শরভ ব্রত পূজা বিধি (সরল)

 

Sharabha Puja Vidhi

নমঃ শিবায়


ভূমিকা —

পরমেশ্বর শিবের সবচেয়ে শক্তিশালী ও মহা ভয়ংকর অবতারের নাম হলো শরভ, সকলের ঈশ্বর হওয়ায় তাকে শরভেশ্বর বলা হয় । 

বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা কে শরভ পূর্ণিমা বলে। কারণ, এই তিথিতে নৃসিংহ দেব কে দমন করে তার অহংকার কে চূর্ণবিচূর্ণ করবার জন্য ই‌ পরমেশ্বর শিব মহাশক্তিশালী শরভ অবতার প্রকাশ করেছিলেন। 

যে কোনো শিব সম্পর্কিত তিথি, বার -এ প্রভু শিবের এই শরভরূপের পূজা কথা যায় । যেকোনো পূর্ণিমা তিথি হল শরভ পূজার বিশেষ তিথি।

তার পূজা করলে মানুষের সব রকম বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়, সমস্ত রকম উপদ্রব, ভূত প্রেত প্রভৃতি অপদেবতারা পালিয়ে যায়, সমস্ত রকম যাদু টোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, নবগ্রহের দোষ কেটে যায়, শরভেশ্বর শিবের কৃপায় সাধক ধনসম্পদ ভোগ মোক্ষ সমস্ত কিছুই লাভ করেন। শরভেশ্বরের পূজা করলে উপাসক ব্যক্তি নির্ভয়ী হয়ে যান, সমস্ত দেবতারা শরভেশ্বরের উপাসককে নমস্কার করে নত মস্তকে।

তবে মনে রাখা উচিত যিনি শরভেশ্বরের পূজা করেন, বা যিনি শরভেশ্বরের সাধক, তার কখনো নৃসিংহ মন্দিরে যাওয়া উচিত নয়, কারণ, শরভেশ্বরের সাধককে উপস্থিত হতে দেখে নৃসিংহদেব স্বয়ং‌ অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন, এমন‌ই এক কাহিনী উল্লেখ রয়েছে রুদ্রযামল তন্ত্রে ।

তাই পরমেশ্বর শরভ-শিবকে পূজা করার অর্থ হল বিশ্বের সকল শক্তির উপর বিজয় লাভ করে সাধক ব্যক্তি ।

[সাবধান ! শিবনিন্দুক বা অহংকারী, অধার্মিক, অপকারী ও কুটিল ব্যক্তিদের এই শরভ ব্রত পূজা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, তবুও যদি করে তাহলে তার সবংশে নাশ নিশ্চিত, তাই যারা একমাত্র পরমব্রহ্ম শিবের ভক্ত ও সৎ উদার শৈব ব্যক্তি তাদের‌ই এই পূজা করা উচিত, মনে রাখবেন সমগ্র বিশ্ব সংসারের সবচেয়ে শক্তিশালী শরভের পূজা করতে চলেছেন আপনি, ভুল করেও ভুল করবেন না]

পূজা বিধি লিখেছেন — শ্রীনন্দীনাথ শৈব আচার্য 


আলোচ্য বিষয় —

প্রভু শিবের শিবলিঙ্গতেই শরভেশ্বর অবতার কে কল্পনা করে পূজার্চনা করবেন । শিবপ্রতিমাতে বা ছবিতে শরভকে কল্পনা করে পূজা করতে পারেন। 


🟪 শরভেশ্বর পূজার সকালে করনীয় কর্ম : 


✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –


কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥

ॐ শরভেশ্বরায় নমঃ ॥


এরপর সারাদিন উপবাসী থেকে স্নান করবেন নমঃ শিবায় জপ করে। স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন বৃক্ষে জল দেবেন এবং কিছু পশুপাখিদের(গরু/ছাগল/কুকুর/কাক/যেকোনো পাখি) এবং কীটপতঙ্গ(পিঁপড়ে ইত্যাদি) খাদ্যবস্তু দান করবেন। এবার হাত ধুয়ে নিন। এবার নিত্যদিনের মতোই সকালে শিব পূজা করে নিন। পূজা করার জন্য শিবালয় অর্থাৎ শিবমন্দিরেও যেতে পারেন। পূজা করার পর হাতে জল নিন ও শরভ পূজার ব্রতসংকল্প করুন।


[যাদের শরীর অসুস্থ অথবা যাদের প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের প্রয়োজন রয়েছে তারা ঔষধ ও তারসাথে জল গ্রহন করে পূজা করবেন, যারা না খেয়ে পূজা করতে অসমর্থ, তারা খাদ্য গ্রহণ করেই পূজা করবেন]


✅ ব্রত সংকল্প করুন এই মন্ত্রে(অথবা সরল বাংলা ভাষাতেই বলুন) –


🛑 মন্ত্র – 


দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।

কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব শরভব্রতং তব ॥

তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।

কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়াং কুর্বন্তু নৈব হি ॥


(অথবা এই সহজ ভাষায় সংকল্প করুন,


বলুন – দেবদেব মহাদেব হে নীলকন্ঠ আপনাকে নমস্কার করি। হে দেব পরমেশ্বর! আমি আপনার শরভ ব্রতের অনুষ্ঠান করতে চাই। হে মহেশ্বর প্রভু শিব ! আপনার প্রভাবে এই ব্রত যেন সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় এবং কামনা বাসনা আদি শত্রু যেন আমাকে পীড়া প্রদান না করে)


এরপর সেই জল সামনের মেঝেতে বা মাটিতে ছেড়ে প্রনাম করে উঠে পড়ুন এবং শরভ ব্রতের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে পূজার স্থানে এনে রেখে দিন। 


পূজা শুরু হবার আগে থেকেই সমস্ত উপাচার সাজিয়ে রেখে দেবেন। তারপর প্রথম প্রহরের কিছু আগে সময় আগে স্নান করে নেবেন, যদি জল স্নান করতে অসমর্থ হন তবে মন্ত্রস্নান করে নেবেন। এক্ষেত্রে শুধু দেহে জল ছিটিয়ে দিলেই স্নান সম্পূর্ণ হয়ে যায়।


💥 মন্ত্রস্নানের পদ্ধতি দেখার জন্য এখানের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন👇

 👉 শৈবাগমোক্ত মন্ত্রস্নান ও সন্ধিপ্ৰোক্ষণ পদ্ধতি


 এবার পুনরায় সুন্দর শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে সুন্দর করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র এঁকে নেবেন ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন। এবার শিবরাত্রির মূল পূজা সেরে নিয়ে তারপর সারারাত ধরে জেগে প্রহরপূজা করবেন।


💥ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করার নিয়মটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন 👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ পদ্ধতি 


✅ রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন এই নিচের মন্ত্রটি উচ্চারণ করে 👇 


রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।

নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥


🟥ফল অথবা মিষ্টান্ন এবং পানীয় জল সহ জলের গ্লাস সাজিয়ে দিন প্রভু শিবের সমীপে। এবার এক একটি থালা প্রভুর সামনে দেখিয়ে বলুন – 

ॐ শরভেশ্বরায় নমঃ শিবার্পণমস্তু ॥

ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥


হে প্রভু শরভেশ্বর মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত সমস্ত প্রসাদ আপনারা প্রসন্ন হয়ে গ্রহণ করে আমার উপর কৃপা করুন।


✅এবার শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে পঞ্চামৃত দ্বারা স্নান করাবেন 👇


[কিছুটা পঞ্চামৃত প্রহর পূজার জন্য আলাদা পাত্রে সংরক্ষিত করে রেখে দিন আগে থেকেই]


🔥গরুর কাচা দুধ দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  

☘️মন্ত্র -

গোক্ষীরস্নানং দেবেশ গোক্ষীরেণ ময়া কৃতম্ ।

স্নপনং দেবদেবেশ গৃহাণ পরমেশ্বর ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥দ‌ই দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

দধ্না চৈব ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ চ ময়া দত্তং সুপ্রসন্নো ভবাদ্য বৈ ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥ঘি দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

সর্পিষা চ ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥মধু দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

ইদং মধু ময়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ।

গৃহাণ ত্বং হি দেবেশ মম শান্তিপ্রদো ভব ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥শর্করা(আখের রস/চিনিজল) দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  

☘️মন্ত্র -

সিতয়া দেবদেবেশ স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তাং সুপ্রসন্নো ভব প্রভো ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


[এবং পঞ্চামৃতেনৈব স্নপনীয়ো বৃষ-ধ্বজঃ ।

পশ্চাদর্ঘ্যং প্রদাতব্যং তাম্রপাত্রেণ ধীমতা ।

অনেনৈব চ মন্ত্রেণ উমাকান্তস্য তুষ্টয়ে ॥]


✅ হাতে এক ঘটি গঙ্গা জল(অভাবে শুধু জল) নিয়ে সমগ্র গঙ্গাজল দ্বারা শিবলিঙ্গ বা শিববিগ্রহে শরভ অবতারকে ও তার সাথে তার দুই পাখনাস্বরূপ শক্তিদেবীদের ও শরভের পদদলিত হ‌ওয়া নৃসিংহদেবকে কল্পনা করে তাকে অভিষেক করার উদ্দেশ্যে ঢেলে দিন, এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে – 


ॐ ত্র্যয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥

ॐ পক্ষীরাজায় বিদ্মহে শরভেশ্বরায় ধীমহি ।

তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥

ॐ শূলিনী দেব্যৈ নমঃ ॐ দুর্গায়ৈ নমঃ ।

 ॐ ভদ্রকাল্যৈ নমঃ ॐ প্রত্যঙ্গিরায়ৈ নমঃ ॥

ॐ নৃসিংহদেবায় নমঃ 

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় সালুবায় নমঃ শিবায় ॥



✅এবার অর্ঘ্য নিবেদন - এর জন্য তামার পাত্রে অথবা হাতে দূর্বা ও গোটা আতপচাল নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে বিগ্রহে প্রদান করুন –


রূপং দেহি যশো দেহি ভোগং দেহি চ শঙ্কর

ভুক্তিমুক্তিফলং দেহি গৃহীত্বার্ঘ্যং নমোঽস্তু তে ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥


✅ শিবলিঙ্গে ভস্ম সমর্পন করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - অনাদি শাশ্বতং শান্তং চৈতন্যং চিৎস্বরূপকম্ । চিদঙ্গং বৃষভাকারং চিদ্ভস্মলিঙ্গধারণম্ । শরভেশ্বরায় নমঃ বিভূতিং সমৰ্পয়ামি ।


✅ হাতে বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে শিবলিঙ্গে বেলপাতা অর্পণ করুন - 

 'ত্রিদলং ত্রিগুণাকারং ত্রিনেত্রং চ ত্রিয়ায়ুধম্ । ত্রিজন্মপাপসংহারম্ একবিল্বং শিবার্পণম্ ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় , বিল্বপত্রাণি ধারয়ামি ।'


🟥এবার পঞ্চোপচার [ধূপ, দীপ, গন্ধ(চন্দন), ফুল, নৈবেদ্য] দিয়ে পূজা করুন👇


ধূপ নিবেদন - এর জন্য হাতে ধূপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায়, ধূপমাঘ্রাপয়ামি ॥


✅ দীপ নিবেদন - এর জন্য হাতে দীপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –


ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায়, ধূপমাঘ্রাপয়ামি , দীপং দর্শয়ামি ॥


✅এবার চন্দন নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –


সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো ।

ভক্ত্যা পরময়া শম্ভো সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায়, চন্দানুলেপনং সমর্পয়ামি ॥


✅এবার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন - এর জন্য হাতে কিছু গন্ধপুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –

ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায় ॥

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥

তাবকস্ত্বদ্ গতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।

ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥

ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।

ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্রভাে ॥

এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।


✅ নৈবেদ্য হিসেবে একটি পাকা ফল দিতে পারেন এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে –


ॐ শরভেশ্বরায় পক্ষিরাজায় নমঃ শিবায়, নৈবেদ্য নিবেদয়ামি ॥


✅অতঃপর শরভরূপী পরমেশ্বর শিবের ধ্যান করুন শৈব আগমোক্ত ধ্যানমন্ত্র অনুসারে,


🔶পরমেশ্বর শরভ শিবের ধ্যান মন্ত্র —

পক্ষাকারং সুবর্ণাভং পক্ষদ্বয় সমন্বিতম্ ॥ ১

 ঊর্ধ্বপক্ষ সামাযুক্তং রক্তনেত্ৰ ত্ৰয়ান্বিতাম্ ॥ ২

 সুতীক্ষ্ণ নখরসংযুক্তৈঃ ঊর্ধ্বস্থৈর্বেদপাদকৈঃ ।

দিব্যলাঙ্গল সংযুক্তং সুবিকীর্ণ জটান্বিতম্ ॥ ৩

কন্ধরোং নরাকারং দিব্যমৌলি সমাযুতম্ ।

সিংহাস্যং ভীমদংষ্ট্রং চ ভীমবিক্রম সংযুক্তম্ ॥ ৪

হরন্তং নরসিংহং তু জগৎসংহরণোদ্ধতম্ ।

কৃতাঞ্জলি পুটোপেতং নিশ্চেষ্টিত মহাতনুম্ ॥ ৫

নম্রদেহং তদুর্ধ্বাস্যং বিষ্ণু পদ্মদলেক্ষণম্ ।

পাদাভ্যাং অম্বরস্থাভ্যাং কুক্ষিস্থাভ্যাং চ তস্য তু ॥৬ গগণাভিমুখং দেবং কারয়েৎ শরভেশ্বরম্ ।

(ধ্যান করার সময় নিচের এই চিত্রটি দেখে কল্পনা করতে পারেন চোখ বন্ধ করে এবং ধ্যানের সময়সীমা আপনার মনের গভীরতার উপর নির্ভরশীল, অন্তত দশমিনিট ধ্যান করুন)

Ideal Picture of Lord Sharabh



✅ধ্যানের পর এবার ১০৮ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র সহ

আকাশ ভৈরব কল্পোক্ত শরভ মন্ত্র -

জপ করুন(রুদ্রাক্ষমালা অথবা হাতের শৈবমালাতেও জপ করতে পারেন)।


মন্ত্র – ॥ ॐ নমঃ শিবায় , 

"ॐ খেং খাং খং ফট্ প্রাণগ্রহাসি প্রাণগ্রহাসি হুং ফট্ সর্ব শত্রু সংহারণায় শরভ-সালুবায়-পক্ষিরাজায় হুং ফট্ স্বাহা ॥

অথবা, 

 ॐ নমঃ শিবায় , 

ॐ শৌঁ ঊঁ শরভেশ্বরায় হরিহরায় নমঃ ।

অথবা,

 ॐ নমঃ শিবায় , 

ॐ পক্ষীরাজায় বিদ্মহে শরভেশ্বরায় ধীমহি ।

তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥


(উপরের যে কোন একটি মন্ত্র জপ করুন)

✅ এবার শরভ শান্তি স্তোত্র পাঠ করুন 👇 


এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉 শরভ শান্তি স্তোত্রম্

(ভগবান শরভেশ্বরের এই শান্তি স্তোত্রটি পাঠ করলে সমস্ত রকম বিপদে প্রভু শিব সুরক্ষা প্রদান করেন, সমস্ত উপদ্রব শান্ত হয়ে যায়। এছাড়াও প্রতিদিন এটি পাঠ করতে পারেন।)


✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।


মন্ত্র –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু শিব শঙ্কর! আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]


✅এবার প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।

অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]


উপসংহার —

বিশ্বের কল্যান কামনা করুন, তারপর নিজের মনের ইচ্ছা বলুন, প্রার্থনা করুন, তারপর প্রভু শরভেশ্বর মহাদেবের মহাপ্রসাদ বিতরণ করুন ও নিজেও গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করুন।

রাতে ফল, দুধ, দ‌ই খেতে পারেন।

পরবর্তী দিন থেকে নিত্য দিনের মতোই খাবার খেতে পারবেন ।

প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

পরমেশ্বর শিব বৈষ্ণব নন