শ্রীদক্ষিণামূর্তি পূজা বিধি (গুরুপূজা)

 


পরমেশ্বর শিবের দক্ষিণামূর্তি রূপ টি সকলের আদিগুরু বলে জগদবিখ্যাত। 

গুরুপূর্ণিমা তিথির শুভদিনে এই দক্ষিণামূর্তি প্রভুর আরাধনা করা হয়। বেদ তথা সমস্ত শাস্ত্রের জ্ঞান প্রদানকারী প্রভু শিবের এই দক্ষিণামূর্তি লীলামূর্তি সমস্ত গুরু পরম্পরার আদিগুরু রূপে প্রতিষ্ঠিত। 

চার রকমের গুরুর মধ্যে শিব‌ই হচ্ছেন অন্তিম ও সর্বোচ্চ গুরু । দক্ষিণামূর্তি হল সকল গুরুর‌ও গুরু । সেই প্রভু দক্ষিণামূর্তির পূজা বিধি সর্বপ্রথম ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) -এর পক্ষ থেকে আনা হল, সম্পূর্ণ পূজা বিধি লিখেছেন শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী। এর আগে কখনও সমগ্র ভারতেও এই পূজা পদ্ধতি প্রকাশ করা হয়নি। পূজা পদ্ধতিটি বেদমন্ত্র সমন্বিত, সুতরাং এটি বৈদিক পূজা ।


আরাধনার ফল : এই গুরু দক্ষিণামূর্তি শিব আরাধনা করে উচ্চকোটির বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, ঐশ্বর্য, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ হওয়ার আশীর্বাদ প্রাপ্ত করা সম্ভবপর হয়। প্রত্যেক বিদ্যার্থীগণ (ছাত্র-ছাত্রী ইত্যাদি) -এর এই প্রভু দক্ষিণামূর্তি শিবের আরাধনা করা উচিত। এই রূপের বিশেষত্ব হল - যদি কোনো ব্যক্তি এই দক্ষিণামূর্তি রূপকে নিজের গুরু মেনে নিয়ে নিত্য আরাধনা করে তবে সেই ব্যক্তি সমস্ত শাস্ত্রের মধ্যে থাকা অতি গোপনীয় ব্রহ্মজ্ঞান উপলব্ধি করতে সক্ষম হন, সেই ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে ধীরে ধীরে আপনভাবেই পরমজ্ঞান প্রকাশিত হতে শুরু করে, তখন সেই সৌভাগ্যসম্পন্ন ব্যক্তি শিবজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে ওঠে ও তিনি সমস্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত কে জেনে নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মজ্ঞানী হন, অন্তিমে মোক্ষ লাভ করেন ।

যাদের দীক্ষা সম্পন্ন হয়নি, অথবা যাদের গুরু নেই সেই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ শিবের এই দক্ষিণামূর্তি রূপকে নিজের গুরু মেনে নিয়ে আধ্যাত্মিক জীবনে শিব আরাধনা শুরু করতে পারেন। শিব‌ই গুরু রূপে জীবকে উদ্ধার করেন, তাই জগতের সকল সদ্ গুরু শিবের‌ই রূপ বলে মান্য করা হয়। দক্ষিণামূর্তি শিবের চিত্র না থাকলে শিবলিঙ্গেই পূজা করতে পারেন।


আরাধনার সময় : প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সকাল অথবা সন্ধ্যাকালে নিজ সময় ও সাধ্যমত করতে পারেন, গুরুপূর্ণিমা তিথিতে দক্ষিণামূর্তির পূজা করা মূল উদ্দেশ্য ।


॥ দক্ষিণামূর্তি পূজার নিয়মাবলী ॥  


পূজার উপকরণ : 

১) দক্ষিণামূর্তি শিবের একটি চিত্র (অথবা শিবলিঙ্গ),

(এই উপরোক্ত চিত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারেন)

২) ধূপ ও দীপ,

৩) চন্দন ও কিছু বেলপাতা, 

৪) নৈবেদ্য হিসেবে কিছু মিষ্টান্ন ও সাধ্যমত পাকা ফল,

৫) একটি সাদা গন্ধযুক্ত ফুলের মালা (সম্ভব হলে ১টি রুদ্রাক্ষের মালা)

৬) একগ্লাস পানীয় জল 

৭) একটি ছোট জলপূর্ণঘট (পিতল বা মাটির) ও তার সহিত একটি ৫টি পাতাযুক্ত আমপাতা, 

৮) কুমকুম অথবা সিঁদুর।

৯) কর্পূর ।

পূজার শুভারম্ভ : 

দক্ষিণামূর্তি শিবের পূজা দক্ষিণ দিকে ঘুরে বসে করতে হয়, দক্ষিণামূর্তির ছবিটি দক্ষিণ দিকে বসাবেন ।

পূজার শেষে প্রভুর চিত্র টি বাড়ির দক্ষিণদিকের দেওয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন। পূজার সময় নামিয়ে পূজা করতে পারেন‌ অথবা স্থায়ীভাবেও পূজার স্থানে রেখে দিতে পারেন।

স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ মালা ধারণ করে পূজার স্থানে উপস্থিত হয়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন রং মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে। এরপর ধূপ ও দীপ জ্বেলে সমস্ত উপকরণ গুলি সাজিয়ে দিন । 

এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ বিধি


✅ সর্বপ্রথম বৈদিক মন্ত্রে শিবস্মরণ করুন – 


ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈ রার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅এবার হাতজোড় করে শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –

ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।

যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ‌‌॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅ ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ ॥

✅ সর্ববিদ্যার ঈশ্বর পরমেশ্বর শিবের গুরু দক্ষিণামূর্তি স্বরূপকে স্মরণ করুন — ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ॥

ॐ নমঃ ভগবতে দক্ষিণামূর্তযে মেধাং প্রযচ্ছ স্বাহা 

(উত্তর কামিকাগমোক্ত মন্ত্র)


✅ দক্ষিণামূর্তির উদ্দেশ্যে ফুলের মালা প্রদান করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - 

মাল্যাদীনি সুগন্ধীনি মালত্যাদীনি বৈ প্রভো ।

ময়াহৃতানি পুষ্পাণি পূজার্থং প্রতিগৃহ্যাতাম্ ॥

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ, পুষ্পমালাং সমর্পয়ামি ।


✅ এবার চন্দন নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে প্রদান করুন –

সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো ।

ভক্ত্যা পরময়া শম্ভো সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥

ॐ নমঃ ভগবতে দক্ষিণামূর্তযে মেধাং প্রযচ্ছ স্বাহা 


✅ কুমকুম অথবা সিঁদুরের একটি করে ছোট ফোঁটা দিন দক্ষিণামূর্তি শিবের চার হাতে, তার মাথায় থাকা মুকুটেও একটি ফোটা দিন । 


✅ নৈবেদ্যে অর্থাৎ মিষ্টান্ন-ফলের পাত্র তুলে ধরে ভক্তি সহকারে বলুন - ॐ নমঃ ভগবতে দক্ষিণামূর্তযে মেধাং প্রযচ্ছ স্বাহা  । ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ, নৈবেদ্যং শিবার্পণমস্তু ।


এবার পাত্রটি নিচে রেখে হাতজোড় করে প্রভু শিবকে নৈবেদ্য গ্রহণ করে নেবার জন্য প্রার্থনা করুন । 


✅ বেলপাতা শিবের চরণে প্রদান করুন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে - 

ত্রিদলং ত্রিগুণাকারং ত্রিনেত্রং চ ত্রিয়ায়ুধম্ । ত্রিজন্মপাপসংহারম্ একবিল্বং শিবার্পণম্ ॥ 

ॐ নমঃ ভগবতে দক্ষিণামূর্তে মহ্যং মেধাং প্রজ্ঞাং প্রয়চ্ছ স্বাহা ।

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ বিল্বপত্রাণি ধারয়ামি ।


✅ শিব পার্বতীর উদ্দেশ্যে বেলপাতা প্রদান করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - ॐ হ্রীং শ্রীং সাম্বশিবায় তুভ্যং স্বাহা । 


✅ধূপ নিবেদন - এর জন্য হাতে ধূপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –

ॐ নমঃ কর্পর্দিনে চ ব্যুপ্তকেশায় চ নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চ নমো গিরিশায় চ শিপিবিষ্টায় চ নমো মীঢ়ুষ্টমায় চেষুমতে চ ।

ॐ নমঃ ভগবতে দক্ষিণামূর্তযে মেধাং প্রযচ্ছ স্বাহা 

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ, ধূপমাঘ্রাপয়ামি ॥


✅ দীপ নিবেদন - এর জন্য হাতে দীপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –

দীপং হি পরমং শম্ভো ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।

দত্তং গৃহাণ দেবেশ মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥

দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।

গৃহাণ পরমেশান মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥ 

দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বর । 

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ, দীপং সমর্পয়ামি ॥


✅এবার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দনযুক্ত কিছু গন্ধপুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবকে প্রদান করুন –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥

তাবকস্ত্বদ্ গতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।

ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥

ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।

ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্রভাে ॥ 

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে ।

রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ॥

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ, এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি । 


✅ দক্ষিণামূর্তি শিবের বৈদিক মন্ত্র দ্বারা ধ্যান করুন এই মন্ত্র পাঠ করার পর (নীচের বর্ণনা অনুযায়ী চোখ বন্ধ করে দক্ষিণামূর্তি শিবের কল্পনা করবেন) -


স্ফটিকরজতবর্ণং মৌক্তিকীমক্ষমালা মমৃতকলশবিদ্যাং জ্ঞানমুদ্রাং করাগ্রে ।

 দধতমুরগকশ্যং চন্দ্রচূড়ং ত্রিনেত্রং বিধৃতবিবিধভূষং দক্ষিণামূর্তিমীডে ॥ 

(দক্ষিণামূর্তি উপনিষদোক্ত ধ্যানমন্ত্র)

(অর্থ - আমি স্ফটিকমনি এবং রজতসদৃশ শুভ্র বর্ণ সম্পন্ন দক্ষিণামূর্তি পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করছি, যার হাতে ক্রমশঃ জ্ঞানমুদ্রা অমৃততত্বদায়িনী বিদ্যা তথা মুক্তের মালা রয়েছে, যিনি ত্রিনেত্রধারী, যার উন্নত মস্তকের উপর চন্দ্র নিবাস করছেন তথা যার কটিভাগে সর্প বিরাজমান এবং যিনি বিবিধ প্রকারের বেশ ধারণ করে থাকেন, আমি সেই প্রভু দক্ষিণামূর্তির ধ্যান করি ॥)


✅ ৯বার এই নবাক্ষর মন্ত্র উচ্চারণ করুন - ॐ দক্ষিণামূর্তিরতর ॐ  

✅ একটি বেলপাতা নিয়ে নিম্নোক্ত দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র ১২বার পাঠ করে শিব চরণে প্রদান করুন - ॐ হ্রীং শ্রীং সাম্বশিবায় তুভ্যং স্বাহা


✅ নিজ সদ্ বুদ্ধি প্রাপ্ত করবার জন্য প্রার্থনা করুন - মুদ্রাং ভদ্রার্থদাত্রীং স পরশুহরিণং বাহুভির্বাহুমেকং জান্বাসক্তং দধানো ভুজগবিলসমাবদ্ধকক্ষ্যো বটাধঃ ।

আসীনশ্চন্দ্রখণ্ডপ্রতিঘটিতজটাক্ষীরগৌরস্ত্রিনেত্রো দদ্যাদাদ্যঃ শুকাদ্যৈর্মুনিভিরভিবৃতো ভাবশুদ্ধিং ভবো নঃ ॥ 

