রুদ্রাক্ষ ধারণ মালা শোধন পদ্ধতি
রুদ্রাক্ষ শোধন ও ধারণের পূর্বের কিছু কথা –
⭕রুদ্রাক্ষ বা রুদ্রাক্ষের মালা পরিধানের আগে অবশ্যই তা শুদ্ধ করতে হবে। অশোধিত রুদ্রাক্ষ ধারন করলে সে নরকগামী হবে বলছে শিবমহাপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতা এবং স্কন্দপুরাণ।
⭕রুদ্রাক্ষ মালা অথবা শুধুমাত্র রুদ্রাক্ষ এই পদ্ধতিতেই শোধন করতে পারবেন।
⭕ একবার শোধন করে নিয়ে প্রতিদিনই ধারণ করার সময় শুধু ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র বা রুদ্রগায়ত্রী বা
রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।
নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥
মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতেই ধারণ করবেন।
রুদ্রাক্ষটি অবশ্যই ছয় মাস অন্তর একবার পুনরায় শোধন করে নেবেন। এতে রুদ্রাক্ষ মালার কার্যকারীতা বজায় থাকে।
⭕রাতে শোবার সময় রুদ্রাক্ষ একটি পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে রাখবেন।
⭕প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন।
⭕প্রতিদিন অন্তত ১০৮বার ॐনমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করবেন ও নিত্যদিন শিবপূজা করবেন।
⭕রুদ্রাক্ষমালা ভেঙ্গে বা ফেটে গেলে নূতন রুদ্রাক্ষ মালা শোধন করে ধারণ করবেন।
⭕ধারণ করার রুদ্রাক্ষমালাতে কখনো জপ করবেন না। কারণ জপের জন্য রুদ্রাক্ষ মালা এবং ধারণ করার জন্য রুদ্রাক্ষের মালা দুটিই ভিন্ন।
🔘যে কোনও শুভ দিনে বা কোনও সোমবার সকালে স্নান, শৌচাদি সেরে পরিষ্কার পোশাক পরে গঙ্গা জল দিয়ে রুদ্রাক্ষ কে ধুতে হবে(পারলে ১৫মিনিট ভিজিয়ে রাখুন গঙ্গাজলে)।
🔥 শোধনের জন্য দ্রব্য :
১)ঘি
২)প্রদীপ
৩)ধূপ
৪)গঙ্গাজল
৫)পঞ্চামৃত [দুধ, দই, ঘি, মধু, শর্করা হিসেবে চিনিরজল]
৬)পঞ্চগব্য (দই, দুধ, ঘি, গোময় অর্থাৎ কিছু পরিমান গোবর ও গোমূত্র)
৭)একটি পরিষ্কার ছোট গামছা
৮)সাদা চন্দন
৯)একটি রুদ্রাক্ষমালা (যেকোনো মুখী)
১০)একটি পাত্র (তামার অথবা পিতলের ঘটি হলে ভালো হয়)
✅এবার ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে নিন, ধূপ ধরিয়ে নিন। শিবপূজা সম্পন্ন করুন।
✅শিবলিঙ্গকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে –
‘ ॐ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্দ্ধনং ।
উর্ব্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয়মামৃতাৎ ॥ ‘
✅এবার প্রভু শিবকে পঞ্চোপচার দিয়ে পূজা করুন।
✅এবার প্রভু শিবকে স্নান করানো পঞ্চামৃতের কিছুটা তুলে নিন একটি পাত্রে।
✅এবার গঙ্গাজলে ডুবিয়ে রাখা রুদ্রাক্ষমালাটি তুলে নিন।
✅অতপর মনে মনে শিব পঞ্চাক্ষর মন্ত্র – ‘নমঃ শিবায়‘ জপ করতে করতে পঞ্চগব্য (দধি, দুগ্ধ, ঘৃত, গোময় ও গোমূত্র) দ্বারা রুদ্রাক্ষমালা কে স্নান করাবেন।
✅যে পাত্রে আলাদা করে রাখা শিবলিঙ্গকে স্নান করানো পঞ্চামৃত রয়েছে সেই পঞ্চামৃত(দধি, দুগ্ধ, ঘৃত, মধু ও শর্করা) দ্বারা স্নান করাতে হবে মনে মনে শিব পঞ্চাক্ষর মন্ত্র – ‘নমঃ শিবায়‘ জপ করতে করতে।
✅শেষে আবার রুদ্রাক্ষমালা কে গঙ্গা জলে ধুয়ে পরিষ্কার ছোট গামছা দিয়ে মুছতে হবে। এরপরে সেটিকে সাদা চন্দন লাগিয়ে ধূপ-প্রদীপ দিয়ে তার উপর কিছু ফুল বেলপাতা উৎসর্গ করতে হবে ” ॐ নমঃ শিবায় ” মহামন্ত্র পাঠ করতে করতে।
✅এবার ডান হাতে রুদ্রাক্ষমালাটি নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবেন –
‘ ॐ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্দ্ধনং ।
উর্ব্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয়মামৃতাৎ ॥ ‘
ॐ হ্রৌং অঘোরে হ্রৌং হুং ঘোরতরে ॐ হ্রৈং হ্রীং শ্রীং ঐং সর্ব্বতঃ সর্ব্ব শর্ব্বেভ্যো নমোহস্তু রুদ্র রুপিণে হ্রূং হ্রূং ।
(শ্রীকৃষ্ণানন্দ-আগমবাগীশ কর্তৃক রচিত বৃহৎ তন্ত্রসারোক্ত , নবভারত, পৃষ্ঠা – ৬২২ )
🔘এরপর প্রতিটি প্রকার রুদ্রাক্ষের ( ১ থেকে ১৪ মুখী) জন্য আলাদা আলাদা কিছু নির্দিষ্ট ধারন মন্ত্র আছে। নির্দিষ্ট রুদ্রাক্ষের জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্র ১০৮ বার জপ করতে হবে। তারপরেই সেই রুদ্রাক্ষ পূর্ণভাবে ধারণযোগ্য হয়ে উঠবে। এখানে শিবমহাপুরাণোক্ত ধারণ মন্ত্র দেয়া হল।
✅১ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং নমঃ
✅২ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ নমঃ
✅৩ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ ক্লীং নমঃ
✅৪ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং নমঃ
✅৫ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং নমঃ
✅৬ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং হুং নমঃ
✅৭ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হুং নমঃ
✅৮ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হুং নমঃ
✅৯ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং হুং নমঃ
✅১০ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং নমঃ
✅১১ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং হুং নমঃ
✅১২ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ ক্রৌং ক্ষৌং নমঃ
✅১৩ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ হ্রীং নমঃ
✅১৪ মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র- ॐ নমঃ
(শিবমহাপুরাণ/ বিদ্যেশ্বর সংহিতা / ২৫ নং অধ্যায় /শ্লোক নং ৮১)
🔴আপনার রুদ্রাক্ষমালাটি যে মুখী রুদ্রাক্ষ উপরোক্ত সেই মুখী রুদ্রাক্ষের মন্ত্র ১০৮বার জপ করবেন রুদ্রাক্ষমালাটি নিজের ডানহাতে ধরে।
🚩যদি আপনি আপনার শোধন করা এই রুদ্রাক্ষের মালাটির সাথে শিবরক্ষাকবচ মহামন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে আরো শক্তিশালী করতে চান তবে এইখানে ক্লিক করে দেখুন এবং উক্ত মহামন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে নিন
এবার ধারণ করুন উক্ত মন্ত্রটিই উচ্চারণ করতে করতে বা ॐ নমঃ শিবায় অথবা রুদ্রগায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা
✅ রুদ্রগায়ত্রী মন্ত্র –
ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি । তন্নো রুদ্র প্রচোদয়াৎ ॥
✅অথবা এই মন্ত্রে (বীরাশৈব মতে) –
রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।
নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥
♣️সংগ্রহ এবং লেখনীতে – Rohit Kumar Chowdhury
♠️সম্পাদনায় – Koushik Roy
॥ ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥
©️কপিরাইট ও প্রচারে – International Shiva Shakti Gyan Tirtha – ISSGT
© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com
এছাড়া আরো দেখুন 👇
• রুদ্রাক্ষ জপমালা শোধন পদ্ধতি
• শৈবমতে মন্ত্রস্নান ও সন্ধিপ্ৰোক্ষণ পদ্ধতি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন