শিবমহাপুরাণে কি গোমাংস খাবার বিধান দেওয়া হয়েছে ? জানুন সত্যতা

Go hatya maha pap


নমস্কার

নমঃ শিবায় 

আর্যসমাজী রা যে অসনাতনী, সেটা তাদের প্রত্যেকটা কাণ্ডকারখানা দেখলেই পরিষ্কার করে বোঝা যায়।

আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতী পুরানশাস্ত্রের নিন্দা করবার জন্য মিথ্যাকথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতো, তার অনুসারী দয়ানন্দী আর্যসমাজীরাও এক‌ই কাজ করে যাচ্ছে।

আর্যসমাজীরা শিবপুরাণকে তুচ্ছ প্রমাণ করবার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল প্রয়োগ করে থাকে। 

আমরা সাধারণ সনাতনীরা গোমাংসকে কখনোই ভক্ষণ করি না, কারণ, গোহত্যা করা ও গোমাংস খাওয়া মহাপাপ বলা হয়েছে শাস্ত্রে। তাই আর্যসমাজীরা সাধারণ মানুষের কাছে পুরাণশাস্ত্রের মধ্যে থেকে অর্ধশ্লোক ও ভুলভাল অনুবাদ দেখিয়ে দাবী করে বলে যে, 

                  “এই দেখুন আপনারা যে পুরাণকে ধর্মগ্রন্থ মনে করেন, সেখানে গোমাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে। এবার‌ তাহলে আপনারাও গরুর মাংস খেয়ে নিন, আর যদি গরুর মাংস না খেতে চান তাহলে পুরাণশাস্ত্র গুলো ত্যাগ করে দিন

                        — এই ধরণের অপকৌশল প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষের মনে পুরাণের উপর থাকা বিশ্বাস ভেঙ্গে দেয় আর্যসমাজীরা। তারপর নিজেদের দলে টানে বেদের দোহাই দিয়ে, তারপর আর্যসমাজীরা নিজেদের বানানো বিকৃত বেদ পড়িয়ে তার মগজধোলাই করে আর্যসমাজীতে পরিনত করে ফেলে। 

  ঠিক এমন ভাবেই আর্য সমাজীরা শিবভক্ত শৈবদের কাছে শিবমহাপুরাণের নিন্দা করবার জন্য দাবী করেছে যে, শিবমহাপুরাণে নাকি গরুর মাংস খাবার বিধান রয়েছে। 

নীচের ছবিটি তে এক ফেক আইডি ব্যবহারকারী আর্যসমাজীর কমেন্ট এখানে তুলে ধরলাম, দেখুন সেইরকম অর্ধসত্য প্রচার কারী এক ধূর্ত আর্যসমাজীর দাবী 👇




দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজীদের দাবীর খণ্ডন করা যাক।


শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য কৃত খণ্ডন — ❌

                     পুরাণশাস্ত্রে কোনো ঘটনা উল্লেখ থাকলে, সেটির সমগ্র প্রসঙ্গ পড়তে হবে, জানতে হবে। মাঝখান থেকে দুটো সংস্কৃত শ্লোক আর তার অনুবাদ দেখিয়ে কখনো দাবি করা যায় না যে পুরাণ খারাপ। 

পুরাণে এক একটি ঘটনার উল্লেখ থাকে বিশেষ কারণবশত। পুরাণে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা উল্লেখ থাকলেও সেখানে তার মধ্যেই সেটিকে অধর্ম বা পাপ কাজ বলে উল্লেখ‌ও থাকে, অথবা সেই ঘটনার কারণ উল্লেখ থাকে, কিন্তু আর্যসমাজীরা সেসব দেখায় না, নিজেরা সত্য জেনে থাকলেও সেটাকে না দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। এটা তাদের চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়। 


  পুরাণ শাস্ত্রে গো মাংসের উল্লেখ আছে দেখা মাত্র‌ই আর্যসমাজীরা বলতে থাকে যে পুরাণ গোমাংস খাওয়ার কথা বলে। যা তাদের অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। পুরাণ শাস্ত্রে গোমাংসের উল্লেখ থাকলেই তা গ্রহণ করবার বিধান হিসেবে নির্দেশ আছে কি না তা দেখা প্রয়োজন। চলুন এবার আমরা দেখে নিই আদৌও শিবমহাপুরাণে গোমাংস খাওয়ার বিধান আছে কি না ? 

শিবমহাপুরাণের উমাসংহিতার ৩৮ তম অধ্যায়ের উক্ত ৯নং শ্লোক থেকে ১৪½নং শ্লোকে বলা হয়েছে যে, 

শিবমহাপুরাণের হিন্দি সংস্করণ, গীতাপ্রেস প্রকাশনী


স তু দ্বাদশ বর্ষাণি দীক্ষাং তামুদ্বহদ্ বলী ।
অবিদ্যমানে মাংসে তু বসিষ্টস্য মহাত্মনঃ ॥৯
সর্বকামদুহাং দোগ্ধ্রীং দদর্শ স নৃপাত্মজঃ ।
তাং বৈ ক্রোধাচ্চ লোভাচ্চ শ্রমাদ্বৈ চ ক্ষুধান্বিতঃ ॥১০
দাশধর্মগতো রাজা তাং জঘান স বৈ মুনে ।
স তং মাংসং স্বয়ং চৈব বিশ্বামিত্রস্য চাত্মজম্ ॥১১
ভোজয়ামাস তচ্ছ্রুত্বা বসিষ্টো হ্যস্য চুক্রুধে
উবাচ চ মুনিশ্রেষ্ঠস্তং তদা ক্রোধসংযুতঃ ॥ ১২
বসিষ্ট উবাচ
পাতয়েয়মহং ক্রুর তব শংকুমশংসয়ম্ ।
যদি তে দ্বাবিমৌ শঙ্কু নস্যাতাং বৈ কৃতৌ পুনঃ ॥১৩
পিতুশ্চাপরিতোষেণ গুরোর্দোগ্ধীবধেন চ ।
অপ্রোক্ষিতোপযোগাচ্চ ত্রিবিধস্তে ব্যতিক্রমঃ ॥১৪
ত্রিশঙ্কুরিতি হোবাচ ত্রিশঙ্কুরিতি স স্মৃতঃ ।১৪½

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/উমাসংহিতা/৩৮ অধ্যায়]

✅ সরলার্থ —  এইভাবে সেই সাহসী রাজার পুত্র সত্যব্রত বারো বছর পর্যন্ত সেই দীক্ষাকে ধারণ করে ছিলেন। এক সময় কোথাও মাংস না পেয়ে সেই রাজপুত্র মহাত্মা বশিষ্ঠের গাভীকে দেখেন, যেগুলো ছিল সমস্ত (খাদ্য) চাহিদা পূরণকারী ॥৯-১০
হে মুনে! ক্রোধ, লোভ এবং মোহের বশবর্তী হয়ে চণ্ডালধর্মের(চণ্ডালের মতো স্বভাব হবার) কারণে ক্ষুধার্ত রাজকুমার ঐ গাভীকে হত্যা করে নিজেই সেই গোমাংস খেয়েছিলেন এবং বিশ্বামিত্রের পুত্রকেও খাওয়ালেন ॥১১

অতঃপর একথা শুনে ঋষি বসিষ্ট তাঁর উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন এবং ক্রোধ সহকারে তাঁকে বললেন ॥১২

 বসিষ্টজী বললেন — ওরে ক্রুর! তুমি যদি এই আরো দুটি শঙ্কু (পাপ) পুনরায় না করতে তবে আমি তোমার আগে করা প্রথম শঙ্কু(পাপ)টি নষ্ট করে (তোমাকে মুক্ত)করে দিতাম ॥১৩
একটি কন্যাকে অপহরণ করার ফলে তোমার পিতাকে অসন্তুষ্ট করে, গরুকে হত্যা করে, যা তোমার গুরুর‌ই গাভী ছিল এবং সেই গাভীর অপ্রোক্ষিত মাংস খেয়ে তুমি তিন ধরনের অপরাধ করেছো, তাই তুমি ত্রিশঙ্কু হয়ে যাও ॥১৪

 তারপর সে এইভাবে ত্রিশঙ্কু নামে পরিচিত হয়ে গেল।১৪½


🔍 উপরোক্ত শ্লোকের বিশ্লেষন — 


 (১) দাশধর্ম  : অর্থাৎ চণ্ডালধর্ম , যার অর্থ - চণ্ডালের মতো স্বভাব যার, উপরোক্ত ১১নং শ্লোকে বলা হয়েছে সত্যব্রত চণ্ডালের মতো স্বভাবের বশবর্তী হয়ে গো হত্যা করেছিল ও সেই গোমাংস খেয়েছিলেন। 
‌চণ্ডালের  মতো স্বভাব না হলে এমন কাজ করা সম্ভব নয়।
তাই শিবমহাপুরাণ পরিষ্কার ভাবেই “গোহত্যা করাকে ও গোমাংস ভক্ষণ” করাকে চণ্ডালের মতো নিম্নমানের কার্য বলেই চিহ্নিত করছে ।


(২) বসিষ্ট অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন : গোমাংস ভক্ষণের উল্লেখ থাকলেই তা বিধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয় না, কারণ, শিবমহাপুরাণের কোনো স্থানে গোংস খাওয়ার বিধান দেওয়া হয়নি, বরং ১১নং শ্লোকে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়াকে চণ্ডালের মতো নিম্নমানের কার্য বলেই চিহ্নিত করেছে শিবমহাপুরাণ। আর এই গোহত্যা এবং গোমাংস ভক্ষণ করা যদি শিবমহাপুরাণের বিধান হতো তাহলে ১২নং শ্লোক অনুযায়ী, সেই গোহত্যা ও গোমাংস খাওয়ার খবর জানতে পেয়ে বসিষ্ট মুনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতেন না। গোহত্যা ও গোমাংস খাওয়া অনুচিত — তাই বসিষ্ট মুনি সত্যব্রতকে গোহত্যা ও গোমাংস খেতে দেখে অত্যন্ত রেগে গিয়েছিলেন।
 
(৩) ক্রুর — বসিষ্ট মুনি সত্যব্রতকে গোহত্যা করে গোমাংস খেতে দেখে সত্যব্রতকে ক্রুর বলে সম্মোধন করেছেন ১৩ নং শ্লোকে।
শিবমহাপুরাণে যদি গোহত্যা করে গোমাংস ভক্ষণ করবার বিধান উল্লেখ করে নির্দেশ দেওয়া হতো তাহলে বসিষ্ট মুনি সত্যব্রতকে কেন ক্রুর বলেছেন ? 
শিবমহাপুরাণে বসিষ্ট মুনি সত্যব্রতকে ক্রুর বলেছেন গোহত্যা করে গোমাংস ভক্ষণ করবার জন্য।

(৪) গরুকে হত্যা করে, যা তোমার গুরুর‌ই গাভী ছিল এবং সেই গাভীর অপ্রোক্ষিত মাংস খেয়ে তুমি তিন ধরনের অপরাধ করেছো  —  ১৪নং শ্লোকে পরিষ্কার করে বসিষ্ট মুনি সত্যব্রতকে বলেছেন, গো হত্যা করে তুমি অপরাধ করেছো, আবার সেই গাভীর মাংস খেয়ে আরো একটা অপরাধ করেছো, মোট তিনটে পাপ করেছেন সত্যব্রত, পাপের আরেক নাম শঙ্কু হ‌ওয়ায় , সত্যব্রতকে ত্রিশঙ্কু বলা হয়, অর্থাৎ তিনটিপাপ সমন্বিত ব্যক্তি।

                   — উপরোক্ত শিবমহাপুরাণের উমাসংহিতার ৩৮ নং অধ্যায়ের ৯নং থেকে ১৪½ নং শ্লোক পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যেশিবমহাপুরাণে কোথাও গোহত্যা করাকে সমর্থন করা হয়নি, গোমাংস ভক্ষণ করার‌ও সমর্থন করা হয়নি, কোনো বিধান‌ও দেওয়া হয়নি, বরং এই দুটি কার্যকে অপরাধ তথা পাপকর্ম বলে অভিহিত করা হয়েছে।
 
 আর্যসমাজীদের চতুরামি, চালাকি, ধূর্ততা ধরা পড়ে গেল।
আদি সনাতনী অর্থাৎ শৈবরা যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো ততদিন কোনো অসনাতনীদের কোনো অপপ্রচার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

পাঠকবৃন্দ! আপনারা এইসব খ্রিষ্টান মতবাদে পুষ্ট থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটির দালাল দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজীদের থেকে সাবধান থাকুন। 

শ্রীনন্দীকেশ্বরায় নমঃ
শ্রীমন্ মহাদেবায় নমঃ
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🪷


🔥 অপপ্রচার দমনে : শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য
কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

আরো দেখুন 👇

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত