয়েও ঊর্ধ্বে থাকা অদ্বিতীয় পরমব্রহ্ম শিবের কথা স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করা আছে। প্রমাণ দেখুন 👇
কৈলাসশিখরাবাসমোঙ্কারস্বরূপিণং মহাদেবং উমার্ধকৃতশেখরং সোমসূর্যাগ্নিনয়ন মনন্তেন্দুরবিপ্রভং ব্যাঘ্রচর্মাম্বরং মৃগহস্তং ভস্মোদ্ধূলিতবিগ্রহং তির্যক্ ত্রিপুণ্ড্ররেখা বিরাজমানভালপ্রদেশং স্মিতসম্পূর্ণ পঞ্চবিধ পঞ্চাননং বীরাসনারূঢ়মপ্রমেয়মনাদ্যনন্তং নিষ্কলং নির্গুণং শান্তং নিরঞ্জনমনাময়ং হুং ফট্ কুর্বাণং শিব নাম অন্যনিশমুচ্চরন্তং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যরূপং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্য নিধিং অদ্বৈতং চতুর্থং ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রাতীতমেকমাশাস্যং ভগবন্তং শিবং প্রণম্য মুহুর্মুহুরভ্যর্চ্য শ্রীফলদলৈস্তেন ভস্মনা চ নতোত্তমাঙ্গঃ কৃতাঞ্জলিপুটঃ
[অথর্ববেদ/ভস্ম জাবাল উপনিষদ /অধ্যায় ১/১ নং মন্ত্র]
অর্থ — যিনি ব্যাঘ্রচর্ম পরিধান করেন, মৃগমুদ্রা হস্তে ধারণ করেন, সমগ্র দেহে ভস্ম মেখে থাকেন, যিনি কপালে ত্রিপুণ্ড্র তিলন ধারণ করেন, স্মিতহাস্যে পাঁচটিমুখ সম্পন্ন তিনি বীরাসনে বসেন, তিনিই নিষ্কল(নিরাকার পরমশিব) নির্গুণ(সকল মায়ার অতীত), শান্ত, তিনিই নিরঞ্জন। হুং ফট্ ইত্যাদি বলে শিব নাম অহর্নিশি উচ্চারণ করে সেই হিরণ্যবর্ণরূপী, হিরণ্যবাহু, হিরণ্যরূপ যার সেই প্রভুই অদ্বিতীয়, তিনিই জাগ্রত-স্বপ্ন-সুষুপ্তির ঊর্ধ্বে থাকা চতুর্থপদ সমাধীতে প্রাপ্ত হন যে প্রভু, যিনি নারায়ণ, ব্রহ্মা ও কালরুদ্র — এই ত্রিদেবেরও অতীত হলেন ভগবান শিব, সেই প্রভুকে প্রণাম করে বারংবার অর্চনাপূর্বক বেলফল ও বেলপত্র তথা ভস্ম দিয়ে তার কাছে বারবার নত মস্তকে কৃতাঞ্জলিপুটে নিজেকে সমর্পণ করছি।
সুতরাং — ত্রিদেবের স্রষ্ঠা ও তাদের ঊর্ধ্বে থাকা প্রভু শিবই অদ্বিতীয় পরমব্রহ্ম বলেই বেদ দ্বারাই প্রমাণিত হল।
মহ উপনিষদ থেকেই বিষ্ণুর অনিত্যতা (অনিত্য সৎ) প্রমাণিত হল।
বিষ্ণু কে পরমেশ্বর বলে ভাবনা করলে, সেই ভাবনায় আরেকটি বিরাট অসঙ্গতি ধরা পড়ে, মহ উপনিষদে বলা হয়েছে নারায়ণ একা থাকা অবস্থাতে সুখী ছিলেন না, তিনি দুঃখিত ছিলেন । এখান থেকেই আসল ঘটনা শুরু হল , যা পদ্মপুরাণের মধ্যে উল্লেখিত ঘটনাতে সম্পূর্ণ বর্ণিত আছে, দেখুন, 👇
তদাহুরেকো হ বৈ নারায়ণ আসীন্ন ব্রহ্মা নেশানো নাপো নাগ্নীষোমৌ নেমে দ্যাবাপৃথিবী ন নক্ষত্রাণি ন সূর্যো ন চন্দ্রমাঃ ॥ ২
স একাকি ন রমতে ॥ ৩
[মহ উপনিষদ/২-৩ নং মন্ত্র]
অর্থ — তিনি একা থেকে আনন্দে ছিলেন না ।
কিন্তু ব্রহ্মসূত্র অনুসারে, ব্রহ্ম হল আনন্দময় ।
উপনিষদে সরাসরি বলা হয়েছে সচ্চিদানন্দ (সৎ-চিৎ-আনন্দস্বরূপ) হলেন পরমেশ্বর শিব —
সর্বত্রপূর্ণরূপোহস্মি সচ্চিদানন্দলক্ষণঃ।
সর্বতীর্থস্বরূপোহস্মি পরমাত্মাস্ম্যহং শিবং।।১২
[সামবেদ/মৈত্রেয়ী উপনিষদ/অধ্যায়/৩]
অর্থ — আমি সর্বত্র পূর্ণরূপে বিরাজিত সচ্চিদানন্দ লক্ষণযুক্ত। তীর্থের স্বরূপও আমি এবং আমি পরমাত্মা স্বরূপ কল্যাণকারী শিব।।১২
আর যিনি জীব তিনিই একমাত্র দুঃখগ্রস্ত হন, তিনি আনন্দহীন হন, শোক গ্রস্ত হয়ে থাকেন।
প্রমাণ দেখুন 👇
সমানে বৃক্ষে পুরুষো নিমগ্নোহ-নীশয়া শোচতি মুহ্যমানঃ। জুষ্টং যদা পশ্যত্যন্যমীশমস্য মহিমানমিতি বীতশোকঃ।। ২
[মুণ্ডক উপনিষদ/৩/১/২]
অর্থ — জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে একই গাছে (অর্থাৎ একই দেহে) থাকলেও জীবাত্মা তার নিজ স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞ। এই কারণে তাকে নানা দুঃখ ভোগ করতে হয়। কিন্তু যখন তার স্বরূপজ্ঞান হয় তখন সে সুখদুঃখের পারে চলে যায় এবং নিজ মহিমা উপলব্ধি করে।
একই কথা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ বলছে 👇
সমানে বৃক্ষে পুরুষো নিমগ্নোঽ-নীশয়া শোচতি মুহ্যমানঃ। জুষ্টং যদা পশ্যত্যন্যমীশ-মস্য মহিমানমিতি বীতশোকঃ।।৭
[শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/৪/৭]
অর্থ — জীবাত্মা এবং পরমাত্মা একই বৃক্ষে (অর্থাৎ, দেহে) অধিষ্ঠিত। কিন্তু অজ্ঞানে নিমজ্জিত জীবাত্মা নিজেকে দেহের সঙ্গে অভিন্ন মনে করার ফলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অসহায় ও নিরানন্দ বোধ করে। কিন্তু সেই জীবাত্মাই অধ্যাত্ম সাধনার দ্বারা নিজেকে নিরুপাধিক পরমাত্মা বলে চিনতে পারে। নিজের মহিমান্বিত স্বরূপ উপলব্ধি করে তখন সে সব দুঃখের পারে চলে যায়।
অর্থাৎ, মহ উপনিষদ অনুসারেই প্রমাণিত হল, প্রকৃতিরূপী জীবতত্ত্ব হলেন নারায়ণ, নারায়ণ শোকগ্রস্ত হয়ে থাকেন, সেই নারায়ণের মৃত্যুও হয় ।
মহ উপনিষদের মন্ত্রের উপর নির্ভর করে বৈষ্ণবেরা যে দাবী করেছিল সেই অপব্যাখ্যা এইখানে খণ্ডিত হয়ে শিবপরমত্ত্ব বিজয় প্রাপ্ত হল ।
________________________________________________
এবার মহ উপনিষদে উল্লেখিত যে নারায়ণ প্রলয়ের পর ও সৃষ্টির পূর্বে একা অবস্থান করছিলেন ও শোকগ্রস্ত হয়েছিলেন, সেই নারায়ণ পরিনতি কি হয়েছিল সে বিষয়ে বৈষ্ণবদেরই প্রাণপ্রিয় পদ্মপুরাণ থেকে দেখে নিন 👇
নবভারত প্রকাশনির প্রকাশিত পদ্মপুরাণের পাতাল খণ্ডের ৬৪ তম অধ্যায় থেকে বর্ণিত —
(১৮৬ নং শ্লোক - ২৪১ নং শ্লোক)
👉 পূর্বে ব্রহ্মার মহাপ্রলয়কালে পৃথিবী যখন একার্ণবে পরিনত হয় , তখন ভগবান মহাবিষ্ণু সেই মহাসলিলে শয়ন করেন। সেই সময় তার দুই পাশে দুইশতব্রহ্মাণ্ড, দুই পাদের পাশে বিংশতি ব্রহ্মাণ্ড, মস্তক মধ্যে বিংশতি ব্রহ্মাণ্ড, এবং নাসিকার মধ্যে মুক্তারূপে একটি ব্রহ্মাণ্ড ধারণ করিয়া থাকেন। শায়ণ করা অবস্থায় সৃষ্টির ইচ্ছা জাগিলে মহাবিষ্ণু বা নারায়ণ ধ্যানমগ্ন হইলেন, কিন্তু ধ্যানমগ্ন হইয়াও তিনি কিছু দেখিতে পাইলেন না। সৃষ্টির কোন উপায় না দেখিয়া মহাবিষ্ণু উচ্চস্বরে রোদন করতে আরম্ভ করলেন (মহ উপনিষদ/১/৩-এও বিষ্ণু কে দুখী/শোকগ্রস্ত বলা হয়েছে)।
তৎকালে গো-দুগ্ধের ন্যায় উজ্জ্বল শ্বেতবর্ণ সুন্দর তেজোময় এক মূর্তি নারায়ণের নিকট আসতে লাগলেন। তিনি দুই হাতে কোটি ব্রহ্মাণ্ডের দুই ছড়া মালা ও বক্ষস্থলে অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের তেজ ধারণ করিয়াছিলেন এবং দুই হাতে দুইটি ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে গুটি খেলছিলেন এবং তাহার গায়ে নানা দিব্য অলংকার শোভিত ছিল। মহাবিষ্ণু কিছু বুঝিতে পারলেন না। তিনি কে সেটা জানবার জন্য মহাবিষ্ণু স্তব শুরু করলেন....
👉মহাবিষ্ণু বললেন, হে দেব, দেবেশ, শাশ্বত, অব্যয় আপনাকে নমস্কার। আপনাকে আমি জানি না, আপনার মহিমা বুঝিনা । কিন্তু আপনি আমাকে জানেন । আপনি সর্বজ্ঞ, আপনাকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার। আপনার ভাব আমি জানি না, আপনার তেজোময় মূর্তির দিকে দৃষ্টিপাত করা যায় না। আপনার কর্ণে মানিক্যকুন্ডল, কন্ঠে স্বর্ণহার, আঙ্গুলিতে রত্মাঙ্গরীয়ক, এবং বাহুদ্বয়ে সুন্দর বরভূষণ, আপনার ওষ্ঠ রক্তবর্ণ, কর্ণ বিস্তৃত, লোচন দীর্ঘ, ললাটে আরো একটি চক্ষু রয়েছে তাতে আপনি অগ্নিচক্ষু প্রতীয়মান হচ্ছেন। আপনি অব্যয় পরমেশ্বর, আপনার ভ্রুযুগল দেখিলে কন্দর্পধনু বলিয়া ভ্রম হয়। আপনার নাসিকা ও অন্যান্য অবয়ব তৈলাক্তবৎ চিক্কণ, উন্মাত ও মনোহর । আপনার গণ্ডস্থল দর্পণের ন্যায় স্বচ্ছ। আপনার প্রসন্ন বদনে মৃদ্যু মধুর হাস্য সর্বদা বিরাজমান । হে পরমেশ্বর আপনি ন্যাস চন্দ্রের ন্যায় প্রতিভাত হচ্ছেন। আপনি বিজ্ঞান রক্তবসন এবং বেদ কল্পিতভূষণ। হে পরমেশ্বর আমি আপনার শরণাপন্ন হলাম, আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন। আমি দীন, অন্ধ, অনাথ, অজ্ঞান ; আপনি আমাকে রক্ষা করুন। মহাবিষ্ণুর এইরূপ প্রার্থনায় ভগবান সদাশিব প্রসন্ন হয়ে মহাবিষ্ণুকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করলেন।
অনন্তর মহাযশাঃ শ্রীহরি পুরাভাগে অবস্থিত শম্ভু কে দর্শন করে বললেন- আপনি কে?
আপনাকে চিনতে পারছিনা । কেবল আপনাকে নমস্কার করতে সামর্থ্য হচ্ছে। আপনাকে জানতে পারছিনা।
( সদাশিব) বললেন, তোমাকে আমি জ্ঞান প্রদান করবো। বিষ্ণু তুমি প্রথমত স্নান করে নাও ,তারপর ভস্ম স্নান করলে আমি তোমাকে জ্ঞান প্রদান করবো। কিন্তু নারায়ণ কোথাও স্নান করতে পারলেন না। এত গভীর জলেও নারায়ন স্নান করিতে পারিলো না ইহা দেখিয়া পরমেশ্বর সদাশিব হাস্য করিলেন। তারপর অনন্তর ভগবান সদাশিব ললাট নেত্র দ্বারা মহাবিষ্ণুর দিকে তাকালে তার অঙ্গে সকল ব্রহ্মাণ্ড বিলীন হয়ে গেল। আবার বামনেত্র দ্বারা সদাশিব বিষ্ণুর দিকে তাকালে বিষ্ণুর শরীর সুক্ষ্ম হয়ে গেল এবং দেহ সংঙ্কুচিত হয়ে গেল।
👉তারপর সদাশিব বলিলেন, বিষ্ণু তুমি স্নান করো তোমার স্নানের জন্য আমি নিজ কোলে পারিহৃদ নির্মাণ করেছি। নারায়ণ সদাশিবের কোলে তৈরি করা সেই পারিহৃদে স্নান করিতে উদ্যত হইয়াও জলে প্রবেশ করিতে সমার্থ্য হইলেন না। প্রবেশ করিবার পথ না পাইয়া মহাবিষ্ণু বলিলেন - হে দেব, আমি হৃদে প্রবেশ করার পন্থা পাইতেছি না ।আপনি আমাকে কৃপা করে অবতারণ করার পথ করিয়া দিন।
👉 ভগবান সদাশিব তখন মহাবিষ্ণুকে বললেন- বিষ্ণু তুমি কোটি যোজন গভীর সমুদ্রে একার্ণব সলিলে স্নান করবার উপযুক্ত জল কোথাও পাইলে না সর্বত্র তোমার এক হাঁটু জল হল। আর এখন আমার উরুর মাঝে তৈরি করা পারিহৃদে মাত্র অষ্টাঙ্গুল জলে প্রবেশ করার পথ পাচ্ছো না। আমি দেখছি, বিষ্ণু তোমার ভয় নেই, নিঃশঙ্ক চিত্তে তুমি এই হৃদে প্রবেশ করো, এই হৃদে যাতে তোমার পা স্পর্শ হতে পারে, তলিয়ে না যাও, আমি সেই ব্যবস্থা করছি। আমার বাক্যই একমাত্র সোপান,তুমি এই আমার বাক্যকে সোপান(নৌকা) করে ইহাতে অবতরন করো। তুমি জানো - আমার বাক্য হইতেই বেদের উৎপত্তি, সুতরাং আমার বাক্যই বেদবাক্য। মহাবিষ্ণু বলিলেন শব্দের উপরে আরোহণ করার সমার্থ কারো নেই, যাহার মূর্তি আছে তাহার উপর আরোহণ করা যায়, কিন্তু শব্দ ও বেদবাক্য তাহার তো আকার নেই । তাহলে কিরূপে তাহার উপর অবতরণ করিতে পারা যাইবে ?
👉ভগবান সদাশিব কহিলেন - আমি শক্তি প্রদান না করিলে কি মূর্তিমান, কি অমূর্তিমান ? কোন বস্তুই গ্রহণ বা তদুপরি আরোহন করিতে পারে না। আমি শক্তি প্রদান করিলে পুরুষ যাহার আকৃতি নাই তাহার উপরও আরোহণ করিতে পারে। অতএব বিষ্ণু তুমি এই মহাবেদ গ্রহণ করো। অনন্তর হরি বেদ তুলিতে যাইয়া পরাম্মুখ হইলেন। তাহার হস্ত উঠিলো না। বলপূর্বক গ্রহণ করিতে গিয়া পতনম্মুখ হইলেন এবং ভগবান সদাশিবকে বলিলেন-হে দেব, আমি ধরিতে পারিলাম না।
অনন্তর ভগবান সদাশিব হাস্যকরিয়া সেই মহাহৃদে বেদ সোপান করিয়া দিয়া বলিলেন- বিষ্ণু এই সোপান করিয়া দিয়েছি এই সোপানে আরোহন করিয়া তুমি স্নান করিতে পারিবে। বেদ সেই মহাহৃদে সোপান হইলে, শ্রীহরি তাহার জল উরু সমান বুঝিয়া তাহাতে স্নান করিলেন। বিষ্ণু বলিলেন- আমি স্নান করেছি এখন আমার কি কার্য দেব? সদাশিব বলিলেন- তুমি মনে মনে কি চিন্তা করিতেছো আমাকে বলিতেছো না কেন ? শ্রীহরি বলিলেন- আমি কিছু চিন্তা করিতে পারিতেছিনা দেব।
👉 ভগবান সদাশিব বলিলেন- ভস্ম স্নান করে শুদ্ধ হ বিষ্ণু !তারপর পরম সত্য জানিতে পারিবে। দীক্ষিত ব্যক্তির পক্ষেও ভস্ম স্নান বিশেষ প্রশস্ত। আমি(সদাশিব) ভস্ম দ্বারা সর্বদা তোমাকে রক্ষা করিবো। তারপর সদাশিব নখে করিয়া নিজ বক্ষে স্থিত কিঞ্চিৎ ভস্ম প্রণব ও গায়ত্রী মন্ত্রপূত পঞ্চাক্ষর মন্ত্র পাঠ করিতে-করিতে করিতে দুই আঙ্গুল দ্বারা মহাবিষ্ণুর মস্তক ও সর্বাঙ্গে নিক্ষেপ করিলেন। তারপর সদাশিব শান্ত নয়নে মহাবিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে বলিলেন- (বাঁচিয়া থাকো)। এবং আরোও বলিলেন- তোমার হৃদয় মাঝে কি আছে একবার চিন্তা করিয়া দেখো। সদাশিবের এই কথা শুনিয়া মহাবিষ্ণু নত মস্তকে ধ্যানমগ্ন হইলেন এবং হৃদয় মাঝে দীর্ঘাকৃতি অত্যুজ্জ্বল এক দ্বীপ দর্শন করিলেন।
👉 সদাশিব বলিলেন- হরে ,তোমার জ্ঞান এখনো অসম্পূর্ণ। তুমি ভস্ম ভক্ষণ করো, তাহলে তোমার পরিপূর্ণ জ্ঞান হবে। এ কথা শুনিয়া মহাবিষ্ণু বললেন- হে দেব, প্রথমে আমি ভস্ম স্নান করিয়াছি এখন আমি পবিত্র ভস্ম ভক্ষণ করিবো। এই বলিয়া শ্রীহরি ভস্ম ভক্ষণ করিলেন😀
ভস্ম ভক্ষণের পরে শ্রীহরির আশ্চর্য পরিবর্তন হইলো। তাহার পক্কবিল্বফল তুল্য দেহকান্তি ক্ষণকাল মধ্যেই বিশুদ্ধ মুক্তার ন্যায় আভাময় হয়ে গেল।তদবধি প্রসন্ন চিত্ত বাসুদেব শুক্লবর্ণ হইয়া গেল। তাহার পর আরেকবার ধ্যানমগ্ন হয়ে মহাবিষ্ণু দেখলেন- তার হৃদয় মাঝে শুদ্ধস্ফটিক তুল্য দ্বিনেএ, দ্বিভূজ শিবমূর্তি বিরাজ করিতেছে। প্রভু দক্ষিণ হস্তে বর এবং বাম হস্তে অভয় দান করিতেছেন।পঞ্চম বর্ষীয় বালকের ন্যায় তাহার দেহকান্তি। কর্ণে মানিক্যকুন্ডল, কন্ঠে স্বর্ণহার, আঙ্গুলিতে রত্মাঙ্গরীয়ক, এবং বাহুদ্বয়ে সুন্দর বরদাভূষণ, ওষ্ঠ রক্তবর্ণ, কর্ণ বিস্তৃত, লোচন দীর্ঘ, ললাটে আর একটা চক্ষু। ভ্রুযুগল যেন কন্দর্পধনু। নাসিকা ও অন্যান্য অবয়ব তৈলাক্তবৎ চিক্কণ, উন্মাত ও মনোহর ।গণ্ডস্থল দর্পণের ন্যায় স্বচ্ছ এবং প্রসন্ন বদনে সদা মৃদ্যু হাসি বিরাজমান।
হরিরুবাচ—
ন শক্তিং ভস্মনো জানে প্রভাবং তে কুতো বিভো।
নমস্তেহস্তু নমস্তেহস্তু ত্বামেব শরণং গতঃ।।২৩৮
[পদ্মপুরাণ- পাতালখণ্ড- অধ্যায়- ৬৪]
হরি বললেন,-প্রভো!(সদাশিব) আমি ভস্মেরই মহিমা জানি না, আপনার মহিমা কিরূপে জানিব? (আপনাকে আর অধিক কি বলিব) আপনারই শরণাপন্ন হইলাম।।২৩৮
👉 ভগবান সদাশিব পুনরায় বলিলেন- বিষ্ণু তুমি তোমার হৃদয় মাঝে কি দর্শন করিলে? শ্রী হরি বললেন আমি হৃদয় মাঝে আপনার পরম স্বরূপ দর্শন করলাম। এই বলিয়া মহাবিষ্ণু (সদাশিবের )চরণে পতিত হলেন। নারায়ণ বলিলেন- হে সদাশিব, আমি ভস্মের মহিমা জানিনা আপনার মহিমা কিরূপে জানিবো? আমি আপনারই শরণাপন্ন হলাম।
👉 ভগবান সদাশিব বলিলেন- নারায়ন তুমি মনে মনে বর প্রার্থনা করো। সদাশিবের এই কথা শুনিয়া নারায়ণ বলিলেন-( অধিক কি আর চাইবো?সদা সর্বদা যেন আপনার চরণে আমার অটুট ভক্তি থাকে)। নারায়ণের এই বাক্য শুনিয়া সদাশিব প্রসন্ন চিত্তে বললেন- তুমি সর্বদা আমার ভক্ত(শিবভক্ত) হয়ে থাকবে এবং জগতের পালন কার্য সম্পাদন করবে।
________________________________________________
দেখুন ! পদ্মপুরাণে স্বয়ং নারায়ণ বলছেন যে, নারায়ণ পরমেশ্বর শিবের ভস্মের সম্পর্কেই কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে শিবের ক্ষমতা সম্পর্কে নারায়ণের কতটুকু পারে থাকতে পারে ? — বৈষ্ণবদের মান্য শাস্ত্র থেকেই বৈষ্ণবদের মহ উপনিষদের ঐ একমাত্র নারায়ণের পরমত্ত্ব খণ্ডন হয়ে গেছে, বিষ্ণু অসর্বজ্ঞ প্রমাণিত হয়েছেন বৈষ্ণব শাস্ত্র থেকেই । এবার বৈষ্ণবেরা হয়তো আবোলতাবোল বকে নিজেদেরই মান্য শাস্ত্র পদ্মপুরাণের এই ঘটনাটিকে অমান্য করবার চেষ্টা করবে।
কিন্তু বৈষ্ণবদের জন্য দুঃখের বিষয় হল, সাক্ষাৎ বেদ এই ঘটনা চক্রকে প্রামানিক বলে ঘোষণা করেছে। পদ্মপুরাণে শিব ভক্ত নারায়ণ যে স্থানে বলেছিলেন, তিনি ভস্মের মহিমা জানেন না, তাহলে শিবের মহিমা কি করে জানবেন, এই পদ্মপুরাণের মতো হুবহু একই উক্তি বেদের বৃহৎ জাবাল উপনিষদের মধ্যেও উপস্থিত রয়েছে, দেখুন 👇
ন শক্যং ভস্মনো জ্ঞানং প্রভাবং তে কুতো বিভো ।
নমস্তেঽস্তু নমস্তেঽস্তু ত্বামহং শরণং গতঃ ।। ১০
[বৃহজ্জাবাল উপনিষদ/৬ষ্ট ব্রাহ্মণ/১০]
হে মহেশ্বর! হে প্রভু! আমি(হরি) এই ভস্মের শক্তি ও প্রভাব ( মহিমা ) কে বুঝতে অসমর্থ হচ্ছি , তবে আমি আপনার মহিমা কিভাবে বুঝতে সমর্থ হতে পারবো !? । আমি সর্বদায় আপনার পূজা করে থাকি ও সর্বদাই আপনার শরণে থাকি এবং সদা সর্বদার জন্যে আপনার ওই চরণদ্বয়ে যেন আমার অচল ভক্তি থাকে। আপনাকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার করছি, আমি আপনার শরণাগত হয়েছি ।
এখান থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়ে গেল যে, সৃষ্টির পূর্বে নারায়ণ একা ছিলেন ঠিকই তবে পরমেশ্বর সদাশিবও ছিলেন। কারণ, অসর্বজ্ঞ জীবতত্ত্ব নারায়ণ প্রকৃতির মধ্যে প্রলয়ের অন্তে একাই থাকেন শোকগ্রস্ত হয়ে, কিন্তু প্রকৃতির অতীত পরমব্রহ্ম শিব সচ্চিদানন্দ রূপে এক ও অদ্বিতীয় থাকেন।
তাই বেদের শরভ উপনিষদে প্রকৃতিরূপী নারায়ণকে ত্যাগ করে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রনকারী একমাত্র পরমব্রহ্ম শিবের ধ্যান করতে আদেশ হয়েছে —
এক এব শিবো নিত্যস্ততোঽন্যৎসকলং মৃষা ।
তস্মাৎসর্বান্পরিত্যজ্য ধ্যেযান্বিষ্ণবাদিকান্সুরান্ ॥ ৩০ ॥
[তথ্যসূত্র - শরভ উপনিষদ/৩০ নং মন্ত্র]
☘️ অর্থ – শিবই একমাত্র নিত্য, অন্য সকল কিছুই মিথ্যা । এই কারণে বিষ্ণু আদি সকল দেবতাকে পরিত্যাগ করে শিবকেই ধ্যেয় বলে জানা উচিত ॥ ৩০ ॥
কোনো আকাট মূর্খ বৈষ্ণব যদি বেদবানীকে পুরাণ ইতিহাসের বচন দিয়ে খণ্ডন করতে চায় তবে ব্যাস সংহিতার বচন দ্বারা সেই দাবী খণ্ডিত হয়ে যাবে, কারণ, বেদ যখন কোনো পুরাণের বচনকে সমর্থন করে, তখন সেই বচন কে কোনো ভাবে খণ্ডানো সম্ভব নয় ।
যা বেদের বাণীর বিপরীত কথা বলে, তা অগ্রাহ্য (ব্যাস স্মৃতি শাস্ত্র/১/৪)
সুতরাং, বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় মহ উপনিষদ ও পদ্মপুরাণ থেকেই নারায়ণের অদ্বিতীয়তা ও পরমত্ত্ব খণ্ডন হয়ে গেল।
এখন বৈষ্ণবেরা নিজেদের পরাজয় দেখে ক্রোধের বশে পদ্মপুরাণ মানি বলে ঘোষণা করবে নাকি পদ্মপুরাণের পৃষ্ঠা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমরা শৈবরা সকল সনাতন শাস্ত্রের বচন যুক্তির দ্বারা মীমাংসা করে তারপর গ্রহণ করি। তাই পদ্মপুরাণও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য সর্বদা। কারণ, সনাতন ধর্মের সকল শাস্ত্র উৎপত্তি হয়েছে পরমেশ্বর শিবের থেকে। তাই আমরা সবকিছুই মান্য করি আমাদের প্রাচীন আচার্য ও পরম অদ্বৈত শৈবদর্শনের ভিত্তিতে ।
________________________________________________
এতক্ষণ বেদ থেকে নারায়ণের অদ্বিতীয়তা ও পরমত্ত্ব নিরসন করেছি।
এবার পুরাণ শাস্ত্র থেকে নারায়ণের অসর্বজ্ঞতার প্রমাণ দেখা যাক —
যদা দেবা ন বিজানস্তি ব্রহ্মবিষ্ণুপুরোগমাঃ।
[স্কন্দমহাপুরাণ/প্রভাসখণ্ড/ক্ষেত্রমাহাত্ম্য/অধ্যায় ৭/১০০]
ব্রহ্মা, বিষ্ণু প্রভৃতি দেবতাও শিব তত্ত্ব জ্ঞাত নন।।
ন তো গিরিত্রাখিললোকপাল বিরিঞ্চবৈকুণ্ঠসুরেন্দ্রগম্যম্। জ্যোতিঃ পরং যত্র রজস্তমশ্চ সত্ত্বং ন যদ্ ব্রহ্ম নিরস্তভেদম্ ।।৩১ [ভাগবত পুরাণ/অষ্টম স্কন্দ/অধ্যায় ৭/৩১]
ভগবান্! আপনার পরম জ্যোতির্ময় স্বরুপ হলো স্বয়ং ব্রহ্ম। তাতে রজোগুণ,তমোগুণ এবং সত্ত্বগুণ কিছুই নেই, তাতে কোনোপ্রকার ভেদাভেদও নেই। আপনার সেই স্বরূপকে সমস্ত লোকপাল-এমনকি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং দেবরাজ ইন্দ্রও জানতে পারে না ।।
👉মহাভারতে বলা আছে—
ব্রহ্মা শতক্রতুব্বিষ্ণুব্বিশ্বেদেব! মহর্ষয়ঃ।
ন বিদুস্ত্বাং তু তত্ত্বেন কুতো বেৎস্যামহে বযম্ ॥১৬৷৷
[মহাভারত/অনুশাসনপর্ব/অধ্যায় ১৫/১৬]
মহাদেব! ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্র, বিশ্বদেবগণ এবং মহর্ষিরাও আপনাকে যথার্থ-রূপে জানেন না, সুতরাং আমরা জানবো কি ভাবে ? ॥১৬৷৷
এসব ছাড়াও বহু শাস্ত্র প্রমাণ আছে যেখানে বলা আছে বিষ্ণু আদি দেবগণ শিবতত্ত্ব জ্ঞাত নন। তাই যার মধ্যে অল্পজ্ঞতার ভাব পরিলক্ষিত হয়, তিনি কদাপি সর্বজ্ঞ নন। তাই বিষ্ণুর অসর্বজ্ঞতার প্রমাণিত হল, নারায়ণের অদ্বিতীয়তা সহ পরমত্ত্বের বৈষ্ণবীয় দাবী খণ্ডিত হল।
পরমেশ্বর শিবের পরমত্ত্ব ও সম্মান বজায় রইল ।
কারণ,
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব 🚩
অপপ্রচার দমনকারী —শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন