অঘোর চতুর্দশী ব্রত বিধি (লিঙ্গমহাপুরাণোক্ত)
শিবেরই পঞ্চব্রহ্ম স্বরূপের মধ্যে একটি স্বরূপ হল অঘোরমূর্তি। অঘোরের অপর নাম হল – বহুরূপ। অঘোরমূর্তি হলেন সাক্ষাৎ লয়কর্তা কৈলাসপতি রুদ্রদেব স্বরূপ।
পরমেশ্বর শিবের এই অঘোর চতুর্দশী ব্রত বিধিটি সংগ্রহ করে লিখেছেন শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী।
🚩Copyright ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
💥 দিনক্ষণ : এই অঘোর চতুর্দশী ব্রত টি ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথি তে পালন করা হয়।
💥 মাহাত্ম্য : ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী/মাসিক শিবরাত্রিকে অঘোর চতুর্দশী বলা হয় এই দিন পরমেশ্বর শিবের অঘোর স্বরূপের পূজা করা হয়।
এই সময়ে উপাসক ব্যক্তি নিজ দেহে ভস্ম ধারণ করে, কপালে ভস্ম দিয়ে ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করে অঘোর শিবের পূজা করলে সকল পাপ হতে মুক্ত হয়ে যায়।
তাই অবশ্যই ভাদ্র মাসের মাসিক শিবরাত্রি অর্থাৎ ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তে অঘোর শিবের পূজা করা আবশ্যক।
🛑প্রাথমিক করণীয় – যেকোনো ধরনের শিব পূজায় ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারন আবশ্যিক। বৃক্ষে জলদান করুন। কুকুর বা পাখিদদের খেতে দিন। এতে প্রভু শিব খুশি হন।
নিদ্রাভঙ্গ করে প্রথমে শিবস্মরন করবেন। তারপর সকালেই স্নান করে নিতে হবে।
✅ স্নানের পরেই সকালে পূজার ঘরে বসে আচমন করুন।এখানে ক্লিক করে আচমন করার পদ্ধতি দেখে নিন 👉আচমন করার শৈব পদ্ধতি
সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যাবেলায় পূজা শুরু করবেন।
🍁 পূজা বিধি আরম্ভ :
✅ উত্তর দিকে মুখ করে পূজার স্থানে বসুন।
প্রথমে বেশ কিছুটা ভস্ম(জোগাড় করা যজ্ঞের ভস্ম বা ঘুঁটের ভস্ম) নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই মন্ত্র পাঠ করে ভস্মটি অভিমন্ত্রিত করুন। মন্ত্র –
ॐ অগ্নিরিতি ভস্ম বায়ুরিতি ভস্ম জলমিতি ভস্ম স্থলমিতি ভস্ম ব্যোমেতি ভস্ম সর্বংহ বা ইদং ভস্ম মন এতানি চক্ষূংষি ভস্মানি যস্ মাদ্ ব্রতমিদং পাশুপতং যদ্ ভস্ম নাঙ্গানি সংস্পৃশেত্ তসমাদ্ ব্রহ্ম তদেতত্ পাশুপতং পশুপাশ বিমোক্ষণায় ।
🔵এবার ঐ ভস্ম কপাল সহ সমস্ত শরীরে লাগিয়ে নিন। মন্ত্র -
ॐ অঘোরেভ্যোহথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥ ॐ অঘোরায় নমঃ ॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
✅ হাত ধুয়ে এবার আচমণ করুন। এখানে ক্লিক করে আচমন করার পদ্ধতি দেখে নিন
👉আচমন করার শৈব পদ্ধতি
✅ এবার বুকে হাত রেখে ॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥ জপ করুন ১০বার।
✅ শিবকে অন্নভোগ সহ বিভিন্ন নৈবেদ্য প্রদানের পূর্বে সেগুলিকে খুব সামান্য জল ছিটিয়ে প্রোক্ষণ করে
নিতে হবে — হৃদয় মন্ত্রের দ্বারা– ॐ ॐ হ্রাং হৃদয়ায় নমঃ
✅ এরপর সেগুলিকে শোধন করে নিতে হবে — অস্ত্র মন্ত্র পাঠ
পূর্বক — ॐ যং হ্রঃ অস্ত্রায় ফট্
✅ এরপর তাতে কয়েকফোঁটা দুগ্ধ ও পুষ্প ছিটিয়ে অমৃতীকরণ করে নিতে হবে।
✅ এরপর ডান হাতে সেই নৈবেদ্য শিবকে নিবেদন করতে হবে–
হৃদয় মন্ত্রের দ্বারা– ॐ ॐ হ্রাং হৃদয়ায় নমঃ ।
যদি সম্ভব হয় তো করবেন অবশ্যই। এরপর পানীয় জলপ্রদান করতে হবে —
🌊আগমোক্ত নৈবেদ্য ও পানীয় জল প্রদান মন্ত্র — হৃদয় মন্ত্র — ॐ ॐ হ্রাং হৃদয়ায় নমঃ ।
[এই নৈবেদ্যের মধ্যে থাকা পায়েস ভোগের কিছু অংশ এরপর হোম করার সময় হোমকুণ্ডের উদ্দেশ্যে বলি(উৎসর্গ) দিতে হবে]
✅ শিবলিঙ্গে ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র জপ করে জল দিয়ে স্নান করান।
✅ এবার এই মন্ত্র পাঠ করে ধ্যান করুন।
ধ্যানমন্ত্র – অঘোরেভ্যঃ প্রশান্তহৃদয়ায় নমঃ ।
অথ ঘোরেভ্যঃ সর্বাত্মব্রহ্মশিরসে স্বাহা।
ঘোরঘরোতরেভ্যঃ জ্বালামালিনী শিখায়ৈ বোষট্ ।
সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যঃ পিঙ্গলকবচায় হুম্ ।
নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ নেত্রত্রয়ায় বৌষট্ ।
সহস্রাক্ষায় দুর্ভেদায় পাশুপতাস্ত্রায় হুং ফট্ ।
✅অঘমর্ষণ মন্ত্র জপ করুন –
ॐ ঋতং চ সত্যং চাভীদ্ধাত্তপসোঽধ্যজায়ত ।
ততো রাত্র্যজায়ত ততঃ সমুদ্রোঽঅর্ণবঃ ।।১
সমুদ্রাদর্ণবাদধি সংবৎসরোঽঅজায়ত ।
অহোরাত্রাণি বিদধদ্বিশ্বস্য মিষতো বশী ।।২
সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথাপূর্বমকল্পয়ৎ ।
দিবং চ পৃথ্বীং চান্তরিক্ষমথো স্বঃ ।।৩।।
✅ সূর্যের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হবে এবার। শিবলিঙ্গে একটু জল দিন সূর্যদেবকে স্মরণ করে। মন্ত্র – সূর্যদেবং তর্পয়ামি ।
✅ আবার শিবলিঙ্গে অর্ঘ হিসেবে জল দিন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ সূর্যায় নমঃ ॥
✅ একটি ফুল দিন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ সূর্যায় নমঃ ॥
✅ তারপর করন্যাস করতে হবে।
এখানে ক্লিক করে করন্যাস করার পদ্ধতি দেখে নিন
👉 করন্যাস
✅ ‘ফট’ মন্ত্রে দ্বারদেশে অভ্যুক্ষণ (কিছুটা জল নিক্ষেপ করে) ‘ॐ দ্বারদেবতাদয়ঃ ইহাগচ্ছত’ মন্ত্রে দ্বারদেবতাগণের আবাহন করে ফুল দিয়ে —‘এতে গন্ধপুষ্পে ॐ দ্বারদেবতাভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে দ্বারদেবতাগণের পূজা করুন শিবলিঙ্গে।
✅ শিবলিঙ্গে ‘ॐ বাস্তুপুরুষায় নমঃ’ মন্ত্রে কিছু ফুল দিয়ে বাস্তুপুরুষের পূজা করবেন ।
✅ এবার হাত ধুয়ে ফেলুন।
✅ পঞ্চাঙ্গ (দেহের পাঁচ অঙ্গ) ন্যাস করতে হবে — (স্থিতি ক্রমে দেওয়া হল)
১) অঘোরেভ্যঃ হৃদয়ায় নমঃ ( মধ্যমা বুড়ো আঙুল একসাথে দিয়ে হৃদয়কে স্পর্শ করতে হবে)
২) অথ ঘোরেভ্যঃ বক্ত্রায় নমঃ (তর্জনী ও বুড়ো আঙুল একসাথে জোড়া করে মুখ স্পর্শ করতে হবে)
৩) ঘোরঘোরতরেভ্যঃ মূর্ধায় নমঃ( বুড়ো আঙুল দিয়ে মাথার ব্রহ্মতালুকে স্পর্ষ করতে হবে। )
৪) সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যঃ গুহ্যায় নমঃ ( অনামিকা আর বুড়ো আঙুল জোড়া করে তলপেটের নিম্নভাগে ছুতে হবে)
৫) নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ মূর্তয়ে নমঃ (কনিষ্ঠা এবং বুড়ো আঙুল জোড়া করে পা ছুঁতে হবে) ।
💫এবার অঘোর শিবের ধ্যান করুন চোখবন্ধ করে।
✅ অঘোর শিবের ধ্যান –
শান্ত্যা বীজাঙ্কুরানন্তধর্মাদ্দৈরপি সংযুতে ।
সোমসূর্যাগ্নিসম্পন্নে মূর্তিত্রয়সমন্বিতে ।।
বামাদিভিশ্চ সহিতে মনন্মন্যাপ্যধিষ্ঠিতে ।
শিবাসনেত্মমূর্তিস্থমক্ষয়া কারণরূপিণম্ ।।
অষ্টত্রিংশৎ কলাদেহং ত্রিতত্ত্বসহিতং শিবম্ ।
অষ্টাদশভূষং দেবং গজচর্মত্তরীকম্ ।।
সিংহাজিনাম্বরঘরমঘোরং পরমেশ্বরম্ ।
দ্বাত্রিংশাক্ষর রূপেণ দ্বাত্রিংশচ্ছক্তি ভির্বৃতম্ ।।
সর্বাভরণসংযুক্তং সর্বদেবনমস্তকৃতম্ ।
কপালমালা ভরণং সর্পবৃশ্চিক ভূষণম্ ।।
পূর্ণৈদুবদণং সৌম্যং চন্দ্রকোটিসমপ্রভম্ ।
চন্দ্ররেখাধরং শক্তাসহিতং নীলরূপীণম্ ।।
হস্তে খঙ্গংখেটকং পাশমেকে
রত্নৈশ্চিত্রং চাঙ্কুশং নাগকক্ষাম্ ।
শরাসনং পাশুপতং তথাস্ত্রং
দণ্ডং চ খট্বাঙ্গমথাপরে চ ।।
তন্ত্রীং চ ঘন্টাং বিপুলং চ শূলং তথাপরে ডামরুকং চ দিব্যম্ ।
বজ্রং গদাং টঙ্কমেকং চ দীপ্তং সমুদ্গরং হস্তমথাস্য শম্ভোঃ ।।
বরদা ভয়হস্তং চ বরেণ্যং পরমেশ্বরম্ ।
✅ ধ্যান করার পর শৈবাগ্নি প্রজ্জ্বলন করে হোম করবেন। তারা হোম করতে পারবেন না তারা হোমের পরবর্তী পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
তবে কমপক্ষে শিবের অঘোরমন্ত্র পাঠ পূর্বক শৈবাগ্নি জ্বালিয়ে তাতে সর্বনিম্ন বিধি মেনে হোম করলেও হবে। শৈবাগ্নি জ্বালানোর মন্ত্র –
ॐ অঘোরেভ্যোহথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ।।
🔥হোম কুণ্ডে পায়েস ভোগের কিছু অংশ বলি(উৎসর্গ) দিতে হবে এই মন্ত্র পাঠ করে —
রুদ্রেভ্যঃ মাতৃগণেভ্যঃ যক্ষেভ্যঃ অসুরেভ্যঃ গ্রহেভ্যঃ রাক্ষসেভ্যঃ নাগেভ্যঃ নক্ষত্রেভ্যঃ বিশ্বগণেভ্যঃ ক্ষেত্রপালেভ্যঃ
(শৈব আগম ও লিঙ্গমহাপুরাণ অনুযায়ী শিবের অঘোর স্বরূপের উদ্দেশ্যে পায়েসান্ন প্রদানের বিধান রয়েছে। এর সাথে ফল, ফলাদি সাধ্যমতো অর্ঘ্য নিবেদন করবেন)
✅হোম সম্পন্ন হবার পর নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করুন। যারা হোম করেননি তারাও এই নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করুন। 👇
👉 দীপ প্রদান মন্ত্র– অস্ত্র মন্ত্র– ॐ যং হ্রঃ অস্ত্রায় ফট্ (আগমোক্ত)
👉 গন্ধ প্রদান মন্ত্র — হৃদয় মন্ত্র– ॐ ॐ হ্রাং হৃদয়ায় নমঃ (আগমোক্ত)
👉 পুষ্পপ্রদান মন্ত্র– শির মন্ত্র– ॐ হ্রীং শিরসে স্বাহা (আগমোক্ত)
👉 ধূপ প্রদান মন্ত্র– তৎপুরুষ মন্ত্র– ॐ হেং তৎপুরুষবায় নমঃ
(শৈব আগমোক্ত)
পুষ্প প্রদানের আগমোক্ত মন্ত্র — শিরো মন্ত্র— ‘ॐ নং হ্রীং শিরসে স্বাহা’
✅ সব শেষে ৮ রকমের ফুল শিবলিঙ্গে প্রদান করবেন। প্রত্যেকটি ফুল দেবার সময় এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন – ॐ অঘোরায় নমঃ ।।
✅ অঘোর মন্ত্র জপ করুন অন্তত দশবার এবং যারা হোম করেননি তারা ১০৮ বার জপ করবেন। (‘ঽ‘ কে- অ উচ্চারণ করবেন)
🔥অঘোর মন্ত্র —
ॐ অঘোরেভ্যোঽথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ।।
✅ এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।
মন্ত্র –
অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।
কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥
[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু শিব শঙ্কর! আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]
✅এবার প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।
মন্ত্র –
শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে।
অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥
[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে –
হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]
✅অঘোর চতুর্দশী পূজা সম্পূর্ণ হল।
পূজা শেষে নিজে পরমেশ্বরের পবিত্র প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করুন এবং অন্যদের মধ্যেও প্রসাদ বিতরণ করুন।
পূজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর নিরামিষ আহার গ্রহণ করবেন। পরদিন থেকে নিত্যদিনের মতো খাদ্য গ্রহণ করতে পারবেন।
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com
ওঁ নমঃ শিবায়ঃ
উত্তরমুছুনকয় প্রকার ফল ও মিষ্টি লাগবে পূজায়?
উত্তরমুছুন