(সরলভাবে প্রার্থনা করতে পারেন - যিনি এক হাতে অভয় মুদ্রা তথা দুই হাতে স্পর্শ এবং হরিণ (মৃগীমুদ্রা), একটি হাত জঙ্ঘার উপর রেখেছেন, যিনি বটবৃক্ষের নিচে বিরাজমান হয়ে আছেন, যিনি কটিভাগের উপর নাগরাজ কে ধারণ করেন তথা দ্বিতীয়া তিথির চন্দ্র যার জটাতে সুশোভিত থাকে। দুধের সমান গৌর বর্ণ, ত্রিনেত্র ধারী তথা শুক আদি মুনিগণের দ্বারা আবৃত ভগবান শঙ্করকে আমি ধ্যান করি । তিনি আমার ভাবনাকে শুদ্ধ করে সদ্ বুদ্ধি প্রদান করুন ॥)


✅এবার ১০৮ বার এই বৈদিক মন্ত্র জপ করুন মনে মনে -

 ॐ ব্লূং নমঃ হ্রীং ঐং দক্ষিণামূর্তয়ে জ্ঞানং দেহি স্বাহা ॥


✅ হাতে জলপূর্ণ ঘটটি আমপাতা সহ দুই হাতে ধরুন। বাম হাতের তালুর উপর ঘটটি রেখে ডানহাতের তালু দিয়ে ঘটের মুখটির উপর রেখে শিবের কাছে রক্ষা পাবার প্রার্থনা করুন -

ভস্মব্যাপাণ্ডরাঙ্গঃ শশিশকলধরো জ্ঞানমুদ্রাক্ষমালাবীণাপুস্তৈর্বিরাজৎকরকমলধরো যোগপট্টাভিরামঃ ।

ব্যাখ্যাপীঠে নিষণ্ণো মুনিবরনিকরৈঃ সেব্যমানঃ প্রসন্নঃ সব্যালঃ কৃত্তিবাসাঃ সততমবতু নো দক্ষিণামূর্তিরীশঃ ॥ 

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে ।

রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ॥ 

ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে তুভ্যং বটমূলপদং নিবাসিনে ধ্যানৈকনিরতাঙ্গায় নমঃ রুদ্রায় শম্ভবে ॐ

ॐ দক্ষিণামূর্তিরতর ॐ  

(সরলভাবে প্রার্থনা করতে পারেন - ভস্ম দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে সমগ্র শরীর শ্বেত বর্ণে উদ্ভাসিত, যিনি চন্দ্রকলা কে (মস্তকের উপর) ধারণ করে রেখেছেন, যিনি নিজের হস্তকমলে রুদ্রাক্ষ মালা, বীণা, পুস্তক, জ্ঞানমুদ্রা ধারণ করে রেখেছেন, যোগীগণের সম্মুখে পট্ট দ্বারা সুশোভিত, যিনি ব্যাখ্যাপীঠের ওপর বিরাজিত শ্রেষ্ঠ মুনিগণের দ্বারা সেবিত প্রসন্ন হয়ে মুদ্রাধারী, সর্পের দ্বারা সুশোভিত, ব্যাঘ্রচর্ম ধারী যিনি ভগবান দক্ষিণামূর্তি, সেই ভগবান সর্বদা আমাকে রক্ষা করুন ॥

হে রুদ্র তুমি মৃত্যুঞ্জয় তাইতো মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ আপনার শরণ নেয়, আপনার অঘোররূপী দক্ষিণমুখ যা দক্ষিণামূর্তি নামে বিখ্যাত, সেই রূপে আমার দিকে আপনার শুভদৃষ্টি প্রদানপূর্বক কৃপা করে সর্বদা আমাকে রক্ষা করুন ।

ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে তুভ্যং বটমূলপদং নিবাসিনে ধ্যানৈকনিরতাঙ্গায় নমঃ রুদ্রায় শম্ভবে ॐ

 ॐ দক্ষিণামূর্তিরতর ॐ  )

এই মন্ত্রপূত জল আমপাতার গুচ্ছ দ্বারা ভিজিয়ে নিজের মস্তকে ছিটিয়ে দিন, আশে পাশের সমস্ত উপকরণে ছিটিয়ে দিন। যখন বাড়ির বাইরে বের হবেন তখন এই জল মস্তকে ছিটিয়ে গুরু দক্ষিণামূর্তি শিবকে স্মরণ করে প্রণাম করে বের হবেন । এটি জ্ঞানের সাথে সাথে সুরক্ষা বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করে। সুতরাং এই ঘটের পরমপবিত্র জল রেখে দেবেন। এটিকে জ্ঞান কলশ বলে । 

যিনি প্রত্যহ দক্ষিণামূর্তি‌ শিবের ধ্যান পূর্বক তাঁর ৩৬ অক্ষর মন্ত্র তিনবার জপ করে হাতে ধরে ঘটের জলকে অভিমন্ত্রিত করে পান করবেন, তিনি একবছরের মধ্যেই সমগ্র শাস্ত্র সমূহের ব্যাখ্যায় নিপুণ হয়ে যাবেন। নীচে দেয়া হল মন্ত্রটি👇

[৩৬ অক্ষর মন্ত্র : ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে তুভ্যং বটমূলপদং নিবাসিনে ধ্যানৈকনিরতাঙ্গায় নমঃ রুদ্রায় শম্ভবে ॐ]


✅ যারা সঙ্গীত চর্চা করেন তারা নিজ সঙ্গীতের উন্নতির জন্য প্রার্থনা করুন - 

বীণাং করৈ পুস্তকমক্ষমালাং বিভ্রাণমভ্রাভগলং বরাঢ্যম্ ।

ফণীন্দ্রকক্ষ্যং মুনিভিঃ শুকাদ্যৈ সেব্যং বটাধঃ কৃতনীডমীডে ॥ 

ॐ হ্রীং শ্রীং সাম্বশিবায় তুভ্যং স্বাহা ।

(সরলভাবে প্রার্থনা করতে পারেন - যে ভগবান শংকর নিজের হাতে বীণা পুস্তক এবং অক্ষমালা ধারণ করে রেখেছেন, যিনি একটি হাতে অভয় মুদ্রা তথা ঘন ও ঘোর মেঘের ন্যায় যার কন্ঠপ্রদেশ সুশোভিত, যিনি শ্রেষ্ঠ থেকেও অতি শ্রেষ্ঠ, যার কটি ভাগ নাগরাজ দ্বারা শোভিত, যিনি বটবৃক্ষের নিচে বিরাজমান তথা শুক আদি মুনিগণ এর দ্বারা সে সেবিত সেই ভগবান শঙ্করের কাছে আমি প্রার্থনা করি ॥ ॐ হ্রীং শ্রীং সাম্বশিবায় তুভ্যং স্বাহা । 


✅ শাস্ত্রের মধ্যে থাকা অতি গোপনীয় মহাজ্ঞানরূপী ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করবার জন্য এই মন্ত্ররাজ নামক মহামন্ত্র জপ করুন ১০৮ বার -

ॐ নমো ভগবতে তুভ্যং বটমূলবাসিনে বাগীশায় মহাজ্ঞান দায়িনে মায়িনে নমঃ ॥ 

✅ অভিষ্ট সিদ্ধির জন্য প্রার্থনা পূর্বক এই মন্ত্র পাঠ করে কিছুক্ষণ ধ্যান করবেন -

মুদ্রাপুস্তকবহ্নিনাগবিলসদ্বাহুং প্রসন্নাননং মুক্তাহারবিভূষণং শশিকলা ভাস্বৎকিরীটোজ্জ্বলম্ ।

অজ্ঞানাপহমাদিমাদিমগিরামর্থং ভবানীপতিং ন্যগ্রোধান্তনিবাসিনং পরগুরুং ধ্যায়াম্যভীষ্টাপ্তবে ॥ 

(সরলভাবে প্রার্থনা করতে পারেন - 

যার হাতে অভয় মুদ্রা, পুস্তক এবং অগ্নিতুল্য মহাভয়ঙ্কর সর্প দ্বারা সুশোভিত, যার মুখমণ্ডল প্রসন্নতায় পরিপূর্ণ, মুক্তোর অলংকার দ্বারা সুশোভিত, চন্দ্রকলা দ্বারা মুকুট অধিক শোভা বর্ধন করছে, যিনি অন্ধকাররূপী অজ্ঞানের বিনাশকারী, যাকে শব্দ দ্বারাও সম্পূর্ণ জানা অসম্ভব,যিনি সকলের আদিপুরুষ (পরমব্রহ্ম), বটবৃক্ষের নীচে নিবাসকারী সেই পরমেশ্বর শিবের আমি ধ্যান করি আমার অভিষ্টপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ॥  )


🔥এবার হাতে ঘন্টা বাজিয়ে কর্পূর ধরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আরতি করুন ।


অতঃপর 🙏 হাত জোড় করে গুরু দক্ষিণামূর্তি শিবকে প্রনাম মন্ত্র দ্বারা প্রণাম করুন - 

অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্ ।

তদ্ পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ‌ ॥

অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া ।

চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ॥

গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর ।

গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ॥ 

নমো নিষ্কলরূপায় নমো নিষ্কলতেজসে।

নমঃ সকলনাথায় নমস্তে সকলাত্মনে।

নমঃ প্রণববাচ্যায় নমঃ প্রণবলিঙ্গিনে।

নমঃ সৃষ্ট্যাদিকর্ত্রে চ নমঃ পঞ্চমুখায় তে।। পঞ্চব্রহ্মস্বরূপায় পঞ্চকৃত্যায় তে নমঃ।

আত্মনে ব্রহ্মণে তুভ্যমনন্তগুণশক্তয়ে৷৷ সকলাকলরূপায় শম্ভবে গুরবে নমঃ।

ॐ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ ॐ


এবার শ্রী দক্ষিণামূর্তি স্তোত্র পাঠ করুন এখানে ক্লিক করে👉 শ্রীদক্ষিণামূর্তি স্তোত্র (স্কন্দমহাপুরাণোক্ত)

এছাড়াও যদি আপনি চান তবে 

দক্ষিমামূর্তি পঞ্চরত্ন পাঠ করতে পারেন এখানে ক্লিক করে 👉 দক্ষিণামূর্তি পঞ্চরত্নম্ স্তোত্রম্


☘️☘️দক্ষিণামূর্তির ভজন সঙ্গীত শুনতে পারেন - (তামিল ভাষাতে) 

👉 আনন্দম পরমান্দম (Arulodu Porul)

👉 গুরুদেবা গুরুদেবা (Anburuvana)

যদি আপনার কাছে ডমরু বা শিঙ্গা থাকে তবে তা বাজাতে বাজাতে শৈবধ্বনী দিন ।


🔥সব শেষে শ্রীনন্দীনাথ শৈবজীকৃত

 শৈবধ্বনী দিন -


এক অদ্বিতীয় সগুণ নির্গুণ পরমেশ্বর 

হর শঙ্কর কি........ জয়......


ব্রহ্মাবিষ্ণুসেবিত শক্তিপতি মহেশ্বর

প্রভু সদাশিব কি...... জয়......


বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ ইতিহাস পুরাণ 

আগম ধর্মশাস্ত্রবর্ণিত মহাদেব কি...... জয়.....


সন্তানপ্রতিপালনকারী সনাতন ধর্ম

প্রকাশকারী রুদ্রদেব কি...... জয়.......


ভক্তবৎসল আশ্রয়দাতা পরমপিতা

আশুতোষ ত্রিপুরারী কি....... জয়.......


শৈব হো মন.. শৈব হো তন.. শৈব হো জীবন..

শৈব হে ধর্ম.. শৈব হে কর্ম.. শৈব হে বর্ম...

শিব শিব শিব হর হর শঙ্কর হর নীলকন্ঠ মহাদেব

ॐ শান্তি শান্তি শান্তি

ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥


॥ দক্ষিণামূর্তি পূজা অর্থাৎ গুরুপূজা বিধি সম্পূর্ণ হল ॥


© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

  1. ওঁ দক্ষিণামূর্তায় নম নমঃ
    ওঁ নমঃ শিবায়🙏
    সর্বজ্ঞান দাতা দক্ষিণামূর্তি কি জয়🙏💙

    উত্তরমুছুন
  2. ওঁ নমঃ শিবায় 🙏🔱🚩🚩

    উত্তরমুছুন
  3. আমি উত্তমকুমার দাস বলছি... ওঁ গুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ🙏

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত