পদ্মপুরাণে শৈবদের নিন্দা করা কতটা যুক্তিযুক্ত ?
বর্তমানে কলিরচর বৈষ্ণবদের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার এসে জাকিয়ে বসেছে। যার অসুখে আক্রান্ত হয়ে এরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শৈবদের অপমানিত করে শাস্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের সম্পূর্ণ অর্থ ও তার মান্যতা তথা গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে অবগত না হয়েই চোখে যা দেখতে পায় সেটিই দিয়ে শৈবদের কাছে সেটি প্রদর্শন করে তাদের ও পরমেশ্বর শিবকে অপমানিত করে নিজেদেরা শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে আরোহণ করছে ভেবে দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে।
আজ সেই সমস্ত অপপ্রচারের মধ্যে থাকা একটি বিশেষ অপপ্রচারকের পর্বতকে খণ্ডিত করা হল নীচের আলোচনায়।
কলিরচর বৈষ্ণবদের দাবী :
১) শৈবরা ভস্ম মাখে,জটা ধারণ ও শিবকে সর্বোচ্চ মানেই । সেই কারণে শৈবরা পাষণ্ড বলে গণ্য ।
২) শ্রীবিষ্ণু অবতার গ্রহণ করে সেই ভাবে জটাধারণ করে ভস্ম মেখে শিবকে সর্বোচ্চ আরাধ্য মেনে পূজা করেন। এসব দেখে দানবেরা সেই ভাবে পূজা করে পতিত হয় । তাই শ্রীবিষ্ণুর দ্বারা শিবপূজা করাটা শুধুমাত্র তমগুণযুক্ত দানবদের ভ্রমিত করার জন্য।
উপরোক্ত এই দুটি দাবী কলিরচর বৈষ্ণবরা পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডের ২৩৫ অধ্যায়ের কয়েকটি শ্লোক উত্থাপন করে প্রচার করে থাকেন, এই যুক্তিগুলির উপর দাঁড়িয়ে তারা বলেন যে, জটাধারণ করলে ভস্ম মাখলে তথা শিবকে সর্বোচ্চ আরাধ্য মানলে তা অবৈদিক, যেহেতু এটি শৈবরা ধারণ করেন তাই শৈবরা অবৈদিক ও উক্ত দানব বলতে শৈবদের কেই বোঝানো হয়েছে।
কলির চর বৈষ্ণবদের প্রচার করা ছবিটি নীচে দেওয়া হল👇
উপরোক্ত পদ্মপুরাণের শ্লোকে সেই দাবী গুলি ফুটে উঠেছে। এবার আমরা দেখবো সেই দাবীগুলি কতটা গ্রহণযোগ্য !
দাবীর বিশ্লেষণ :
১) প্রথম দাবীর বিশ্লেষণ :
ভস্ম মাখলে , জটা ধারণ করলে শৈবরা অবৈদিক হয় কি না সেটি বেদ অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্র হতেই প্রথমে দেখবো।
বেদের ১০৮ উপনিষদের মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপনিষদ হল শ্রীকালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ,
এই শ্রুতিশাস্ত্রের প্রথমেই যা বলা হয়েছে তা নীচে উল্লেখ করা হল 👇
ॐ অথ কালাগ্নিরুদ্রোপনিষদঃ
সংবর্তকোঽগ্নিরৃষিরনুষ্টুপ্ছন্দঃ
শ্রীকালাগ্নিরুদ্রো দেবতা
শ্রীকালাগ্নিরুদ্রপ্রীত্যর্থে
ভস্মত্রিপুণ্ড্রধারণে বিনিযোগঃ ॥ ১ ॥
সরলার্থ - এই কালাগ্নিরুদ্রোপনিষদ -এর ঋষি হলেন সংবর্তক অগ্নি , অনুষ্টুপ্ ছন্দ এবং দেবতা শ্রীকালাগ্নিরুদ্র । ভগবান শ্রীকালাগ্নিরুদ্রদেবের প্রসন্নতার জন্য ভস্ম ও ত্রিপুণ্ড্র ধারণে ইহার বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে ॥ ১ ॥
উপরোক্ত মন্ত্র হতে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে যে বেদ শাস্ত্রে ভস্ম ত্রিপুণ্ড্র ধারণের বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এবার চলুন আমরা দেখে নিই বেদশাস্ত্রে ভস্ম ধারণ করার পদ্ধতি বৈদিক পদ্ধতি কি না ।
তং হোবাচ ভগবান্কালাগ্নিরুদ্রঃ যদ্ দ্রব্যং তদাগ্নেযং ভস্ম
সদ্যোজাতাদিপঞ্চব্রহ্মমন্ত্রৈঃ পরিগৃহ্যাগ্নিরিতি
ভস্ম বাযুরিতি ভস্ম জলমিতি ভস্ম
স্থলমিতি ভস্ম ব্যোমেতি ভস্মেত্যনেনাভিমন্ত্র্য ॥ ৩ ॥
সরলার্থ – এই কথা শুনে ভগবান শ্রীকালাগ্নিরুদ্রদেব সনৎকুমারজীকে বুঝিয়ে বললেন যে ত্রিপুণ্ড্রের দ্রব্য হল - অগ্নিহোত্রের(যজ্ঞ) ভস্ম । এই ভস্ম "সদ্যোজাতাদি পঞ্চব্রহ্ম" - মন্ত্র পাঠ করে ধারণ করতে হয়। "অগ্নিরিতি ভস্ম, বায়ুরিতি ভস্ম, জলমিতি ভস্ম, ব্যোমেতি ভস্ম, স্থলমিতি ভস্ম" - (পঞ্চভূতাদি) নামক মন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত করা হয় থাকে ॥ ৩ ॥
উপরোক্ত মন্ত্র থেকে পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে যে ভস্ম ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করতে গেলে প্রথমে ‘অগ্নিরিতি ভস্ম’ নামক বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে ভস্মকে অভিমন্ত্রিত করে নিতে হবে
তারপর ‘সদ্যোজাত মন্ত্র সহ পঞ্চব্রহ্মমন্ত্র’ উচ্চারণ করে ধারণ করতে হয়,
🚩এবার দেখবো সেই পঞ্চব্রহ্ম মন্ত্র বেদশাস্ত্রে উল্লেখ আছে কি না ।
ॐ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ।
ভবে ভবেনাতি ভবে ভবস্ব মাং ভবোদ্ভবায় নমঃ ॥১৭
ॐ বামদেবায় নমো জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায় নমো রুদ্রায় নমঃ কালায় নমঃ কলবিকরণায় নমো বলবিকরণায় নমো বলায় নমো বলপ্রমথনায় নমঃ সর্বভূত দমনায় নমো মনোন্মনায় নমঃ ॥১৮
ॐ অঘোরেভ্যোঽথ ঘোরেভ্যো ঘোরঘোরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তে অস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥১৯
ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥২০
ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ॥২১
[রেফারেন্স - কৃষ্ণ যজুর্বেদ/ তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক ১৭ নং অনুবাক থেকে ২১ নং অনুবাক]
অর্থাৎ, কৃষ্ণ-যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের মধ্যে ‘সদ্যোজাত মন্ত্র সহ পঞ্চব্রহ্মমন্ত্র’ উপস্থিত।
— সুতরাং, উপরোক্ত মন্ত্র থেকে প্রমাণিত হল যে পঞ্চব্রহ্মমন্ত্রটিও বেদশাস্ত্রের অন্তর্গত।
🚩এবার দেখবো সেই অগ্নিরিতি ভস্ম মন্ত্র বেদশাস্ত্রে উল্লেখ আছে কি না ।
বেদের ১০৮ উপনিষদের অন্তর্গত অতি গুরুত্বপূর্ণ উপনিষদ হল অথর্ব-শির উপনিষদ।
নীচে সেই শ্রুতিশাস্ত্র থেকে প্রমাণ দেয়া হল 👇
ॐ অগ্নিরিতি ভস্ম বায়ুরিতি ভস্ম জলমিতি ভস্ম স্থলমিতি ভস্ম ব্যোমেতি ভস্ম সর্বংহ বা ইদং ভস্ম মন এতানি চক্ষূংষি ভস্মানি যস্ মাদ্ ব্রতমিদং পাশুপতং যদ্ ভস্ম নাঙ্গানি সংস্পৃশেত্ তসমাদ্ ব্রহ্ম তদেতত্ পাশুপতং পশুপাশ বিমোক্ষণায় ॥৫
উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার ভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে বেদশাস্ত্রতে ভস্মকে ধারণ করাকে স্বীকার করা হয়েছে। এমনকি ভস্মধারণের মন্ত্রটিও বেদশাস্ত্রেই উপস্থিত।
অথর্ববেদের এই শির উপনিষদে ভস্মধারণের ব্রতকে পাশুপত ব্রত বলা হয়েছে।
মুণ্ডক উপনিষদে এই হোমযজ্ঞের পবিত্র ভস্মকে শির অর্থাৎ কপালে ধারণ করবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই এই ভস্মধারণ ব্রতকে ‘শিরব্রত’ বলে । প্রমাণ 👇
তদেতদ্চাঽভ্যুক্তম্—
ক্রিয়াবন্তঃ শ্রোত্রিয়া ব্ৰহ্মনিষ্ঠাঃ
স্বয়ং জুহুত একর্ষিং শ্রদ্ধয়ন্তঃ।
তেষামেবৈতাং ব্রহ্মবিদ্যাং বদেত
শিরোব্রতং বিধিবদ যৈস্ত চীৰ্ণম্ ॥১০
[তথ্যসূত্র : মুণ্ডক উপনিষদ/৩য় মুণ্ডক/২য় অধ্যায়]
🌷 সরলার্থ — শাস্ত্র বলে, যে ব্যক্তি শাস্ত্রের বিধি মেনে কর্ম করেন, শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, ব্রহ্মনিষ্ঠ হন, একর্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং অথর্বশির উপনিষদে বর্ণিত শির-ব্রত(ভস্ম) ধারণ করেন, সেই ব্যক্তিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যা লাভের জন্য উপযুক্ত, অন্য কেউ নয় ।সরলার্থ — শাস্ত্র বলে, যে ব্যক্তি শাস্ত্রের বিধি মেনে কর্ম করেন, শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, ব্রহ্মনিষ্ঠ হন, একর্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং অথর্বশির উপনিষদে বর্ণিত শির-ব্রত(ভস্ম) ধারণ করেন, সেই ব্যক্তিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যা লাভের জন্য উপযুক্ত, অন্য কেউ নয় ।
ব্যাখ্যা — অথর্ববেদের অন্তর্গত “শির উপনিষদ” -এ পাশুপতব্রত করার নির্দেশ রয়েছে, যজ্ঞের অগ্নির মাধ্যমে হওয়া ভস্ম কপালে ধারণ করলেই তা পাশুপতব্রত বা শিরব্রত বলে অভিহিত হয়। বেদ অনুযায়ী পাশুপত ব্রতের ভস্মধারণ সম্পূর্ণ বৈদিক । কারণ, মুণ্ডক উপনিষদ স্পষ্ট করেই বলছে যে, শাস্ত্র অধ্যয়ন করে, শাস্ত্র মেনে, ব্রহ্মে অর্থাৎ শিবের প্রতি মন সমর্পণ করে, যজ্ঞ করে তার অগ্নিস্বরূপ ভস্ম শির অর্থাৎ মস্তক বা কপালে ধারণ করে - এমন ব্যক্তিই ব্রহ্মবিদ্যা অর্থাৎ আত্মজ্ঞান লাভের যোগ্য ব্যক্তি।
স্কন্দমহাপুরাণের সূতসংহিতাতেও এই শিরব্রতকে পাশুপতব্রত/শাম্ভবব্রত/অত্যাশ্রমী ব্রত বলা হয়েছে, যা কিনা প্রকৃতপক্ষে ভস্মধারণ করবার পদ্ধতিকেই বোঝায়।
অথবাঽঽথর্বণৈর্মন্ত্রৈর্গৃহীত্বা ভস্ম পাণ্ডুরম্ ॥ ২৫
সর্বাঙ্গোদ্ধূলনং যত্তদ্ ব্রতং প্রোক্তং মনীষিভিঃ ।
এতদ্বেদ শিরোনিষ্ঠাঃ প্রাহুঃ পাশুপতং মুনে ॥ ২৬
কেচিৎ শিরোব্রতং প্রাহুঃ কেচিৎ অত্যাশ্রমং বিদুঃ ।
কেচিত্তদ্ ব্রতমিত্য উচুঃ কেচিৎ শম্ভবমৈশ্বরম ॥ ২৭
(তথ্যসূত্র - স্কন্দপুরাণ/সূতসংহিতা/জ্ঞানযোগখণ্ড/১৪ অধ্যায়)
🌷 অর্থ — অথর্ববেদের শির উপনিষদোক্ত ‘অগ্নিরিতি ভস্ম’ মন্ত্র দ্বারা শির(কপাল) সহ সারা শরীরে ভস্ম ধারণ করাই হল ভস্মোদ্ধূলন ব্রত , যাকে বেদান্তে(শির উপনিষদে) পাশুপত ব্রত বলা হয়েছে, কোথাও(মুণ্ডক উপনিষদে) শিরোব্রত বলা হয়েছে, কোথাও(কৈবল্য ও শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে)অত্যাশ্রম ব্রত বলা হয়েছে, কোথাও(কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ) শাম্ভবব্রত, কোথাও ঐশ্বরব্রত ব্রত বলা হয়েছে ॥ ২৫-২৭
পাঠকবৃন্দ ভেবে দেখুন ! বেদের সমস্ত স্থানে ভস্মধারণের নির্দেশনা আছে। তাহলে এই শৈবদের এই ভস্মধারণ কিভাবে অবৈদিক হতে পারে ?
♦️ হাস্যকর বিষয় হল এই — যে পদ্মপুরাণের দোহাই দিয়ে কলির ভণ্ড বৈষ্ণবরা ভস্মধারণকে অবৈদিক কার্য ও ভস্মধারনকারী শিবভক্ত শৈবদের পাষণ্ড বলে নিন্দা করে বেড়ায়, সেই পদ্মপুরাণ ই বলছে যে, ভস্মধারণ না করলে বৈষ্ণব শাক্ত বা অন্য কেউই কোনো শুভ কার্য করবার যোগ্য থাকে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। প্রমাণ 👇
অপি বা বৈষ্ণবো মর্ত্য অপি বাপীতরো জনঃ ।
ভস্মস্নায়ী তস্মযুক্তঃ কর্ম্মস্বধিকরোতি বৈ ॥ ১৫১
[তথ্যসূত্র : পদ্মপুরাণ/পাতালখণ্ড/৬৪ অধ্যায়]
🪷 অর্থ — শৈব হোক বা বৈষ্ণব, সকলেই ভস্মধারণ ও ভস্মস্নান করেই (আধ্যাত্মিক) কর্মে অধিকারী হতে পারবে(অন্যথায় নয়)।
🔥 সিদ্ধান্ত — শুধু শৈবরাই নয় বরং বৈষ্ণবদের তথা সকলকেই ভস্মত্রিপুণ্ড্র ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মপুরাণ, নচেৎ তারা কেউই কোনো আধ্যাত্মিক কর্ম করবার উপযুক্ত হতে পারবেনা। এখান থেকেই প্রমাণিত হয় যে, পরমেশ্বর শিবের শৈবসংস্কৃতিই আদি সনাতনীদের প্রাচীনতম মূল সংস্কৃতি, সেই আদি সনাতনী শৈব আদর্শকে — বৈষ্ণব, শাক্ত, গাণপত্য, সৌর তথা সকলকেই মান্য করতে হয়, এই বিধান স্বয়ং শাস্ত্র দিয়েছে।
এবার ভেবে দেখুন,
কলির ভণ্ড বৈষ্ণবেরা কি করবেন ? 😆
ভস্ম ধারণ না করলে শুভ কর্মে আপনাদের কোনো অধিকার ই তৈরি হবে না ।
এবার একটু ভেবে দেখুন একই পদ্মপুরাণের মধ্যে একদিকে ভস্মধারণকে অবৈদিক কার্য বলা হল আবার আরেকদিকে ভস্মধারণ কে অপরিহার্য বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাহলে এর মধ্যে কোনটি সঠিক আর কোনটি অসত্য ? আপনারা বিচার করে বলুন, বলতে পারবেন ? আপনারা নিজেরাই নিজেদের শাস্ত্রের মীমাংসা জানেন না, আর এই কারণেই আপনারা শৈবদের নিন্দা করেন সবসময়। এবার মীমাংসা জেনে নিন।
______________________________________________
প্রথমে দেখুন,
পদ্মপুরাণে শ্রীবিষ্ণু বলেছিলেন যে, ভস্মধারণকারী নিঃসন্দেহে পতিত হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে পদ্মপুরাণ বলছে,
ভস্মধারণ না করে কেউ কোনো শুভ কর্ম করবার অধিকারী নয়।
তবে এর মধ্যে মীমাংসা কি হব ?
মীমাংসা জেনে নিন 👇
চলুন তবে বেদ শাস্ত্রোক্ত কালাগ্নীরুদ্র উপনিষদ থেকে দেখে নিই ভস্ম ধারণ করলে আসলেই কি হয় 👇
এবং ত্রিপুণ্ড্রবিধিং ভস্মনা করোতি
যো বিদ্বান্ব্রহ্মচারী গৃহী বানপ্রস্থো যতির্বা
স মহাপাতকোপপাতকেভ্যঃ পূতো ভবতি
স সর্বেষু তীর্থেষু স্নাতো ভবতি
স সর্বান্বেদানধীতো ভবতি
স সর্বান্দেবাঞ্জ্ঞাতো ভবতি
স সততং সকলরুদ্রমন্ত্রজাপী ভবতি
স সকলভোগান্ভুঙ্ ক্তে দেহং ত্যক্ত্বা শিবসাযুজ্যমেতি ন
স পুনরাবর্ততে ন স পুনরাবর্তত
ইত্যাহ ভগবান্কালাগ্নিরুদ্রঃ ॥১০॥
সরলার্থ - এইভাবে ত্রিপুণ্ড্র বিধি অনুসারে যে কেউ ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থী অথবা সন্যাসী ভস্ম ধারণ করেন, তিনি মহাপাতক ও উপপাতক থেকে মুক্ত হয়ে যান। তিনি সমস্ত তীর্থ স্নান সমান পবিত্র হয়ে যান। তিনি সমস্ত বেদ পড়ায়ন এর ফল প্রাপ্ত করেন। তিনি সমস্ত দেবকে জানার সামর্থ লাভ করেন। তিনি সমস্ত প্রকার ভোগ, ভোগপ্রাপ্ত করে ভগবান শিবের লোক প্রাপ্ত করেন। তিনি আর পুনঃজন্ম গ্ৰহণ করেন না।এই প্রকারে ভগবান কালাগ্নিরুদ্রদেব সনৎকুমারজীকে ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করণের বিধির বর্ণনা দিয়ে থাকেন ॥১০॥
সুতরাং, ভস্মধারণ করা সাক্ষাৎ বেদের বাণী, সেই হেতু ভস্মধারণ করা বৈদিক ধর্ম বলে গণ্য। যা পালন করলে সুখ ভোগ ও মোক্ষ উভয়ই লাভ সম্ভব।
কিন্তু,
পদ্মপুরাণের উক্ত শ্লোক বলছে যে ভস্মধারণকারী ব্যক্তি অবৈদিক।
এবার এখানেই মীমাংসা প্রয়োজন।
উপরোক্ত বেদের শ্রুতিবাক্যের সহিত পদ্মপুরাণের পরস্পর বিরোধ হচ্ছে।
এবার দেখবো ব্যাসদেব কি বলছেন,
মহর্ষি ব্যাসদেব তার ব্যাস সংহিতা ১.৪ তে বলেছেন -
"শ্রুতি স্মৃতি পুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে ।
তত্র শ্রৌতং প্রমাণস্তু তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতিব্বরা ॥"
সরলার্থ : যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতির কথনই বলবান এবং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে স্মৃতির কথনই বলবান।
সুতরাং , শৈবদের নিন্দাকারী ব্যক্তিদের জানা উচিত পুরাণের প্রমাণের ভিত্তিতে শ্রুতি তথা বেদের প্রমাণকে খণ্ডন করা যায় না।
তাই পদ্মপুরাণের মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর এই উক্তি যে শুধু মাত্র ভ্রমিত করার জন্য উল্লেখিত হয়েছে তা পরিষ্কার করে বোঝা যায়, কেননা এটি সম্পূর্ণ ভাবেই শ্রুতি বিরুদ্ধ কথা।
আর এরই ইঙ্গিত দিয়েছেন ত্রিদেবের মধ্যে গুণসম্পন্ন ভগবান হর । উপরোক্ত পদ্মপুরাণের শ্লোকে দেখুন ভগবান হর শ্রীবিষ্ণু কে বলছেন যে ,
তয়োদিতমিদং দেব করোমি যদি ভূতলে ।
ভস্মাম্নাশায় মে নাথ ভবিষ্যতি ন সংশয় ॥৩৮
সরলার্থ - হে দেব ! যদি আমি ভূতলে আপনার আদেশ পালন করি তবে আমি(আমার বেদ বাক্য) নিঃসংশয়ে বিনষ্ট হয়ে যাবো(শিব ও শিববাক্য এক অর্থে) ॥৩৮
উপরোক্ত শ্লোকে ভগবান হর এই বাক্যের মধ্য থেকে বুঝিয়ে দিলেন যে, শ্রীবিষ্ণুর কথা অনুসারে ভগবান হর যদি শৈবদের ভস্ম ধারণ করাকে অবৈদিক বলে প্রচার করেন তবে তা শ্রুতিবিরুদ্ধ হয়ে অধর্ম বলে বিবেচিত হবে। আর শ্রুতি অর্থাৎ বেদ শাস্ত্র যেহেতু পরমেশ্বর শিবের নিঃশ্বাস হতে নির্গত তাই সেই বাক্যকে স্বয়ং ভগবান হর নিজেই সদাশিবের লীলারূপ হয়ে কিভাবে প্রচার করবেন ? এতে নিজ প্রকটিত বেদের বাণীকেই খণ্ডিত করা হবে ভেবে ভগবান হর বললেন যে এটি পৃথিবীতে প্রচার করলে শিববাক্য বেদ বিনষ্ট হবে, যা সর্বথাই অসম্ভব। এখানে আমি বিনষ্ট হবো কথাটির তাৎপর্য হল - শিব কথিত বেদবাক্য অসফল হতে পারে বোঝানো হয়েছে।
শুধু মাত্র এই শ্লোক দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে শৈবদের দানব, পাষণ্ড ও অবৈদিক বলে প্রচার করাটা সম্পূর্ণই মায়া। আর এটির প্রচার করলে মানুষ শৈব নিন্দা করবে, শৈবদের আচারকে অবৈদিক বলবে ফলে তা অধর্মকেই প্ররোচনা দিয়ে বৃদ্ধি করবে। তাই পরমেশ্বর সদাশিবের থেকে প্রকটিত গুণাত্মক সত্ত্বা ভগবান হর তিনি বিষ্ণুর এই মায়াবী প্ররোচিত বাক্য গুলিকে পৃথিবীতে প্রচার করতে ইতস্তত বোধ করেছেন। আর আমরা প্রমাণ করেও দিলাম যে উক্ত বাক্য কখনোই বেদের অনুকূল নয়, বরং ভস্মধারণ কেই বেদ স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই কেউ ভস্মধারণ কে বেদবাহ্য বললে তা সর্বথাই অসত্য ও মায়াবী বাক্য মাত্র বলে জানতে হবে।
আরো একটি আশ্চর্যজনক বিষয় দেখুন,
😱 ভগবান বিষ্ণুর মায়ায় পড়েই মূর্খ ব্যক্তি শিবনিন্দা করে শিববিমুখ হয়ে বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে যায়, এটা শ্রীবিষ্ণু নিজেই বলছেন, প্রমাণ দেখুন 👇
সন্ত্যজ্য দেবদেবেশং লিঙ্গমূর্তিং মহেশ্বরম্ ।
তারপুত্রাস্তথৈবৈতে নষ্টাস্তেঽপি সবান্ধবাঃ ॥১৫
ময়া চ মোহিতাস্তে বৈ মায়য়া দূরতঃ কৃতাঃ ।
সর্বে বিনষ্টাঃ প্রধ্বস্তাঃ শিবেন রহিতা যদা ॥১৬
[তথ্যসূত্র শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/অধ্যায় নং ১২]
🌷সরলার্থ - ভগবান বিষ্ণু বললেন, দেবদেবেশ্বর লিঙ্গমূর্তি মহেশ্বরকে ত্যাগ করে তারকাসুরের পুত্রগণ নিজের বন্ধু-বান্ধবসহিত বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে গেছেন, তারা আমার দ্বারা প্রকাশিত মায়ার দ্বারা মায়ায় মোহিত হয়ে তারা শিবভক্তি পরিত্যাগ করেছিলেন, ফলে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলেন ॥১৫-১৬
পাপী বৈষ্ণবরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, বিষ্ণু তাদেরকেই মায়ায় মোহিত করে বেদবিরুদ্ধ ও শিবনিন্দাকারী করে তুলছেন।
কদাচার কলির ভণ্ড বৈষ্ণবরা আরো দেখুন, আপনাদের প্রিয় নারদ ও ভৃগু মুনিও হরিকে মায়াবী বলেছেন, শেষে তারা রুদ্রভক্ত হয়েছেন👇
মুনয়শ্চ তথা সর্বে ভৃগ্বাদ্যা মুনিসত্তমাঃ ।
মায়া ন কার্যা বিদ্বদ্ধিরিত্যাহুঃ প্রেক্ষ্য তং হরিম্ ॥১৫৫
নারদঃ পর্বতশ্চৈব চিরং জ্ঞাত্বা বিচেষ্টিতম্ ।
মায়াং বিষ্ণোর্বিনীন্দ্যৈব রুদ্রভক্তৌ বভূবতুঃ ॥১৫৬
[তথ্যসূত্র : লিঙ্গমহাপুরাণ/উত্তরভাগ/অধ্যায় নং ৫]
🌷 সরলার্থ - সেই হরিকে দেখে সমস্ত মুনিগণ ভৃগু আদি মুনিশ্রেষ্ঠগণ বলতে লাগলেন যে, বিদ্বান ব্যক্তির কখনোই মায়া রচনা করা উচিত নয় ॥১৫৫
নারদ তথা পর্বতগণ (হরির মায়ার প্রভাবে তাদের করা) মূর্খতাপূর্ণ কার্যকে দীর্ঘকাল ভাবনা করে, বিষ্ণুর মায়াকে নিন্দা করে পরমেশ্বর শিবের ভক্ত হয়ে গেলেন ॥১৫৬
আশা করি, শিবনিন্দুক বৈষ্ণবদের অহংকার ভস্ম হয়ে গিয়েছে এটা দেখার পর।
যাই হোক এবার দেখাবো বিষ্ণু নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি ভস্মের মাহাত্ম্য জানেন না।
এই শ্রীবিষ্ণু নিজেই পদ্মপুরাণে পরমেশ্বর সদাশিবের কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন যে -
হরিরুবাচ → ন শক্তিং ভস্মনো জানে প্রভাবং তেকুতো বিভো। নমস্তেহস্তু নমস্তেহস্তু ত্বামেব শরণং গতঃ ॥২৩৮
[তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/পাতালখণ্ড/চতুঃষষ্টিতমোঽধ্যায়]
🌷সরলার্থ - শ্রীবিষ্ণু বললেন, হে পরমেশ্বর শিব! আমি ভস্মের মহিমা জানি না, আপনার মহিমা কিরূপে জানব? আপনারই শরণাপন্ন হলাম, আপনাকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি ॥২৩৮
পাঠকবৃন্দ আপনারাই বিচার করে দেখুন বৈষ্ণবদের পরমপ্রিয় সাত্ত্বিকপুরাণ পদ্মপুরাণেই তাদেরই আরাধ্য হরি বলছেন সদাশিবকে যে, হরি নিজেই জানেন না ভস্মের মাহাত্ম্য , তিনি শিবকে জানতে পারা তো অসম্ভব তার পক্ষে।
সুতরাং, যে হরি নিজেই শিব ও শিবের ভস্ম সম্পর্কে অবগত নন, তিনি যদি সেই ভস্মের নিন্দা করতে বলেন তবে তা যে সম্পূর্ণরূপে বেদের বাণীর অপমান সেটা বোঝা যায়। তাই পদ্মপুরাণের মধ্যে যে উক্ত শৈবনিন্দামূলক শ্লোকসমূহ সম্পূর্ণ রূপে বেদবিরুদ্ধ তা স্বাভাবিক ভাবেই স্পষ্ট।
এভাবেই শ্রীবিষ্ণু নিজ মায়াবী বাক্য দ্বারা জীবকে মায়াচ্ছন্ন করেন। কেননা তিনিই শৈবদের তথা পরমেশ্বর শিবের নিন্দাকে প্রচার করেন যাতে জীব মায়ায় আবিষ্ট হয়ে শিবনিন্দাতে মগ্ন হয়ে মোক্ষের দ্বার হতে দূরে ছিটকে যায়। তাই কূর্মমহাপুরাণে শ্রীবিষ্ণু নিজেই তার পত্নী শ্রীলক্ষ্মী দেবীকে বলছেন 👇
ত্বং দৃষ্ট্বা ভগবান্ ব্রহ্মা মামুবাচ জগৎপতিম্ । মােহায়াশেষভূতানাং নিযােজয় সুরূপিণীম্ ॥১০
যেনেয়ং বিপুলা সৃষ্টির্বর্দ্ধতে মম মাধব । যথােক্তোহহং স্ত্রিয়ং দেবীমব্রবং প্রহসন্নিব ॥১১
দেবীদমখিলং বিশ্বং সদেবাসুরমানুষম্।
মােহয়িত্বা মমাদেশাৎ সংসারে বিনিপাতয় ॥১২
জ্ঞানযােগতরান্ দান্তান ব্রহ্মষ্ঠিন্ ব্রহ্মবাদিনঃ অক্রোধনান্ সত্যপরান দূরতঃ পরিবর্জ্জয় ॥১৩
ধ্যায়িনাে নিৰ্ম্মমাঞ্ছন্তান্ ধাৰ্ম্মিকান্ বেদপারগান্
যাজিনন্তাপসান্ বিপ্রান্ দূরতঃ পরিবৰ্জ্জয় ॥১৪
বেদবেদান্তবিজ্ঞান – সঞ্ছিন্নাশেষসংশয়ান্ । মহাযজ্ঞপরান্ বিপ্রান্ দূরতঃ পরিবৰ্জ্জয় ॥১৫
যে যজন্তি জপৈর্হোমৈর্দেবদেবং মহেশ্বরম্ ।
স্বাধ্যাবেনেজ্যয় দূরাৎ তান্ প্রযত্নেন বৰ্জ্জয় ॥১৬
ভক্তিযােগসমাযুক্তানীশ্বরার্পিতমানসান্ । প্রাণায়ামাদিষু রতান্ দুরাৎ পরিহরামলান্ ॥১৭
প্রণবাসক্তমনসাে রুদ্রজপ্যপরায়ণান ।
অথৰ্বশিরসাে বেত্তৃন ধৰ্ম্মজ্ঞান পরিবৰ্জ্জয় ॥১৮
বহুনাত্র, কিমুক্তেন স্বধৰ্ম্মপরিপালকান । ঈশ্বরারাধনরতান মন্নিযােগান ন মােহয় ॥১৯
[রেফারেন্স : কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ২]
সরলার্থ —
ভগবান ব্রহ্মা শ্রীবিষ্ণুকে বললেন,
হে জগতপতে সমুদয় ভূতের মােহের নিমিত্ত এই আত্মস্বরূপিণীকে(লক্ষ্মী) নিয়ােগ করুন ॥১০
হে মাধব ! যার ফলে আমার এই বিপুল সৃষ্টি পরিবর্ধিত (পরিচালিত) হয়।
এই কথা শুনে, শ্রীবিষ্ণু ঈষৎ হেসে লক্ষ্মীদেবীকে বললেন – হে দেবি ! দেব অসুর মানুষসহ এই সমগ্র বিশ্বকে আমার(বিষ্ণুর) আদেশে মােহিত করে বিনিপাতিত করো ॥১১ – ১২॥
কিন্তু জ্ঞানযােগরত দান্ত ব্রহ্মনিষ্ঠ ক্রোধশূন্য সত্যধৰ্ম্মা ব্রহ্মবাদীদেরকে দূরে ত্যাগ কোরো(মায়া থেকে দূরে রেখো)॥১৩
ধ্যানশীল, মায়াশূন্য, শান্ত, ধৰ্মিক, বেদপরাগ, যাগ কারী ও তাপস ব্রাহ্মণদের দূরে ত্যাগ করবে(মায়া থেকে দূরে রাখবে) ॥১৪
বেদ বেদান্ত ও বিজ্ঞানের অনু যাদের অশেষ সংশয় তিরােহিত হয়েছে, মহাযজ্ঞই যাদের পরম আশ্রয়, সেই সকল ব্রাহ্মণদেরকে দূরে ত্যাগ করবে ॥১৫
যারা জপ, হােম, বেদপাঠ ও পূজাদি দ্বারা দেবদেব মহেশ্বরকে অর্চনা করেন, তাদের দূরে ত্যাগ করবে(যারা শিবভক্ত তাদের মায়াতে মোহিত করবে না) ॥১৬
ভক্তিযােগযুক্ত ঈশ্বরে(শিবের ঈশানরূপ) সমর্পিতহৃদয়ে, প্রাণায়ামাদিতে রত ও নিস্পাপ ব্যক্তিদের (শিবভক্তদের) দূরে পরিত্যাগ করবে ॥১৭
ওঙ্কারে সমাসক্ত রুদ্রজপপরায়ণ(ॐকারসহ শিবনামজপকারী ব্যক্তি) , অথৰ্ব্বশির(বেদোক্ত শৈবউপনিষদ)অধ্যায়নকারী ও ধৰ্ম্মজ্ঞ ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করবে(মোহিত করবে না) ॥১৮
এ বিষয়ে আর অধিক বলবো কি, আমার(বিষ্ণুর) আদেশে স্বধৰ্ম্ম – পরিপালক ও ভগবান ঈশানের আরাধনায়(শিব আরাধনায়) রত ব্যক্তিদের মােহিত করিও না ॥১৯
সুতরাং, আমরা দেখলাম যে শৈবরা কখনোই অবৈদিক নন, তারা মায়াচ্ছন্নও নন, তারা পতিতও হবেন না। বরং শিবভক্তদের নিন্দা করে মায়া ছড়ান শ্রীবিষ্ণু নিজেই, যাতে কলিরচর বৈষ্ণবেরা শৈবদের অবৈদিক বলে নিজেরাই বেদ বিরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এবার দ্বিতীয় দাবীর বিশ্লেষণ করা যাক -
২) দ্বিতীয় দাবীর বিশ্লেষণ :
প্রথমদাবীর খণ্ডনেই দ্বিতীয় দাবী খণ্ডিত হয়। কারণ, শ্রীবিষ্ণু নিজেই বেদ বিরুদ্ধ মত প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বেদের বিপক্ষে কথা বলার পরিপন্থী। সুতরাং শ্রীবিষ্ণু প্রত্যেক অবতার গ্রহণ করে তথাকথিত মত অনুসারে পরমেশ্বর শিবের আরাধনা করেন এটি সঠিক, কিন্তু সেই শৈবমত যে পাষণ্ড মত তা কখনোই বেদসাপেক্ষ নয়, সুতরাং শৈবদের দানব বলাও যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ বেদোক্তমার্গ অনুসরণ কারী সর্বদাই ধার্মিক বলে বিবেচিত। তারা কখনোই নিন্দার যোগ্য নন।
শৈবরা ভস্মধারণ করলে যদি পতিত হয় তবে সেই বাক্যটি বেদ বিরুদ্ধ, কেননা এই পদ্মপুরাণই শৈবদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ , প্রমাণসহ নীচে দেয়া হল👇
দেবেষু চ সমস্তেষূ সমদৃষ্টিঃ শিবে রতঃ।
শতরুদ্রীয়জাপী চ সাগ্নিকশ্চাতিবাচক ॥৪১
যজুৰ্ব্বেদী বিশেষন পূজয়েং পুস্তকংসুধীঃ । শ্রীতালপত্রলিখিতং দেবলিপ্যন্বিতং শুভম্ ॥৪২
[রেফারেন্স : পদ্মপুরাণ/পাতালখণ্ড/অধ্যায় ৬৩]
সরলার্থ : যে ব্যক্তি নিজেকে শিবের প্রতি সমর্পিত করে সর্বত্র শিবসমান দর্শন করে শিবভক্ত হয়েছেন, শতরুদ্রীয়জাপী, সাগ্নিক, অতিসুবক্তা ও সুবুদ্ধিশালী সেই পূজ্য ব্যক্তিই প্রকৃত সুন্দর(সর্বোত্তম)। তিনি তালপত্রে দেবাক্ষর লিখিত সুন্দর পুস্তকের পূজা করিবেন। বিশেষত সেই ব্যক্তি যজুর্ব্বেদী(শতরুদ্রিয় পাঠকারী ব্যক্তি) হলে আরো উত্তম হয়ে থাকেন ॥৪১-৪২
এছাড়া অনেকে এটা বলতে পারেন যে এখানে তো ভগবান হর কে শ্রীবিষ্ণু রামনাম জপ করতে বলেছেন, তাহলে কি সত্যি সত্যিই ভগবান হর (মহাদেব) রাম নাম জপ করেন ?
চলুন এরও বিশ্লেষণ করে দেখা যাক স্বয়ং পদ্মপুরাণ থেকেই 👇
শঙ্করউবাচ্-
" ধ্যায়েনকিঞ্চিৎ গোবিন্দননমস্যেহকিঞ্চন ॥২৪৭
নোপাস্যেকিঞ্চনহরেনজপিষ্যেহকিঞ্চন
কিন্তু নাস্তিকজন্তুনাং প্ৰবৃত্ত্যৰ্থমিদংময়া ॥২৪৮"
[রেফারেন্স - পদ্মপুরাণ/পাতাল খন্ড/ ১১৪ নং অধ্যায়]
সরলার্থ : হে গোবিন্দ! বস্তুত আমি কারোরই ধ্যান করিনা, কাউকে প্রণাম করিনা, কাউকে উপাসনা করিনা এবং কারও জপ করিনা। নাস্তিকদেরকে এবং জগৎবাসিকে শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে আমি নিজ ইচ্ছায় নিজ বিধি নিয়মে আবদ্ধ হই মাত্র। কেননা আমিই পরমেশ্বর ॥২৪৭-২৪৮
পরমেশ্বর শিব শ্রীহরির প্রশ্নের উত্তরে বললেন যে, শিব কাউকে ধ্যান করে না বা প্রণাম করে না কারো উপাসনা করে না তিনি কারণ নাম জপও করে না শুধুমাত্র তিনি নাস্তিক ও অন্যান্য সমগ্র জগত বাসি কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি নিজের ইচ্ছেমতো নিজের বিধিতে তিনি আবদ্ধ হন অর্থাৎ সকলকে তিনি শুধুমাত্র শিক্ষা দেবার কার্যটুকু করেন,যা শিবেরই লীলামাত্র। তাই পরমেশ্বর শিব কখনোই রাম নাম জপ ও করেন না তিনি রাম কে প্রণাম ও করেন না তিনি রামের ধ্যান করেন না তিনি রামকে পুজো করেন না, তিনি শুধুমাত্র লীলাবশত নিজের ভক্তের উচ্চ প্রশংসা করেন মাত্র। কারণ তিনি তাঁর ভক্তদের প্রতি স্নেহ করেন এবং ভালবাসেন তাই তিনি স্নেহবশত তো তার ভক্তদের স্মরণ করে থাকেন বা তাদের গুণগান গেয়ে থাকেন।
🚩সিদ্ধান্ত : বিষ্ণু ও তার প্রত্যেক অবতার যে পরমেশ্বর শিবের আরাধনা করেন তা অবৈদিক নয় বরং তা বৈদিক ও এটিই সত্য। কিন্তু যারা এই ভেবে বসে আছেন যে, শৈবদের মোহিত করার জন্য বিষ্ণু ও তার অবতারেরা শিব আরাধনা করেন, তাদের এই মত বেদ বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে পূর্বেই। কেননা যে কথার আধারে শ্রীবিষ্ণু এই পরবর্তী কথাটি বলেছিলেন, সেই পূর্বোক্ত শ্লোকের যুক্তিই বেদ বিরুদ্ধ হয়ে খণ্ডিত হয়েছে। তাই উপরোক্ত সমস্ত তথ্যের আধারে শিবভক্তদের সর্বোত্তম ও বৈদিক ধর্মী বলেই প্রমান পাওয়া গেল।
পবিত্র শিব মহাপুরাণ ও লিঙ্গমহাপুরাণের বাক্যকে অমান্য করার জন্য বৈষ্ণবরা তামসিক হবার বুলি আওড়ায়, তারও সমাধান এখানে আছে, দেখে নিন ক্লিক করে 👇
শৈবপুরাণ সাত্ত্বিক, বৈষ্ণবপুরাণ গুলি তামসিক
হে শিবনিন্দুক বৈষ্ণবগণ,
আপনাদের এক হাজার জন বৈষ্ণবও একজন শৈবের সমান নয়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে দেখুন 👇
বৈষ্ণবদের থেকেও শ্রেষ্ঠ হল একজন শিবভক্ত শৈব
এবার কলিরচর বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্য কিছু বলি ,
শিবভক্তশৈবদের নামে নিন্দা করার পরিবর্তে তোমরা শ্রীহরির ভক্তিতে মগ্ন হও, তোমরা নিজেদেরকে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে গিয়ে শৈবদের নিন্দা করছো, আর সেই নিন্দাকে জোরালোতম করবার জন্য নিজেদের বৈষ্ণব শাস্ত্র প্রয়োগ করছো, অথচ শেষ পর্যন্ত বিষ্ণুবাক্যই বেদ বিরুদ্ধ প্রমাণিত হয়ে পড়ছে। যা তোমাদের জন্য সম্মানজনক নয়, সুতরাং শ্রেষ্ঠত্বের অভিমানের বশবর্তী না হয়ে নিজ ইষ্টের সেবায় মনযোগ দাও, এতে তোমাদেরও কল্যান, আমাদেরও শিবচিন্তায় বিঘ্ন ঘটবে না, আর সনাতন ধর্মের মান অক্ষুন্ন থাকবে।
যারা বুদ্ধিমান তারা উপরোক্ত আলোচনার তাৎপর্য বুঝতে সক্ষম হবেন।
✍️অপপ্রচার দমন - শ্রীকৌশিক রায় শৈবজী
©️কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
আরো দেখুন 👇
• পরমেশ্বর শিব কারোর ভজনা করেন না
• কলিযুগে হরিনাম ছাড়াও শিবনামে মুক্তি
তোর মুখে জুতোর বাড়ি, সকল শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা কারী, ঘোর অপরাধী মহা পাপী তোকে অসংখ্য ধিক্কার,, অসংখ্য অসংখ্য ধিক্কার
উত্তরমুছুনআন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ, যেখানে কেবলমাত্র বৈষ্ণব নিন্দা ছাড়া আর কোন কিছুই হয় না, এর প্রতিষ্ঠাতা একজন চরম পাপীষ্টই হবেন এবং প্রচারকরা % এ থেকে অনেক বেশি, এই সংস্থা যে আন্তর্জাতিক ক্ষমতা থাকলে তার মাত্র একটা প্রমান দেখা, পাপী!
উত্তরমুছুনকলির পদসেবক দাস হোলি তুই, সেই জন্যেই সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র র অপব্যাখ্যা করিস শুয়োরের বাচ্চা
উত্তরমুছুনআপনি সাক্ষাৎ বরাহ নন্দন
মুছুনপাপী ভন্ড শিবদ্বেষী বৈষ্ণব
নাস্তি শৈবাগ্রণীর্বিষ্ণো ॥
যো নিন্দন্তি মহাদেবং
নিন্দ্যমানং শৃণোতি বা।
তাবুভৌ নরকং যাতো
যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ।।
যো নিন্দন্তি মহাদেবং
উত্তরমুছুননিন্দ্যমানং শৃণোতি বা।
তাবুভৌ নরকং যাতো
যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ।।