শ্রী কার্তিকেয় ব্রত পূজা বিধি (শৈব পরম্পরাকৃত)

 


‌॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥

 ভূমিকা 

 শিব পার্বতী জ্যেষ্ঠ পুত্র হল স্কন্দ, ইনি কার্তিকেয়, সুব্রহ্মণ্য ও মুরুগণ স্বামী নামেও পরিচিত । আষাঢ় মাস বা প্রত্যেক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে স্কন্দষষ্ঠী ব্রত করা হয় । ভারতের দক্ষিণ রাজ্য গুলিতে ও তামিলের স্কন্দ দেবের পূজা অনুষ্ঠিত হয়, এখানকার মন্দির গুলিতে স্কন্দদেব দক্ষিণ দিকে বিরাজমান। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেও এই ব্রত পালিত হয়, তবে বাংলার সৌর-চান্দ্র সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে রচিত পঞ্জিকা অনুসারে এটি উক্ত তিথির উপর নির্ভর করে পালিত হয় না, বরং বাংলার পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত কার্তিক মাসের ৩০ তারিখ অর্থাৎ কার্তিক সংক্রান্তির দিনই একমাত্র এই ব্রত-পূজা করা হয়ে থাকে। শিবমহাপুরাণের রুদ্রসংহিতার কুমারখণ্ডের ২য় অধ্যায়ের ৬৮নং শ্লোক অনুসারে ভগবান কার্তিকেয় -এর জন্ম তিথি হল - অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি । তাই এই তিথি অনুসারেই কার্তিকেয় জন্ম তিথি পূজা করা উচিত, আর সারা বছরের প্রত্যেক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতেই স্কন্দষষ্ঠী ব্রত পালন করা উচিত।

 International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT (Shivalaya) – এর পক্ষ থেকে শৈবপরম্পরা অনুসারে শ্রীনন্দীনাথ শৈব আচার্য গুরুদেব জী দ্বারা রচিত শ্রী কার্তিকেয় ব্রত-পূজা বিধি প্রকাশিত হল। এখানে সর্বসাধারণের জন্য সহজ সরল অর্চনা বিধি প্রকাশ করা হয়েছে।   


ব্রতের ফল ঃ

 স্কন্দদেবকে মঙ্গল গ্ৰহের স্বামী বলা হয়, তাই এই ব্রত করলে মঙ্গল গ্ৰহদোষ (মাঙ্গলিক দোষ)  থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, পূত্র সন্তান প্রাপ্তির জন্য, সন্তান-সন্ততির সু-স্বাস্থ্য, সন্তানের দীর্ঘায়ু, মনবাঞ্ছিত ফল পাওয়া যায়। স্কন্দ দেব এর দর্শন মাত্র‌ই ব্রহ্মহত্যার দোষ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


সংক্ষিপ্ত কথা ঃ

আষাঢ় মাসের, অগ্রহায়ণ মাসের বা যেকোনো মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গ করে স্নান ইত্যাদি সেরে সাদা বর্ণের শুদ্ধ বস্ত্র  ধারণ করে ব্রত-পূজার সঙ্কল্প নেবেন। 

 এরপর সকালের সময় বা সন্ধ্যার সময় এই পূজো করবেন প্রথমে একটি আসনে শিব পার্বতী গনেশ সহিত স্কন্দ দেবের মূর্তি বা ছবি পূর্বদিকে বা শুধু স্কন্দ দেবকে দক্ষিণ দিকে স্থাপন করবেন এরপর গনেশকে প্রনাম করে পূজো শুরু করবেন স-পরিবারের অভিষেক করবেন ধুপ, দীপ জ্বালাবেন এরপর শিব পার্বতী ও গনেশ কে পুষ্প জল, মালা চন্দন অর্পন করবেন এরপর স্কন্দদেব কে ঘি, দ‌ই, পুষ্প, জল দিয়ে অর্ঘ্য অর্পিত করবেন স্কন্দদেবের প্রিয় চম্পা পুষ্প ও অন্যান্য পুষ্প, চন্দন, কুমকুম অর্পন করবেন ইচ্ছামতো ভোগ নৈবেদ্য অর্পন করে আরতি করবেন। 

এই ব্রতে ব্রতী সারাদিন উপোস থেকে সন্ধ্যা বেলায় পূজা করে তারপর রাতের বেলায় তৈল ও লবণ ছাড়া ভোজন করবেন রাত্রিতে ভূমিতে (মেঝেতে) কম্বল ইত্যাদি পেতে শয়ন করবেন। পরের দিন সকালে স্নান করে পারণ করবেন।


🌷 উপকরণ – 

১) কার্তিকেয়-র  একটি চিত্র (ছবি) বা বিগ্রহ-প্রতিমা অথবা শিবলিঙ্গ। 

২)  একটি গন্ধযুক্ত ফুলের মালা, কিছু সুগন্ধিত ফুল, চাঁপা ফুল কার্তিকেয়র বিশেষ প্রিয়।

৩) নৈবেদ্য হিসেবে বিভিন্ন পাকা ফল ও মিষ্টান্ন, দই (অথবা নিজের সাধ্যমত দিতে পারেন) ।

৪) বেলপাতা,

 ৬) অক্ষত (গোটা আতপচাল কিছু টা), 

৭) একটি গোটা পাকা ফল, 

৮) গঙ্গাজল, 

৯) ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করা জন্য কিছুটা খড়িমাটি অথবা ভস্ম এবং সামান্য সিঁদুর অথবা কুমকুম, 

১০) ধূপ, 

১১) ঘিয়ের দীপ, 

১২) কর্পূর ।


🔱 শ্রী কার্তিকেয় পূজা বিধি 🔱


 ✅ পূজার দিন সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র – 

কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ।। 

তারপর স্নান ইত্যাদি নিত্য কর্ম সেরে কপাল সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করুন এবং গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন এবং নিত্যদিনের পূজার্চনা করুন।



🌅 ১. সংকল্প মন্ত্র

এবার ডান হাতে জল নিয়ে নিচের সংকল্প মন্ত্র পাঠ করে তারপরন সেই জল মাটিতে ছেড়ে দেবেন -

শিবঃ ॐ‌ তৎ সৎ শ্রীশিব-সুব্রহ্মণ্য প্রসাদ সিদ্ধ্যর্থং স্কন্দ ব্রতপূজাং করিষ্যে॥

অর্থঃ — আমি শ্রী শিব ও সুব্রহ্মণ্য(কার্তিকেয়) দেবের প্রসাদ ও কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে এই পূজা আরম্ভ করছি।

 

সন্ধ্যা বেলায় পুনরায় কপাল সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র অঙ্কিত করুন এবং গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন। এবার পূজার স্থানে এসে নিজের কুশের অথবা কম্বলের আসনে এসে বসুন।

 

🛑পূজা আরম্ভ – 


✅ সর্বপ্রথম বৈদিক মন্ত্রে শিবস্মরণ করুন – 


ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈ রার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅এবার হাতজোড় করে শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –

ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।

যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ‌‌॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅ ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ ॥

✅ নিজের গুরুকে (অদীক্ষিত ব্যক্তি পরমেশ্বর দক্ষিণামূর্তি শিব কে গুরু হিসেবে মেনে) স্মরণ করুন।


ভগবান কার্তিকেয়-র ছবি, যন্ত্র, শক্তি অস্ত্রতে পূজা করতে পারেন, যদি এইগুল না থাকে তাহলে শিবলিঙ্গেই ভগবান কার্তিকেয় কে কল্পনা করে শিবলিঙ্গেই কার্তিকেয় পূজা করবেন। 

প্রথমে নিজের সাধ্য মতো পরমেশ্বর শিব ও মাতা পার্ব‌তী দেবীকে পূজা করুন।

তারপর কার্তিকেয় দেবের রূপ স্মরণ করে ধ্যান করুন। 


(এ‌ই ছবিটি Download করে চিত্র হিসেবে বানিয়ে পূজা করতে পারেনন)

[এই ছবিটি দেখে ধ্যান করুন]



🌸 ২. কার্তিকেয় ধ্যান মন্ত্র ঃ

 উদ্যদাদিত্যসংকাশং মযূরবরবাহন্ ॥২০॥

চতুর্ভুজমুদারাঙ্গং মুকুটাদিবিভূষিতম্ ।

বরদাভয়হস্তং চ শক্তিকুক্কুটধারিণম্ ॥২১॥

 (শিবমহাপুরাণ/কৈলাসসংহিতা/১৭নং অধ্যায়/২০-২১ শ্লোক)

অর্থ - যিনি উদীয়মান সূর্যের সমান তেজস্বী তথা শ্রেষ্ঠ ময়ূরের আসনে স্থিত। যিনি চার ভূজা যুক্ত, পরম কৃপালু, মুকুট আদি আভুষণ দ্বারা সুশোভিত এবং তার চার হস্তে বরমূদ্রা, অভয়মুদ্রা, শক্তি ও কুক্কুট ধ্বজ ধারণ করেন, সেই কার্তিকেয় কে ধ্যান করি ।


🌼 ৩. আবাহন ও আসন মন্ত্র ঃ 

 ধ্যানের পর মনে মনে ভগবান কার্তিকেয় কে পূজার স্থানে উপস্থিত হবার জন্য ভক্তি সহকারে আবাহন করুন। যে বেদী তে পূজা করবেন সেখানে আসন ধরে নিচের মন্ত্র পাঠ করুন -

 স্কন্দায় নমঃ, আবাহয়ামি, আসনং সমর্পয়ামি॥



🔥 ৪. পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, স্নান, মালা ও তিলকাদি মন্ত্র ঃ

✅ কোশায় জল নিয়ে কুশি দিয়ে স্কন্দের উদ্দেশ্যে কিছু পরিমাণ জল স্কন্দের চরন ধৌত করবার জন্য অর্পণ করবেন, এই মন্ত্র পাঠ করে - “ স্কন্দায় নমঃ, পাদ্যং সমর্পয়ামি॥

 

✅ গোটা আতপ চাল, চন্দন ও বেলপাতা নিয়ে অর্ঘ্য অর্পণ করুন, 

এই মন্ত্র পাঠ করে - 

অর্ঘ্যোঽসি ত্বমুমাকান্ত অর্ঘেণানেন বৈ প্রভো । 

গৃহাণ ত্বং ময়া দত্তং প্রসন্নো ভব ষন্মুখ ॥


✅ কোশায় জল নিয়ে কুশি দিয়ে স্কন্দের উদ্দেশ্যে কিছু পরিমাণ জল স্কন্দের আচমন করবার জন্য অর্পণ করবেন, এই মন্ত্র পাঠ করে -  “ স্কন্দায় নমঃ, আচমনীয়ং সমর্পয়ামি॥

 

✅ কোশায় জল নিয়ে কুশি দিয়ে স্কন্দের উদ্দেশ্যে কিছু পরিমাণ জল স্কন্দকে স্নান করবার জন্য অর্পণ করবেন, এই মন্ত্র পাঠ করে - “ স্কন্দায় নমঃ, স্নানং সমর্পয়ামি॥

 

✅এবার ফুলের মালা ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে প্রদান করুন, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে – “ স্কন্দায় নমঃ, মাল্যং সমর্পয়ামি॥


✅এবার ভস্ম-ত্রিপুণ্ড্র তিলক লাগিয়ে দিন ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে – “ॐ শিবস্বরূপায় স্কন্দায় নমঃ, ভস্ম-ত্রিপুণ্ড্র সমর্পয়ামি॥


✅ মঙ্গল গ্রহের শান্তির জন্য  ত্রিপুণ্ড্র তিলকের মাঝে কুমকুম বিন্দু এঁকে দিন,

এই মন্ত্র পাঠ করে -

ॐ  স্কন্দকুমারায় শৈবধর্মপ্রকাশিনে নমঃ।

মঙ্গল গ্রহাধীপতয়ে দেবসেনানায়।

ভক্তানাং সর্বমঙ্গলদোষক্ষয়করায়।

কুমারস্বামিন্ তুভ্যং নমঃ॥



🔖 ৫. চন্দন, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও গায়ত্রী মন্ত্র


 ✅এবার ধূপ আরতি করে ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে প্রদান করুন, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে – “ স্কন্দায় নমঃ, ধূপং আঘ্রাপয়ামি॥


 ✅এবার নিজের হাতে ঘিয়ের দীপ নিয়ে ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে প্রদান করুন, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে –“ স্কন্দায় নমঃ, দীপং দর্শয়ামি॥


 ✅এবার চন্দন নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে কার্তিকেয় কে প্রদান করুন – 

“ সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো । 

ভক্ত্যা পরময়া ষন্মুখ সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥ 

 স্কন্দায় নমঃ গন্ধানুলেপনং সমর্পয়ামি॥


 ✅এবার নিজের হাতে চাঁপা ফুল (বা অন্য ফুল) নিয়ে ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে প্রদান করুন, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে – “ স্কন্দায় পুষ্পং সমর্পয়ামি॥

 

 ✅এবার নৈবেদ্য (গোটা একটি ফল অথবা মিষ্টান্ন ইত্যাদি) নিয়ে ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে প্রদান করুন, 

এই মন্ত্র উচ্চারণ করে – “ স্কন্দায় নমঃ, নৈবেদ্যং নিবেদয়ামি॥


🌺 ৬. কার্তিকেয় পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

✅ ফুল হাতে নিয়ে হৃদয়ে ভক্তি রেখে বলুন —

শিবশিষ্যায় পুত্রায় শিবস্য শিবদায়িনে ।

শিবপ্রিয়ায় শিবযোরানন্দনিধয়ে নমঃ ॥

গাঙ্গেয়ায় নমস্তুভ্যং কার্তিকেয়ায় ধীমতে ।

উমাপুত্রায় মহতে শরকাননশায়িনে ॥

ষড়ক্ষরশরীরায় ষড়্ বিধার্থবিধায়িনে ।

ষড়ধ্বাতীতরূপায় ষন্মুখায় নমো নমঃ ॥

 স্কন্দায় কুমারস্বামিনে গুহায় সুব্রহ্মণ্যায় নমো নমঃ,

এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।


(এরপর এই ফুল ভগবান শ্রী কার্তিকেয় কে নিবেদন করুন)


✅ স্কন্দের বাহনের উদ্দেশ্যে ফুল দিন - 

🔷ময়ূরের উদ্দেশ্যে ঃ ॐ গরুড়পুত্রায় চিত্রবর্হণায় ময়ূরবাহনায় স্কন্দপ্রিয়ায় পুষ্পং সমর্পয়ামি।

🔷 কুক্কুট (মোরগ) -র উদ্দেশ্যে ঃ ॐ  অরুণপুত্রায় তাম্রচূড়ায় কুক্কুটবাহনায় অগ্নিবর্ণায় স্কন্দবাহনায় পুষ্পং সমর্পয়ামি ।


কার্তিকেয়র অনান্য রূপের উদ্দেশ্যে ফুল দিন -  

ॐ স্কন্দায় শাখায় বিশাখায় নৈগমেয়ায় চতুর্মূর্তয়ে মহাবলায়
শিবকুমারায় গৌরীসূতায় গুহায় দেবসেনাপতয়ে নমঃ।
এতেভ্যো রূপেভ্যঃ পুষ্পং সমর্পয়ামি ।


কার্তিকেয়-র অনুচর গণের উদ্দেশ্যে ফুল দিন -

ॐ স্কন্দস্য সমস্তানুচরাণাং নন্দীসেন লোহিতাক্ষ 

ঘণ্টাকর্ণ কুমুদমালী উন্মাথ প্রমাথ সুভ্রাজ ভাস্বর 

মণি সুমণি জ্বালাজিহ্ব জ্যোতি পরিঘ বট ভীম 

দহতি দহন উৎক্রোশ পঞ্চক চক্র বিক্রম সংক্রম 

বর্দ্ধন নন্দন কুন্দ কুসুম কুমুদ ডম্বর আড়ম্বর 

চক্র অনুচক্র সুব্রত সত্যসন্ধ সুপ্রভ শুভকর্ম 

পাণিত্রক কালিক বল অতিবল ঘস অতিঘস 

সুবর্চ্চ অতিবর্চ্চ কাঞ্চন মেঘমালী স্থির অতিস্থির 

উচ্ছ্রিত অগ্নিশৃঙ্গ বিগ্রহ সংগ্রহ উন্মাদ পুষ্পদন্ত 

শঙ্কুকর্ণ জয় মহাজয় ধনঞ্জয় এতেষাং গণানাং তেজস্বিনাং নমঃ।

এভ্যো গণেশ্বরেভ্যঃ পুষ্পং সমর্পয়ামি ।।


✅ কার্তিকেয়-র উভয় গায়ত্রী মন্ত্রের দ্বারা দুবার ফুল প্রদান করুন -

🔷 স্কন্দের ১ম গায়ত্রী মন্ত্র - 

ॐ কুমারায় বিদ্মহে কার্তিকেয়ায় ধীমহি । 

তন্নঃ স্কন্দ প্রচোদয়াৎ ॥ ৫

[কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/মৈত্রায়ণী সংহিতা/২য় কাণ্ড/৯ম প্রপাঠক/৫ম অনুবাক]

🔷 স্কন্দের ২য় গায়ত্রী মন্ত্র - 

ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাসেনায় ধীমহি । 

তন্নো ষন্মুখ প্রচোদয়াৎ ॥ ২০

[কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক/২০ নং অনুবাক]


✅ কার্তিকেয়-র স্ত্রী দেবসেনা ষষ্ঠী দেবীর উদ্দেশ্যে মন্ত্রের দ্বারা ফুল প্রদান করুন -

ॐ স্কন্দপ্রিয়ায়ৈ দেবসেনায়ৈ ষষ্ঠীদেব্যৈ নমোঽস্তুতে, পুষ্পং সমর্পয়ামি 


✅ কার্তিকেয়-র  মাতৃকার উদ্দেশ্যে মন্ত্রের দ্বারা ফুল প্রদান করুন -

ॐ স্কন্দ মাতৃকাগণায় নমোঽস্তুতেপুষ্পং সমর্পয়ামি 


✅ কার্তিকেয়-র  শক্তি অস্ত্রের উদ্দেশ্যে মন্ত্রের দ্বারা ফুল প্রদান করুন -

 নমো ভগবত্যৈ দিব্যশক্ত্যৈ স্কন্দহস্তস্থিতায়ৈ দৈত্যদর্প‌বিনাশিন্যৈ
জয়প্রদায়িন্যৈ তেজস্বিন্যৈ মমাভীষ্টসিদ্ধিং দেহি। 

ॐ স্কন্দহস্তস্থিতায় শক্তি অস্ত্রায় নমঃ, এষা পুষ্পাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।।

অগ্নির  উদ্দেশ্যে মন্ত্রের দ্বারা ফুল প্রদান করুন - ॐ অগ্নয়ে বহ্নিণে নমঃ, পুষ্পং সমর্পয়ামি। 

✅ গঙ্গার উদ্দেশ্যে মন্ত্রের দ্বারা ফুল প্রদান করুন -  ॐ গঙ্গাদেব্যৈ নমঃ, পুষ্পং সমর্পয়ামি। 


🙏 ৭. কার্তিকেয় প্রণাম মন্ত্র


হাত জোড় করে কার্তিকেয় প্রণাম মন্ত্র বলুন -

ॐ নমঃ কল্যাণরূপায় নমস্তে বিশ্বমঙ্গল ।
বিশ্ববন্ধো নমস্তেঽস্তু নমস্তে বিশ্বভাবন ॥

নমোঽস্তু তে দানববর্য়হন্ত্রে‌
বানাসুরপ্রাণহরায় দেব ।
প্রলম্বনাশায় পবিত্ররূপিণে
নমো নমঃ শঙ্করতাত তুভ্যম্‌ ॥

ত্বমেব কর্তা জগতাং চ ভর্তা 
ত্বমেব হর্তা শুচিজ প্রসীদ ।
প্রপঞ্চভূতস্তব লোকবিম্বঃ
প্রসীদ শম্ভ্বাত্মজ দীনবন্ধো ॥

দেবরক্ষাকর স্বামিন্‌ রক্ষ নঃ সর্বদা প্রভো।
দেবপ্রাণাবনকর প্রসীদ করুণাকার ॥ 

[শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/কুমারখণ্ড/১২ অধ্যায়/২-৫ নং শ্লোক]

 


🌸 ৮. কার্তিকেয় জপ মন্ত্র ও স্তোত্র পাঠ

জপ মন্ত্র (১০৮ বার):

ॐ সৌং শরবণ ভবায় ষণ্মুখায় নমঃ॥


স্তোত্র পাঠ :

স্তোত্র - শ্রী স্কন্দ স্তব (শিবমহাপুরাণোক্ত)

 শতনাম স্তোত্র - শ্রী কার্তিকেয় অষ্টোত্তর শতনাম (স্কন্দমহাপুরাণোক্ত) 


 ✅এবার কর্পূর জ্বালিয়ে কার্তিকেয়-র আরতি করুন ।



🔱 ৯. প্রদক্ষিণ ও প্রণাম (যদি সম্ভব হয়)

 স্কন্দায় নমঃ, প্রণমামি দেবম্॥

 


🌼 ১০. ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র -

✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।
কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব ষড়ানন ॥

[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে ছয় মুখধারী কার্তিকেয় ভগবান ! আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]


🕉️ ১১. বিসর্জন মন্ত্র

 স্কন্দায় নমঃ। যথাশক্তি পূজনং কৃতম্ ।
তৎ সর্বং ত্বত্-প্রীত্যর্থং সমর্পয়ামি ।
ইদানীং ত্বাং বিসর্জয়ামি। পুনঃ আগচ্ছ মম পূজনার্থম্ ॥


✨ ১২. শেষ প্রার্থনা মন্ত্র

✅এবার উমা, স্কন্দ সহিত প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।
অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে সোমাস্কন্দ পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]

পুত্র কামনার কার্তিকেয় মন্ত্র -

 “দেহি মে সুতং স্কন্দ সর্ব-কামার্থ-সিদ্ধিদম্ ।

আয়ুর্ দেহি যশো দেহি সর্বাভীষ্টঞ্চ দেহি মে ॥

অর্থঃ — হে স্কন্দ! তুমি আমাকে এমন সন্তান দাও, যিনি সকল কামনা সিদ্ধ করবে। তুমি আমায় আয়ু, যশ ও অভীষ্ট ফল দান করো।

🌸 ☘️পূজা অন্তে প্রসাদ গ্রহণ করুন। 

🌸🌷পূজা সম্পন্ন হ‌ওয়ার পর নুন ছাড়া আহার গ্রহণ করবেন।

✅ সকালে উঠে নিত্য দিনের মতোই পূজা করে, পারণ (ব্রতভঙ্গ) মন্ত্র বলবেন — 

পারণ মন্ত্র - 

দেবসেনাপতে স্কন্দ কুমার কুক্কুটধ্বজ।
ব্রতস্যাস্য ময়া নিত্যং কৃতস্য পরিপালনম্ 

তব প্রসাদেন দেবেশ পরং নির্বিঘ্নমস্তু মে।
ইদং ব্রতপরায়ণং দেব গৃহীত্বা পরমেশ্বরসুত।
ময়ি অনুমগ্রহং কৃত্বা পারণং কর্তুমর্হসি ॥

অর্থ ঃ হে দেবসেনাপতি স্কন্দ ! হে কুমার, কুক্কুট ধ্বজ ! আমি যে ব্রতটি নিষ্ঠাভরে পালন করেছি, আপনার কৃপায় তা যেন সম্পূর্ণ ও নিরবিঘ্ন হয়। হে পরমেশ্বরের পুত্র ! এই ব্রতপালন গ্রহণ করুন। আমার উপর কৃপা করে আমাকে পারণ (ব্রতভঙ্গ) করার অনুমতি দিন।

(মনে মনে অনুমতি পেয়েছেন ভেবে নিয়ে, ব্রত বিধি থেকে বিরত হয়ে যান)

কার্তিকেয় পূজা বিধি সম্পূর্ণ হল।

🌸 শৈব পরম্পরা অনুসারে ভগবান শ্রী কার্তিকেয় ব্রত-পূজা বিধি সম্পূর্ণ হল।


॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥

✒️ ব্রত-পূজা বিধি রচনায় – শ্রীনন্দীনাথ শৈব আচার্য গুরুদেব জী

বিশেষ ধন্যবাদ - শ্রী মতী নমিতা রায় দেবী জী  

Copyright এবং প্রচারে – International Shiva Shakti Gyan Tirtha

 © Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt108.blogspot.com



🌕 ফল ও মাহাত্ম্য

  • সন্তানলাভ ও সন্তানরক্ষা

  • শত্রু ও দোষ নাশ

  • বীর্য, তেজ, ও আধ্যাত্মিক বল বৃদ্ধি

  • কুণ্ডলিনী জাগরণে সহায়ক

  • ভক্ত ও গুরুর মধ্যকার ভক্তি ও ঐক্য দৃঢ় হয়

  • শিব ভক্তি দৃঢ় হয়



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