মাসিক শিবরাত্রি ব্রত বিধি (শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য কৃত)
ভূমিকা —
সকল ব্রতের মধ্যে রাজা বলা হয় পরমেশ্বর শিবের এই শিবরাত্রি ব্রত কে, শিবমহাপুরাণে শিবরাত্রি ব্রতকে ব্রতরাজ বলে উপাধি দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই ব্রতের সমান আর অন্য কোনো ব্রত নেই, শিবরাত্রি ব্রত সর্বশ্রেষ্ঠ। এই ব্রত পালন করলে মোক্ষলাভ হয়, মোক্ষ প্রাপ্তি করাই হল জীবের একমাত্র উদ্দেশ্য, তাই মোক্ষপ্রদায়ী এই ব্রতের মাহাত্ম্যের সমান আর কিছুই নেই। সারা বছরের প্রত্যেক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ‘শিবরাত্রি ব্রত’ পালিত হয় । অর্থাৎ বছরের ১২ টি মাসে ১২ টি শিবরাত্রি ব্রত হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের (চন্দ্র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঘ মাসের) কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি ‘মহাশিবরাত্রি ব্রত’ হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত।
পূর্বকালে আমি শিবমহাপুরাণে সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিবের মুখ থেকে বর্ণিত শিবরাত্রি ব্রত করবার প্রকৃত নিয়ম টি International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT -এর পক্ষ থেকে প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে যথার্থ নিয়মকে আমি সাজিয়ে মানুষের বোঝার সুবিধার্থে তুলে ধরেছিলাম, যা মহা শিবরাত্রি ব্রত করবার জন্য বছরে একবার করবার পক্ষে সুবিধাজনক ছিল। প্রকৃত পক্ষে ঐ নিয়মই হল মাসিক শিবরাত্রির ব্রত বিধি ।
- বৃহৎ বিধি 👉 শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা) ।
কিন্তু বর্তমান কালের অত্যাধিক ব্যস্ত জীবনে সাধারণত মানুষ ঐ প্রকৃত নিয়মে ব্রত করতে চাইলেও, সময় পায় না বা এত নিয়ম পালন করতে সমর্থ হন না। তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত অতিসংক্ষিপ্ত নিয়মে শিবরাত্রি ব্রত বিধি আমি শ্রী নন্দীনাথ শৈব - এই প্রবন্ধে উপস্থাপন করলাম। সকল শিব ভক্তদের জন্য এই বিধি অত্যন্ত সহজ সরল বলে গণ্য হবে। কিন্তু যাদের সময় ও সামর্থ্য আছে তারা প্রধান বিধিই অনুসরণ করে ব্রত পালন করবেন।
________________________________________________
প্রাথমিক কথা —
চারপ্রহরের পূজা মাটির চারটি শিবলিঙ্গ বানিয়ে তাতে আলাদা আলাদা ভাবে করতে হয়। তারপর প্রত্যেক প্রহরে প্রহরে আলাদাভাবে একটি করে মাটির শিবলিঙ্গ নিয়ে তাতে প্রহরের পূজা করবেন।
মনে রাখবেন - প্রথমপ্রহরে একটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন, দ্বিতীয় প্রহরে আরেকটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন, এইভাবেই চারপ্রহরে আলাদাভাবে আলাদা আলাদা ভাবে চারটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন। আপনার কাছে মাটির শিবলিঙ্গ না থাকলে সেক্ষেত্রে মূলপূজা ও চারপ্রহরের পূজাই একটি পাথরের শিবলিঙ্গেই করতে পারেন। মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানানোর সময় ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র জপ করবেন।
শিবরাত্রির সকালে করনীয় কর্ম :
✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –
কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।
সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥
এরপর সারাদিন উপবাসী থেকে স্নান করবেন নমঃ শিবায় জপ করে। স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন বৃক্ষে জল দেবেন এবং কিছু পশুপাখিদের(গরু/ছাগল/কুকুর/কাক/যেকোনো পাখি) এবং কীটপতঙ্গ(পিঁপড়ে ইত্যাদি) খাদ্যবস্তু দান করবেন। এবার হাত ধুয়ে নিন। এবার নিত্যদিনের মতোই সকালে শিব পূজা করে নিন। পূজা করার জন্য শিবালয় অর্থাৎ শিবমন্দিরেও যেতে পারেন। পূজা করার পর হাতে জল নিন ও শিবরাত্রির ব্রতসংকল্প করুন।
[যাদের শরীর অসুস্থ অথবা যাদের প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের প্রয়োজন রয়েছে তারা ঔষধ ও তারসাথে জল গ্রহন করে পূজা করবেন, যারা না খেয়ে পূজা করতে অসমর্থ, তারা খাদ্য গ্রহণ করেই পূজা করবেন]
✅ ব্রত সংকল্প করুন এই মন্ত্রে(অথবা সরল বাংলা ভাষাতেই বলুন) –
🛑 মন্ত্র –
দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।
কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব শিবরাত্রিব্রতং তব ॥
তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।
কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়াং কুর্বন্তু নৈব হি ॥
(অথবা এই সহজ ভাষায় সংকল্প করুন,
বলুন – দেবদেব মহাদেব হে নীলকন্ঠ আপনাকে নমস্কার করি। হে দেব পরমেশ্বর! আমি আপনার শিবরাত্রিব্রতের অনুষ্ঠান করতে চাই। হে মহেশ্বর প্রভু শিব ! আপনার প্রভাবে এই ব্রত যেন সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় এবং কামনা বাসনা আদি শত্রু যেন আমাকে পীড়া প্রদান না করে)
এরপর সেই জল সামনের মেঝেতে বা মাটিতে ছেড়ে প্রনাম করে উঠে পড়ুন এবং শিবরাত্রির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে পূজার স্থানে এনে রেখে দিন।
উপকরণ :
১) চারটি মাটির শিবলিঙ্গ বানিয়ে নেবেন, আগেও বানিয়ে রেখে দিতে পারেন। (যারা অপারগ তারা একটি পাথরের বা অন্য পদার্থ দিয়ে তৈরি যে কোনো উপযুক্ত শিবলিঙ্গে বা শিববিগ্রহতেই চার প্রহরপূজা করবেন)
২) বেলপাতা, ধুতরা ফুল, অপরাজিতা (নীলকন্ঠ) ফুল, অনান্য গন্ধযুক্তফুল, পাকা ফল, মিষ্টান্ন।
৩) বেশ কিছুটা গোটা আঁতপচাল, দূর্বা(কচিঘাস)
৪) পঞ্চামৃত (কাঁচা দুধ, দই, ঘি, মধু ও শর্করা (চিনিজল বা আঁখের রস)[কিছু পরিমান পঞ্চামৃত প্রহরপূজার জন্যও আলাদা করে রেখে দেবেন]
৫) সাদা চন্দন।
৬) ধূপ-দীপ ।
[জেনে রাখুন -উপরোক্ত উপাচার গুলি শিবমহাপুরাণ অনুসারে বলা হয়েছে, যদি কেউ এই সমস্ত কিছু দিতে অসমর্থও হন তবে মন খারাপ করবেন না, প্রভু পরমেশ্বর শিব আপনার হৃদয়ে থাকা শ্রদ্ধা, সততা ও ভক্তিতেই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রদান করা উপাচার গ্রহণ করবেন অতি প্রসন্ন হয়ে।যাদের সামর্থ্য থাকবে তারা উপরোক্ত উপাচার গুলি একটু অধিক পরিমাণে সংগ্রহ করে রাখবেন। যে উপাচার টি আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন না, সেই দ্রব্যটিকে জলের মধ্যে কল্পনা করে সেটি শিবলিঙ্গে কিছু টা ঢেলে দেবেন, তাতেই আপনার সেই অভাব থাকা দ্রব্যের দ্বারাও পূজা হয়ে যাবে।]
প্রথম প্রহর শুরু হবার আগে থেকেই সমস্ত উপাচার সাজিয়ে রেখে দেবেন। তারপর প্রথম প্রহরের কিছু আগে সময় আগে স্নান করে নেবেন, যদি জল স্নান করতে অসমর্থ হন তবে মন্ত্রস্নান করে নেবেন। এক্ষেত্রে শুধু দেহে জল ছিটিয়ে দিলেই স্নান সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
💥 মন্ত্রস্নানের পদ্ধতি দেখার জন্য এখানের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন 👉 শৈবমতে মন্ত্রস্নান ও সন্ধিপ্ৰোক্ষণ পদ্ধতি
এবার পুনরায় সুন্দর শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে সুন্দর করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র এঁকে নেবেন ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন। এবার শিবরাত্রির মূল পূজা সেরে নিয়ে তারপর সারারাত ধরে জেগে প্রহরপূজা করবেন।
💥ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করার নিয়মটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন 👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ পদ্ধতি
✅ রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন এই নিচের মন্ত্রটি উচ্চারণ করে 👇
রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।
নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥
॥ শিবরাত্রির ব্রতপূজার শুভারম্ভ ॥
প্রথম প্রহরের পূজা
সর্বপ্রথমে ধূপদীপ জ্বেলে দিন। এবার শিবস্মরণ করুন।
✅ সর্বপ্রথম শিবস্মরণ করুন –
ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈরার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
🟥এরপর আচমন করুন।
আচমন পদ্ধতিটি দেখার জন্য নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন 👉 শৈব আচমন বিধি ও তার মাহাত্ম্য (শৈব আগমোক্ত)
✅এবার হাতজোড় করে শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –
ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।
যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ॥
✅অতঃপর নিজ গুরু কে স্মরণ করুন । (যদি আপনি অদীক্ষিত ব্যক্তি হন তবে ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ ॥ শ্রী গুরবে নমঃ ॥
✅এবার একটি আসনের উপর একটি পাত্র রেখে তার মধ্যে বেলপাতা রেখে, তার মধ্যে একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে বসাবেন। তারপর হাত জোড় করে প্রণাম করবেন।
🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর সদশিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ঐ শিবলিঙ্গে ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –
কৈলাস শিখরস্থং চ পাৰ্বতী পতিমুত্তমম্ ।
যথোক্ত রূপিণং শম্ভুং নির্গুণং গুণরূপিণম্ ।
পঞ্চবক্ত্রং দশভুজং ত্রিনেত্ৰং বৃষভ ধ্বজম্ ॥
কর্পূরগৌরং দিব্যাঙ্গং চন্দ্ৰমৌলিং কপর্দিনম্ ।
ব্যাঘ্রচর্ম উত্তরীয়ং চ গজচর্ম অম্বরং শুভম্ ॥
বাসুক্যাদি দীপ্তিতাঙ্গং পিনাকাদ্য আয়ুধান্বিতম্ ।
সিদ্ধয়োঽষ্টৌ চ যস্য অগ্রে নৃত্যন্তীহ নিরন্তরম্ ॥
জয় জয়েতি শব্দৈশ্চ সেবিতং ভক্তপুঞ্জকৈঃ ।
তেজসা দুস সহেনৈব দুর্লক্ষ্যং দেব সেবিতম্ ॥
শরণ্যং সর্বসত্ত্বানাং প্রসন্ন মুখ পঙ্কজম্ ।
বেদৈঃ শাস্ত্ৰৈ যথাগীতং বিষ্ণু ব্ৰহ্মনুতং সদা ।
ভক্তবৎসল পরমানন্দং শিবম আবাহয়াম্ অহম্ ॥
(আপনি সাধারণ বাংলা ভাষাতেও এইভাবে আবাহন করতে পারেন - যিনি কৈলাস শিখরে নিবাস করেন, যিনি পার্বতী দেবীর পতি, যিনি সমস্ত দেবতাদের থেকে উত্তম, শাস্ত্রে যাঁর স্বরূপ যথাবৎ বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নির্গুণ হয়েও গুণরূপ, যাঁর পাঁচ মুখ, দশ হাত এবং প্রত্যেক মুখমণ্ডলে তিনটি করে নেত্র, যাঁর ধ্বজায় বৃষভ চিহ্ন অঙ্কিত, যাঁর অঙ্গকান্তি কর্পূরের ন্যায় গৌর, যিনি দিব্যরূপধারী, চন্দ্রের ন্যায় মুকুটে যিনি সুশোভিত ও যিনি মাথায় জটাজূট ধারণ করেছেন, যিনি হাতির চামড়া পরিধান করেন এবং ব্যাঘ্রচর্ম ধারণ করেন, যাঁর স্বরূপ শুভ, যাঁর অঙ্গে বাসুকি আদি নাগ জড়িয়ে আছে, যিনি পিনাক আয়ুধ (অস্ত্র) ধারণ করেন, যাঁর সামনে অষ্ট সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে থাকেন, ভক্তগণ জয়ধ্বনি করে যাঁর সেবায় ব্যাপৃত থাকে, দুঃসহ তেজের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন, যিনি দেবগণ দ্বারা সেবিত ও সমস্ত প্রাণীকে শরণ দিয়ে থাকেন, যাঁর মুখ প্রসন্নতায় উদ্ভাসিত, বেদ এবং শাস্ত্রসমূহে যাঁর মহিমা যথাসাধ্য গীত হয়েছে, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাও সর্বদা যাঁর স্তুতি করে থাকেন, যিনি পরমানন্দস্বরূপ, সেই ভক্তবৎসল শম্ভু শিবের আমি আবাহন করি ॥)
🟥ফল অথবা মিষ্টান্ন এবং পানীয় জল সহ জলের গ্লাস সাজিয়ে দিন প্রভু শিবের সমীপে। এবার এক একটি থালা প্রভুর সামনে দেখিয়ে বলুন –
ॐ শিবার্পণমস্তু ॥
ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥
হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত সমস্ত প্রসাদ আপনারা প্রসন্ন হয়ে গ্রহণ করে আমার উপর কৃপা করুন।
✅এবার একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে দুধ দ্বারা স্নান করাবেন 👇
🔥গরুর কাচা দুধ দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে
☘️মন্ত্র -
গোক্ষীরস্নানং দেবেশ গোক্ষীরেণ ময়া কৃতম্ ।
স্নপনং দেবদেবেশ গৃহাণ পরমেশ্বর ॥
ইদং স্নানীয়ং দুগ্ধং ॐ হৌং ঈশানায় নমঃ ॥\
ॐ নমঃ শিবায় ॥
অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে এই মন্ত্রে 👉 ॐ পশুপতয়ে নমঃ ॥ শিবলিঙ্গকে স্নান করান।
এবার কিছুটা ফুল হাতে নিয়ে অষ্টমূর্তির নাম উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে ফুল প্রদান করুন -
মন্ত্র - ॐ অষ্টমূর্তয়ে নমঃ ॥
এবার হাতে কিছু আঁতপচাল, চন্দন, ফুল, বেলপাতা ও দূর্বা নিয়ে অর্ঘ্যমন্ত্র বলে শিবলিঙ্গে নিবেদন করুন -
ॐ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজা জপ পরায়ণঃ ।
করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহণার্ঘ্যং মহেশ্বর ॥
✅ ধূপ, দীপ দেখিয়ে আরতি করুন।
✅প্রনাম করুন ।
✅চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন প্রভু শিবকে।
✅এবার ১০৮ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র - ॐ নমঃ শিবায় অথবা নিজ গুরুর দেয়া মন্ত্র জপ করুন ।
যতক্ষন না দ্বিতীয় প্রহর আরম্ভ হচ্ছে ততক্ষণ শিবনাম করুন, শিব মাহাত্ম্য পাঠ করুন, শ্রবণ করুন অথবা শ্রবণ করুন । ধ্বনী দিন ।
। প্রথম প্রহরের শিবারাধনা সম্পূর্ণ ।
🟥 দ্বিতীয় প্রহরের পূজা :
প্রথম প্রহরের পূজার সকল সামগ্রী একই রকম রাখবেন, নতুন করে কোনো নৈবেদ্য দিতে হবে না।
✅ আগের মতোই আরেকটি আসনের উপর একটি পাত্র রেখে তার মধ্যে বেলপাতা রেখে, তার উপরে একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে বসাবেন। তারপর হাত জোড় করে প্রণাম করবেন।
🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর সদশিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ঐ শিবলিঙ্গে ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –
কৈলাস শিখরস্থং চ পাৰ্বতী পতিমুত্তমম্ ।
যথোক্ত রূপিণং শম্ভুং নির্গুণং গুণরূপিণম্ ।
পঞ্চবক্ত্রং দশভুজং ত্রিনেত্ৰং বৃষভ ধ্বজম্ ॥
কর্পূরগৌরং দিব্যাঙ্গং চন্দ্ৰমৌলিং কপর্দিনম্ ।
ব্যাঘ্রচর্ম উত্তরীয়ং চ গজচর্ম অম্বরং শুভম্ ॥
বাসুক্যাদি দীপ্তিতাঙ্গং পিনাকাদ্য আয়ুধান্বিতম্ ।
সিদ্ধয়োঽষ্টৌ চ যস্য অগ্রে নৃত্যন্তীহ নিরন্তরম্ ॥
জয় জয়েতি শব্দৈশ্চ সেবিতং ভক্তপুঞ্জকৈঃ ।
তেজসা দুস সহেনৈব দুর্লক্ষ্যং দেব সেবিতম্ ॥
শরণ্যং সর্বসত্ত্বানাং প্রসন্ন মুখ পঙ্কজম্ ।
বেদৈঃ শাস্ত্ৰৈ যথাগীতং বিষ্ণু ব্ৰহ্মনুতং সদা ।
ভক্তবৎসল পরমানন্দং শিবম আবাহয়াম্ অহম্ ॥
(আপনি সাধারণ বাংলা ভাষাতেও এইভাবে আবাহন করতে পারেন - যিনি কৈলাস শিখরে নিবাস করেন, যিনি পার্বতী দেবীর পতি, যিনি সমস্ত দেবতাদের থেকে উত্তম, শাস্ত্রে যাঁর স্বরূপ যথাবৎ বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নির্গুণ হয়েও গুণরূপ, যাঁর পাঁচ মুখ, দশ হাত এবং প্রত্যেক মুখমণ্ডলে তিনটি করে নেত্র, যাঁর ধ্বজায় বৃষভ চিহ্ন অঙ্কিত, যাঁর অঙ্গকান্তি কর্পূরের ন্যায় গৌর, যিনি দিব্যরূপধারী, চন্দ্রের ন্যায় মুকুটে যিনি সুশোভিত ও যিনি মাথায় জটাজূট ধারণ করেছেন, যিনি হাতির চামড়া পরিধান করেন এবং ব্যাঘ্রচর্ম ধারণ করেন, যাঁর স্বরূপ শুভ, যাঁর অঙ্গে বাসুকি আদি নাগ জড়িয়ে আছে, যিনি পিনাক আয়ুধ (অস্ত্র) ধারণ করেন, যাঁর সামনে অষ্ট সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে থাকেন, ভক্তগণ জয়ধ্বনি করে যাঁর সেবায় ব্যাপৃত থাকে, দুঃসহ তেজের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন, যিনি দেবগণ দ্বারা সেবিত ও সমস্ত প্রাণীকে শরণ দিয়ে থাকেন, যাঁর মুখ প্রসন্নতায় উদ্ভাসিত, বেদ এবং শাস্ত্রসমূহে যাঁর মহিমা যথাসাধ্য গীত হয়েছে, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাও সর্বদা যাঁর স্তুতি করে থাকেন, যিনি পরমানন্দস্বরূপ, সেই ভক্তবৎসল শম্ভু শিবের আমি আবাহন করি ॥)
🟥 প্রভু শিবের সামনে হাত জোড় বলুন –
ॐ শিবার্পণমস্তু ॥
ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥
হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত উপাসনা আপনারা প্রসন্ন হয়ে স্বীকার করে আমার উপর কৃপা করুন।
✅এবার একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে দুধ দ্বারা স্নান করাবেন 👇
🔥দই দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে
☘️মন্ত্র -
দধ্না চৈব ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।
গৃহাণ চ ময়া দত্তং সুপ্রসন্নো ভবাদ্য বৈ ॥
ইদং স্নানীয়ং দধি ॐ হৌং অঘোরায় নমঃ ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে এই মন্ত্রে 👉 ॐ পশুপতয়ে নমঃ ॥ শিবলিঙ্গকে স্নান করান।
এবার কিছুটা ফুল হাতে নিয়ে অষ্টমূর্তির নাম উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে ফুল প্রদান করুন -
মন্ত্র - ॐ অষ্টমূর্তয়ে নমঃ ॥
এবার হাতে কিছু আঁতপচাল, চন্দন, ফুল, বেলপাতা ও দূর্বা নিয়ে অর্ঘ্যমন্ত্র বলে শিবলিঙ্গে নিবেদন করুন -
ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্বপাপহরায় চ ।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং প্রদীদ উমায় সহ ॥
✅ ধূপ, দীপ দেখিয়ে আরতি করুন।
✅প্রনাম করুন ।
✅চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন প্রভু শিবকে।
✅এবার ২১৬ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র - ॐ নমঃ শিবায় অথবা নিজ গুরুর দেওয়া মন্ত্র জপ করুন ।
✅এবার শিবরাত্রির ব্রতকথা পাঠ করুন। এখানে ক্লিক করে 👉 শিবরত্রি ব্রতকথা
। দ্বিতীয় প্রহরের শিবারাধনা সম্পূর্ণ ।
🟥 তৃতীয় প্রহরের পূজা :
আগের প্রহরের পূজার সকল সামগ্রী একই রকম রাখবেন, নতুন করে কোনো নৈবেদ্য দিতে হবে না।
✅ আগের মতোই আরেকটি আসনের উপর একটি পাত্র রেখে তার মধ্যে বেলপাতা রেখে, তার উপরে একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে বসাবেন। তারপর হাত জোড় করে প্রণাম করবেন।
🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর সদশিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ঐ শিবলিঙ্গে ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –
কৈলাস শিখরস্থং চ পাৰ্বতী পতিমুত্তমম্ ।
যথোক্ত রূপিণং শম্ভুং নির্গুণং গুণরূপিণম্ ।
পঞ্চবক্ত্রং দশভুজং ত্রিনেত্ৰং বৃষভ ধ্বজম্ ॥
কর্পূরগৌরং দিব্যাঙ্গং চন্দ্ৰমৌলিং কপর্দিনম্ ।
ব্যাঘ্রচর্ম উত্তরীয়ং চ গজচর্ম অম্বরং শুভম্ ॥
বাসুক্যাদি দীপ্তিতাঙ্গং পিনাকাদ্য আয়ুধান্বিতম্ ।
সিদ্ধয়োঽষ্টৌ চ যস্য অগ্রে নৃত্যন্তীহ নিরন্তরম্ ॥
জয় জয়েতি শব্দৈশ্চ সেবিতং ভক্তপুঞ্জকৈঃ ।
তেজসা দুস সহেনৈব দুর্লক্ষ্যং দেব সেবিতম্ ॥
শরণ্যং সর্বসত্ত্বানাং প্রসন্ন মুখ পঙ্কজম্ ।
বেদৈঃ শাস্ত্ৰৈ যথাগীতং বিষ্ণু ব্ৰহ্মনুতং সদা ।
ভক্তবৎসল পরমানন্দং শিবম আবাহয়াম্ অহম্ ॥
(আপনি সাধারণ বাংলা ভাষাতেও এইভাবে আবাহন করতে পারেন - যিনি কৈলাস শিখরে নিবাস করেন, যিনি পার্বতী দেবীর পতি, যিনি সমস্ত দেবতাদের থেকে উত্তম, শাস্ত্রে যাঁর স্বরূপ যথাবৎ বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নির্গুণ হয়েও গুণরূপ, যাঁর পাঁচ মুখ, দশ হাত এবং প্রত্যেক মুখমণ্ডলে তিনটি করে নেত্র, যাঁর ধ্বজায় বৃষভ চিহ্ন অঙ্কিত, যাঁর অঙ্গকান্তি কর্পূরের ন্যায় গৌর, যিনি দিব্যরূপধারী, চন্দ্রের ন্যায় মুকুটে যিনি সুশোভিত ও যিনি মাথায় জটাজূট ধারণ করেছেন, যিনি হাতির চামড়া পরিধান করেন এবং ব্যাঘ্রচর্ম ধারণ করেন, যাঁর স্বরূপ শুভ, যাঁর অঙ্গে বাসুকি আদি নাগ জড়িয়ে আছে, যিনি পিনাক আয়ুধ (অস্ত্র) ধারণ করেন, যাঁর সামনে অষ্ট সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে থাকেন, ভক্তগণ জয়ধ্বনি করে যাঁর সেবায় ব্যাপৃত থাকে, দুঃসহ তেজের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন, যিনি দেবগণ দ্বারা সেবিত ও সমস্ত প্রাণীকে শরণ দিয়ে থাকেন, যাঁর মুখ প্রসন্নতায় উদ্ভাসিত, বেদ এবং শাস্ত্রসমূহে যাঁর মহিমা যথাসাধ্য গীত হয়েছে, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাও সর্বদা যাঁর স্তুতি করে থাকেন, যিনি পরমানন্দস্বরূপ, সেই ভক্তবৎসল শম্ভু শিবের আমি আবাহন করি ॥)
🟥 প্রভু শিবের সামনে হাত জোড় বলুন –
ॐ শিবার্পণমস্তু ॥
ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥
হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত উপাসনা আপনারা প্রসন্ন হয়ে স্বীকার করে আমার উপর কৃপা করুন।
✅এবার একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে দুধ দ্বারা স্নান করাবেন 👇
🔥ঘি দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে
☘️মন্ত্র -
সর্পিষা চ ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।
গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ॥
ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ॐ হৌং বামদেবায় নমঃ ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে এই মন্ত্রে 👉 ॐ পশুপতয়ে নমঃ ॥ শিবলিঙ্গকে স্নান করান।
এবার কিছুটা ফুল হাতে নিয়ে অষ্টমূর্তির নাম উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে ফুল প্রদান করুন -
মন্ত্র - ॐ অষ্টমূর্তয়ে নমঃ ॥
এবার হাতে কিছু আঁতপচাল, চন্দন, ফুল, বেলপাতা ও দূর্বা নিয়ে অর্ঘ্যমন্ত্র বলে শিবলিঙ্গে নিবেদন করুন -
ॐ দুঃখ দারিদ্র্য শোকেন দগ্ধো অহং পার্বতীপ্রিয় ।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে ॥
✅ ধূপ, দীপ দেখিয়ে আরতি করুন।
✅প্রনাম করুন ।
✅চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন প্রভু শিবকে।
✅এবার ৪৩২ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র - ॐ নমঃ শিবায় অথবা নিজ গুরুর দেওয়া মন্ত্র জপ করুন ।
✅ এবার (যদি সম্ভব হয় তবে) বৈদিক শতরুদ্রিয় পাঠ করুন এখানে ক্লিক করে 👉 শতরুদ্রিয় পাঠ
✅পাঠের শেষে পরমেশ্বর শিবের নামে জয়ধ্বনী অবশ্যই দেবেন।
। তৃতীয় প্রহরের শিবারাধনা সম্পূর্ণ ।
🟥 চতুর্থ প্রহরের পূজা :
আগের প্রহরের পূজার সকল সামগ্রী একই রকম রাখবেন, নতুন করে কোনো নৈবেদ্য দিতে হবে না।
✅ আগের মতোই আরেকটি আসনের উপর একটি পাত্র রেখে তার মধ্যে বেলপাতা রেখে, তার উপরে একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে বসাবেন। তারপর হাত জোড় করে প্রণাম করবেন।
🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর সদশিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ঐ শিবলিঙ্গে ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –
কৈলাস শিখরস্থং চ পাৰ্বতী পতিমুত্তমম্ ।
যথোক্ত রূপিণং শম্ভুং নির্গুণং গুণরূপিণম্ ।
পঞ্চবক্ত্রং দশভুজং ত্রিনেত্ৰং বৃষভ ধ্বজম্ ॥
কর্পূরগৌরং দিব্যাঙ্গং চন্দ্ৰমৌলিং কপর্দিনম্ ।
ব্যাঘ্রচর্ম উত্তরীয়ং চ গজচর্ম অম্বরং শুভম্ ॥
বাসুক্যাদি দীপ্তিতাঙ্গং পিনাকাদ্য আয়ুধান্বিতম্ ।
সিদ্ধয়োঽষ্টৌ চ যস্য অগ্রে নৃত্যন্তীহ নিরন্তরম্ ॥
জয় জয়েতি শব্দৈশ্চ সেবিতং ভক্তপুঞ্জকৈঃ ।
তেজসা দুস সহেনৈব দুর্লক্ষ্যং দেব সেবিতম্ ॥
শরণ্যং সর্বসত্ত্বানাং প্রসন্ন মুখ পঙ্কজম্ ।
বেদৈঃ শাস্ত্ৰৈ যথাগীতং বিষ্ণু ব্ৰহ্মনুতং সদা ।
ভক্তবৎসল পরমানন্দং শিবম আবাহয়াম্ অহম্ ॥
(আপনি সাধারণ বাংলা ভাষাতেও এইভাবে আবাহন করতে পারেন - যিনি কৈলাস শিখরে নিবাস করেন, যিনি পার্বতী দেবীর পতি, যিনি সমস্ত দেবতাদের থেকে উত্তম, শাস্ত্রে যাঁর স্বরূপ যথাবৎ বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নির্গুণ হয়েও গুণরূপ, যাঁর পাঁচ মুখ, দশ হাত এবং প্রত্যেক মুখমণ্ডলে তিনটি করে নেত্র, যাঁর ধ্বজায় বৃষভ চিহ্ন অঙ্কিত, যাঁর অঙ্গকান্তি কর্পূরের ন্যায় গৌর, যিনি দিব্যরূপধারী, চন্দ্রের ন্যায় মুকুটে যিনি সুশোভিত ও যিনি মাথায় জটাজূট ধারণ করেছেন, যিনি হাতির চামড়া পরিধান করেন এবং ব্যাঘ্রচর্ম ধারণ করেন, যাঁর স্বরূপ শুভ, যাঁর অঙ্গে বাসুকি আদি নাগ জড়িয়ে আছে, যিনি পিনাক আয়ুধ (অস্ত্র) ধারণ করেন, যাঁর সামনে অষ্ট সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে থাকেন, ভক্তগণ জয়ধ্বনি করে যাঁর সেবায় ব্যাপৃত থাকে, দুঃসহ তেজের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন, যিনি দেবগণ দ্বারা সেবিত ও সমস্ত প্রাণীকে শরণ দিয়ে থাকেন, যাঁর মুখ প্রসন্নতায় উদ্ভাসিত, বেদ এবং শাস্ত্রসমূহে যাঁর মহিমা যথাসাধ্য গীত হয়েছে, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাও সর্বদা যাঁর স্তুতি করে থাকেন, যিনি পরমানন্দস্বরূপ, সেই ভক্তবৎসল শম্ভু শিবের আমি আবাহন করি ॥)
🟥 প্রভু শিবের সামনে হাত জোড় বলুন –
ॐ শিবার্পণমস্তু ॥
ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥
হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত উপাসনা আপনারা প্রসন্ন হয়ে স্বীকার করে আমার উপর কৃপা করুন।
✅এবার একটি মাটির (বা অন্য) শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে দুধ দ্বারা স্নান করাবেন 👇
🔥মধু দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে
☘️মন্ত্র -
ইদং মধু ময়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ।
গৃহাণ ত্বং হি দেবেশ মম শান্তিপ্রদো ভব ॥
ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ॐ হৌং বামদেবায় নমঃ ॥
ইদং স্নানীয়ং মধু ॐ হৌং সদ্যোজাতায় নমঃ ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে এই মন্ত্রে 👉 ॐ পশুপতয়ে নমঃ ॥ শিবলিঙ্গকে স্নান করান।
এবার কিছুটা ফুল হাতে নিয়ে অষ্টমূর্তির নাম উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে ফুল প্রদান করুন -
মন্ত্র - ॐ অষ্টমূর্তয়ে নমঃ ॥
এবার হাতে কিছু আঁতপচাল, চন্দন, ফুল, বেলপাতা ও দূর্বা নিয়ে অর্ঘ্যমন্ত্র বলে শিবলিঙ্গে নিবেদন করুন -
ॐ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্করঃ ।
শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে ॥
✅প্রনাম করুন ।
✅চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন প্রভু শিবকে।
✅এবার ৮৬৪ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র - ॐ নমঃ শিবায় অথবা নিজ গুরুর দেওয়া মন্ত্র জপ করুন ।
✅ এবার শিবসম্পর্কিত নৃত্য অথবা শিবসঙ্গীত গায়ন করুন, শৈবগুরুর বানী পাঠ করুন, শিবমহাপুরাণ ও শিবগীতা পাঠ করুন অথবা অনান্য যেকোনো শৈবশাস্ত্র পাঠ করুন, শিব মাহাত্ম্য পাঠ করুন, শিবনামে মত্ত হোন ।
💥 বিভিন্ন শিবসঙ্গীত শ্রবণ করতে পারেন, এখানে শিবসঙ্গীতের লিস্ট দেওয়া হল , ক্লিক করে শুনতে পারবেন - শিবসঙ্গীতসমূহ
✅পাঠের শেষে ধ্বনী অবশ্যই দেবেন।
ধ্বনি দিন জোরে জোরে এভাবে -
শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য কৃত শিবধ্বনী :
এক অদ্বিতীয় সগুণ নির্গুণ পরমেশ্বর
হর শঙ্কর কি........ জয়......
ব্রহ্মাবিষ্ণুসেবিত শক্তিপতি মহেশ্বর
প্রভু সদাশিব কি...... জয়......
বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ ইতিহাস পুরাণ
আগম ধর্মশাস্ত্রবর্ণিত মহাদেব কি...... জয়.....
সন্তানপ্রতিপালনকারী সনাতন ধর্ম
প্রকাশকারী রুদ্রদেব কি...... জয়.......
ভক্তবৎসল আশ্রয়দাতা পরমপিতা
আশুতোষ ত্রিপুরারী কি....... জয়.......
শৈব হো মন.. শৈব হো তন.. শৈব হো জীবন..
শৈব হে ধর্ম.. শৈব হে কর্ম.. শৈব হে বর্ম...
শিব শিব শিব হর হর শঙ্কর হর নীলকন্ঠ মহাদেব
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
ॐ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।
ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥
হর হর মহাদেব ॥
হর হর মহাদেব ॥
ॐ নমঃ শিবায় 🙏
। চতুর্থ প্রহরের শিবারাধনা সম্পূর্ণ হল ।
এভাবেই সমগ্র রাত্রি শিবকর্মে শিবনামে জেগে থেকে সময় অতিবাহিত করবেন মহাআনন্দে। শিবরাত্রির মূল উদ্দেশ্য ই হল উপবাস থেকে সারারাত্র জাগরণ করা।
যতক্ষণ না সূর্য উদয় না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে মহা আনন্দে মেতে উঠুন।
🟥সূর্যোদয় হলে স্নান করে ত্রিপুণ্ড্র রুদ্রাক্ষ ধারণ করে নিত্য দিনের মতো আরো একবার শিব পূজা করবেন। এটি আপনার ঘরে প্রতিষ্ঠিত শিব লিঙ্গে করবেন।
🔥শর্করা(আখের রস/চিনিজল) দ্বারা ঐ শিবলিঙ্গে স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে ।
☘️মন্ত্র -
সিতয়া দেবদেবেশ স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।
গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তাং সুপ্রসন্নো ভব প্রভো ॥
ইদং স্নানীয়ং শর্করা ॐ তৎপুরুষায় নমঃ ॥
ॐ নমঃ শিবায় ॥
অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে এই মন্ত্রে 👉 ॐ পশুপতয়ে নমঃ ॥ শিবলিঙ্গকে স্নান করান।
🙏জীবরূপী শিবসেবা : এরপর সকাল সকাল পাঁচ জন শিবভক্তকে বা পাঁচজন শিশুকে অথবা পাঁচজন গরীব মানুষ (অসমর্থ হলে অন্তত একজনকে) কে পেট ভরে খাওয়াবেন, নিজ সাধ্য অনুযায়ী কিছু দক্ষিণাও দেবেন দান হিসেবে। অথবা শুধু পশু পাখি কে খেতে দেবেন এবং বৃক্ষে জল প্রদান করবেন। এটির মাধ্যমে জীবরূপী শিবের সেবা করা সম্পন্ন হল। সামর্থ্য থাকলে মনুষ্য ও পশুপাখি ও বৃক্ষ সকলেরই সেবা করবেন। এতে পরমেশ্বর শিব অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে যান।
🟥এরপর পরমেশ্বর শিবের কাছে এসে হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করবেন -
অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া ।
কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥
তাবকস্ত্বদ্ গতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।
ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥
ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।
ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্রভাে ॥
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।
ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ ॥
✅এবার পারণমন্ত্র পাঠ করুন - ॐ সংসারক্লেশদগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ সুমুখোনাথ জ্ঞানদৃষ্টি প্ৰদো ভব৷৷
অতঃপর ব্রত সম্পূর্ণ করার জন্য পরমেশ্বর শিবের কাছে প্রার্থনা করুন -
তাবকস্ ত্বদ্গত প্রাণস্ ত্বচ্চিত্ত অহং সদা মৃড ।
কৃপানিধে ইতি জ্ঞাত্বা যথা যোগ্যং তথা কুরু ॥
অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপপূজাদিকং ময়া ।
কৃপানিধি ত্বাজ্ জ্ঞাত্বৈব ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥
অনেনৈব উপবাসেন যজ্জাতং ফলমেব চ ।
তনৈব প্রীয়তাং দেবঃ শঙ্করঃ সুখদায়কঃ ॥
কুলে মম মহাদেব ভজনং তেঽস্তু সর্বদা ।
মাভূত্তস্য কুলে জন্ম যত্র ত্বং নহি দেবতা ॥
দেবদেব মহাদেব শরণাগতবৎসল ।
ব্রতেনানেন দেবেশ কৃপাং কুরু মমোপরি ॥
ময়া ভক্ত্যনুসারেণ ব্রতমেতৎ কৃতং শিব ।
ন্যূনং সম্পূর্ণতাং যাতু প্রসাদাত্তব শঙ্কর ॥
ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে ।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর ॥
(অথবা বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এইভাবে -
‘সুখদায়ক কৃপানিধান শিব ! আমি আপনারই ! আমার প্রাণ আপনাতেই নিবিষ্ট এবং আমার চিত্ত সর্বদা আপনাকেই চিন্তা করে। তা জেনে আপনি যা উচিত মনে করেন, তাই করুন। ভূতনাথ ! আমি জেনে বা না জেনে যে জপ বা পূজাদি করেছি,
হে দয়াসাগর !
তার দ্বারা আপনি আমার ওপর প্রসন্ন হোন। উপবাসব্রততে যে ফল হয়েছে, সুখদায়ক ভগবান শংকর তাতে আমার ওপর প্রসন্ন হোন।
হে পরমেশ্বর সদাশিব ! হে মহাদেব!
আমার কুলে যেন সদাই আপনার ভজন হতে থাকে। যে কুলে আপনি ইষ্টদেবতা নন, সেখানে যেন কখনও আমার জন্ম না হয়।'
‘দেবদেব ! মহাদেব ! শরণাগতবৎসল ! দেবেশ্বর ! এই ব্রত দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে আপনি আমাকে কৃপা করুন।
শিব শংকর !
আমি ভক্তিভাবে এই ব্রত পালন করেছি। এতে যা ত্রুটি থেকে গেছে, তা যেন আপনার কৃপাপ্রসাদে পূর্ণ হয়ে যায়। হে শঙ্কর ! আমি জেনে বা না জেনে যে জপ-পূজা ইত্যাদি করেছি, তা যেন আপনার কৃপাতে সফল হয়।'
সাক্ষাৎ ॐকারের ঈশ্বর যিনি, যিনি তিনকারণের হেতু, সেই শান্ত পরমপ্রভু শিবকে আমি প্রণাম করি, আমি নিবেদন করি আমার আত্মা আপনার কাছে, কারণ, হে পরমেশ্বর ! আপনিই আমার পরম ও অন্তিম গতি ॥ )
এবার প্রভু শিবের মহাপ্রসাদকে প্রণাম করে গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করে নিত্য দিনের ন্যায় আহার গ্রহণ করতে পারবেন।
💥 পূজার শেষে চতুর্দশী তিথি সমাপ্ত হয়ে গেলে মাটির শিবলিঙ্গ গুলি জলে(নদী/পুকুর প্রভৃতি) বিসর্জন করে দেবেন। ধ্বনী দেবেন বিসর্জন করার সময়।
॥ শিবরাত্রির ব্রতপূজা এখানেই সুসম্পন্ন হল ॥
☝যে সমস্ত অপকর্ম থেকে বিরত থাকবেন :
১)মিথ্যাচার করবেন না,
২)বাজে চিন্তা করবেন না,
৩)বাজে ভাষা প্রয়োগ করবেন না,
৪)কারোর অপকার করবেন না,
৫)মাদকদ্রব্য সেবন করবেন না,
৬)স্ত্রী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন,
৭)পশুপাখিকে পীড়া দেবেন না অথবা হত্যা করবেন না,
৮)অকারণে বৃক্ষকে পীড়া দেবেন না,
৯)ঘর থেকে কখনো ভিক্ষুক কে খালি হাতে ফেরাবেন না,
১০)বাচ্চাদের বিরক্ত করবেন না।
১১) পূজায় গাঁজা প্রদান করবেন না।
🌞যা করলে আপনার ব্রতের ফল পাওয়া সহজ হবে তথা আরো বেশি ফলদায়ক হবে :
১)মাতা পিতার প্রতি বিনয়ী হয়ে তাদের শিব-শিবা রূপে দেখবেন এবং তাদের সাথে সদব্যবহার করবেন,
২)পশুপাখিদের খাদ্য প্রদান করবেন,
৩)সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন,
৪)দরিদ্র মানুষের সহায়তা করবেন প্রসন্ন ভাবে,
৫)সর্বদা শিবনাম হৃদয়ে ধারণ করে সবার উপকারের কথা চিন্তা করবেন, নচেৎ ব্রতের ফল তো নষ্ট হবেই বরং উল্টো ফল হতে পারে।
অতএব, সর্বদা জগৎ কল্যাণের চিন্তা করবেন।
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর মহাদেব ॥
[শিবমহাপুরাণ অনুসারে সংক্ষিপ্ত শিবরাত্রি ব্রত বিধি উপস্থাপন করা হয়েছে]
🌷ব্রতপূজা সংগ্রহে ও লেখনীতে - শ্রীগুরু নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী
© কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন